29 October, 2014

একটি গ্রামের কথা



বহুদিন আগে এক দেশের এক গ্রামে এক চাষি ছিল। চাষির প্রথমে অন্যের জমি চাষ করত কিন্ত যেহেতু তার বুদ্ধি অতি প্রবল ছিল সে ধীরে ধীরে নিজের দুঃখ দুর্দশা এবং তার মত গ্রামের অন্যান্য চাষিদের দুঃখের কথা শুনিয়ে তাদের মনের কাছে পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করতে লাগল। গ্রামের মোড়ল মশাই খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি সব সময় চেষ্টা করতেন গ্রামের কি করে ভালো হয়, গ্রামের বেশীর ভাগ মানুষ কি করে ভালো থাকতে পারে। এই সব করতে গিয়ে তাকে প্রয়োজনে অনেক কটু কথা বলতে হত – কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হত, তার ফলে গ্রামের এক অংশের মানুষের তার উপর বেশ রাগ ছিল। সেই রাগ আস্তে আস্তে বাড়ছিল। এই চাষিটি তার সুযোগ নিল পুরো মাত্রায়। সে সেই সব মানুষদের বোঝাল যে আগে এই মোড়লকে সরিয়ে দাও – তাহলেই দেখবে তোমাদের উপর যে অবিচার হয়েছে তার সুবিচার পাবে। তারা ও দেখল এই তো বেশ ভালো সুযোগ – আগে আমরা বলি পরে কি হবে দেখা যাবে, আগে তো সরাও। এই ভালো লোকটা সরে গেলেই ব্যস !
তারপর – তারপর যা হবার তাই হল। এক মিথ্যা কথা বার বার বলতে থাকলে যা হবার তাই হল। গ্রামে পঞ্চায়েত ডাকা হল। সেখানে বেশীর ভাগ মানুষ বলল – এই মোড়ল পাজি, বদমাশ, খালি নিজের সুবিধা দেখে – আমরা আর একে চাই না। কিছু ভালো মানুষ বোঝাতে চেয়েছিল কিন্ত এদের চোখে তখন মায়া কাজল।
এবার চাষির সুযোগ। সবাই মিলে তাকেই মোড়ল বানাল। চাষি কিন্ত একটা কথা খুব ভালো মত জানত। সে জানত মানুষের চোখে মায়া কাজল বেশী দিন থাকবে না, কাজল মুছে যাওয়ার আগে যা করার তা করে নিতে হবে। তাই সে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার সম্পত্তি বাড়িয়ে তুলতে লাগল ফলে তাকে সোজা পথ ছেড়ে বাঁকা পথ নিতে হল (অবশ্য সোজা সে কোন দিন ছিল না – ওটা ছিল তার মুখোশ)। চাষির এখন বেশ ভালো সম্পত্তি – গোয়ালে অনেক গাই – বাছুর। দু –চারটে মোষ আর ষাঁড় ও আছে। তাদের দিয়ে চাষ করাও হয় – গাড়িতে জুতে এখান ওখান যাওয়া – আসাও যায়। শুধু তাই নয়, চাষি আর এক বুদ্ধি বার করেছিল। গ্রামে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বললেই রাতের বেলা বা গ্রামের রাস্তা যখন একটু ফাঁকা সেই সময় প্রতিবাদী লোক গুলোর বাড়ির কাছে তাগড়া ষাঁড় বা মোষ গুলোকে নিয়ে ল্যাজ মুচড়ে ছেড়ে দিত। এবার যা হবার তাই হত – সে গুলো ওই লোক গুলোর মাঠের ফসল নষ্ট করত, বাড়ি – ঘরদোরে ঢুকে তা লণ্ডভণ্ড করত। যখন লোকে তাকে সেই সব ঘটনা নিয়ে কিছু বলত, সে মিষ্টি হেসে হাত জোড় করে  বলত – “আহা, ওরা আমার পোষা ঠিকই কিন্ত ওদের কি কোন বোধ-বুদ্ধি আছে। ওরা অবলা, না বুঝে করে ফেলেছে। এক সাথে থাকতে হলে একটু মানিয়ে গুছিয়ে নিয়ে চলতে হয়। আর আমি কি করতে পারি বল তোমরা – আমি কি ওদের মারব !  তাতে তোমাদের মনে শান্তি হবে তো”?
গ্রামের লোক কিন্ত আস্তে আস্তে চাষির আসল রূপ দেখতে পাচ্ছিল। বুঝতে পারছিল কি ভুল তারা করেছে ! আগের মোড়ল কড়া কথা বলত – প্রয়োজনে শাস্তি দিত কিন্ত গ্রামের ভালো করার চেষ্টা করত সব সময়। আর এখনকার মোড়ল ! থাকে সেই পুরানো তালপাতায় ছাওয়া ঘরেই কিন্ত তার জমি – জিরেত শুধু গ্রামে নয় গ্রামের বাইরেও আছে এখন। যখন তখন খাজনা বাড়াচ্ছে – নিজের পছন্দের লোকদের ইচ্ছা হলেই দামী দামী উপহার দিচ্ছে, তার পছন্দের লোকেরা কোন অন্যায় করলে গ্রামের চৌকিদার দেখতেই পায় না। তাকে এই নিয়ে কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে চৌকিদার এসে তাকে ধরে নিয়ে পুরে দেয় আলো ঢোকে না এমনই এক ঘরে। কি সাহস – মোড়ল মশাইয়ের বিরুদ্ধে কথা !
এদিকে কিন্ত আর এক বিপদ বেঁধেছে। ল্যাজে মোচড় খাওয়া মোষ আর ষাঁড় গুলোর এমন অভ্যাস হয়ে গেছে যে সারা দিনে কাউকে গুঁতোতে না পারলে ওদের একদম ভালো লাগে না। এদিকে মোড়লের ভয়ে লোকে রাস্তায় আর তার বিরুদ্ধে কথা বলে না, তাঁরা তৈরি হতে থাকে কঠিন প্রতিজ্ঞায় শক্ত চোয়ালে তাঁরা তৈরি হতে থাকে। ষাঁড় আর মোষ গুলো কিছু না পেয়ে শেষ পর্যন্ত চৌকিদার আর তার দল বলকে তাড়া করতে থাকে, মাঝে মাঝে গুঁতিয়েও দেয়। চাষি দেখল এ ত মহা বিপদ – আমার ষাঁড় আমাকেই গুঁতোয়। ভাবতে থাকে কি করা যায়, এদিকে রাজা মশাইয়ের কানে খবর গেছে পৌঁছে – পৌঁছে গেছে সেনাপতির কাছে, মহা ধর্ম্যাধক্ষ আদেশ দিয়েছেন সব কিছু খতিয়ে দেখার। রাজা মশাই উপায় না দেখে গুপ্তচর বাহিনী পাঠিয়ে দিয়েছেন গ্রামে। চাষির সব অন্যায় ধরা পড়তে শুরু করেছে – গ্রামের মানুষ সব জানতে পারছে।
কি হবে উপায় – কি হবে উপায় ? এর মধ্যে একদিন হয়ে গেল আর এক বিশাল কাণ্ড – নিজের পোষা সেই ষাঁড় আর মোষ গুলো গোয়ালের মধ্যেই এমন গুঁতোগুঁতি করল যে দু টো বাছুর গেল মারা। আর কোন উপায় না দেখে চাষি একটা তাগড়া ষাঁড়কে গোয়াল থেকে বের করে আনল (মনে মনে ভাবল একটা ষাঁড়কে বের করে দিলে আমার কোন ক্ষতি নেই, গোয়ালে আরও বেশ কটা আছে কিন্ত লোক কে তো ভুল বোঝাতে পারব দেখ আমি সেই আগের মতই সরল সোজা মানুষটাই আছি) তার পর চেঁচিয়ে বলল –“গ্রাম বাসীরা এই দেখ এই ষাঁড় টা আমার কত প্রিয় ছিল, আমার বড় আদরের ছিল কিন্ত ও এখন বেয়াড়া হয়ে গেছে, আমার কথাও আর শুনছে না, তাই আমি ওকে আমার গোয়াল থেকে তাড়িয়ে দিলাম”। বলছে আর ভাবছে ছিল আমার গোয়ালে এবার চরে বেড়াক সময় মত ঠিক ধরে আনব এর মধ্যে যার ফসল নষ্ট করে করুক, যার ঘর ভাঙ্গে ভাঙ্গুক, আমাকে তো আর দোষ দিতে পারবে না কেউ।
পুরানো পুরাণ কথা পড়তে গিয়ে গল্পের এইটুকু খুঁজে পেয়েছি বন্ধুরা। আমার মনে হয় গল্পটা বোধ হয় এখানেই শেষ নয়, আরও আছে। দেখি, খুঁজতে হবে। আর একটা কথা এই গল্পের সাথে এখনকার কোন ঘটনার মিল যদি কেউ খুঁজে পান তার দায়িত্ব আমার নয় – তা আপনাদের কল্পনা মাত্র।

28 October, 2014

মনের মানুষ

হতেই পারে আকাশ কালো
               তবুও মনে জ্বালাও আলো,
দীপ নেভানো মনটি যাদের
               পথ হারানোর ভয় যে তাদের।

মন ভরা যার ভালোবাসায়
               নিজে কেঁদে পরকে হাসায়,
সেই মানুষের হাতটি ধরে
               দুঃখ বাদল যায় যে সরে।

তাই তো আমি বলছি ভাই
               সে জন কে আজ সঙ্গী চাই,
নতুন প্রভাত সেই তো আনে
               ভৈরবীর ই মধুর তানে।।

12 October, 2014

ফুটপাথ থেকে শুরু হয়ে যাঁদের জীবন শেষ হয় ফুটপাথে -  তাঁদের উৎসর্গ করলাম এই লেখা নাগরিক সেই নাগরিক সমাজ যারা পুজোয় একটা নতুন জামা দিয়ে নাম কেনে – ছবি ছাপায় আমার মত  আর যারা অন্যরকম কিছু ভাবে – ভাবাতে চায় তাঁদের বো ও কা বলে করে বিদ্রূপ সেই নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে ।

কখনও ভাবি বাঁচব একা
একদম নিজের মত করে,
ছোট্ট ভালোবাসায় বাঁধব নিজের ঘর।
তাকাব না চারিদিকে
আসুক আলো অথবা অন্ধকার ঘন
কি এসে যায় তাতে
নিভৃত নিরবে বাঁচব
সেই বদ্ধ ছোট্ট ঘরে
নিজের তৈরি একান্ত জগতে।

যখন পা হাঁটবে পথে
ফুটপাথে পড়ে থাকা নোংরা ছিন্ন বিছানার
একপাশে তুমি
চিনব না তোমায় – তুমি মা !
ছিন্ন কাপড় পারে নি ঢাকতে লজ্জা তোমার
মা গো, সন্তানের মুখ খুঁজে ফেরে
তোমার অনাবৃত স্তনের
মাতৃধারায় পুষ্ট হতে চায়
দুধ নেই মা
আছে পথ চলতি হায়নাদের কামুক চাহনি
ওরা মাকে দুর্গা বলে পুজো করে !

তোমার অন্য পাশে নেশাগ্রস্ত ঘুমে
অথবা নীরবে চেয়ে
কাঁধের পেশীতে নীল শিরা ওঠে ফুটে
শিব মহেশ্বর
চামড়ার নিচে পাঁজর যায় গোনা
ফুসফুস বড় কষ্টে নেয় শ্বাস
ফুটপাথে পড়ে থাকা মহেশ্বর
দুর্গাকে বড় ভালবাসে।

আমার একা থাকা – এক পথচলা
মিথ্যা হয়ে যায়
তখন আমার একাকীত্ব যায় মুছে
আমি এক থেকে বহু হতে চাই
ফুটপাথে বেঁচে থাকা দুর্গা আর মহেশ্বরের জন্য

আমি থেকে আমরা হয়ে যাই।