11 May, 2020

দিনের শেষে ঘুমের দেশে


দিনের শেষে ঘুমের দেশে

আমরা কেউ সিগারেট - বিড়ি না পেয়ে
বড় কষ্টে ছিলাম।
কেউ কেউ মদ খেতে চেয়েছিলাম,
কেউ কেউ আড্ডা মারতে না পেরে বোর হচ্ছিলাম
ওরা এই সব কিচ্ছু চায় নি,
ওরা চেয়েছিল বাড়ি ফিরতে
ওরা বাড়ি ফিরতে চেয়েছিল।

আমরা আজ সিগারেট - বিড়ি খেতে পারছি
মদের দোকান খুলে গেছে।
আমরা ভি ডি ও চ্যাট্‌ - ফেসবুক লাইভে আড্ডাও মারছি।
ওরাও বাড়ি ফিরেছে,
সহস্র কিমি পথ পাড়ি দিয়ে বাড়ি ফিরেছে ওরা।
সদাশয় সরকার ওঁদের সকলকে বাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছে
কাঠের বাক্সে ভরে
বড় যত্ন করে -
শুধু রেল লাইনের উপর রুটি গুলো আছে পড়ে।

বাড়ি ফিরেছে ওরা!!!
ওঁদের বাড়িতে এখন শিশির ভোর
স্নেহের রোদে উঠোন গেছে ভরে।


এ আমার লেখা নয় এ লেখা
লিখেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ -
লিখেছেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী -
লিখেছেন আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ।

শ্রীতোষ ১১/০৫/২০২০

04 May, 2020

বন্ধ

শিকল ভাঙার গান নাকি শিকল ভাঙার শব্দ।
করোনা শৃঙ্খল ভাঙতে সামাজিক দূরত্ব একটা অন্যতম পন্থা।
তাই শিকল ভাঙতে হবে – দূরত্ব রাখতে হবে।
পাড়ার সেলুনে যাওয়া বন্ধ – বন্ধ ওই সেলুনে ব্লেড – জেল (সাবান) – আফটার সেভের ব্যবহার। বন্ধ সেলুন মালিকের রোজগার। ভাঙল শিকল।
বাইরে বার হওয়া প্রায় বন্ধ – জুতো পালিশের নেই দরকার। বন্ধ ওই মানুষগুলোর রোজগার।
ভাঙল শিকল।
বাসে চড়া বন্ধ – বন্ধ বাস কর্মীর রোজগার। ভাঙল শিকল।
বন্ধ ট্রেন - কানে আসে না হকারের চেনা চিৎকার - বন্ধ তার রোজগার। ভাঙল শিকল।
বন্ধ সামাজিক জমায়েত – বন্ধ বিয়ে – সাদি। ক্যাটারারের নেই দরকার! রাঁধুনে আছে যারা – আছে যত ওয়েটার – বন্ধ সবার রোজগার। ভাঙল শিকল।
বিয়ে – সাদি বন্ধ, হল না বর্ষ বরণ – হবে না অক্ষয় তৃতীয়া এইবার।
সোনা কেনা হল না এবার। বন্ধ কারিগরের রোজগার।
ভাঙল শিকল।
হাতে নেই টাকা – পুরানো জামাটার বদলে নতুন জামা যদি বা কেনা দরকার
থাক – চলুক আর কিছু দিন
বাইরে তো হতে হচ্ছে না বার
জামাটা রইল পড়ে – কারিগরের ঘরে
বন্ধ যে তার রোজগার।
ভাঙল শিকল।
এইরকম ভাবে ভেঙে চলেছে অজস্র শিকল।
মাঝে মাঝে কানে তালা লেগে যাচ্ছে এই শিকল ভাঙার শব্দে।
করোনা শিকল হয়তো ভেঙে যাবে একদিন কিন্তু
এই শিকল গুলো জোড়া বড় দরকার।
নইলে মানুষ বাঁচবে না আর।
তাই মনে হয় – আজ এসেছে সময়
আজ কোন এক কবি লিখুন শিকল জোড়ার গান
যে শিকল মানুষকে ভরসা দেবে।

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ

মানুষ যুদ্ধ দেখেছে -
প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
বোমা - গুলির আঘাতে,
ঘরে অথবা রাস্তায়
নগরে অথবা গ্রামে
প্রান্তরে কিংবা গ্যাস চেম্বারে
মরেছে কাতারে কাতারে
তারপর এল সেই দিন
এক সুন্দর সকালে
যখন নীল আকাশে উড়ে চলেছিল
সাদা মেঘের ভেলা
সেই প্রশান্ত আকাশ থেকে নেমে এল সভ্যতার আশীর্বাদ!
পৃথিবী থমকে গেল পলকের জন্য
সেই খন্ড মুহুর্ত স্থায়ী হয়ে গেল পৃথিবীর ইতিহাসে
ছাপ রইল আঁকা কংক্রিট দেওয়ালে!

৭৫ বছর পরে এসেছে আর এক বিশ্বযুদ্ধ
এ যুদ্ধে শত্রু আজও অচেনা
এ যুদ্ধ মানুষ কে বদ্ধ করেছে যে স্বাধীনতার জন্য আদি লগ্ন থেকে মানুষের সংগ্রাম
হারিয়েছে স্বাধীনতা
ধ্বস্ত আজ বিশ্বাস
দুর্বল মানুষ - ভীতু মানুষ
আশ্রয় নিত ধর্মের কাছে!
হায় রে মানুষ!
ধর্ম আজ ভীত মানুষের পরশ ভয়ে!
বন্ধ উপাসনালয় |
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে গল্প - উপন্যাস পড়েছি অনেক,
সিনেমা দেখেছি বেশ কিছু I
কোথাও ছিল না এমন বন্ধ পৃথিবীর কথা!
২য় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির ৭৫ তম
বার্ষিকীর প্রাক্কালে
আমি এক বন্ধ পৃথিবী দেখছি
লক্ষ লক্ষ মৃত শরীর দেখছি
আমি নিশ্চিত
আমি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ দেখছি!
শ্রীতোষ

চাওয়া

1.প্রিয় গন্ধ : নতুন বই।
2.শেষ কান্না : সেটা কি হবে জানি না কারণ শেষ কান্নার অনুভূতি লেখার শক্তি আমার হাতে থাকবে না (কারো হাতে ছিল বলে জানিও না)
3:প্রিয় ফুল : ফুল আবার ভালো খারাপ আছে নাকি, আমার তো সব ফুলই ভালো লাগে। (একটু আলাদা করে বললে শিউলি)
4:প্রিয় জীব : আলাদা করে দেখিনা, সবই সমান (তবে কিছু দো পেয়ে জীব যাদের মানুষের মত দেখতে হলেও মানুষ নয় তাদের অতিরিক্ত বেশী ভালোবাসি)
5:প্রিয় আইসক্রিমঃ বরফ আইসক্রিম তারপর চকোলেট (কেউ খাওয়াতে এলে মুস্কিল একসঙ্গে ৮/১০ টা খেয়ে নিই)
6:প্রিয় রংঃ নীল - আকাশী।
7:গান চলে তো? আমি সুর ভালোবাসি। ভারতীয় এবং পাশ্চাত্য ক্ল্যাসিকাল ভোক্যাল মাথায় ঢোকে না, মাথা ধরে যায় (তবে ক্ল্যাসিকাল বেস ভোক্যাল যেমন “কা ক্রু সজনী আয়ে না বালম” বা “বেহাগ যদি না হয় রাজি” জাতীয় গান অসাধারণ লাগে)
8:প্রিয় tv show : এক সময় দেখতাম। তেরো পার্বণ, নুক্কড়, আরও অজস্র নাম আছে। এখন দেখি না ।
9:ট্যাটু : ভালো লাগে না।
10: মিষ্টি : নরম, তুলতুলে রসগোল্লা।
11:বিড়ি , সিগারেট : ছেড়ে দিয়েছি
12:রাতচড়া না ভোরেওঠা : মুডের উপর নির্ভর
13:সপ্তাহের ভালো দিন : যদি মনে হয় তাহলে প্রতিদিন
14:ডাক নাম : অজস্র। বাবু, বাবুরাম, গোবলা, সোনা, মোটা, (আর একটা নাম শুধু একজন উচ্চারণ করে তাই তাঁর জন্যই থাক)
15:প্রিয় ঋতু: রুদ্র বৈশাখ আসে ধরাকে পুড়িয়ে ছাই করে দিতে আসে নর্তন ছন্দে, ধ্বংসের উদ্দাম আনন্দে। সেই ধ্বংসের মাঝে ঝরে ধারা – জাগে সৃষ্টির বীজ। সেই বীজ কে পূর্ণতা দিতে আসে বর্ষা। রুদ্র বৈশাখ আর কিশোরী বর্ষার মিলনে ধরিত্রী জন্ম দেয় সন্তানের। আসে শরৎ! ছোট্ট ছোট্ট পায়ে ঠিক পৌঁছে যাব – ওই চাঁদের পাহাড় ঠিক দেখতে পাব। মাথা দোলায় ধানের শীষ – জাগে কাশ ফুল। পৃথিবী নবীন হয়। পা বাড়ায় পূর্ণতার দিকে.। নতুন ভাতের গন্ধ গায়ে মেখে আসে হেমন্ত। একই সাথে ডাক পড়ে চলে যাওয়ার – পাতা ঝরানোর সময় শুরু হয়। আসে যে পউষের বেলা। জীবনের শেষ তো শেষ নয়, সে আহ্বান জানায় নতুন জীবন কে – পায়েস মুখে দিয়ে আসে নতুন জীবন, আসে বসন্ত। তাই কাউকেই তো আলাদা করতে পারি না। সব্বাই আমার কাছে ভীষণ প্রিয়।
16:পাহাড় না সমুদ্র : পাহাড় , মালভূমি, সমুদ্র – আসলে প্রকৃতি এবং তাঁর সাথে মিশে থাকা মানুষ।
17:সদাই হারাই : নিজেকে।
18: বিরিয়ানি : বিরিয়ানি দূর! ওটা হল সিনেমার নায়িকা। প্রেমে পড়েছি সাদা – ভাত আর কষা মাংসের। পরকীয়া প্রেম পোলাও – কষা মাংস। প্রিয় বান্ধবী – খিচুড়ি এবং খিচুড়ি
19:স্কুলে ফিরে যাবো? কেন? : অবশ্যই। অনেক ভুল করেছিলাম, সে গুলো যদি আবার শুধরে নিতে পারি।
20:ভালোবাসা ও ভালোবাসার মানুষ : সে ছিল , আছে এবং থাকবেও চিরটাকাল ।
21:স্কুল বন্ধু নাকি কলেজ ? : অবশ্যই স্কুল । সময়ের সাথে সাথে অনেক নতুন বন্ধু যোগ হয়েছে।
22: ঘোরার ইচ্ছা : নিজের দেশ টাই দেখা হল না।
23:ধর্ম : মানুষকে ভালোবাসা
24:ঘৃণাঃ টিকি এবং দাড়ি ধারী সেই দো পেয়ে গুলোকে যারা ধর্মের নামে ঘৃণা ছড়ায়।
25: প্রিয় পোশাক : পাজামা - পাঞ্জাবি
26: চেষ্টা : যা এখনো পারি নি, একজন মানুষ হয়ে বাঁচা।
27: শেষ ইচ্ছা: মঞ্চে অভিনয় করতে করতে জীবনের উইংসে ঢুকে যাওয়া! No Curtain Call.
যদি ইচ্ছা হয় তাহলে নিজেদের মত করে লিখুন এবং সকলের সাথে নিজের অনুভূতি ভাগ করে নিন।

কুর্ণিশ

করোনা যুদ্ধের সৈনিক দের ফুল ছড়িয়ে কুর্ণিশ সেনার
প্রবাসী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরাতে ট্রেন ভাড়া চাইল রেল!
এই দুটোই সংবাদ।
তাই বলিঃ
ওই শ্রমিকরাই কিন্তু সেনারা এবং করোনা যুদ্ধের সৈনিক রা যে বাড়িতে থাকেন সেটা তৈরি করেন
ওরা যে টুথপেস্টে দাঁত মাজেন -
যে বাসনে খাবার খান -
যে ঘড়িটায় সময় দেখেন -
যে গাড়িটায় চড়ে কাজের জায়গায় যান -
যে ট্যাঙ্ক - রাইফেল দিয়ে যুদ্ধ করেন -
যে প্লেন টায় উড়ে গিয়ে ফুল ফেললেন (তার প্রতিটা নাট - বল্টু-
যে ইউনিফর্ম পরে আছেন তার বোতাম টা পর্যন্ত
প্যান্টের জিপটাও -
ওই রকম ই কোন শ্রমিকের শ্রমে তৈরি
ওরা চিরকাল ধরে থাকে হাল
রাজচ্ছত্র ভেঙে পড়ে
রণ ডঙ্কা শব্দ নাহি তোলে
স্লোগান যত উচ্চারিত রাজার প্রশস্তি গেয়ে
শব্দ গুলি অর্থ তার ভোলে
নগরে - প্রান্তরে একমাত্র ওরাই কাজ করে
তাই রাষ্ট্রের আঘাত নামে ওদেরই পরে
সহজ বধ্য ওরা
ওরা একতা হীন
ধর্ম নামক এক নির্মম বাঁধনে বাঁধা
কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের পোষা ---
ওরা কাজ করে
না একটা ফুলও প্রাপ্য নয় ওদের
তাজ মহল অথবা কুতুব মিনারের পাথরে
কোনারক অথবা অজন্তা - খাজুরাহোর প্রাকারে
ইতিহাস লিখেছে কি ওদের নাম?
দিল্লীর অথবা জয়পুরের যন্তর মন্তরে,
অশোকের ওই শিলা প্রস্তরে
জাতীয় প্রতীকের চার সিংহের উপরে
কেউ কি লিখে রেখেছে
স্রষ্টার নাম?
কে করেছিল সৃষ্টি তার?
কৃতিত্ব শুধুই রাজার!
শত শত সাম্রাজ্যের ভগ্ন শেষ পরে
ওরা কাজ করে
তাই আজও হাততালি - প্রদীপ - ফুল
কিছুই নয়
ওদের তরে
ওরা লায়াবিলিটি আজ
বিনা পয়সায় ট্রেন যাত্রা নয় ওদের তরে।
ওরা কাজ করে

করোনা যুদ্ধের সৈনিক এবং তাঁদের সম্মান জানানো সেনাবাহিনীকে সম্মান জানিয়ে
ভারতের সেনাবাহিনীকে যারা এই অসামান্য কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন তাঁদের সম্মান জানিয়ে
ভারতের সংবিধান মেনে চলা এক সামান্য নাগরিকের অভিনন্দন বার্তা।
শ্রীতোষ ০৩/০৫/২০২০
কৃতজ্ঞতা স্বীকার: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

জ্বালা

বন্ধু আর যে লিখিতে পারি না
বড় বিষ জ্বালা এই বুকে
দেখিয়া শুনিয়া খেপিতে চাই
যাই চাই তাহা আসে না কো মোর মুখে
শুধু বলে যাই
যারা দিতে পারে না ওই শ্রমিকের মুখে তুলে
একটি গ্রাস
ওই শ্রমিকের বুকের জ্বালায় যেন লেখা হয়
তাদেরই সর্বনাশ!

স্মরণে ও নমনে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম