30 June, 2014

দানব ওরা রক্ত হাতে
পাটা চিরে তীক্ষ্ণ দাঁতে
দেয় পুড়িয়ে আগুন জ্বেলে
দেয় জ্বালিয়ে অ্যাসিড ঢেলে
তুই পালাতে পারিস না।

আর বলতে পারি না
আমার অপরাজিতা মা
আমার দুর্গা জননী মা
ওই অসুরের রক্ত হাতে
মুরতি খুলবে না
মা তোর মুরতি খুলবে না।

অপরাজিতা মা
দুর্গা জননী মা
আর কাঁদিস না
এই বছরে মাতৃ পূজায়
শকুন হাতে – পূজার থালায়
তোরে প্রণাম করব না

আমি তোরে প্রণাম করব না। 
বিন্দু অর্থে একটি ছোট্ট অথচ প্রামাণিক কিছু
যার নেই কোন রেখা, ব্যাধ বা ক্ষেত্রফল
বিন্দু এক VOLUPTUOUS শরীর
ঊর্ধ্বাঙ্গ আর নিম্নাঙ্গের  দোলায় পাগল করে !

রেখা বলে তাকে
যার প্রস্থ নেই – আছে দৈর্ঘ্য !
সাধারণ মানুষ বোঝে না PHYSICS
সে চেনে লাস্যময়ী এক অভিনেত্রীকে।

এমনই করে আমরা সব কিছুকে গ্রহণ করতে চাই
দেখতে চাই প্রাণের মাঝে
কে কাকে করে আপন,

সিদ্ধান্ত  তার।

29 June, 2014

নিবাত নিষ্কম্প বাতাস
দেয় ঝড়ের সঙ্কেত !
চুপ করে থাকা বনানী
জ্বালায় দাবানল !
নীরবে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড় চূড়া থেকে
বেরিয়ে আসে গলিত লাভা !
তেমনই মানুষ ।
যখন  থাকে চুপ করে
জেনো - তার ভিতরে,
উঠেছে ঝড় – জ্বলছে দাবানল
গলিত লাভা তপ্ত হচ্ছে
তোমার সুখের পৃথিবীকে গ্রাস করবে বলে ।
থাকো ঝড়ের – দাবানলের – লাভার অপেক্ষায় !
থাকলাম আমরাও,
গড়ে তুলতে হবে না নতুন পৃথিবী।

আমরা
ভালবাসার গান গাই
উৎসবের গান গাই
আনন্দের গান গাই
আ ম রা
তোমাদের গান গাই।

কান্না যখন মনকে কাঁদায়
চোখের জলে বুক ভেসে যায়
বেহাগ রাগে সুর যে ছড়াই
আ ম রা
আমাদের গান গাই।

রক্তে যখন আগুন লাগে
প্রাণে সুরের দোলন জাগে
বিদ্রোহেরই গান গাই
বিপ্লবের গান গাই
আ ম রা

মানুষের গান গাই।

28 June, 2014

একটা মুহূর্তে বদলে যায় জীবন !
একটা মুহূর্ত সাক্ষী থাকে জীবন – মরণের,
একটি মুহূর্তে জাগা চেতনায়
কবি লেখেন কাব্য,
চিত্রকর আঁকেন ছবি,
মঞ্চে তৈরি হয় মায়া,  
একটি মাত্র মুহূর্ত !
একটি মুহূর্ত চিন্তা আনে বিপ্লবের,
একটি মুহূর্ত বদলে দেয় জীবন !

একটি মুহূর্ত অক্ষয় হয়ে থাকে জীবনে।

27 June, 2014

আমরা কি শুনতে পারছি
আসছে ঝড়
দিন বদলের ঝড় – সময়কে পাল্টে দেওয়ার ঝড়।

প্রশ্ন একটাই বন্ধু তোমার কাছে
জীবনের কাছে
আমরা কি সেই ঝড়ের সাথি হব ?
নাকি থাকব পড়ে
রাতের অন্ধকার গভীরে

উত্তর চাইছে সময় ! 

26 June, 2014

আমি জীবনের গান গাই।

আঃ কি আনন্দ – আমি আজ DOCTOR
NO I AM NOT A DOCTORATE
আমি ডাক্তার।

পরীক্ষা পাশ করার সাথেই আমি পেয়ে গেছি
LICENCE !
মানুষ খুন করার পরম পবিত্র
LICENCE !
 পরীক্ষা পাস করার আগেই ওষুধ কোম্পানিগুলোর
হাতে হাত মিলিয়ে আমি ঘুরে এসেছি
নির্মল সমুদ্র সৈকতে অর্ধ নগ্ন রমণীর উপভোগ করেছি
সৌন্দর্য !
কি নাম সব মনেও পড়ে না
গোয়া নয় – নয় হে পুরী !
ছিল পাসপোর্ট
পোর্ট থেকে পাস হয়ে
গেছিলাম কোথাও !
প্রথম প্লেনে ওঠা
নির্মল জল চেখে দেখা
আহা হা হা হা আ হা !


আমি গান গাই
ওষুধ কোম্পানিদের অথবা
কোন কোম্পানির PACE MAKER বা STENT বসালে
কমিশন পাব বেশী
আমি গান গাই !
কর ফাঁকি দিয়ে – মানুষের মৃত্যুকে এনে ডেকে
আমি
আমি সাফল্যের গান গাই ! 

কারণ – কারণ আমি এক পবিত্র গাভী !

তুমি হঠাৎ উত্তেজনায় খুন করতে পার
সাজা হবে
আমার হবে না
কারণ - কারণ আমি এক পবিত্র গাভী
তাই আমি হাসি
দিনের শেষে বহুমূল্য ওয়াইন আমার রক্তে দেয় দোলা
আমি  -  শোন সবাই
আমি  - আমিই সেই মানুষ
যাকে সমাজ অধিকার দিয়েছে হাসিমুখে খুন করার
যাকে সমাজ আর রাষ্ট্র স্বাধীনতা দিয়েছে
ওষুধ কোম্পানির টাকার বিনিময়ে
দামি ওষুধ লেখার অথবা মানুষ মরে গেলেও
মেশিন চালিয়ে যাওয়ার
তার সাজা হয় না !
কি আনন্দ – আমি এক পবিত্র গাভী !

যে কোন অন্যায় করে না
কোন অন্যায় পারে না করতে
শুধু করে ভুল
সব কিছুর উপরে !
ডাক্তার এক পবিত্র গাভী। 

আত্ম উপলব্ধি।

মানুষের কথা বলার নামে,
আমি দূরে সরিয়ে দিলাম মানুষকে !
মানুষের ছোট ছোট আনন্দ – দুঃখ
ছোট খাটো চাওয়া পাওয়া,
ভুলে গেলাম,
বড় বড় স্বপ্নের কথা বলে !
সাধারণের সাধারণ চাওয়াকে অস্বীকার করলাম !

অহংকারী হয়ে উঠলাম - বললাম
শোন সর্বজনে ঠিক আমি, ভুল তোমরা সবাই
আত্মঅহমিকার জাল বড় পরাক্রান্ত
তাই তোমরা আমায় দূরে দিলে ঠেলে।

ভুল কি শিক্ষিত করবে আমায় ?
নিজের কাছে প্রশ্ন করি নিজে

উত্তর লুকিয়ে আছে সময়ের গভীরে।

24 June, 2014

আমার লেখা ছড়িয়ে থাকে এধারে ওধারে
কলম আঁচড় কেটে যায় সাদা কাগজে
একটা মানুষ খুঁজে যায় কাগজ
হারিয়ে যাওয়া শব্দ গুলো রাখে ধরে।
সেই মানুষটা – প্রতিদিন দেখি তাকে
সকাল থেকে বিকেল হয়ে সন্ধ্যা নামে
আসে ঘন রাত
দেখি তাকে – তাকে দেখি !
আমি অভ্যস্ত তাকে দেখতে দেখতে
সে আছে কিনা নেই
কিন্ত সে আমার সাদা কগজে লেখা শব্দগুলো
রাখে ধরে।
রাখে ধরে আমার জীবন – আমার সন্তান
তার ভালোবাসায় – উচ্ছ্বাসে ওঠে বেড়ে
তার প্রাপ্তি – ধ্যাত !
আমার লেখা শব্দগুলো জেনেছে আমার ভবিষ্যৎ
তুমি করেছ টা কি ?
ও তো ভবিষ্যৎ আমার
কাগজে লেখা হারিয়ে যাওয়া শব্দ গুলো
ছাপা হবে – সন্তান (পুং)
নাম ছড়াবে পুরুষের – নাম ছড়াবে বংশের
তুমি আমার সাদা কাগজ
ইচ্ছা মত এঁকে দিই
তুমি আমার
তোমাকে ভালোবেসে ঘৃণা করি।
তুমি নারী হতে পার
মানুষ হওয়ার অধিকার পাওনি
তুমি নারী হতে পার
পাবে না মানুষ হওয়ার অধিকার
তুমি আমার সন্তানের জননী হতে পার
সন্তানের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার
নেই তো তোমার।
তাহলে তুমি কি ?
জননী কিংবা এক শরীর
যাকে ব্যবহার করা যায় ?

23 June, 2014

কনভয়

সারি সারি গাড়ি পথ বেয়ে চলে
কনভয় নামে
কালো কাঁচের আড়ালেতে সুখী কিছু মানুষের মুখ
চোখ ঘেরা কালো চশমায় !

নেতা ওরা !
সামনে পিছনে সশস্ত্র প্রহরা
সদাই সতর্ক তারা
ওদের জীবন রক্ষায়,
জীবন ওদের বড় দামী !

বোমা ফাটে – চলে গুলি
বাজারে – দোকানে – ট্রেনে,
যেখানে মানুষ পথ চলে - মরে মানুষ !
কনভয় চলে
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী
(যদি হয় প্রাক্তন ক্ষতি কি)
বড় বড় নেতাদের কনভয় !

মানুষ খুনের অস্ত্র হাতে
সশস্ত্র প্রহরী পথ আগলায় !
মানুষ হয় সংখ্যা !
যে মানুষ ভোট দেয় নেতা বানাতে
১ – ২ – ৩ – ৪
কনভয় চলে

১ – ২ – ৩ – ৪ এর বুকের উপর দিয়ে।

22 June, 2014

প্রথম লেখা।

প্রথম কলম, প্রথম লেখা
প্রথম বলা স্বপ্ন কথা
কলম কেমন ? লিখছেটা কি ?
পড়ছে আঁচড় আটকায় নি !

প্রথম শিশুর পথ সে চলা
হাঁটতে গিয়ে একটু টলা,
একটু খানি গড়াগড়ি
প্রথম কালির ছড়াছড়ি

প্রথম কলম প্রথম হাঁটা
ফুলের মাঝে ভুলের কাঁটা,
প্রথম সে ভুল শুধরে নেওয়া
দৃপ্ত পদেই হেঁটে যাওয়া

কলম লেখে সবার কথা
জ্বালিয়ে দিয়ে বুকের ব্যথা,
সেই ব্যথাটাই গান হয়ে যায়

বিদ্রোহেরই আগুন ছড়ায়

পুজো

“আমার সোনার বাংলা / আমি তোমায় ভালবাসি”
(এখানে) অপরাজিতায় ধরে
ফেলে ঝোপের ধারে,
চার পাঁচ জন দানব
পাটা চিরে মারে।

“তোমার আকাশ তোমার বাতাস / আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি”
(এখানে) মা দুর্গা আসবেন ঘরে
১০০ দিনের পরে
(যেখানে) দুর্গার মুখে ওরা
অ্যাসিড ছুঁড়ে মারে।

আমার সোনার বাংলা / আমি তোমায় ভালোবাসি
ওরা মায়ের পুজো করে
পাটা চিরে মেরে,
বাংলা মায়ের মুখে
ওরা অ্যাসিড ছুঁড়ে মারে।

আমি তো এই বাংলা চাই নি !

তবু কেন প্রতিদিন কাগজ খুলতে ভয় লাগে ?

21 June, 2014

স্বপ্নকে হারিয়ে দেওয়া যায় না
অফ করা যায় না,
LAPTOP – TAB অথবা
টেলিভিশনের মত।
স্বপ্ন বাঁচে – সুদৃঢ় প্রতিজ্ঞায়
কোনও এক ভবিষ্যতে সত্যি হবে বলে।

20 June, 2014

পরিচয় !

তোমরা আমায় বলে দেবে আমি আসলে কি ?
আমার পরিচয় কি ?
আমি জানি না – বুঝতে পারি না
আমি কি শুধুই এক শরীর ?
যাকে স্বল্প পোশাকে দেখতে ভালো লাগে তোমাদের
যে কোন বিজ্ঞাপনে, খেলার মাঠে
অথবা পানশালায় !
যার অর্ধ নগ্ন শরীরটাকে চেটেপুটে খাও তোমরা
তোমাদের দু চোখের লালসায়
হ্যাঁ !
তোমরা আমাদের দেখবে বলেই নামিয়ে আন
মাঠে – ময়দানে তোমাদের পঙ্কিল চোখের আবিলতাকে
পরিতৃপ্ত করার আনন্দে পণ্য কর আমাদের।

আমি কি শুধুই এক যন্ত্র ?
সন্তান উৎপাদনের!
তোমাদের ঘরদোর পরিষ্কার রাখার VACCUAM CLEANER
অথবা তোমাদের কাপড় কাচার WASHING MACHINE
নিজেদের এই নির্লজ্জতাকে গোপন করার জন্য
তোমরা আমাদের পরিচয় দাও বড় সুন্দর নামে
জননী – ঘরণী – ভগিনী !
আমায় কর পুজো
দুর্গা – মহাদেবী – লক্ষ্মী আরও কত নামে
আমার পায়ে অঞ্জলি দাও !
আবার সেই নামে ডাকা আমাকেও
শিল্পের নামে তোমারই চোখের খিদেকে তৃপ্ত করতে
পরাও স্বল্প পোশাক !
আর তারপর ?

যখন প্রকাশ্যে অথবা অন্ধকারে
আমাকে ছিঁড়েখুঁড়ে খাও তোমরা
আমার পরিচয় কি তখন ?
নিজেদের রিরংসা চাপা দিতে
তোমরা আমার পোশাকের দোষ দাও
আমার চরিত্র নিয়ে তোল প্রশ্ন
আমি একা হাঁটছি কেন – জিজ্ঞাসা কর!

না চাইনা হতে ঘরণী – জননী – ভগিনী !
আমি ডাকিনী হব – রক্তপিপাসু এক শয়তানী হব
তোমাদের মুখোস ছিঁড়ে ফেলতে ভয়ংকরী হব।
আয় বোন – এসেছে সময়
হই ডাকিনী – হই শয়তানী
আমরা সবাই হই ভয়ংকরী ! 
কথার কোন শেষ হয় না
কাব্যের হয় শেষ,
শেষের মাঝে তবুও থাকে
জীবন গানের রেশ।

জীবন মানে বিশ্ব ভুবন
জীবন মানে আমরা,
জীবন মধুর স্বাদ খুঁজে নেয়
জীবন নামে ভোমরা।

সেই ভোমরার গুন গুণানি
বলছে শোন কথা,
জীবন পথের পথিক সবাই
জীবন বুকের ব্যথা।

ব্যাথার সুরে সুর মিলিয়ে
আনন্দ সুর ঝরে,  
দুঃখ ছাড়া সুখ যে কেমন

চিনতে কি কেউ পারে ?

যদি

সকালটা যদি একটু অন্যরকম হত,
একদিন – দুদিন – প্রতিদিনের চেয়ে
একটু খানি অন্যরকম।
তুমি – আমি – আমরা সবাই মিলে
মাত্র একবার সত্যি কথা বলতাম,

পৃথিবীটাই বদলে যেত চিরদিনের মত।

15 June, 2014

সুরে তালে নতুন কথায়
মন করে আনচান
সরল কথায় সহজ ভাষায়
গাইব নতুন গান।

সোজা মানুষ সোজা কথাই
বলতে পারি ভালো
সোজা কথার রঙে ছড়াই
জীবন দীপের আলো।

সোজা কথা ভুলছে সবাই
আজকের এই দিনে
সোজা সুরের মাঝেই খুঁজি
জীবন পথের মানে।

আমি মানে আমার মাঝে
লুকিয়ে আছে আমরা
তোমার সাথে আছে যেমন
জীবন ফুলের ভোমরা।
এই লেখা কোনদিন কি শেষ হতে পারে। আপনাদের যদি ভালো লাগে এ লেখা চলতে থাকুক অনন্তের পথে – আপনাদের শব্দে – আপনাদের সুরে। - শ্রীতোষ 

প্রতিবাদের অধিকার

আমি এক পুরুষ
হয়তো আমার পরিচয় আমি কারো
বা বা  কারো ভাই কারো স্বামী
ক্ষতবিক্ষত যোনির কষ্ট –
আমি কি করে পারব বুঝতে
কারণ কষ্ট বুঝতে গেলে
আমাকে যোনি সমৃদ্ধ হতে হয়।

অপরাজিতা মা – তোর কথা বলতে গেলে
তোর মত অত্যাচারিতা হতে হবে
না হলে প্রতিবাদ মিথ্যা হয় – তাই না !

নারী আজ পণ্য
জাঙ্গিয়ার বিজ্ঞাপনে মুখ  ঢাকে শহরটার
অজস্র চুম্বন মেখে গায়ে
অর্ধ নগ্ন পুরুষের আস্ফালনে
আমাকে সেই পুরুষ বা নারীর মত পণ্য হতে হবে
বিকৃত – বিক্রীত হতে হবে
রাস্তার মোড়ে মোড়ে  দাঁড়িয়ে দেখতে হবে
কি ভাবে আমার বোন – আমার স্ত্রী – অথবা
আমার মা
প্রতিদিনের খিদের জ্বালায় বিক্রি করছে
বিকৃত করছে নিজের আত্মাকে

তবে জন্মাবে অধিকার প্রতিবাদের ?

14 June, 2014

চিরন্তন

তোমাদের সুরে আজ সৃষ্টির গান
আমার বাঁশরীতে ধ্বংসের আহবান।

তোমরা  অরফিয়ুস
বাঁশীতে জাগাও জীবন
মেডুসা আমি
সহস্র ফণার হলাহলে
আহ্বান করি মৃত্যুকে।

তবুও তোমরা আর আমি বাঁচি সখ্যতায়
সৃষ্টি আর ধ্বংসের নিরন্তর সংগ্রাম
অরফিয়ুস আর মেডুসার প্রেম !

জয়ী হোক অরফিয়ুস
পরাজিতের অহংকার আমার

এই তো চিরন্তন। 

জীবন

জীবন এক বহতা নদী
কোথাও কি সে খুঁজে পায় কূল ?
শুধু বয়ে যায়।

জীবনের সাথে বয়ে যেতে চাই

জীবন হয়ে ।

জীবন যেন দুঃসহ এক মরুভূমি
তার মধ্যে ওয়েসিস জানি – বন্ধু।
সূর্যমুখীর কাছে সূর্য হারে
সৃষ্টির সামনে মাথা নত করেন স্রষ্টা,
মৃত্যুকে উপহাস করে হেসে ওঠে জীবন
(তাই) সূর্যমুখীর কাছে সূর্য হারে।
পার্ক ষ্ট্রীটের পথে সন্ধ্যা নামে,
উজ্জ্বল আলো আর উচ্ছল আনন্দের সন্ধ্যা।
পানীয়ের গ্লাসের শব্দ
আর নারী – পুরুষের সম্মিলিত হাসিতে
রাত্রি নবীন হয়।

বার ড্যান্সারের চটুল সঙ্গীতে
চমকে ওঠে পথ চলতি সাধারণ মানুষ
অবাক কৌতূহলে তাকায়
পানশালার বন্ধ দরজার দিকে
দরজার ওপাশে তখন ওড়ে টাকা
ধরার চেষ্টা কেউ করে না !
রাত গভীর হয়
হিম পড়ে।

শহরটার ফুটপাথে
সারি বেঁধে শুয়ে থাকে কিছু শরীর
কুণ্ডলী পাকানো,
ভালো করে না দেখলে বোঝা কঠিন
ওগুলো কি !
যেন লিকুইড চাদর গায়ে দিয়ে
শুয়ে থাকা শীতার্ত রাত
ভোরের উষ্ণতার অপেক্ষায়। 

09 June, 2014

সূর্যোদয় – সূর্যাস্তের মুখে
এক আকাশ রং ছড়িয়ে,
কবি লেখেন কবিতা
চিত্রকর আঁকেন ছবি।

সেই রং আলো হয়ে যায়
স্বপ্ন দেখায়,
সে রঙের রঙে রং মিলিয়ে
প্রজাপতি করে খেলা

পাখির কলতান
ভোরের আজান,
বাউলের মেঠো সুর,
আর সন্ধ্যারতির ঘণ্টার শব্দ
প্রদীপের আলো মেখে গায়ে
এক হয়ে বাজে 

07 June, 2014

দামিনী – নির্ভয়া – অপরাজিতা এবং এরকম আরও অনেকের জন্যঃ

আমি সেই চিল হতে চাই।
যার তীব্র নখরাঘাতে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাবে
অত্যাচারীর বুক – শোষকের গোটা শরীর
আমি সেই চিল হতে চাই।

আমি সেই ক্রোধ হতে চাই
যার পবিত্র আগুন পুড়িয়ে ছাই করে দেবে
পৃথিবীর সব শকুনিদের।
আমি সেই ক্রোধ হতে চাই।

আমি সেই পথ হতে চাই।
যে পথে দিনে কিংবা রাতে,
একাকী নিশ্চিন্তে নিজের সাথে
কথা বলতে বলতে তোমরা চলে যাবে
নিজের কাজে ।

ভালোবাসায় ভরা সেই পথ হতে চাই। - শ্রীতোষ ০৭/০৬/২০১৪

06 June, 2014

গলা পিচ, অসহ্য গরমে গাছের পাতাগুলো
জল চায়।
ঘামে ভেজা রৌদ্রে পোড়া মানুষ
একটু ছায়া খুঁজে পায়
উঁচু উঁচু হাইরাইজের পাশে।

দিন যায় আসে রাত,
ক্লান্ত দিনের শেষে
বিষণ্ণ রাত।
সময় পাশ কাটায় সময়কে
গরমে ও ঘামে !

বেলফুলের যুগ হয়ে গেছে পার।
তবুও
শহরপ্রান্তে
কোন চাঁপা ফুটে ওঠে,
কোন প্রিয় আর তার মানসীর জন্য।

নাগরিক জীবনের পথ পার হয়ে
গন্ধরাজের গন্ধ নিয়ে বুকে,
অসহ্য গরমে ঘামতে থাকা
কোনও কেউ,
বুক পকেটে লুকিয়ে রাখে
কিছু বেল ফুল।


বিষণ্ণ রাত হেসে ওঠে। 

05 June, 2014

বিশ্ব পরিবেশ দিবসে কিছু বলা।

উঁচু উঁচু বাড়ি গুলো দেয় চোখ ঢেকে
পাই না খুঁজে তাই আমার আকাশটাকে।
খোলা মাঠ, ধান জমি আর নীল আকাশের নীচে
ছুটে চলে গেছে আমার সে ছোট বেলা।

গ্রামের ছেলে 
সময়ের ডাকে - পেটের ডাকে
আমি আজ শহরবাসী।
শহর আমায় রুটি দিয়েছে
দেয়নি জীবন।

আমার ভালোবাসা
এখনও খুঁজে চলে
সেই নীল আকাশের সীমানায়
ছুটে চলা – হারিয়ে যাওয়া

আমার সে ছোটবেলা। 

03 June, 2014

একটি বাস্তব ঘটনা।

শুরুর কথাঃ 
এ লেখা উৎসর্গ করলাম শ্রদ্ধেয়া গীতা আচার্যকে এবং "সুনামি" তে গৃহহারা - স্বজন হারা মানুষদের। এই লেখাটি একটি বাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি করে লেখা। ২০০৪ সালের ২৬ সে ডিসেম্বরের সেই সুনামি পর আমাদের গীতাদি - শ্রদ্ধেয়া গীতা আচার্য নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটি দ্বীপে যান। সেখানে এই আরও অনেকের সাথে এই পরিবারটির সন্ধান পেয়েছিলেন এবং জানতে পারেন যে উদ্ধারকারী দল ওই লাল বেনারসীর সঙ্কেত দেখেই ওই দ্বীপে প্রথম পৌঁছায়। ফিরে এসে গীতাদি আমাদের এই ঘটনাটির কথা বলেন তার সাথে এটাও বলেন যে এই ঘটনাটি নিয়ে ওনার কিছু লেখার ইচ্ছা আছে। আমি গীতাদির কাছে অণুরোধ করাতে দিদি তা মেনে নিয়ে আমাকে এই ঘটনাটির উপর কাজ করার অনুমতি দিয়ে আমাকে চির কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করেছেন। নিজের কল্পনা মিশিয়ে লেখাটি শেষ করি ১০/০৮/২০০৫ তারিখে কিন্ত কোথাও প্রকাশ করিনি। আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রাক্কালে আপনাদের কাছে নিবেদন করলাম।

মেয়ের বয়স ষোল
বাবা বললে বিয়ে দেব।
দূর সমুদ্র পারে
জঙ্গল পাহাড় ঘেরা
এক দ্বীপের মধ্য থেকে
খুঁজে আনল
স্বপ্ন দেখা এক তরুণকে।
কাজুবাদামের বাগান আছে
নিজেদের বাড়ি
শক্ত সবল পুরুষ
চোখে স্বপ্ন অনাগত ভবিষ্যতের
আর কি চাই ?

সাধ করে মেয়ের হাতে তুলে দিল
লাল বেনারসী।
সাগর সৈকতে বিকাল বেলা
শেষ সূর্যের আলো যখন রাঙিয়ে দিচ্ছিল পৃথিবীকে
আগুন রঙা বেনারসীতে কি অপূর্ব লাগছিল মেয়েকে
তার চোখে জল – মুখে হাসি।

দিন কেটে যায়, বছর ঘোরে
মেয়ের কোলে এল সন্তান
দুই ছেলে আর এক মেয়ে,
মেয়ে হল মা।
স্বামী – সন্তান নিয়ে সুখের সংসার।

আস্তে আস্তে চুলে ধরে পাক
ছেলে মেয়েদের বিয়ের সময় হয়,
মেয়ে – মায়ের বড় আদরের
গলা জড়িয়ে ধরে মাকে বলে,
“মা তোমার ওই বেনারসীটা কিন্ত আমি নেব”।
বড় ছলে বলে – “না বোনটি
মা ওটা দেবে আমার বউকে”।
ছোট ছেলে কিছু বলে না
চুপচাপ চেয়ে থাকে।
মা হাসে – “কিরে তুই কিছু বলবি না”
“তোমার যা ইচ্ছা” – বলে সে।
মা অথবা মেয়ের বড় প্রিয় ওই
আগুন রঙা বেনারসী।

সেদিন সকাল –
প্রতিদিনের মত শুরু হচ্ছে
এক নতুন দিন।
হঠাৎ করে কেঁপে উঠল পায়ের তলার মাটি
সেকি ভীষণ কাঁপন !
চড় চড় করে দেখা দিল এক বিশাল ফাটল
একদিকের দেওয়াল ভেঙ্গে পড়ল
মড় মড়িয়ে !
চারিদিকে চিৎকার
মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকা যায় না
মনে হল আজই বুঝি শেষের সে দিন।

থামল কাঁপন – শান্ত হল পৃথিবী
হঠাৎ করে মেয়ে দেখল
সামনের নীল সমুদ্র সরে যাচ্ছে পিছনের দিকে তীরবেগে !
অবাক হল মেয়ে – এখন মা
রোদ আড়াল  করে
সাগরের দিকে চেয়ে বুঝতে চেষ্টা করল কি ঘটছে।
দেখল দূরে উঠছে দেওয়াল
শোনা যাচ্ছে গর্জন
শত সহস্র বাহু মেলে
তাদের চেনা সেই শান্ত সমুদ্র
এগিয়ে আসছে – এগিয়ে আসছে
সব কিছুকে গ্রাস করবে বলে।
পালাও ! পালাও সবাই !
স্বামী আর সন্তানদের নিয়ে
পাগলের মত ছুটল মেয়ে
কোন এক উঁচু জায়গার দিকে
কাঁটার খোঁচায়, পাথরের আঘাতে
রক্তাক্ত হল তার আলতা পরা পা
ছিঁড়ল কাপড়।
বাঁচাতে হবে – হবে বাঁচতে
হঠাৎ এক বিশাল ঢেউ
ছুঁড়ে দিল তাকে – তারপর
তারপর সব অন্ধকার।

জ্ঞান ফিরতে দেখলে
পাথুরে রুক্ষ মাটির উপর শুয়ে আছে
মুখের উপর ঝুঁকে আছে
স্বামী আর ছেলে – মেয়েরা।
আঃ
সবাই আছে তাহলে।
সমুদ্র রাক্ষস মুছে দিতে পারেনি সিঁদুর
কেড়ে নিতে পারে নই সন্তানদের।
আস্তে আস্তে উঠে বসে চাইল সামনে –
কিছু দূর থেকে শুরু হয়েছে জল
তার ঘর কোথায় গেল ?
কোথায় গেল সেই কাজুবাদামের গাছগুলো ?
তার যৌবন কালের প্রণয় মুহূর্তের সাক্ষী,
সাক্ষী বাচ্চা গুলোর বেড়ে ওঠার
তাদের শৈশবের অবুঝ দুরন্তপনার।
কিছু নেই – শুধু জল আর জল!

বড় ছেলে এগিয়ে এল
“মা সবই গেছে – বাঁচেনি কিছুই
শুধু এইটা ছাড়া”
বলে মার হাতে তুলে দিল সেই
আগুন রঙা বেনারসী।

হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে রইল মেয়ে
এখন মা –
“ছেঁড় এটাকে দু টুকরো করে,
একটা টুকরো চাঁদোয়া করে বেঁধে দাও –
সবাই ছায়া পাবে।
অন্যটা পতাকা করে বেঁধে দাও ওই গাছের মগডালে।
যদি কেউ দেখতে পায় বাঁচাবে আমাদের”।
বলল মেয়ে – এখন মা

তার বড় প্রিয় ওই আগুন রঙা বেনারসী।