22 December, 2016

যে আগুনের দিকে চেয়ে থাকতে
ভালো পোশাক পড়া (কালো) মানুষ গুলোর
তোমাদের চোখ ঝলসে যায়
সে আগুনের মাঝে আগুন বয়ে
তপ্ত লোহা অঙ্গার আর ধুলোর মাঝে
কাজ করি আমরাই।


পরনে গেঞ্জি – খালি পা
শরীর কালোয় কালো
আমরা কাজ করে চলি।
গলন্ত লোহা বয়ে এনে
ঢেলে দিই ছাঁচে
(আমার মত কোন মজুরের বানানো ছাঁচ)
আবার দৌড়াই
আরও ছাঁচ আছে অপেক্ষায়
নতুন রূপ পাবে বলে ।

ফুসফুস ঝাঁঝরা আমাদের
ধোঁয়া আর ধুলোয়
আর কোন জানা – অজানা গ্যাসে
পাকস্থলী হয়েছে ঝাঁঝরা আগুনে
তরল আগুনে !
সস্তা মদের গরম আগুনে!
ক্লান্ত শরীর সে আগুনে পুড়ে
নেয় বিশ্রাম !

না হলে কালকে মেশিন চলবে না
মেশিন করে অনেক কাজ
তবুও
মেশিন চালায় মানুষ।
মেশিন যদি না চলে
ওহে ভদ্দর লোকেরা
যারা আমাদের দিকে অবহেলায় তাকিয়ে
অনুচ্চারিত কিছু গালি মেরে
চলে যাও কাজে
আমাদের সেলাম নিয়ে।

তোমরা ভুলে যাও -
দামি পোশাক পড়ে
দামী হোটেলে দামী মদে চুমুক দাও
গান করা মেয়েদের দিকে পবিত্র দৃষ্টি তে তাকাও
আর টাকা ওড়াও
(পরের দিন সকালে তাঁদের বেশ্যা বল)
আর আমাদের কথা ভেবে ফেল চোখের জল
অথবা আমার লেখা এ কবিতার মত
কবিতা লেখ
তোমাদের মত মানুষের বাহবা পাওয়ার জন্য –

জেনে রাখ
সব হয়ে যাবে শেষ
শেষ হবে তোমাদের পাণ্ডিত্য আর
নর্তন
যদি আমরা না থাকি।
শেষ বারের মত সচেতন করে দিলাম
এবার দেখা হবে পথে !
আজ বিদায় ।। শ্রীতোষ ২২/১২/২০১৬

18 December, 2016

পোড়া

আজ বড় সুখের সময় নয়
আজ আগুনে পোড়ে না অন্যায়
পোড়ে প্রতিবাদ!

13 December, 2016

আমি ভাসছি আনন্দে
আমি সেই ৯ অথবা ১৪
কিংবা ১৮ র মেয়ে
তোমরা হেঁটে যাও
আমাদের পাশ দিয়ে
অথবা ধুয়ো উড়িয়ে যায় চলে
তোমাদের গাড়ি ।


আমি সেই রাস্তার মেয়ে
বয়স ৯ থেকে ১৮ আমার !
ফুটপাথে ঘর !

রাতে অন্ধকারে তুমি আস
তোমার গাড়ির ভিতরে তখন
তুমি ছাড়া আছে তারাও
যারা হেঁটে চলেছিল
আমাদের পাশ দিয়ে –
অবজ্ঞায় তাকিয়ে।

ভিতরে উৎসব – রাতে
ফোয়ারা ছুটেছে ভাই –তাই
এক শরীর বড় দরকার
নারী অথবা পুরুষ শরীর
৯ থেকে ১৪ কিংবা ১৮ র
কচি শরীর !
আমাদের তুলে নাও -
সে আমি পড়ে থাকি না কেন
পার্ক ষ্ট্রীটে
অথবা এক্সাইড মোড়ে
অথবা ধর্ম তলার নামী হোটেলের
সামনের ফুটপাথে !

এ শহরের দামী ফুটপাথে
তোমাদের গাড়ি এসে দাঁড়ায়
আমাদের দিকে চেয়ে থাকা
জানলার কাঁচ নামে,
আঙ্গুল ইশারা করে -
আমরা ইশারায় চলি -
আঙ্গুল দরজা খোলে
আমরা ঢুকে যাই ,
মনে আনন্দ !

টাকা জুটবে কিছু - আর
জানি সকালে এ শুকনো  শরীর দেখে
তোমাদের জাগবে ঘৃণা –
প্রয়োজন মিটে যাওয়া এ শরীর ছুঁড়ে ফেলে দেবে রাস্তায়
যেমন করে তোমরা তোমাদের
খাওয়ার উচ্ছিষ্ট ছুঁড়ে ফেল
কুকুর – কাকের জন্য
তোমাদের বাড়ির সামনে।

জানো
কাল সকালে আমার ভাই
পেট পুরে ভাত খেতে পাবে
আমার রুগ্ন বাবা একদিনের জন্য
রাস্তায় বার হয়ে ঠেলা চালানো র
থেকে মুক্তি পাবে না – তবুও
আমার শরীরের বিনিময়ে
রোজগার করা টাকায়
সে দশটা মিনিট
নিশ্বাস ফেলতে পারবে।
একটু খানি মুড়ি খেতে পারবে।
তাই আমরা তোমাদের উচ্ছিষ্ট হয়ে যাই।

তবুও জেনে রাখ
এ জীবন বেঁচে আছে
তোমাদের মৃত্যুর আনন্দে
আমার শরীরে যে রোগ দিয়েছ
তোমরা - জানি আমরা
তাই আমরা নিঃশব্দে নীরবে
যারা ফুটপাথে বাঁচি
৯ থেকে ১৪ অথবা ১৮
নিজেদের দু পা উন্মুক্ত করি
তোমাদের জন্য ।

তোমাদের জন্য
আমাদের মৃত্যু পাঠাই
তোমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য
আমরা তো মরবই
তোমরা বাঁচবে কেন
কারণ
তোমরাই তো আমাদের মানুষ
বলে ধর নি
কে দিয়েছে তোমাদের বাঁচার অধিকার ?
আমরা তোমাদের সামনে কোন প্রশ্ন রাখি নি
প্রশ্ন রাখে নি সেই মেয়েটা
যার সামনে আজ রাত্রেও
ফুটপাথে
গাড়ির হর্ন বাজবে !
তারপর -
শ্রীতোষ ১২/১২/২০১৬