14 March, 2020

দেশপ্রেমিক ও সীমান্ত প্রহরী

দেশপ্রেমিক বক্তব্যঃ
তুমি চাও যখন
খাদ্য – বস্ত্র – বাসস্থান
আমি বলি
“হাতে নাও অস্ত্র
দেশের সীমান্তে কর অবস্থান।“

তোমাকে আমি বলতে শেখাই
(আমার নীতির বিরুদ্ধে যারা
তাদের প্রতি)
“সীমান্তে দাঁড়িয়ে আমি
তাই তোমরা নাগরিক সমাজের
কথা বল"!!!
আমি তোমাকে কখনও
বলতে শেখাব না
“সীমান্তে দাঁড়িয়ে আমি
তাই তোমরা আমার দেশকে
বেচে ফেল।
আমাদের নেই কোন ধর্ম
নেই কোন হিন্দু – মুসলমান।
সীমান্তে দাঁড়িয়ে আমি
তোমাকে দেশ বেচার অধিকার দিলাম”।

উত্তর আসেঃ
আমি সীমান্ত প্রহরী ছিলাম
আমার অস্ত্র তুলে
আমি আমার দেশের নারীর
সীমন্তের সিঁদুর রক্ষা করেছিলাম
অথবা তাকে বেওয়া হতে বাঁচিয়েছিলাম
তার বদলে আমি কি পেলাম
দেশের ভিতরে,
তোমার সৃষ্টি করা উত্তেজনায়
অজস্র সীমন্তের সিঁদুর গেল মুছে
অজস্র রমণী বেওয়া হল
অজস্র সন্তান তার বাবা অথবা আব্বাকে হারাল
আমি নীরবে দেখলাম।
হয়তো আমার স্ত্রীর সীমন্ত আজ খালি
আমার স্ত্রী ও আজ বেওয়া
তোমাদের তৈরি করা
রক্তের হোরি তে!

প্রতিটি দেশের আমরা
অস্ত্র তুলে ধরি,
অন্য দেশের
আমাদের দিকে,
তোমাদের কথায় নেচে।
আজ আমার দেশের এক আমি বলছি
সামনে আসছে সময়
যেদিন প্রতিটি দেশের আমরা
হোলি খেলব কারণ,
সেদিন আমরা আমাদের রাইফেল
তুলে নেব – ট্রিগারে থাকবে আঙুল
লক্ষ্য হবে স্থির।

আমাদের একের অন্যের দিকে নয়
তোমরা যারা আমাদের রক্তে দোল খেল
তোমরা যারা ভিন্ন ভিন্ন নামে,
ভিন্ন নামে গোটা পৃথিবী জুড়ে
আমাদের লুট কর,
আমাদের স্ত্রীদের সীমন্তের সিঁদুর মুছে দাও
অথবা বেওয়া বানাও
সেই তোমাদের বুকের দিকে।
লুটেরার দল
আসছে সে দিন
সব দেশের সৈনিকের নামে
আমি বললাম।
শ্রীতোষ ০৯/০৩/২০২০

03 March, 2020

আমি দেশপ্রেমী হব

চমকে উঠবেন না বন্ধুরা
এতদিন আমি মানুষ ছিলাম
এবার আমি দেশপ্রেমী হব
আমি ত্যাগের গেরুয়া পোশাক গায়ে পড়ব
আমি মুসলিম দের ঘৃণা করব
আমি পাকিস্থানে ভিসা হাতে নিয়ে
সব মুসলিমদের পাকিস্থানে পাঠিয়ে দেব
আমি দেশ প্রেমী হব।

তারপর আমি এক হিন্দু বামুন হব
পদবী বন্দ্যোপাধ্যায়
ফলে ব্রহ্ম জ্ঞান না থাকলেও
ব্রাহ্মণ হতে বাধা নেই কোন
দেশপ্রেমিক ভারতে।
আমি এক হিন্দু বামুন হব
সেদিন আমার পায়ে পদানত ঐ
ঘোষ গোয়ালার দল
আমার পায়ে পদানত বোস কায়স্থ
আমি সমাজ শ্রেষ্ঠ বামুন!
সেদিন আমি বলব
আমার কথা না শুনলে
ঘোষ কে গুলি করব!
সেদিন বাঙালী বামুন
ঘোষের মেয়েকে তার ফুল শয্যার রাত্রে ডেকে নেবে
নথ ভাঙ্গানীর জন্য!
ঘোষের জামাই প্রতিবাদ করবে?
ঘোষ কি বলবে কোন কথা
যদি বলে
বাঙালী বামুনের হাতা - পাতারা বলবে
গুলি মার শালাকে।
ওরে দেশ প্রেমিক বাঙালীর দল
কেন আমার বয়স আজ ৫০
আমার তো এখনই গুলি করতে ইচ্ছা হচ্ছে তোদের
তোরা যারা বন্দ্যোপাধ্যায় নয়
অথচ ঘরে আছে কুমারী মেয়ে অথবা বোন
আন না হিন্দু ভারত
(হিন্দু শব্দের অর্থ না জানা তোদের ভারত)
আমি লুটে পুটে খেতে তৈরি
তোদের ঘরের
অনাঘ্রাতা কুমারী কন্যার যৌবন
রাতের অন্ধকারে!
(যে তোদের ছায়া মাড়ালে পাপ হয়
উচ্চ বর্ণের ভারতের - দিনের বেলায়)
মুসলমান হীন ভারত উন্মুক্ত করুক
মানুক চতুর্বর্ণ
নিজের মা - বোনকে উন্মুক্ত করুক
উচ্চ বর্ণের ভোগের অপেক্ষায়
এক বামুন আমি
আমার জিভ উন্মুক্ত গেরুয়া লালসায়
এক বাঙালী হয়ে থাকব কি অপেক্ষায়
কোন এক দ্বেষ প্রেমিক বাঙালীর উত্তরের অপেক্ষায়
শ্রীতোষ ০৩/০৩/২০২০

02 March, 2020

পেমা - একটি সিনেমার নাম

সিকিমের প্রথম ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল হয়ে গেল গত ২৮/০২/২০২০ থেকে ০১/০৩/২০২০ পর্যন্ত। গতকাল বেলা তিনটের সময় ছিল "মিতিন মাসি"। আগে একবার দেখা, তবুও দ্বিতীয় বার দেখতে গেছিলাম কিন্তু তা দেখতে গিয়ে আর একটি সিনেমা দেখার সৌভাগ্য হল, তার কথাই লিখছি।

ছবির শুরু হচ্ছে এক বৌদ্ধ পুরোহিতের জবানিতে। তাঁকে ডাকা হয়েছে কোন এক জনের শেষ কৃত্যের সময় উপস্থিত থাকার জন্য। পথ চলতে চলতে তুলে ধরছেন তাঁর জীবনের কথা।

এক সময় তিনি অন্যদের মতই সংসারী ছিলেন। নিজের স্ত্রী কে খুব ভালবাসতেন - দুজনের ছিল ভালোবাসার সংসার। একদিন বাইরে থেকে এসে স্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন পুঁতির মালা, স্ত্রী র মুখের হাসি দেখে মনে হয়েছিল নব রত্নের মালা তাঁর জন্য নিয়ে এসেছে কেউ। আর এক দিন তিনি ছবি আঁকছিলেন, স্ত্রী নিয়ে এলেন জলখাবার। হঠাৎ করে তাঁর দিকে চেয়ে তাঁর স্ত্রী প্রশ্ন করলেন
"আমি যদি আগে মারা যাই, তুমি সেই সময় আমার পাশে থাকবে তো?" উনি কোন উত্তর দেন নি, শুধু পরম ভালোবাসায় দুটো হাতে চেপে ধরেছিলেন স্ত্রীর হাত। আর এক দিন তিনি বাড়ি ফিরে স্ত্রীর খোঁজ করছেন, ঘরের দরজা বন্ধ। দু এক বার ধাক্কা দেওয়ার পরে দরজা খুললেন স্ত্রী, বললেন "শরীর ভালো লাগছিল না, তাই শুয়ে ছিলেন"। তাঁর মনে সন্দেহ, নিশ্চয় ঘরে ছিল অন্য কেউ। প্রচণ্ড রাগে তিনি তাঁকে বললেন, "তুমি চলে যাও, আর যেন তোমাকে না দেখি"। অভিমানে স্ত্রী তুলে নিলেন ঘরে থাকা নিজের ছবিটি - বললেন "তুমি আর আমায় দেখবে না কোনদিন"।


এরপর আমরা দেখি নিজের ছবিটি বুকে চেপে ধরে স্ত্রী দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক পাহাড়ি নদীর ধারে। ওদিকে স্বামী অপেক্ষা করে রয়েছেন, নিশ্চয় অভিমান কমে গেলে মনের মানুষ ফিরবে তার ঘরে। সময় কাটে, অস্থিরতা বাড়ে, তিনি ছুটে যান সেই নদীর ধারে, দেখতে পান পাথরের উপরে পড়ে আছে, সেই মালাটি। পাথরের উপর লুটিয়ে পরে মালাটি বুকে চেপে স্ত্রীর নাম ধরে চিৎকার ওঠেন তিনি। ঘর থাকে ঘরের মত পড়ে, তিনি ও ঘর ছাড়া মনের মানুষের খোঁজে, তাঁকে ফিরিয়ে আনতে।

একদিন চলে যান এক মনাস্ট্রিতে - শরণ নেন প্রভু বুদ্ধের কিন্তু প্রতি দিনের কাজের ফাঁকে একটি কাজে ছেদ পড়ত না কোন দিন - দিনের শুরুতে স্ত্রীর মঙ্গল কামনায় (নাকি ভালোবাসায়) একটি প্রদীপ জ্বালিয়ে দেওয়া তে।

তিনি পৌঁছে গেছেন সেই বাড়িতে যেখান থেকে ডাক এসেছে তাঁর। জিজ্ঞাসা করেন "কে মারা গেছেন?" উত্তরে তাকে রাখা একটি ছবি দেখানো হয় তাঁকে। তাকিয়ে দেখেন তাকের উপরে রাখা সাদা - কালো ছবিটি তাঁর স্ত্রী পেমার। তিনি ভাবেন "যেদিন জ্বালানো হল না সে প্রদীপ, সে দিন ই নিভল তোমার জীবন প্রদীপ!" পোশাকের ভিতর থেকে বের করেন সেই মালাটি - রেখে দেন স্ত্রীর ছবির সামনে।

ছবি শেষ হয়। হ্যাঁ, নাম লিখতে ভুলে গেছি, ছবিটির নাম

"পেমা"

সাত মিনিটের ছবি - নেপালী ভাষায়

এ ছবিটি এক আদর্শ ছোট গল্প - "শেষ হয়েও যা হয় না শেষ"। ধন্যবাদ পরিচালককে সংযম বজায় রাখার জন্য কারণ ঐ মালা রেখে দেওয়ার দৃশ্য টিই ছিল ছবির শেষ দৃশ্য।

প্রসঙ্গতঃ লেখাটি লেখার সময় বাধ্য হয়ে নিজের মত করে ভাষা ব্যবহার করতে হয়েছে, এ জন্য রস গ্রহণে বাধা সৃষ্টি হবেই। আমি ক্ষমা প্রার্থী।

শেষে বলি, অনেক গল্প দেখেছি সিনেমার পর্দায় তার মধ্যে এ গল্পটি - এ ছবিটি অবশ্যই একটি স্থান নিয়ে থাকবে।