25 June, 2019

একটি কাল্পনিক সংলাপ।

একটি কাল্পনিক সংলাপ। ডঃ নন্দন ভট্টাচার্য লিখিত “অনার্যায়ন” নাটকে (যে নাটক রচিত হয় রামায়ণের পটভূমিকায়) হনুমান চরিত্রের সংলাপ কে, বর্তমান সময়ের পটভূমিতে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে নতুন করে লেখার প্রচেষ্টা করেছি। যদিও বর্তমান সময়ের কোন ঘটনা / চরিত্রের সাথে এই সংলাপের কোন মিল একান্তই কাকতালীয়।

প্রয়োজনীয় অনুমতি সংগ্রহ করে নিয়েছি নাট্যকার, পরিচালক এবং সেই দৃশ্যে যাকে উদ্দেশ্য করে সংলাপ বলা হচ্ছে ‘মহারাজ সুগ্রীব’ চরিত্র রূপায়ণ কারী ডঃ নন্দন ভট্টাচার্যের কাছ থেকে।

পরিবর্তনের সমস্ত দায়ভার বর্তমান লেখকের, নাট্যকার তথা পরিচালক এর জন্য বিন্দুমাত্র দায়ী নন।
পর্দা ওঠে। মঞ্চে তিনটি চরিত্র। মহারাণী, যুবরাজ এবং পদ্মপাণি (মুখ্য সভাসদ)। সামনে ডান ও বাম দিকে যুবরাজ ও পদ্মপাণি, মধ্যখানে একদম পিছনে বসে আছেন মহারাণী।

পদ্মপাণিঃ আপনাকে কিন্তু বারণ করা হয়েছিল মহারাণী। হ্যাঁ, প্রথম থেকেই, যখন আপনি রাজত্ব ভার গ্রহণ করলেন তখন থেকেই আপনাকে বারণ করা হয়েছিল বৈদ্য রাজের প্রতি অসহিষ্ণু হতে। আপনাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, আপনার অনুগত প্রজাদের সংযত করতে। আপনি সে অনুরোধে কর্ণপাত করেন নি, বরং তাদের অসংযত আচরণকে প্রশ্রয় দিয়েছেন বারে বার। তাদের নিষেধ করা অনেক দুরস্থান আপনি পরোক্ষে তাদের উৎসাহিত করেছেন অন্য নাগরিকদের উপর অত্যাচার করতে। (যুবরাজ চমকে উঠেছে)

রাণীঃ (বিস্মিত এবং বিভ্রান্ত হয়ে) কি – কি বলছ তুমি পদ্মপাণি?

পদ্মপাণিঃ সহজ কথা, এতদিন ধরে আপনাকে যারা সু পরামর্শ দিয়ে এসেছে, তাঁদের বার বার অপমান করেছেন আপনি, নিজেকে প্রমাণ করতে চেয়েছেন সর্বেসর্বা। আপনার কথায় চলতে হবে সব্বাই কে, যে কোন পথের মোড়ে থাকবে আপনারই চিত্র! যারা এ কথা মেনে নেবে, দেখাবে অচলা ভক্তি, প্রতি বাক্যে দু বার আপনার নাম উচ্চারণ করবে, তারা পাবে ক্ষমতার প্রসাদ। আপনার রাজ্যে থাকবে না কোন বিরোধী শক্তি। আপনি একা – আপনি অনন্ত।

রানীঃ (আরও বিস্মিত – গলা কাঁপছে) অর্থাৎ!

পদ্মপাণিঃ (বিদ্রূপাত্মক হাসি) অর্থাৎ যারা এতদিন আপনাকে সুপরামর্শ দিত তারা গেছে দূরে সরে, যারা পেয়েছিল ক্ষমতার প্রসাদ, সেই প্রসাদ নিয়ে তাদের মধ্যে লেগেছে মারামারি। ফলে তাদেরই একাংশ আজ বিদ্রোহী। শ্রীপর্ণ রাজ তাদের হাতে গৈরিক সরসিজ তুলে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, বিনিময়ে তারা আপনার সমস্ত গুপ্ত কথা প্রকাশ করে দিচ্ছে আমার কাছে। শ্রীপর্ণ রাজ রজধুলি লাভে ধন্য আমি সেই সমস্ত সংবাদ তুলে দিচ্ছি শ্রীপর্ণ রাজের কাছে অথবা প্রকাশ করছি জন সম্মুখে। পুরো চিত্রনাট্য আমারই রচনা, মনোগ্রাহী নয় কি মহারানী?

রাণীঃ (এবার আতঙ্কিত) পদ্মপাণি, এই পরিণতি হল তোমার আনুগত্যের? তুমিও (কথা শেষ করতে পারে না)

পদ্মপাণিঃ (চূড়ান্ত বিদ্রূপে) আনুগত্য! আনুগত্য কোন দিন চিরস্থায়ী হয় না মহারাণী, এ শিক্ষা আপনিই দিয়েছেন। একচ্ছত্র ক্ষমতার লোভে বার বার বদলেছেন আনুগত্য – মনে পড়ে কি মহারাণী?

মহারাণীঃ (অসহায় কণ্ঠে) তাহলে ওই শ্রীপর্ণ রাজের সাথে তোমার কি সম্পর্ক পদ্মপাণি?

পদ্মপাণিঃ সেও আনুগত্যের মহারাণী। আমাকে আপনি আর কি ই বা দিতে পারেন মহারাণী, প্রধান অমাত্য পদ! তা তো রাজ পরিবারের জন্য সংরক্ষিত! শ্রীপর্ণ রাজ আমাকে দিতে পারেন শাসকের চেয়েও বড় শাসক হওয়ার ক্ষমতা, এ প্রান্তের শাসককে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা। তার জন্য যদি আনুগত্য বদল করতে হয়, ক্ষতি কি তাতে মহারাণী?

যুবরাজঃ (চূড়ান্ত ক্রোধে) আমি এই মুহূর্তে জন সমক্ষে প্রচার করব তুমি গদ্দার।

পদ্মপাণিঃ (যুবরাজের দিকে তাকিয়ে – মুখে বিদ্রূপাত্মক হাসি) ক্ষতি নেই তাতে, সমস্ত ঘটনা আরও বেশী করে মানুষের কাছে তুলে ধরব আমি। তাছাড়া “গদ্দার” সম্বোধনটি অতি ব্যবহারে অচল। (মহারাণীর দিকে ফেরে) আপনার কথার সাথে একমত না হলেই সে “গদ্দার”, তাই না মহারাণী! এছাড়া, মহারাণী আপনি, যুবরাজ এবং আপনাদের একান্ত অনুগত প্রসাদ ভিক্ষুদের প্রতি রাজ্যের একাংশের মানুষের যা ধারণা, তাতে তারা আপনার গুপ্ত কথা সহজেই বিশ্বাস করবে। একবারে না করলে বারে বারে প্রচার হবে। এ শিক্ষাও মহারাণীর অনুগত এ প্রান্তের সুশীল প্রচার সচিবদের কাছ থেকেই পাওয়া!

(উইংসের দিকে ফেরে) আসুন, আসুন আপনারা (প্রচার মাধ্যমের প্রতিনিধিরা ঢুকতে থাকে, মহারাণী তার আসনে বসে অসহায়, যুবরাজ ক্রুদ্ধ কিন্তু নিরুপায়, পদ্মপাণি হাত জোড় করে হাসি মুখে এগোতে থাকে প্রচার মাধ্যমের দিকে, মাঝে একটু দাঁড়িয়ে ঘুরে তাকায় মহারাণী ও যুবরাজের দিকে, মুখে শয়তানের হাসি, আবার ফেরে প্রচার মাধ্যমের দিকে, মুখে অমায়িক হাসি – পর্দা পড়ে)