23 April, 2018

নির্ভয়া - তোমাকে

বড় ভাগ্য করে জন্মেছিলি মা নির্ভয়া
কারণ তোর উপর অত্যাচারের সময়ও
এ দেশের মানুষ গুলো একটু মানুষ ছিল।
বড় ভাগ্য করে জন্মেছিলি মা নির্ভয়া
কারণ তোর উপর অত্যাচারের পরেও
কেউ প্রশ্ন করে নি
তোর জাত কি ছিল?

বড় ভাগ্য ছিল রে মা তোর
তোর অত্যাচারীর জাত কি
জিজ্ঞাসা করে নি এ দেশের মানুষ
বরং প্রতিবাদের আগুন জ্বালিয়েছিল
আজ যারা ধর্ষিতা তাদের সে ভাগ্য নয়
আজ প্রথমে দেখে ধর্ষিতার জাত
তারপর ধর্ষকের
তারপর বলে
"পহেলে তো ইতনা চিল্লায়া নেহি
ফির আজ কিঁউ
কিঁউ কি উও উস জাত কি হ্যায়"
জানিস মা নির্ভয়া ওরা আবার ধর্ষিতা হয়
বার বার ধর্ষিতা হয়
যতবার সে শোনে
"পহেলে তো ইতনা চিল্লায়া নেহি
ফির আজ কিঁউ"
জানিস মা নির্ভয়া
ওদের আত্মা বলে ওঠে
"চাই না আমার বিচার
একটু চুপ কর
থাকতে দাও শান্তিতে
আমার শরীরকে দলে - পিষে - নিংড়ে - চুষে
শান্তি হয় নি তোমাদের
আমার আত্মাকে শেষ করছ তোমরা।"
তাই মাও আজ ধর্ষিতা গুজরাতে
আপন ছেলের হাতে!
শোন মা নির্ভয়া
আমি এক অসহায় লেখক
কি ক্ষমতা আমার?
আমি লিখতে লিখতে কাঁদি
আর কাঁদতে কাঁদতে লিখি
আমার চোখের জলে মেশে প্রতিবাদ।
শ্রীতোষ ২২/০৪/২০১৮

22 April, 2018

আমিই সেই মেয়ে ২য় পর্ব

এই কবিতাটি লিখেছিলাম কামদুনি ঘটনার পরে আজ একটু বদলে দিলাম গড়িয়ার ঘটনার প্রেক্ষিতে

আমি সেই মেয়ে
সোনা তুই আমাকে দেখতে পারছিস
ও মা দেখতে পারছ আমাকে
জানিস বাবা সেদিন ঝড় জলের রাতে
আমার মাথা ঘুরছিল
সোজা হয়ে চলতে পারছিলাম না
১১ বছরের ছোট্ট সোনা তুই
কি করে সামলাবি আমাকে
বললাম "যা ঠাকুমাকে ডেকে নিয়ে আয়"
তুই যেতে চাইছিলি না আমাকে ছেড়ে
তবু গেলি।

তারপর - তারপর কেটে গেল কিছু সময়
জীবনের ভয়ংকর কিছু সময়
তারপর ভেবেছিলাম শান্তি পাব

কিছু হায়না খুবলে খেয়েছে শরীর
কিন্ত মন তো অটুট আছে
ভুল ভেবেছিলাম
এখন দেখছি
ওদের থেকে বড় হায়নারা
ঘুরে বেড়ায় দিনের আলোয়
ওদের কষের দাঁত থেকে ঝরে পড়ে রক্ত
ওরা লাশের শরীর চিরে দেখতে চায়
ওটা হিন্দু না মুসলিম নাকি দলিত

অনেক হয়েছে শান্তি
আরও অনেক লাশ জমছে আমার মত
জমবে আরও
এবার আমাদের চোখে জ্বলবে আগুন
আমাদের মত লাশ গুলো
ওদের ঘরে লাশ হয়ে ঢুকবে
দেখব ওরা কেমন প্রশ্ন করে
আমার ঘরে যে লাশ টা পরে
সেটা হিন্দু না মুসলিম নাকি দলিত

আমরা সেদিন আগুন হয়ে হাসব
প্রতিশোধের শান্ত আনন্দে।
শ্রীতোষ ২২/০৪/২০১৮

21 April, 2018

ধর্ম বলতে যা বুঝি

আমার বাড়িতে কোন পূজা হয় না, দুগগা পুজায় ভিড় আর ব্যারিকেডের অত্যাচার থেকে বাঁচতে কলকাতার বাইরে এমন জায়গায় পালাই যেখানে পুজার ভড়ং নেই। কালী পুজায় কানে তুলো দিয়ে, জানলা বন্ধ করে বসে থাকি। হাতে কোন পাথর নেই, গলায় কোন মাদুলি নেই, আমার বিয়েতে রেজিস্ট্রি হয়েছে আবার সামাজিক নিয়মে হয়েছে কারণ সেই সময় আমার নিজের মতে চলার স্বাধীনতা ছিল না। পৈতে হয়েছিল কিন্ত এখন নেই (পৈতের সময় দীক্ষা গুরু বলার আগেই গায়ত্রী মন্ত্র বলে ফেলেছিলাম বলে তিনি আঁতকে উঠেছিলেন)। হ্যাঁ লুচি - পরোটা খেতে ভীষণ ভালবাসি বলে একাদশী মেনেছি, তবে ত্রি সন্ধ্যা করেছি বলে মনে পড়ে না। একটা না একটা সন্ধ্যা ভুল হয়েই যেত। যে কোন শ্লোক (মন্ত্র) বলতে বা লিখতে হলে মানে জেনে শুদ্ধ উচ্চারণ বা বর্ণ ব্যবহার করি। গরু - শুয়োর কোনটাতেই অরুচি নেই তবে কেরালার কোল্লামে চিলি পর্ক খাওয়ার কথা জীবনে ভুলব না। মুখে ছোঁয়ানোর পরে মনে হয়েছিল পুরো বঙ্গোপসাগরের জল মুখে ঢালতে হবে। তিনটে চিলড্‌ বিয়ার খেয়ে শান্তি হয়। হ্যাঁ রাস্তায় দাঁড়িয়েও গরু - শুয়োর খেয়েছি তবে ওই প্রতিবাদের জন্য নয়। আমি মনে করি মানুষের যা খাদ্য যোগ্য তার মধ্যে আমার যা পছন্দ আমি তাই খাব, তা পনির হতে পারে পাঁঠাও হতে পারে, কোন গো শাবক বা গাধা প্রেমিক সেটা ঠিক করে দেওয়ার অধিকারী নয়। সে যদি সেটা করে, তাহলে আমারও সকলের সামনে গরু - শুয়োর - পনির খেয়ে প্রতিবাদ করার দায়িত্ব আছে। আর দেবতা দের নিয়ে খিল্লি ! মহাভারতের যুগে ইন্টার নেট ছিল এটাই তো সবচেয়ে বড় খিল্লি কারণ মহাভারতের কৃষ্ণ তো ভগবান রূপেই পুজো পান। অন্য ধর্মের লোকেরা তাদের দেবতা সম্পর্কে এরকম খিল্লি করে কি? কোন খৃস্টান কে কোন দিন বলতে শোনা গেছে যে যীশুর যুগে বিমান বা ইন্টারনেট ছিল? আগে সেগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হোক - বাবা আর পীরদের অলৌকিক ক্ষমতা, জ্যোতিষীদের মিথ্যাচার করে টাকা লোটা - এই সবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হোক, সেটা আসল কাজ। মহাভারতের যুগে ইণ্টারনেট থাকলে ফেসবুক ছিল, WHATS APP ছিল আর এগুলো যারা বিশ্বাস করে সে রকম গো শাবক ও ছিল। ফলে যত দিন "সবকিছু ব্যাদে ছিল" চলবে ততদিন এই রকম খিল্লি চলবে। ওটা বন্ধ হলে এটা আপনি বন্ধ হবে। আর ধর্ম - মানুষ যা ধারন করে তাই হল ধর্ম। হিন্দু কোন ধর্ম নয়, হিন্দু হল এক মহান দর্শন - পৃথিবীর সর্ব শ্রেষ্ঠ দর্শন। যে দর্শনে বিবিধের মাঝে মিলন কে স্বীকৃতি দেওয়া আছে। কত মত - কত ভাষ্য সে দর্শনে! একজন সারা জীবন ধরে পড়ে গেলেও তার তৃষ্ণা মিটবে না। (আমার মেটে নি) একের সঙ্গে অন্যের আপাত কোন মিল নেই, তবু এক অদৃশ্য সূত্রে বাঁধা। এই মহান দর্শনকে যারা ধর্মের নিগড়ে বাঁধতে চায়, তাদের প্রতি আমার করুণা হয় কারণ তারা জানেই না যে এই দর্শনের কত বড় অপমান তারা করছে, কত অপমান করছে বেদ - উপনিষদের সুক্ত গুলির, কত অপমান করছে রামানুজ, শঙ্করাচার্য, চার্বাক এর মত মহান পণ্ডিতদের। সব শেষে বলি, যে কোন ধর্মের নামে চলা বদামো, ভন্ডামো, আচার - বিচার, যা মানুষের চেতনাকে বিকৃত করে, মানুষে মানুষে বিবাদ বাধায় তাকে এবং তাদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে সমর্থন করা যে কোন জীবকে (দুঃখিত মানুষ বলতে পারব না) আমি ঘৃণা করি।

13 April, 2018

মিছিল

আজকে নাকি একটা মিছিল ছিল নগরের পথে। নাগরিক জীবনের অসুবিধা করে সে মিছিলের মানুষগুলো নাকি আনন্দ পেয়েছিল! মানুষের মিছিল দেখলে এই তো বলে বুদ্ধিGB GীB গুলো। না আজ কোন মিছিল ছিল না।
আজ নগর কলকাতার নাগরিক পথ মুখরিত হয়েছিল একটি মানুষের চলার শব্দে, যে মানুষের অন্তরে ছিল মানুষের প্রতি ভালবাসা, কণ্ঠে ছিল –“গাহি সাম্যের গান” যে মানুষ বলছিল “হেথায় আর্য, হেথা অনার্য, হেথায় দ্রাবিড় চীন—শক-হুন-দল পাঠান-মোগল এক দেহে হল লীন”। যে মানুষ জাতের নামে বর্ণের নামে হাতে অস্ত্র তুলে নেয় না, অন্যের হাতে অস্ত্র ধরায় না। যারা এ কাজ করে তাদের মত বিষাক্ত জীবগুলোর বিরুদ্ধে হেঁটেছিল একটি মাত্র মানুষ।
আমি সেই মানুষ হয়ে, অজস্র মানুষের ভিড়ে, অজস্র মানুষের কণ্ঠে নিজের কণ্ঠ মিলিয়ে, প্রতিজ্ঞায় উত্তোলিত অজস্র হাতের সাথে হাত ধরে পথ হেঁটেছি। ডাক্তারের বারণ একটানা বেশী রোদে থাকা, নিজে থাকতেও পারিনা, তবুও সব বাধা সরিয়ে আজ পথে নেমেছিলাম কারণ এই পথ হাঁটা বড় দরকার ছিল।
আমি দেখলাম কখনও নীরবে কখনও কবিতা, গান আর নাটক নিয়ে মানুষটা কেমন পথ হাঁটল। অবাক লাগছে তাই না, কখনও বলছি মানুষ আবার কখনো মানুষগুলো। আসলে যারা এই মিছিলটায় ছিলেন তাঁরা বুঝবেন যে আমি সত্যি বলছি। আসলে এই মিছিলে অনেক শরীর ছিল কিন্ত তাঁদের চেতনা ছিল এক, তাঁদের কণ্ঠে ছিল রবীন্দ্রনাথের কবিতা – নজরুলের গান। তাঁদের অন্তরে ছিল একটি মাত্র প্রতিজ্ঞা
রবীন্দ্রনাথ – নজরুলের বাংলাকে আমরা সাম্প্রদায়িক বজ্জাতদের হাতে তুলে দেব না।
শেষ পর্যন্ত থাকতে পারলে হয়তো অনেকের সাথেই দেখা হত কিন্ত পার্ক ষ্ট্রীটের ক্রসিং পার হয়েই দাঁড়িয়ে পড়তে হল। ঘাড়ে – মাথায় জল দিয়েও সুস্থ হতে পারলাম না। প্রায় ২০ মিনিট অপেক্ষার পরে বাড়ির পথ ধরতে হল। আমি ছিলাম মিছিলের সামনের দিকে গড়িয়া সুচর্চার সাথে, ২০ মিনিট পরেও দেখলাম মিছিল চলছে, একটি মানুষের মিছিল – শুধু আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম।

উন্নয়ন

ক্লাসে বাংলার শিক্ষক বিশ্ব বঙ্গের উন্নয়ন সম্পর্কে রচনা লিখতে বললেন।
সবাই খাতা জমা দিল, ক্যাবলা দেয় না।
মাস্টার মশাই জিজ্ঞাসা করলেনঃ
কিরে ক্যাবলা, আর কত লিখবি, খাতাটা দে।
ক্যাবলা এক মনে লিখে চলেছে।
মাস্টার মশাই এবার বিরক্ত হয়ে ক্যাবলার পাশে এসে খাতাটার দিকে তাকালেন। ব্যস্‌ ধড়াস করে মাটিতে। অজ্ঞান! ক্লাসে হইচই! টিচার্স রুম থেকে অন্য মাস্টার মশাইরা ছুটে এলেন। ক্যাবলার কিন্ত হুঁশ নেই, একমনে লিখে যাচ্ছে। এবার ভূগোল স্যার খাতার দিকে তাকালেন। তারপর দাঁড়িয়ে রইলেন। নট নড়ন চড়ন! সবাই অবাক। একটা ভিড় জমল আবার, শেষ পর্যন্ত ভূগোল স্যারকে দাঁড়ানো অবস্থাতেই নিয়ে যাওয়া হল।
ক্যাবলার কিন্ত হুঁশ নেই, একমনে লিখে যাচ্ছে। এদিকে মাস্টার মশাইরা পড়েছেন চিন্তায়, ছেলেটা এমন কি লিখছে যা দেখে মাস্টার মশাইদের এরকম অবস্থা। ক্যাবলার কাছে যেতে আর কোন মাস্টার ভরসা পাচ্ছেন না। শেষ পর্যন্ত শরীর শিক্ষার শিক্ষক মশাই বললেন, "আমি যাব"। তা তিনি গেলেন। তারপর
ওরেবাবা - ওরেবাবা, মানে তিনি "ওরেবাবা" বলতে বলতে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলেন এবং "ওরেবাবা" বলতে বলতে গোটা স্কুল ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। আর কোন ঝুঁকি না নিয়ে দুজন মাস্টার মশাই দুদিক থেকে গেলেন এবং অন্যদিকে তাকিয়ে হাতড়ে হাতড়ে খাতা নিয়ে, অন্যদিকে তাকিয়ে সেটা বন্ধ করেই হেড মাস্টারের কাছে নিয়ে গেলেন।
সব কথা শোনার পর হেড মাস্টারও একটু ঘাবড়ে গেলেন, উপায় নেই, হেড মাস্টার তিনি, দায়িত্ব নিতেই হবে। খাতা খুলে ওই পৃষ্ঠার দিকে তাকিয়েই তিনি "উন্নয়ন উন্নয়ন" বলতে বলতে সমাধিস্থ হয়ে গেলেন।
এবার ক্যাবলার প্রিয় বন্ধু ভ্যাবলা এসে খাতাটা নিল। অন্য মাস্টার মশাইরা চুপ চাপ, কেউ কিছু বলছেন না। সকলে ভ্যাবলার পরিণতি নিয়ে চিন্তিত। পিন পড়লে শোনা যায় এমন একটা পরিবেশ।
ভ্যাবলা খাতা দেখেই হো হো করে হেসে উঠল। সকলে অবাক! অন্য ছেলেরা এবার খাতাটা দেখতে চাইল, ভ্যাবলা তাদের দিকে খাতাটা খুলে দেখাল। দেখেই তারাও হেসে উঠল।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বাংলার শিক্ষকের জ্ঞান ফেরেনি, ভূগোলের শিক্ষক এখনও দাঁড়িয়ে, শরীর শিক্ষার শিক্ষক "ওরে বাবা" বলতে বলতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, প্রধান শিক্ষক সমাধিস্থ অবস্থায় "উন্নয়ন উন্নয়ন" বলে চলেছেন। অন্য শিক্ষকরা কেউ ওই খাতার দিকে তাকাতে সাহস করেন নি।
এবার কথা হল, খাতাটায় এমন কি ছিল যাতে এই অবস্থা। ভ্যাবলাকে বলাতে ভ্যাবলা আমায় খাতাটা দিল, খাতা খুলে দেখি প্রথম পাতার উপরে শিরোনামঃ
বিশ্ব বঙ্গের উন্নয়ন। তাঁর নিচে রাশি রাশি সর্ষে গাছ আর তাতে সর্ষে ফুলের ছবি। তার পরের পাতায় ও তাই, তার পরের পাতা, তারও পরের পাতা, তার পরের পরের পরের পাতাতেও তাই
শ্রীতোষ