09 March, 2019

শ্রদ্ধাঞ্জলি

আমি এক কমি - মাকু - সেকু - ভাম - হার্মাদ - বরবাদ
আমার স্ত্রীকে ধর্ষণ করার হুমকি দিতে পারেন ভারতের দেশপ্রেমিক রতন বাহিনী
(আপনাদের হাতে বিশাল ক্ষমতা দেশের সংবিধান মেনে চলার)
শিরোনাম
শ্রদ্ধাঞ্জলি
প্রয়াত প্রাণ তোষ বন্দ্যোপাধ্যায় কে
এক দেশদ্রোহী কবিতা
দেশপ্রেম!
কাকে বলে দেশ প্রেম
আমি আজ এক ট্যাক্সি তে উঠেছিলাম
বাড়ি ফেরার পথে,
হঠাৎ করে কোন কারণে
বিষম খেলাম
ব্যাগে যে জলের বোতল থাকে
দেখলাম ফাঁকা -
প্রচণ্ড কাশছি
দম বন্ধ হয়ে আসছে
কোন রকমে ড্রাইভারকে বললাম
থোড়া পানি দিজিয়ে,
পানি তো নেহি হ্যায় স্যার।

আমি তখন দম ফেলতে পারছি না
মনে হচ্ছে এই বুঝি জীবনের শেষ
কয়েক মুহূর্ত!
গাড়ি দাঁড়িয়ে গেল
আমি হয়ত তখন জীবনের
শেষ কিছু শ্বাস গুনছি
আমার মুখে ধরা হল
জলের বোতল,
আধ বোতল জল
খেয়ে নিলাম এক নিঃশ্বাসে
আমি বাঁচলাম
এবং তাই লিখছি এ মুহূর্তে!

এটাই হল দেশপ্রেম
কারণ সে আমার পরিচয়
জিজ্ঞাসা করে নি
এ কোন নাটক নয়
এ আমার বাস্তব জীবন!
আমি ওই ট্যাক্সি ড্রাইভারের নাম জিজ্ঞাসা করি নি
কারণ
তার মধ্যে খুঁজে পেয়েছি আমার বাবাকে
আমার “বাবু”কে
প্রয়াত প্রাণতোষ বন্দ্যোপাধ্যায় কে
যার সম্পর্কে আজ ও
শুনতে পাই এক কথা
প্রাণতোষ দা যদি সারা দিনে
কারো উপকার করতে না পারতেন
দাঁড়িয়ে থাকতেন,
কাস্টমস্‌ হাউসের বাইরে
যদি কোন শবদেহ যায়
স্ট্র্যান্ড রোড ধরে,
(৬০ – ৭০ দশকের স্ট্র্যান্ড রোড)
যাবেন তার সাথে!!!

আমি সম্পূর্ণ ভাবে আমার বাবার
উত্তরাধিকারী হতে পারিনি,
তবুও চেষ্টা করে চলি,
আজকের ট্যাক্সি ড্রাইভার
আমাকে প্রাণতোষ বন্দ্যোপাধ্যায় কে
দেখিয়ে দিল -
দেখিয়ে দিল আমার বাবাকে
তার নিজের মধ্যে,
আমার সন্তানের বয়সী এক
মানুষের মধ্যে আমি দেখতে পেলাম
দেশপ্রেম,
যা হল দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা।

আসলে আমার বাবা এবং আমি
কোনদিন দিন জুজ্জ জুজ্জ খেলি নি
আমার উর্দি পরা বাবা -
আমাকে শিখিয়েছেন,
দেশের মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা
সো কলড্‌ ড্যাশ প্রেমিক দের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ লড়তে -
আমার বাবা এবং এই ট্যাক্সি ড্রাইভার
দেশ প্রেমিক কিনা আমি জানি না,
তবে তাঁরা ভারতের মাটিতে পথ চলা
মানুষ কে ভালোবাসে্ন -
হয়তো বা জুজ্জ জুউজ্জ খেলা
মানুষের কাছে তাঁরা
এবং তাঁদের মত সকলেই,
আসল দেশদ্রোহী -
(যেমন কমি আখ্যা পাওয়া আমি)
যারা জীবন কে ভালোবাসেন
দেশের মানুষ কে ভালোবাসেন।
প্রাণতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সন্তান শ্রীতোষ
যে জুজ্জ জুজ্জ খেলাকে ঘৃণা করে
০৮/০৩/২০১৯

নারী দিবস

নারী দিবস
(নারীকে অসম্মান করে যাওয়া পুরুষের কলমে)

আজ নারী দিবস !
এক পুরুষ হয়ে কি করে জানাবো
নারী দিবসের শুভেচ্ছা,
আমার সামনে পড়ে আছে
৮ বছরের তিসার লাশ!

আমার মত কোন এক
অথবা একাধিক পুরুষ ,
মুখে প্যান্ট ঢুকিয়ে
ভোগ করেছে তাকে
ক্ষণিকের জন্য পেয়েছে জীবনের আনন্দ!

ভুলে যাই ওর কথা,
আমার ঘরেও রয়েছে এক নারী
যাকে আমি বলি,
প্রিয়তমাসু -
আমি কি তাঁর প্রতি
সঠিক বিচার করতে পারি,
দিতে পারি তাঁকে তাঁর
সঠিক সম্মান।
এক পুরুষ হয়ে
স্বীকার করতে পারি
এক স্ত্রী র জীবন
তার স্বামীর কাছে
TAKEN FOR GRANTED।

আর কয়েক ঘণ্টা
তারপর
বিশ্ব নারী দিবস অপেক্ষা করবে
আর এক নারী দিবসের!
৩৬৫ দিনের মাঝে আরও অনেক
নারী বিক্রি হবে,
আরও অনেক নারী পণের
দাবীতে
জ্বালাবে শরীরে আগুন,
অথবা
ঝুলবে গলায় দড়ি দিয়ে।
আরও অনেক নারীর
শরীরে পড়বে
অ্যাসিডের হোলি।
পথে ঘাটে আরও অনেক
নারীর বুকে লাগবে
আমারই মত কত পুরুষের
কনুইয়ের খোঁচা!
বড় আরাম পাবে তৃপ্ত পুরুষ
আজকাল যেমন ড্যাশ প্রেমিক
উড়ছে আকাশে বাতাসে
তেমন পুরুষ!

আরও অনেক নারী
নির্ভয়া হবে
অথবা হবে কামদুনির অপরাজিতা!
আরও কত নারী
চম্পলা সর্দার অথবা
তাপসী মালিক ।
কিংবা নন্দী গ্রামের অজস্র
স্তন কাটা – ধর্ষিতা এবং
হলদি নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া
(ভোটের তালিকা থেকে নাম
বাদ যায় নি কারো)
মহিলাদের মত
কিংবা মরিচঝাঁপি র হাজার হাজার
ধর্ষিতা মহিলা দের মত
(যাঁদের শরীর খেয়ে সুন্দর বনের
বাঘ মানুষ খেকো হয়েছিল)
তাঁদের পুরানো লাশ বিক্রি হবে
নির্বাচনের প্রয়োজনে!
এক থেকে অন্য এক নারী দিবসের মাঝখানে।

আমি কি করে জানাবো নারী দিবসের শুভেচ্ছা?

আমার সামনে আছে
খাপ পঞ্চায়েত!
আমার সামনে আছে সে ভারত,
যে ভারতে এক দলিত রমণী
বিবাহের পরে,
তার কুমারীত্ব বিসর্জন দিতে বাধ্য হয় -
না তার প্রেমিকের হাতে নয়!
তার ভরণ পোষণের দায়িত্ব নিয়েছে যে
সেই মানুষের হাতে নয়!
{যদিও সেক্ষেত্রেও সে পণের দাবীতে পণ্য)
সে বাধ্য সমাজ রত্নের হাতে তার
কুমারীত্ব বিসর্জন দিতে!

এই হল আম ভারতের নারী দিবস!
এখানেই আছে ভারতের সংস্কৃতি
আছে ভারতের দেশ প্রেম!
জুজ্জ জুজ্জ দেশপ্রেম!

ওহে ভারত বাসী তুমি
জঙ্গিদের হাত থেকে ভারত বাঁচাতে চাইছ
৮ বছরের মেয়েকে যারা ধর্ষণ করতে পারে
তাঁদের হাত থেকে কাকে বাঁচাবে তুমি
অথবা তুমিই তো সেই দেশপ্রেমী
যদি কেউ তোমার মতের সাথে
একমত না হয়
পুরুষ হলে তার মা - বোনকে আর
মহিলা হলে তীব্র পৌরুসানন্দে
দাও তাঁকে ধর্ষণ করার হুমকি
তীব্র বিক্রিত মানে সুন্দর বিকৃত আনন্দে
(যে শব্দ টা লিখতে চাই নি কোন দিন
আজ নারী দিবস লিখিয়ে নিল আমার হাত দিয়ে)
তাঁকে বল "কমরেন্ডী"

হে কমরেন্ডী বলা পুরুষ
তোমার পৌরুষ কে সেলাম।
যারা নারীকে বেশ্যা বলে সেই পুরুষ কে
এক দেশদ্রোহীর সেলাম,
কারণ আম্রপালী কে নগর নটী
আধুনিক ভাষায় "বেশ্যা" বানিয়েছিল
পুরুষ
একটা প্রচলিত কথা আছে
সব সফল পুরুষের পিছনে আছে
এক নারী"
সত্যি কিনা জানি না
তবে এটা জানি
প্রতিটি বেশ্যার পিছনে আছে এক পুরুষ।
নারী দিবসে শ্রীতোষ
০৮/০৩/২০১৯

পড়শি

ভারত ও পাকিস্থান - পাশাপাশি দুটো দেশ। পড়শি দেশ। কথায় বলে পড়শি হল আরশি - এক পড়শির চোখের আয়নায় অন্য পড়শি নিজেকে দেখতে পায়! ভারত ও পাকিস্থান দুই পড়শি -অন্যের চোখে শুধু যুদ্ধই দেখতে পায়!

অথচ কি মজার কথা দুটো দেশেই কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হল দারিদ্র্য। দুটো দেশেই সম্পদের বেশীর ভাগ অংশ পুঞ্জীভূত ১ - ২% মানুষের হাতে (ভারতের ক্ষেত্রে ১% এর হাতে ৭৭% বাকি ২৭% ভাগ করে নিয়েছে ৯৯% মানুষ)! এই ৯৯% এর মধ্যেই আছে এমন মানুষ জন যারা রিকশা চালান, কুলি গিরি করেন, লোকের বাড়িতে বাড়িতে বাসন মেজে বেড়ান, ভিক্ষা করেন এবং এঁরাই সংখ্যা গরিষ্ঠ। 

এ ব্যাধি আজকের নয়, এ ব্যাধি স্বাধীনতার আগের এবং স্বাধীনতার পরে ৭২ বছর হয়ে গেছে পার, ব্যাধি একই থেকে গেছে। শাসকের পতাকার রঙ বদলেছে, শাসকের চরিত্র বদলায় নি। রাস্তার পাশে আজও না খেতে পাওয়া মানুষের ভিড়, ফুটপাতে গৃহহীন, পরিচয়হীন তেলচিটচিটে মানুষের নিঃসঙ্গ সহবাস। মাসে মাসে শত শত কৃষক আত্মহত্যার সংবাদ। আজও এ দেশে ৮ বছরের শিশু কন্যা ধর্ষিতা হয়। আজও এ দেশে খাপ পঞ্চায়েত বসে। উল্টো পারের দেশে ছবিটা আলাদা এমন মনে করার কোন কারণ নেই। তাদের অবস্থা বরং আরও খারাপ।

তা এই মানুষ গুলো যুদ্ধ চায় নাকি - সীমান্ত বস্তুটা খায় না মাথায় দেয় সেটা এঁদের সকলে জানেন? এঁরা তো প্রতিদিন যুদ্ধ করছেন - যুদ্ধ করছেন প্রতিদিনের খাবার জোগাড়ের জন্য, মাথার উপর একটু ছাউনির জন্য, নিজের অথবা নিজের মেয়ের আব্রু রক্ষার জন্য! এর উপরেও এঁরা যদি যুদ্ধ চান তাহলে কথাটা যেন বুলেটের মতই কানে লাগে!

আসলে যুদ্ধ টা দরকার রাজনীতিবিদদের জন্য, বানিয়াদের জন্য - যুদ্ধে একমাত্র লাভ তাদের! বিগত দুটো বিশ্ব যুদ্ধের ইতিহাস যদি দেখি, তাতে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে প্রায় ২৩,০০,০০০ সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং ২ য় বিশ্ব যুদ্ধে সেই সংখ্যা হল ৫,৮৫,০০,০০০। এঁদের বেশীর ভাগ অংশ প্রাণ হারিয়েছেন খাবারের অভাব ও রোগে। এর মধ্যে পরমাণু বোমায় আক্রান্ত যে সব মা য়েরা অসুস্থ শিশুর জন্ম দিয়েছেন এবং পরে তারা মারা গেছে - সেই সংখ্যা ধরা নেই। ২য় বিশ্ব যুদ্ধের সময় অবিভক্ত বাংলায় যে মন্বন্তর দেখা দিয়েছিল তার জন্য দায়ী কে? সে তো মানুষের তৈরি করা খাদ্যাভাব ব্রিটিশ আর দেশি বানিয়ারা দায়ী তার জন্য। লক্ষ লক্ষ টন খাদ্য মজুত করে রাখা হয়েছিল গুদামে, আর কুকুর বেড়ালের মত মরেছিল সাধারণ মানুষ। তাঁরা সবাই যুদ্ধ চেয়েছিলেন! আজ ইজরায়েল, সিরিয়া, ইরাকে যে বাচ্চা গুলো মরছে, যে সব মানুষ গুলো কে আই এস জঙ্গিরা ব্যবহার করছে মানব ঢাল হিসাবে - তারা যুদ্ধ চান নাকি? ওখানে তো হিন্দু - মুসলমান নেই ওখানে হয় এক মুসলমান অন্য মুসলমান কে মারছে অথবা ইহুদী মারছে মুসলমানকে! সবার হাতে অস্ত্র - সবাই সবাই কে মারছে।

মজার কথা, এই অস্ত্র কিন্ত আসছে নির্দিষ্ট কটি জায়গা থেকে। নির্দিষ্ট কিছু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। একজন বিক্রি করে রাফাল তো অন্য জন সুখোই অন্য কেউ আবার এফ ১৬! এই যুদ্ধ যতদিন থাকবে অস্ত্র ব্যবসা ততদিন চলবে। সরফরোস ছবির একটি ডায়লগ মনে পড়ে যায় "কিসিকো হাত মে চিলম থামা দো ইয়া বন্দুক, গোলি উসকো চাহিয়েই চাহিয়ে"।

তার মানে, দুটি দেশেই অপুষ্টি থাক, বেকারি থাক, কৃষকের আত্মহত্যা থাক, মেয়েদের উপর অত্যাচার বাড়ুক, সীমান্তে সন্ত্রাস বাদ চলবে এবং যুদ্ধ টাও চলবে কারণ এই সব কিছু থেকে নজর ঘোরানোর জন্য যুদ্ধ টা বড় দরকার।

08 March, 2019

অ্যাবারডীন! এক ভুলে যাওয়া ইতিহাস


অ্যাবারডীন! ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বহু শত মাইল দূরে থাকা এক বিস্মৃত ইতিহাসের নাম অ্যাবারডীন!
অ্যাবারডীনের লড়াই! ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে আলাদা উল্লেখের দাবি রাখে কিন্ত এ লড়াই তার প্রাপ্য মর্যাদা পায় নি যদিও ইতিহাসের নিরিখে এ লড়াই সাঁওতাল বিদ্রোহের থেকে কিছু মাত্র কম যোগ্য নয়। ফেসবুকের নব্য দেশপ্রেমী (শখের দেশপ্রেমী)রা এ লড়াই সম্পর্কে কতটুকু জানে আমি সেটা জানি না (বুঝি জানে না, তা না হলে তাদের দেশপ্রেমিক পোষ্টে এ লড়াইয়ের উল্লেখ থাকত)।  

এ কি বীরত্বের ইতিহাস নাকি বিশ্বাসঘাতকতার – প্রশ্ন জাগে তা নিয়েও।

চলুন পাঠক আমরা ফিরে যাই ১৮৫৯ সালের আন্দামানে। ১৮৫৭ সালের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম, সিপাহী বিদ্রোহ বলে যার পরিচয় ইতিহাসের পাতায়, তার রক্ত স্নান সবে হয়েছে শেষ। প্রচুর দেশী সিপাহী বন্দী ব্রিটিশ হেফাজতে। দেশের মূল ভূখণ্ডে এঁদের আটকে রাখা বিপদ জনক তাই পাঠিয়ে দাও সাগর পাড়ের ওই দ্বীপে। যাওয়ার পথে মরবে কিছু, কিছু মরবে ওখানকার রোগে আর বন্য জন্তু যথা সাপ ইত্যাদির আক্রমণে, কিছু মরবে আদিবাসী দের হাতে, আমাদের লাভ এদের দিয়েই জঙ্গল হাসিল করে বানিয়ে নেওয়া যাবে থাকার আর আমোদ ফুর্তির জায়গা। মাইনে দেওয়ার কোন ঝামেলা, শুধু খাওয়া আর পোশাকের খরচা। তা এই সব নেটিভ গুলোর জন্য ও সবের পিছনে বেশী খরচা করতে হবে না। চারিদিকে সমুদ্র – পালানোর ও জায়গা নেই। অতএব ঝাঁকে ঝাঁকে বন্দী জাহাজের খোলে ভর্তি হয়ে খালাস হল পোর্ট ব্লেয়ারে। উল্টো দিকে রস আইল্যান্ড – ব্রিটিশ অফিসার, সৈন্য এবং কিছু নেটিভ বন্দী থাকে সেখানে। পোর্ট ব্লেয়ার এবং রসের নেটিভ বন্দীদের কাজ জঙ্গল কাটা, বাড়ি ঘরদোর বানানো, সাহেব প্রভুদের খিদমত খাটা। বেশীর ভাগের পায়ে লোহার শিকল। জঙ্গল কাটা বা সেখান থেকে কাঠ আনতে গেলে মাঝে ওখানকার আদিবাসীদের হাতে আক্রান্ত হতে হয় কিন্ত সব সময় নয়।
ওখানে যে আদিবাসীদের বাস তারা ১০ টি গোষ্ঠীতে বিভক্ত ছিল। প্রতি গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা ও নিজস্ব রীতি নীতি ছিল তবে প্রতিটিই ছিল একে অন্যের সাথে সম্পর্ক যুক্ত। এঁরা হলেন “কারি”, “কোরা”, “বো”, “জেরু”, “কেদে”, “কোল”, “জুওই”, “পুচিকোয়ার”, “বালে” এবং “বিএ” – এঁদের একসঙ্গে বলা হয় ‘গ্রেট আন্দামানীজ’ (প্রসঙ্গত শেষ ৬ টি গোষ্ঠী ১৯২১ থেকে ১৯৩১ এর মধ্যে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে – কৃতিত্ব সভ্য মানুষের)। এই গ্রেট আন্দামানিজ দের সাথে মেইনল্যান্ডার বা ব্রিটিশ এবং নেটিভ বন্দীদের প্রতি বিরোধের একমাত্র কারণ ওদের আগ্রাসনের সামনে পড়ে তাঁদের নিজেদের জঙ্গল হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিল – ধ্বংস হচ্ছিল জঙ্গল। তবে ওঁরা কিন্তু যাঁদের পায়ে শিকল বা বেড়ি থাকত তাঁদের কক্ষনো আক্রমণ করতেন না। এই ছিল পটভূমি।

যাঁদের রক্তে জ্বলেছিল বিদ্রোহের আগুন, তাঁরা চুপ করে থাকার পাত্র নন। মানুষ মাত্রেই স্বাধীনতা চায়। অতএব পালাতে হবে। প্রায় ১৩০ জন (৯০ জন রস এবং বাকি ৪০ জন চ্যাথাম আইল্যান্ড ও ফিনিক্স বে) বন্দী একদিন পালালেন ব্রিটিশ অত্যাচারীদের খপ্পর থেকে, যাঁদের মধ্যে ছিলেন কয়েদী নাম্বার ২৭৬ – দুধনাথ তেওয়ারী। পলাতক রা ভেবেছিলেন জঙ্গল পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যাবেন বার্মা মুল্লুকে। তাঁরা জানতেন না, বার্মার সাথে কোন সড়ক যোগাযোগ নেই। পালাতে তাঁরা ব্যর্থ হলেন এবং গ্রেট আন্দমানিজ দের হাতে নিহত হলেন সব্বাই একমাত্র ওই কয়েদী নাম্বার ২৭৬ – দুধনাথ তেওয়ারী বাদে। দুধ নাথের শরীরে তিন খানি বিষাক্ত তীর বিঁধেছিল এবং তিনি মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে আদিবাসীরা তাকে সেবা যত্ন করে বাঁচিয়ে তোলে। ধীরে ধীরে দুধনাথ ওদের একজন হয়ে উঠতে থাকেন। প্রথমে আদিবাসীরা তাকে বিশ্বাস করতেন না কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দুধনাথ ওঁদের আস্থা ভাজন হয়ে ওঠেন। এক সময় তিনি দুটি (মতান্তরে ১ টি) আদিবাসী মেয়েকে বিয়ে করেন এবং তাঁদের সন্তানও হয়। তিনি সাকুল্যে ১ বছর ২৪ দিন আদিবাসীদের সঙ্গে ছিলেন।

ব্রিটিশ আগ্রাসনে ক্রমশ শঙ্কিত হয়ে ওঠা আদিবাসীরা এক সময় বেছে নিল প্রতি আক্রমণের পথ। ১৮৫৯ সালের ৬ ই এপ্রিল প্রায় ২০০ আদিবাসী আক্রমণ করল ২৪৮ জন বন্দীকে যারা হ্যাডো এলাকায় জঙ্গল কাটার কাজ করছিলেন। পরের আক্রমণ হল এপ্রিলের ১৪ তারিখে। এবার প্রায় ১৫০০ আদিবাসী অংশ নিল আক্রমণে। এল মে মাসের ১৭ তারিখ। আদিবাসীরা ঠিক করলেন রাতের অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে আক্রমণ চালানো হবে এবং আন্দামান থেকে ওই সাদা চামড়ার লোক গুলোকে নিকেশ করা হবে। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি চলল। প্রতি যোদ্ধার মুখ শপথে কঠিন, আমাদের জঙ্গল আমাদের নিজেদের। আমাদের মাতৃভূমি আমাদের নিজেদের, বিদেশী সাদা চামড়া গুলো এমনিতে যাবে না, এদের মেরে তাড়াতে হবে। ওঁরা জানতেন না, ওঁরা দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পুষেছেন, যে কাল সাপের নাম দুধনাথ তেওয়ারী – কয়েদী নাম্বার ২৭৬।

আক্রমণ কারি দের সাথেই এলেন দুধনাথ। তাঁরা যখন সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছেন সেই ফাঁকে দুধনাথ লুকিয়ে চলে গেলেন ব্রিটিশ প্রভু দের কাছে। যাঁদের কাছে মুক্তির স্বাদ পেয়েছিলেন, সুন্দর জীবন কাটাচ্ছিলেন তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে একটুও চিন্তা করলেন না, চলে এলেন তাদের কাছে যাঁদের কাছে পেয়েছিলেন অমর্যাদা আর অত্যাচার। আসলে যুগে যুগে বিভীষণরা এই রকমই হয়। দুধনাথের কাছে খবর পেয়ে সতর্ক হয়ে গেল ব্রিটিশ বাহিনী। ফলে ঘটল এক নির্মম ঘটনা। কালাপানির জল লাল হয়ে উঠল মাটির মানুষের রক্তে। একদিকে তীর, বল্লম, ছুরি, কুড়ুল নিয়ে মুক্তি পাগল আদিম মানুষ আর তার বিপরীতে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত বাহিনী। বন্দুক – রাইফেল আর কামানের কাছে তীর আর বর্শা কি করবে? যাকে ইংরাজিতে বলা হয় Annihilation, সেদিন ঘটল তাই। একটা গোটা জাতিই প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল পৃথিবীর বুক থেকে।বেশীর ভাগ গ্রেট আন্দামানি পুরুষ, যাঁদের মধ্যে এক বড় অংশ ছিল তরুণ ও যুবক হারিয়ে গেল কালাপানির জলে, তাঁদের সঠিক সংখ্যা আজ ও কেউ জানে না তবে কোন ভাবেই তা ৫ – ৭ হাজারের কম নয়। কমতে কমতে ১৯৯৪ সালে তাঁদের সংখ্যা মাত্র ৫৭! আর দুধনাথ – তার কি হল? তিনি ক্ষমা পেয়েছিলেন, ফিরে গেছিলেন মূল ভূখণ্ডে তাঁর গ্রামে। তার পর তার কথা আর কেউ জানে না।

কালাপানি হয়তো এখনও কাঁদে – এখনও হয় তো সে খুঁজে ফেরে তার নিজের মানুষদের, যারা তার বুকে বেয়ে যেত নৌকা, তার সৈকতে মেতে উঠত আনন্দে।   সময় বড় বলবান, যা নিয়ে যায় তা দেয় না ফিরিয়ে। আজ যখন দেশপ্রেমে মাতোয়ারা আ সমুদ্র হিমাচল তখন এই ভুলে যাওয়া শহীদদের স্মরণ করে দেশমাতৃকা কে জানাই আমার প্রণাম। সামান্য মানুষ আমি, এর চেয়ে বেশী আর কি ই বা করতে পারি।

শেষ কিছু শব্দ লিখে যাই
দেশপ্রেমের আড়ালে দ্বেষ প্রেমিক রা আজও অস্ত্র নিয়ে বাঁচে
দেশপ্রেমিকদের শেষ করবে বলে
দুধনাথের মত মানুষ গুলোই
আজকের তথাকথিত দেশপ্রেমিক।

07 March, 2019

মা তোমাকে


কিছু মানুষ
ছাত্র যারা,
রাজনৈতিক প্রশ্ন করে না।
তারা উপরে উঠতে চায়,
অনেক উপরে
থাকতে চায় একা।


কিছু মানুষ
ছাত্র তারাও -
রাজনৈতিক প্রশ্ন করে
তারাও উপরে উঠতে চায়,
কিন্তু তারা একা উঠতে চায় না
একা থাকতে চায় না,
তারা থাকতে চায় সকলের সাথে
সবাইয়ের একজন হয়ে।

প্রথম দল না থাকলে
হয়ত বা দেশের উন্নতি ঘটে না,
কিন্তু দ্বিতীয় দল না থাকলে যে
দেশ টা দেশই থাকে না।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার
কোন কণ্ঠ থাকে না।
দ্বিতীয় দল না থাকলে
প্রথমের কোন অস্তিত্ব থাকে না।

মা তোমায় বলি -
বরকত - সালাম রা ছাত্রই ছিল,
ছাত্র ছিল ক্ষুদিরাম আর দীনেশ,
ওরা যদি মানুষের কথা না বলত
তোমার ছেলে হয়ত বড় ডাক্তার
অথবা ইঞ্জিনিয়ার হত,
হয়ত বা কিছু মানুষকে চাকরীও দিত,
কিন্তু তারা মাতৃ ভাষায়
কথা বলার অধিকার হারাত,
তারা আজও পরাধীন দেশের
মানুষ হয়েই বাঁচত।

মা তুমি তোমার সন্তান কে নিয়ে
গর্ব কর,
তা তোমার অধিকার
কিন্তু অন্য মায়ের সন্তানকে
বিদ্রূপ কোরো না
ওই মায়ের সন্তান আছে বলেই
তারা রাজনীতি করে বলেই,
তোমার সন্তান আছে উপরে।
শ্রীতোষ ০৭/০৩/২০১৯

03 March, 2019

এসো দেশপ্রেম

যখন একটা মিগ ভেঙে পড়ে
ভারতের আকাশে,
যখন রসদ দিতে যাওয়া
এক সিপাই চাপা পড়ে
সিয়াচেনের বরফ কবরে,
যখন দান্তেওয়াড়ায় মাওবাদী বুলেট
ছিন্ন ভিন্ন করে সি আর পি এফ
জওয়ানের শরীর,
যখন কোন এক গ্রামে
অহিংস বোমার আঘাতে নিহত
হয় এক পুলিশ অফিসার,
আমার দেশপ্রেম তখন চুপ!

চুপ করে থাকে
আমার প্যান্টের বুক পকেটে,
অথবা পায়ের মোজার হিপ পকেটে,
কিংবা শাড়ির আঁচলের সুবাসিত হাওয়ায়!
আমার দেশপ্রেম চুপ করে থাকে
উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায়।
আমার দেশপ্রেম জাগ্রত হয় তখন
কখন?
যখন আসে ক্ষমতা দখলের সময়।
যখন আমি দেখি
যা বলেছি করেছি তার বিপরীত কাজ,
সময়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা
বলেছি মুখে -
নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি পিছনে,
ধর্মের নামে ঝরিয়েছি মানুষের রক্ত,
শুধুমাত্র ক্ষমতার আকাঙ্খায়।
তবু হয়েছি ব্যর্থ!
তখন হাতে আছে এক অব্যর্থ অস্ত্র,
নাম তার দেশপ্রেম।
এসো দেশপ্রেম,
ঘুরিয়ে দাও মানুষের মাথা,
ওরা চেঁচিয়ে বলুক
সৈনিকের রক্ত হবে নাকো ব্যর্থ!
জুজ্জ জুজ্জ খেলায় মেতে উঠুক দেশ,
আমি সৈনিকের নাম নিয়ে উঠি কেঁদে,
আমার প্রচারক দল সেই কান্না মাখা
মুখ দেখিয়ে বলুক,
দেখ আমার নেতা
এই হল দেশের নেতা,
সৈনিক পরিবারের কষ্টে
যার চোখে জল ঝরে!!!
দেশপ্রেম বড় সরল।
অনেক জটিল সমস্যা
ভুলিয়ে দিতে পারে সহজে,
কারণ
দেশপ্রেম এক আবেগের নাম
তাই দেশপ্রেম ঘুমিয়ে থাকে,
উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায়,
দেশনেতা নির্বাচনের সময়ের অপেক্ষায়।
এক দেশদ্রোহী মানুষের লেখা
যার নাম শ্রীতোষ ০৩/০৩/২০১৯