07 April, 2019

ভোটরঙ্গ (নামকরণ Tanmay Dey )


এতো মহা জ্বালা! ২৫ জন বা তারও বেশী লোকের জন্য একটি মাত্র ল্যাট্রিন ও বাথরুম (তাতে জলের ব্যবস্থা থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে), কাছাকাছি খাওয়া - দাওয়ার ভদ্রস্থ ব্যবস্থা থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে, গ্রামের দিকে বুথে পর্যাপ্ত আলো (ইলেকট্রিক তো অনেক ক্ষেত্রেই কাগজে কলমে) থাকতেও পারে না থাকতে পারে, মাথার উপরে পাখা (যদি থাকে) তাহলে হয়তো এমন স্পীডে ঘুরছে যে ব্লেড গুলো আলাদা করে দেখা যাচ্ছে, রাতের শোয়া হয় মাটিতে অথবা বেঞ্চের উপরে কিংবা নীল আকাশের নিচে (গ্রামের দিকে হলে) - এই হল বুথের অবস্থা। বুথের বাইরে অনেক ক্ষেত্রেই লাঠি ধারী একজন বা দুজন খাঁকি উর্দি ধারী, লাঠি না হলে আগ্নেয়াস্ত্র হলেও বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই মান্ধাতার আমলের ৩০৩ বোরের (গুলি ফুটবে কিনা সেই পুলিশ ও জানেন না)। পোলিং, প্রিসাইডিং, মাইক্রো অবজারভার হিসাবে তিনটেরই ভুক্তভোগী। অ্যাসিস্ট্যান্ট এক্সপেন্ডীচার অবজারভার হিসাবে সাক্ষী।
এবার আসা যাক ভোটের দিনের কথায়। গত পঞ্চায়েত নির্বাচন তো তুলনাহীন - পৃথিবীর কোন জায়গায় এর আগে এত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয় নি! এক ফোঁটা রক্ত পড়ে নি, কোন প্রার্থী কে দিয়ে জোর করে মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হয় নি (সকলেই ভুল বুঝে উন্নয়নের স্বার্থে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন), সমস্ত ভোটার শান্তিপূর্ণ ভাবে উন্নয়ন বাহিনীর নির্দেশ মেনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন (হয়তো বা যে ভোটার বেঁচে নেই তিনিও), একেবারে আদর্শ ভোট যাকে বলে। প্রশ্ন হচ্ছে এর আগেও এর কাছাকাছি ধরনের আদর্শ ভোট হয়েছে সংবাদ মাধ্যমে পড়েছি (কিছু ক্ষেত্রে শুনেছি) প্রিসাইডিং / পোলিং অফিসাররা শান্তিপূর্ণ ভাবে খবরের কাগজ পড়েছেন বা মাছ ধরেছেন এবং যাতে খবরের কাগজ পড়তে বা মাছ ধরতে কোন অসুবিধা না হয় সেই জন্য কিছু মানুষ ইঞ্জেক্সনের সিরিঞ্জ, নকুল দানা, গুড় জল ইত্যাদি এবং ইত্যাদি নিয়ে সতর্ক ভাবে তাঁদের পাহারা দিয়েছেন। রাজকুমার রায় এবং মনিরুল ইসলাম তার এক আদর্শ উদাহরণ। আসলে, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন সব সময়েই শান্তিপূর্ণ এবং রক্তপাত শূন্য!!

ভোট গ্রহণ পর্ব মিটল এবার শুরু হবে আর এক পরীক্ষা। ডি সি আর সি তে আসার পর মনে হয় প্রতিটি পোলিং টীম সব কিছু ভুল করে বসে রয়েছে, স্কুলের হেড মাস্টার বা হেড মিস্ট্রেস হাতে বেত নিয়ে খাড়া সেই সব ভুল শুধরাবার জন্য। আপনি সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে এলেন, আবার আপনাকে সব খুলে দেখাতে হবে, আলপিন থেকে এলিফ্যান্ট সব কিছু মিলিয়ে দেখাতে হবে। এমনকি বয়স্ক লোকেদের প্রতি এদের মধ্যে অনেকেই যে সুন্দর ব্যবহার করেন তাতে নিজেকে মানুষ বলে ভাবতে দারুণ লাগে (এরা নিশ্চয় এদের বাবা - মার সাথেও এত সুন্দর ব্যবহারই করেন)!!! যখন সেই পর্ব মিটল তখন যা করা তাকে একটি লাইনে বলা যেতে পারেঃ

"বাপি বাড়ি যা"।

রাত তখন কটা, মানুষগুলো কিভাবে বাড়ি ফিরবে সেদিকে কারো কোন খেয়াল নেই। কোন প্রশ্ন করলে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে উত্তর "ওই তো ওদিকে বাস আছে, দেখে নিন" জাতীয় উত্তর (এও শুনেছি "কোলে করে পৌঁছে দিতে হবে নাকি")! এতক্ষণ সামান্য একটু ভদ্রতা থাকলেও, এই সময় সব উধাও।
দুর্গম অঞ্চল যথা সুন্দরবন, মাও বাদী অধ্যুষিত অঞ্চলের ভোট কর্মীদের অবস্থা তো আরও করুণ। আজকে এটা করুণতম এবং বাস্তব সত্য যে প্রতিটি ভোট কর্মী যখন বাড়ি থেকে বার হন, তখন তাঁদের প্রিয়জনের একটিই কামনা থাকে যে, মানুষটা যেন সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফেরে।

এই হল পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ গণতন্ত্রের ভোট গ্রহণের পর্যাপ্ত এবং স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থা!

অবাক লাগে, এর পরেও প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা আশা করেন মানুষ স্বেচ্ছায় ভোটের ডিউটি (বিশেষ করে পোলিং টীমের) মাথায় তুলে নেবেন। আরও অবাক লাগে মিডিয়া ভোট কর্মীদের যে সব অসুবিধার মধ্যে কাজ করতে হয়, তার কথা কোন সময় তুলে ধরে না।

(আশা করি এই বাস্তব অবস্থা তুলে ধরার জন্য আমাকে কোন রকম প্রশাসনিক জবাবদিহির মধ্যে পড়তে হবে না কারণ আমার একটাই বক্তব্য সরকারী কর্মচারীরা নির্বাচনের কাজ করতে কোন আপত্তি কোন সময় করেন নি এবং করবেন না যদি তাঁদের একটু খানি মানবিক দৃষ্টিতে দেখা হয়, তাঁদের নিরাপত্তা, ফেরার ব্যবস্থা ইত্যাদির প্রতি একটু মানবিক নজর দেওয়া হয়। দুঃখের বিষয় প্রশাসনের এক অংশের মধ্যে এর বড়ই অভাব।)