এক সময় এই
সব লেখার খুব চল ছিল বিশেষতঃ এপার বাংলায়। বিয়েবাড়ি যেন অসম্পূর্ণ থেকে যেত এই
ধরনের কবিতা ছাড়া। রচয়িতারা ছিলেন দু – পক্ষের আপনজন যাদের কোন কবি খ্যাতি ছিল না
আবার এমন লোক ও ছিলেন গ্রামে বা পাড়ায়, কোন শুভ অনুষ্ঠান হলেই তাঁর ডাক পড়ত এই
ধরনের লেখা লিখে দেওয়ার জন্য। এই সব লেখার কোন কাব্য মূল্য হয়তো ছিল না অথবা খুব
উঁচু দরের কবিতাও হত না। তবু পরিজনদের কাছে এই লেখা এক অন্য মাধুর্য নিয়ে আসত।
আজকের তরুণী বধূটি তার মেয়ে বা ছেলের বিয়ের সময় ট্রাঙ্কের নিচে খুব যত্ন করে
লুকিয়ে রাখা সেই কবিতা খুঁজে পেত – একটু লজ্জারুণ হাসি ছড়িয়ে পড়ত তার মুখে অথবা
পড়ত দু ফোঁটা চোখের জল। আজ আবেগ বদলে গেছে বেগ – এ, চিঠির বদলে এস এম এস,
হালুইকরের জায়গা নিয়েছিল ক্যাটারার আজ তারাও পিছনের সারিতে। আজ হল ইভেন্ট
ম্যানেজমেন্ট এর যুগ। দুঃখ করে তো লাভ নেই সময় পালটাবে – আগেও পালটেছিল – বদলাবে আজও,
তবেই তো বয়ে চলে জীবন, খুঁজে পাওয়া যায় জীবনের মানে। পুরানো সেই দিনের কথা মনে করে
বেশ কয়েক বছর আগে লেখা এই কবিতা দুটি। লিখেছিলাম সম্ভবতঃ ১৯৯৭ ও ২০০৪ সালে।
১) নতুন জীবন
নহবতের
সানাই বাজে / রাত্রি হল ভোর,
চলরে সবাই
জল সইতে / দাও গো উলু জোর।
গায়ে হলুদ
তাড়াতাড়ি / পাঠাতে হবে কনের বাড়ি,
তত্ত্ব নিয়ে
চলল ভারি / সামনে নিয়ে দইয়ের হাঁড়ি।
পাত্র মশাই
আড্ডা মারে / ফরাস পেতে বসার ঘরে,
আজকে তাহার
স্ফূর্তি ভারি / বারে বারে বাগায় টেরি।
ঘড়িতে যখন
চারটে বাজে / পাল্লা দিয়ে সবাই সাজে,
চারদিকেতেই
রূপের ছটা / দুলিয়ে কোঁচা কত না হাঁটা।
বরের গাড়ি
সেজে এলো / বরের নাই কো দেখা,
(শেষে) টোপর
মাথায় দিল দেখা / হাতে কোঁচার পাখা।
ছেলে যে পর
হবে এবার / মায়ের চোখে জল,
দোর ধরেছে
বোনেরা সব / জুটিয়ে দলবল।
বর এসেছে –
বর এসেছে / উঠল কলরব,
আপ্যায়নে
ব্যস্ত হল / কনে বাড়ির সব।
কনে দেখা
দিল / তাহার মুখটি রাঙা লাজে,
ছাদনাতলা
জুড়ে তখন / হুলু ধ্বনি বাজে।
মালা বদল
হচ্ছে / এবার মুখটি তোমার তোল,
শুভদৃষ্টির
সময় সখী / চোখটি তোমার খোল।
মনের মানুষ
পড়ল বাঁধা / ফুল-মালার ডোরে,
নাও ডেকে
নাও কাছে তোমার / নাও গো নিজের করে।
কান্না-হাসি
ভরা মুখে / বাবা আছেন বসি,
সম্প্রদানটি
হল সারা / সবাই হল খুশী।
কনের মাথায়
লাগল এবার / রক্তলালের রেশ,
সিঁদুরদান
যে সারা হল / বিয়ে হল শেষ।
বরযাত্রী
বসল খেতে / মাংস দে রে পাতে,
দইয়ের হাঁড়ি
ভারি ভারি / আয়রে নিয়ে হাতে।
দুটি জীবন
একটি হল / রাত্রি হল ভোর,
চললে মেয়ে পরের
ঘরে / ছিঁড়ে মায়ার ডোর।
নতুন মানুষ,
নতুন বাড়ি / কত না লোকজন,
নিলে সবাই
আপন করে / এরাই প্রিয় জন।
মিষ্টি হাসি,
মিষ্টি কথা / মিষ্টি চোখে চাওয়া,
এই পৃথিবীর
দু;খ ব্যথা / সবই ভুলে যাওয়া।
শুরু হল
নতুন জীবন / ভাঙল মিলন মেলা,
উৎসব তো গেল
চলে / এল বিদায় বেলা।
সবাই এবার
বিদায় নেবে / নিয়ে মনে আশা,
ভালোবাসায়
উঠুক গড়ে / একটি ভালো বাসা।
২) খাওয়ার ছন্দ
বিয়ে বাড়ি,
কাজের বাড়ি / টেবিল সাজা তাড়াতাড়ি,
বসবে খেতে
জলদি করি / (যারা) দুরের পথে দেবে পাড়ি।
কাঁচের পেলেট
– জলের গেলাস / টেবিলেতে সাজিয়ে যাস,
পাতেতে দিস
একটুকু নুন / লেবু তাহার সঙ্গী থাকুন।
বাদশাহি
চানা সঙ্গে / কচুরি খান মেতে রঙ্গে,
সপ – সপা –
সপ চলছে আহার / খুলছে পাতের কেমন বাহার !
স্যালাদ
দিয়ে পাত সাজিয়ে / ফিস কবিরাজি দে ভরিয়ে,
এই শুধু নয়
আরও আছে / বিরিয়ানি আসছে পাছে।
খাচ্ছে সবাই হয়ে মস্ত / হাত গুলো তাই অতি ব্যস্ত,
ব্যস্ত কেন,
খাওনা ধীরে / লাগবে কিছু, দেব ফিরে ?
বি রি য়া নি
ঐ যে আসে / বাতাসে তার গন্ধ ভাসে,
গন্ধেতে মন
করে টলমল / জিভের ডগায় আসল যে জল।
বিরিয়ানিটাই
খেলে হবে / চিকেন চাঁপ টা কে চাখবে,
তোমার কেন
মুখটি ভার / নিরিমিস্যি – এই ব্যাপার !
এর জন্য
চিন্তা কেন / ফ্রায়েড রাইসও আছে জেনো,
বাটার পনির
সঙ্গতে তার / লাগলে চেয়ে নিও বার বার।
আসছে এবার
চাটনি মশাই / (খান প্রেমসে) চুপ কেন ভাই,
পাঁপড় জেঠূ
কোঁচা দুলিয়ে / দেবে সব কিছু হজম করিয়ে।
সঙ্গে নিয়ে
ছানা পোনা / পান্তুয়াদি দিলেন হানা,
সন্দেশ
বাবুর বাহার বেশ / পড়ছে পাতে – হচ্ছে শেষ।
উঠুন সবাই
হাতটি ধুতে / খড়কে কাঠি নিয়ে হাতে,
মুখটি ভরা
মিষ্টি পান / খেলেন কেমন ? এবার বাতান।
No comments:
Post a Comment