10 November, 2019

রাম মন্দির ও ভারত মাতা

হায় রে ভারত মাতা
কত সহস্র বছর আগের
কোন সে চরিত্রের
জন্মভূমির প্রমাণ খুঁজে দিলে,
তোমার বুকে জন্ম নেওয়া
তোমার আলো হাওয়ায় বেঁচে থাকা মানুষ গুলো
নিজেকে ভারতীয় বলার
প্রমাণ খুঁজে ফেরে II


রামের কোন বার্থ সার্টিফিকেট নেই
তাঁর জন্ম-বেড়ে ওঠা-বেঁচে থাকা
আছে মানুষের মনে,
তাই তার মন্দির হয় -
আর যে মানুষগুলো
জন্ম নিয়েছে, বেঁচে আছে,
তাদের ভারতীয় হওয়ার প্রমাণ দিতে হয় !
তাদের ঠাঁই ডিটেনশন ক্যাম্পে!

হায় রে ভারত আমার এ জন্মভুমিতে,
১৯ লক্ষের চেয়ে ১ এর দাম বেশী!

রাম মন্দির উন্মুক্ত হবে সব হিন্দুর জন্য
১৯,০০,০০o ভারতীয় থাকুক
প্রাচীর ঘেরা শত সহস্র বন্দীশালায়,
তারা যে প্রমাণ দিতে পারে নি
তাই আসমুদ্র হিমাচলের দ্বার
বন্ধ তাদের জন্য!
ভারত মাতা তোমাকে প্রণাম ৷
মহাদেব দেব শর্মণঃ ১০/১১/২০১৯

01 November, 2019

কিছু কথা - লিখছেন মহাদেব দেবশর্মণ

আপনাদের কলমে অথবা কি বোর্ডে লেখা প্রতিটি প্রতিবাদী অক্ষর মহাদেবের জন্মমুহূর্ত -

আপনারা মানুষের মানুষ হয়ে বাঁচার দাবীতে পথে নামেন যে দিন

যে দিন আপনারা সকলে পথে নামেন এন আর সি র বিরুদ্ধে - প্রতিবাদ ধ্বনিত হয় রাণু চ্ছায়া মঞ্চে,


যেদিন অ্যানা ফ্রাঙ্কের মৃত্যু হয়;


যেদিন ভিক্টর জারা নিজের থেঁতলে যাওয়া আঙ্গুলে হাতে তুলে নেন গিটার;


যে দিন জোয়ান অফ আর্ক কে পুড়িয়ে মারা হয়;


যে দিন নন্দন ভট্টাচার্যের কলমে আসে স্পর্ধা জঙ্গম এর সেই দৃশ্য 

যখন নাজি শাসকের পায়ের তলায় পিষ্ট শিল্পীর আঙ্গুল 
আবার তুলে ধরে রং তুলি তাঁর পরবর্তী প্রজন্মের হাত ধরে;

যেদিন সক্রেটিস পান করেন তীব্র বিষ;


হে মার্কেটের দিন;


মহাদেবের জন্মদিন ভারতের প্রথম রেল স্ট্রাইকের দিন;


মহাদেব জন্মেছে কৃষকের লং মার্চে - যে মায়ের পায়ের ছাল উঠে গেছিল তবুও যাত্রা থামেনি
সেই মায়ের গর্ভে যাত্রা শুরু হওয়ার দিন;


সফদার হাসমির রক্তে রাঙা শরীর লুটিয়ে পড়েছিল রাজধানীর রাজপথে
মালালার শরীর ধন্য হয়েছিল প্রতিবাদী রক্তস্নানে;
অভিজিৎ - ওয়াসিকুর - বিজয় - গৌরী লঙ্কেশের রক্ত রাঙা শরীর আওয়াজ তুলেছিল
"হল্লা বোল - হল্লা বোল"
সদ্য জন্মানো মহাদেব সেদিন তুলেছিল আওয়াজ
হল্লা বোল - হল্লা বোল


প্রতিবাদের প্রতিটি দিন
মহাদেব দেবশর্মণের জন্ম দিন


মহাদেব আছে প্রতিটি প্রতিবাদী মানুষের চেতনায়
আপনাদের সকলের প্রতি রইল মহাদেবের প্রণাম।

28 October, 2019

প্রতিবাদী এক মানুষ ভিক্টর হারা

একটি স্টেডিয়ামে আটক পাঁচ হাজার মানুষ
মাঝখানে চেয়ারে বসে এক শিল্পী - গান বাঁধেন - গান গেয়ে চলেন তিনি। সামনে রাখা তাঁর প্রিয় গিটার আর গিটারের পিছনে উদ্যত রাইফেল - লক্ষ্য স্থির শিল্পীর শরীরের দিকে - রাইফেল ধরে থাকা মানুষ গুলোর চোখ হিংসার আফিমের প্রভাবে আগুন বর্ণ

শিল্পীর দু হাতের আঙুল গুলো একটু আগেই থেঁতলে দেওয়া দেওয়া হয়েছে রাইফেলের বাঁটের আঘাতে আঘাতে। প্রতিটি আঘাতে উল্লাস করেছে সেই মানুষ গুলোর সর্দার আর যারা আঘাত করছে তারা জানে শাসকের হুকুম না মানলে - সর্দারের হুকুম না মানলে তাদের সন্তান থাকবে অভুক্ত অথবা তার মেয়ে রঙ্ মেখে দাঁড়াবে পথে

সর্দার হেসে বলে - ওই তো গিটার,
দেখি কত গান গাইবি এবার।
শিল্পী উঠে দাঁড়ান, সারা শরীর আঘাতে কাতর
শিল্পী তুলে নেন তার গিটার
তাঁর কণ্ঠে জেগে ওঠে সেই শব্দ গুলি
যা তিনি লিখেছেন তাঁর সহ যোদ্ধাদের জন্য
সর্দার কে অবাক করে, তার অধীনস্থ মানুষগুলো কে চমকে দিয়ে
আরও ৫০০০ কণ্ঠ, কণ্ঠ মেলায় শিল্পীর সাথে
একটি মুহূর্ত বুঝি বা
গর্জে ওঠে রাইফেল
মাত্র ৪৬ টা বুলেট বিদ্ধ করে শিল্পীর শরীর
তারপর - তারপর তাঁর শরীর টানানো থাকে স্টেডিয়ামের মূল ফটকের সামনে যাতে গণতন্ত্রের বিরোধীরা শিক্ষা নিতে পারে
এবং শেষে তাঁর স্থান হয় এক গণ কবরে।

নাম তাঁর
ভিক্টর হারা - জন্ম - ২৮/০৯/১৯৩২ - মৃত্যু - ১৬/০৯/১৯৭৩
বাবা ও মায়ের নাম Manuel Jara এবং Amanda Martínez। বাবা ছিলেন এক অশিক্ষিত দরিদ্র চাষি যিনি চাইতেন তার ছেলে স্কুলে যাওয়ার বদলে মাঠে কাজ করুক। মাত্র ৬ বছর বয়স থেকেই ভিক্টর মাঠে কাজ করত। অন্যদিকে মা নিজে নিজেই লেখাপড়া শিখেছিলেন এবং তিনি চাইতেন তাঁর সন্তানরা শিক্ষা লাভ করুক। আমান্ডা নিজে পিয়ানো এবং গিটার বাজাতে জানতেন, তাছাড়া তিনি প্রচলিত লোক গীতির মাধ্যমে বিভিন্ন আনন্দ অনুষ্ঠান এবং শোক মিছিলে অংশ নিতেন। ভিক্টরের মাত্র ১৫ বছর বয়সে আমান্ডা মারা যান।

ভিক্টর অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসাবে শিক্ষা শুরু করলেও অচিরেই তিনি এক সেমিনারিতে গিয়ে পাদ্রী হওয়ার শিক্ষা নিতে থাকেন, যদিও কিছুদিন বাদেই ক্যাথলিক চার্চের সম্পর্কে তাঁর মোহ ভঙ্গ হয়। এরপর থেকে শুরু হয় এক ভ্রাম্যমাণ জীবন এবং একের পর এক চাকরী গ্রহণ এবং ছেড়ে দেওয়া। শেষ পর্যন্ত তিনি ফিরে আসেন নিজের শহর Lonquén এ এবং তখন থেকেই লোক গীতি এবং থিয়েটারের প্রতি তাঁর আগ্রহ জাগে।

ইউনিভার্সিটি অফ চিলির কয়ার এ যোগ দেন ভিক্টর এবং অচিরেই তিনি নাটকের কয়ার মেট হিসাবে যোগ দেন । এই সময়ে তিনি Maxim Gorky's The Lower Depths নাটকেও কাজ করেছিলেন। ১৯৫৭ সালে তাঁর সাথে পরিচয় হয় ভায়োলেটা পেরার যিনি তখন চিলির প্রাচীন লোক সঙ্গীতের সাথে বর্তমান সময়ের মেল বন্ধন ঘটানোর কাজ করে চলেছিলেন। এই ভায়োলেটা পেরার কাছ থেকে লোকগানে হাত পাকিয়েছিলেন হারা। শুরু হয় চিলি এবং অন্য ল্যাটিন আমেরিকান লোক সঙ্গীতের সাথে তাঁর পরিচয়। এই সময় তিনি অনুপ্রাণিত হন Parra, Atahualpa Yupanqui, and the poet Pablo Neruda র দ্বারা।

১৯৬০ সাল নাগাদ ভিক্টর জড়িয়ে পড়েন ল্যাটিন আমেরিকার লোকসঙ্গীত আন্দোলন Nueva Canción movement এর সাথে। সাল ১৯৬৬, প্রকাশিত হল তাঁর প্রথম অ্যালবাম Canto a lo humano। ১৯৭০ সালে থিয়েটার কে সম্পূর্ণ রূপে বিদায় দিয়ে গানের মাধ্যমেই প্রকাশ করতে শুরু করেন মানুষের সুখ – দুঃখ আনন্দ – যন্ত্রণার কথা। এই সময় কালে তাঁর দুটি বিখ্যাত গান "Plegaria a un Labrador" ("Prayer to a Worker") and "Te Recuerdo Amanda" ("I Remember You Amanda").।
১৯৬০ সালে ঘটে গেছে ভিক্টরের জীবনের এক মহা গুরুত্ব পূর্ণ ঘটনা। কিউবা এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ঘুরে আসার পর ভিক্টর যোগ দিয়েছেন কমিউনিস্ট পার্টিতে। জারার গান তখন ছড়িয়ে পড়েছে চিলির সীমানা পার হয়ে গোটা ল্যাটিন আমেরিকায়। যারা তখন গান বাঁধতেন, সুর করতেন, গাইতেন। ১৯৬৯ সালে তাঁর লেখা গান "Preguntas por Puerto Montt" ("Questions About Puerto Montt") সরাসরি আঘাত করল সেই সব সরকারী অফিসারদের যারা পুলিশ কে Puerto Montt. র বসতি স্থাপন কারীদের উপর আক্রমণ করার আদেশ দিয়েছিলেন। ১৯৭০ সালে জারা পপুলার ইউনিটি কোয়ালিশন প্রার্থী সাল্ভাডোর আইয়েন্দে কে সমর্থন করেন এবং রচনা করেন তাঁর আর এক বিখ্যাত গান "Venceremos" ("We Will Triumph")। সাল্ভাডোর আইয়েন্দে জয়ী হওয়ার পর ভিক্টর এবং তাঁর স্ত্রী জোয়ান চিলির সাংস্কৃতিক নব জাগরণে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭২ সালে মহান কবি পাবলো নেরুদার নোবেল জয়ের পর ভিক্টর একটি সঙ্গীত রচনা করেন তাঁর উদ্দেশ্যে।

সারা দুনিয়ার গণতন্ত্রের রক্ষক, পৃথিবীর মানুষের উপরে পারমাণবিক বোমা বর্ষণ কারী একমাত্র দেশের সহায়তায় পিনোসে নামক এক জীব গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত চিলি সরকারের বিরুদ্ধে ক্যুদেতা করে। সফল হয় তা। এরপর কি করতে হয়? প্রথমেই ধ্বংস করার চেষ্টা করতে হয় প্রতিবাদী কণ্ঠকে - যারা সুস্থ স্বাভাবিক চিন্তা ধারার প্রচার করে, তাদের কণ্ঠ রুদ্ধ করতে হয়। তখন তো সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না, থাকলেও অবশ্য ভিক্টরের পরিণতি একই হত কারণ ভিক্টরদের কণ্ঠ ওই ভাবে রুদ্ধ করা যায় না এবং যাবেও না কোনদিন। অতএব ১২/০৯/১৯৭৩ হারা বন্দী হন এবং ১৬/০৯/১৯৭৩ ঘটে সেই ঘটনা, যা দিয়ে শুরু করেছি এই কাহিনী।

এরপর - এরপরের কথা আরও চমকপ্রদ
চিলির রাস্তায় এখন যে ‘রাইট টু লিভ ইন পিস’ শোনা যাচ্ছে, সেই গান হারা লিখেছিলেন ভিয়েতনামের যোদ্ধাদের জন্য। যেখানকার যে আন্দোলনের জন্যই কলম ও গিটার ধরেছেন হারা, সেখান থেকেই আবার বাংলায় অনূদিত হয়ে এসেছে গান প্রতিবাদে শান দিতে।

কেন বাংলার কথা এল? এল গণ নাট্য সঙ্ঘের জন্য। হারার গান বাংলায় অনুবাদ করে গণনাট্য সঙ্ঘ বার করে একটি অ্যালবাম - নাম তার ‘খোলা জানালার গান’ । গণনাট্য সঙ্ঘের সঙ্গীত বিভাগের দায়িত্বপ্পাপ্ত কঙ্কন ভট্টাচার্যের কথায় শোনা যাক— ‘‘ওঁর সব গান পিনোশের লোকজন নষ্ট করে ফেলত। কোনও ভাবে পোশাকের মধ্যে লুকিয়ে হারার স্ত্রী জোয়ান ও কয়েক জন কিছু রেকর্ড সঙ্গে নিয়ে পালাতে পেরেছিলেন। জোয়ানআদতে ব্রিটিশ। ইংরেজি অনুবাদ করে তিনিই হারার গান ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। তাঁর পাঠানো গান থেকেই আমরা ‘খোলা জানালার গান’ অ্যালবাম করতে পেরেছিলাম।’’

জোয়ান এখন ব্রিটেন এবং আমেরিকায় ঘুরে-ফিরে থাকেন। জোয়ান ও তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন যোগাযোগ ছিল কঙ্কনবাবুর। পরে ক্যাসেটও পাঠিয়েছিলেন কলকাতায়। কঙ্কনবাবুর কথায়, ‘‘কাছাকাছি তুলনা করলে বলা যায়, হারা অনেকটা আমাদের হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মতো। দুর্ধর্ষ গলা। গণসঙ্গীত, লোকসঙ্গীত যেমন গাইতেন, তেমনই আধুনিক রোমান্টিক গানেও স্বচ্ছন্দ।’’
তাই কঙ্কনবাবুরা বলছেন, প্রতিবাদের সুর কবে আর দেশ-কাল-ভাষার গণ্ডি মেনেছে!
সব শেষে বলতে চাই দুটি কথা, ভিক্টর হারার গান আজও চিলির (এবং গোটা পৃথিবীর) প্রতিবাদী মানুষের কণ্ঠে ঘোরে আরও পিনোশে - তার নাম মানুষ মনে রাখে তীব্র ঘৃণায়, পল রোবসন আছেন মানুষের ভালোবাসায় - হিটলার আছে মানুষের দুঃস্বপ্নে তার সেই কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প বা মানুষ মারার কারখানার জন্য।

আপনি ভারতবাসী, ভাবুন আপনার পরবর্তী প্রজন্ম কার কথা মনে রাখবে - ডিটেনশন ক্যাম্পের আবিস্কারক দের কথা অথবা যাঁরা তার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন তাঁদের কথা?

তথ্যসূত্রঃ আনন্দ বাজার পত্রিকা এবং উইকি পিডিয়া সহ আরও কটি ওয়েব সাইট
চিত্র সৌজন্যঃ আনন্দ বাজার পত্রিকা (ছবিতে ভিক্টর এবং তাঁর স্ত্রী জোয়ান)
শ্রীতোষ - ২৮/১০/২০১৯

16 October, 2019

Community Standard of Facebook

I think that, this post will not VIOLATE THE COMMUNITY STANDARD OF FACEBOOK.

একটা কথা বলতে ইচ্ছা করছে
গাড়ি - বাড়ির বিক্রি নাকি কমেছে
শুনছি
বিক্রি বাড়ানোর জন্য
সরকার নাকি অনেক কর
বড় ব্যবসায়ীদের ছাড় দিয়েছে
ভালো কথা ।

যারা কিনবে সরকার কি
তাঁদের কথা ভেবেছে
যদি রোজগার না থাকে
তাহলে মানুষ কিনবে কি করে?
পকোড়া আর চপের দোকান
দেবে কি করে?

১০০ কোটির বেশী ধার যাঁদের
তাঁদের তো ধার মাপ হয়ে গেছে
ব্যাংক তো শূন্য আজ
কোটি পতিদের ধার মাপ করে.

সরকারী চাকরী নেই
বিক্রি হছে আকাশ
(এয়ার ইন্ডিয়া)
বিক্রি হচ্ছে অস্ত্র কারখানা
বিক্রি হচ্ছে অপু - দুর্গার
সেই রেল পথ
Sale - Sale - Sale

আমি এক সাধারণ মানুষ
দেখি
মাঝে মাঝে প্রশ্ন করি
উত্তর পাব না জেনে।
মহাদেব - ১৬/১০/২০১৯

নাম

রাজ কুমার রায় একটি নাম
শ্যামসুন্দর ঘড়াই আর একটি নাম
চম্পলা সর্দার আরও একটি নাম
একটি নাম তাপসী মালিক
সুজেট জর্ডন নামে কোন একজন ছিল
ছিল ওই পা চেরা মেয়েটা
কামদুনি নামক কোন এক স্থানে
ইঁটের পাজাঁর ওপারে পরে থাকা
(এক মাসের মধ্যে হবে ফাঁসি এবং মৃত্যুদন্ড - )
ছিল ব্যারাকপুরের সেই মেয়েটা
একবার ধর্ষিতা হওয়ার পর
পুলিশে জানানোর অপরাধে
তাকে বারবার ধর্ষিতা হতে হয়েছিল
তারপর আগুন জ্বলেছিল
শরীরে তার
পোড়া শরীর ছিনিয়ে নিতে গিয়েছিল রাজ্য পুলিশ
কারণ মমতা হীন মমতা
নাম ধারী
ক্ষমতা লোভী আপনি
ভবানীপুর থানা থেকে
দামাল ছাড়িয়ে আনা আপনি
আমি চোর - মুকুল চোর - টুম্পাই চোর বলা আপনি
রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে
আন্দোলনের নাটক করা
পুলিশ মন্ত্রী আপনি

আপনি উৎসব করেন
আপনি কার্নিভ্যাল করেন
সে কার্নিভ্যালে দূর্গা মুর্তির মুখে
শালকু সোরেনের মায়ের মুখ দেখতে পান না
দেখতে পান না
লক্ষ্মী এবং সরস্বতীর মুখে
সুজেট এবং তাপসীর মুখ!
আপনি মহিষাসুরের মুখে
চড়াম চড়াম ঢাক বাজানো
মাথায় অক্সিজেন কম যাওয়া
অথবা ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দেওয়া
আপনার প্রিয় দামালের মুখ দেখতে পান |
মানুষ কিন্তু আপনার মুখের হাসিতে
গত ৮ বছরে
নীল - সাদা রং করা টালা ব্রীজ দেখছে
অন্ধকার সরছে
সাধারণ মানুষ আজ
চম্পলা সর্দার
তাপসী মালিক
নন্দীগ্রামের স্তনহীন হাজার হাজার রমনীর
আসল গল্প জানছে |
মানুষ তৈরী হচ্ছে
২০২১ এর কার্নিভ্যালের জন্য
সেই মানুষ
যার আছে মান আর আছে হুঁস
আপনিও থাকুন অপেক্ষায়!
মহাদেব: ১১/১০/২০১৯

10 October, 2019

বর্তমান ভারতীয় অর্থনীতি

গাছ কি করে - মাটিকে ধরে রাখে, অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের ভারসাম্য নিশ্চিত করে।
চাকরী অর্থাৎ উপার্জন কি করে?
উৎপাদন এবং চাহিদার ভারসাম্য নিশ্চিত করে
উপার্জন হলে চাহিদা বাড়বে
উৎপাদক আরও বেশী উৎপাদন করবে।
আমি অর্থনীতির ছাত্র নই
আমার কমন সেন্সে আমি এই টুকু বুঝি।

বর্তমান ভারতে কি চলছে
শিল্প ক্ষেত্রে মন্দা চলছে
(পৃথিবীর কোথায় কি চলছে এবং তার সাথে ভারতীয় অর্থনীতির কি সম্পর্ক তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ রা আলোচনা করুন, আমি বিশেষজ্ঞ নই)
আমি শুধু এই টুকু জানি যে আমার হাতে যদি পয়সা থাকে
তাহলে আমি
১) নিজের অন্ন - বস্ত্র - বাসস্থান সুনিশ্চিত করব এবং
২) তারপর নিজের ভোগ্য বস্তু কিনব
বর্তমান ভারতে কি হচ্ছে
গাড়ি - বাড়ি এবং অন্যান্য জিনিস উৎপাদন করছে যারা তারা বিক্রি করতে পারছে না এবং তার জন্য তারা কর্পোরেট ট্যাক্স (অর্থাৎ বেশী রোজগার করলে বেশী কর দিতে হবে) ছাড় চাইছে এবং ছাড় পেয়েছে। তাতে লাভ কি?
যদি খরিদ্দার না থাকে তাহলে বিক্রি করবে কার কাছে?
আমার সাধারণ বুদ্ধি বলে, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়লে চাহিদা বাড়ে, চাহিদা বাড়লে উৎপাদন বাড়ে
মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে অর্থাৎ কিনা রোজগার বাড়ানোর দিকে নজর না দিয়ে এরা বলছেন এবং চলছেন উল্টো পথে
বেচে দাও রেল - দাও বেচে বি এস এন এল
মানুষ বেকার হবে / তাতে কি আর এসে যাবে
ক্রয় ক্ষমতা কমবে / তাতেই অর্থনীতি বাড়বে
বৃদ্ধির হার মাইনাস হলে / তবেই মন্দা বলা যাবে
জয় অমর্ত্য সেন কে খিস্তি মারা ভারতীয় বিশেষজ্ঞ দের জয়!

14 August, 2019

দিদিকে বল

হ্যালো এটা কি ৯১৩৭০৯১৩৭০
ডীডীভাই তুমি পারছ কি শুনতে
সময় যাচ্ছে চলে এই জিও মোবাইল ফোনে
দিন না কিশোর, দিদি কে একটি বার
হ্যালো এটা কি ৯১৩৭০৯১৩৭০
অনেক এনগেজ টোন পরে
রিং হচ্ছে এই বার
দিদি কি শুনবে না আমার হাহাকার?


আমার নাম তো সেই সাল্কু সোরেন
আমার মা তো বিচার পেল না আজও
আমার নাম তো ওই তাপসী মালিক
আমার বাবা করে চলে হাহাকার
হ্যালো এটা কি ৯১৩৭০৯১৩৭০
দিদিভাই তুমি পারছ কি শুনতে
সময় যাচ্ছে চলে
প্রতিদিন প্রতি পলে
উত্তর চাই আমরা এই বার।

হ্যালো এটা কি ৯১৩৭০৯১৩৭০
আমি সেই সারদা এজেন্টের মেয়ে
বাবার দড়ি ঝোলা শরীরটা দেখে
পথেতে দাঁড়িয়ে দেখো আমি রং মেখে
কেন আমি আজ পথে
উত্তর চাই এই বার
হ্যালো এটা কি ৯১৩৭০৯১৩৭০
উত্তর মিলবে কি আমার?

আমি তো কামদুনির সেই মেয়ে
চেরা দুই পা নিয়ে তোমাকে দেখছি চেয়ে
পাইনি বিচার আজও
হ্যালো এটা কি ৯১৩৭০৯১৩৭০
বলবে কি দিদি আমায়
মিলল না বিচার
রইল প্রশ্ন আমার।

এমনই করেই অনেক প্রশ্ন জাগুক
৯১৩৭০৯১৩৭০ এই নম্বরে অনেক প্রশ্ন আসুক
উত্তর তার আশা কোর না হে সাথী
তবু তোমার কণ্ঠ তুলুক প্রশ্ন বার বার
নীরব কণ্ঠ ওই নম্বরে
উত্তর দিল জেনো তীব্র স্বরে
উত্তর কি তার
উত্তর হল
এই লেখাতেই তোলা প্রশ্ন গুলোর
উত্তর দিতে
ব্যর্থ তিনি ব্যর্থ তার সরকার।

হ্যালো এটা কি ৯১৩৭০৯১৩৭০
সরকার তুমি পারছ কি শুনতে?
(আসলে সরকার মানে তো দিদি
না হলে দিদি বল কেন চালু হল?)
শ্রীতোষ ৩০/০৭/২০১৯

কাশ্মীর কি কলি


আসিফা নামে একটি মেয়ে ছিল
ছোট্ট একটি মেয়ে
হয়তো বা সে এক ঝর্ণা হয়ে
সমুদ্রে মিশতে চেয়েছিল।

আসিফা একটি মেয়ের নাম ছিল
মিষ্টি একটি মেয়ে
হয়তো বা সে কোকিল হয়ে
পৃথিবীকে গানে গানে
ভরিয়ে দিতে চেয়েছিল।


আসিফা একটি হাসি – খুশী মেয়ে ছিল
সবুজ মাঠের বুকে
প্রজাপতির মত উড়ে বেড়ানো মেয়ে
একটি ছোট্ট কুঁড়ি
হয়তো সে একটি সুন্দর ফুল হয়ে
রূপে – রঙে পৃথিবীকে ভরিয়ে দিতে চেয়েছিল।

আসিফা আজ নেই
কিছু উন্মত্ত দানব
কয়েকটি দিন ধরে
 তাকে ছিঁড়ে খেয়েছিল
আসিফাও কিন্তু
“কাশ্মীর কি কলি” ই ছিল।

আজ বাজারি মিডিয়ায় পড়া একটি লেখা আমার এ লেখার প্রেরণা। হ্যাঁ, আজও কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাজারি মিডিয়া (পড়ুন আনন্দ বাজার) মানুষের বিবেকের কাজ করে।

19 July, 2019

পশ্চিমবঙ্গ অথবা বাঙালী 4 July at 19:25

আমি এক সামান্য মানুষ, কিছু সাধারণ কথা বলি। পশ্চিমবঙ্গ নাম যদি থাকেই (যার সাথে ইতিহাসের এক রক্তাক্ত অধ্যায় জুড়ে আছে) তাহলে পশ্চিমবঙ্গের হয়ে যে সমস্ত ক্রীড়া সংগঠন প্রতিনিধিত্ব করে এবং করছে তাদের নাম ইংরাজি তে BENGAL না রেখে WEST BENGAL রাখা হোক। এটা তো রাজ্যের অধিকারে।
সন্তোষ ট্রফিতে (এখন ব্রাত্য প্রায়, আধুনিক সময়ের কেউ হয়তো জানে না ওই ট্রফির কথা) পশ্চিমবঙ্গ আজও বেঙ্গল নামে খেলে। ক্রিকেট - রঞ্জি থেকে দলীপ ট্রফি হয়ে কোচবিহার ট্রফি - কোনটাতেই তো ওয়েস্ট বেঙ্গল টীম পাঠায় না, পাঠায় বেঙ্গল। টেবিল টেনিসে, অ্যাথলেটিক্সে, হকিতে - অর্থাৎ প্রতিটি খেলার জগতে কেউ বলতে পারবেন প্রতিনিধিত্ব করে বেঙ্গল।
বন্ধু আপনি কি নিজেকে বলেন পশ্চিম বাঙালী? আমি বলি না, হতে পারে এ আমার একান্ত ব্যক্তিগত আবেগ অথবা চেতনা, হয়ত বা একমাত্র আমিই নিজেকে পশ্চিম বাঙালী না বলে বাঙালী বলে পরিচয় দিয়ে থাকি।
(পশ্চিম বাঙালী) বাঙালী শ্রীতোষ যেমন ২১ শে ফেব্রুয়ারি কে মনে রাখে তেমনই সে ১৯ শে মে কেও ভোলে না।
"অনেক সীমন্তের সিঁদুর মুছে সীমান্ত হয়েছে আঁকা",
তাই হয়তো পশ্চিম বঙ্গীয় বাঙালী হয়েও আমি বেঙ্গল টীম গুলোকে সমর্থন করি -
নিজেকে পশ্চিম বাঙালী নয়
বাঙালী বলতেই সবচেয়ে বেশী ভালোবাসি।
এই যুক্তিতেই অথবা আবেগেই রাজ্যের নাম "বাংলা" হলে ক্ষতি কি
ইতিহাস বই থেকে ইতিহাস মুছে ফেলে শাসক
ইতিহাস কি কোনদিন মোছে
মানুষ শারীরিক ভাবে শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়
মন থেকে হয় কি?

কাফিল খান এবং শ্রীতোষ

কাফিল খান এবং শ্রীতোষ
সোজা কথা সোজা ভাবে বলা আমার অভ্যাস। তাই বলি কাফিল খান সংক্রান্ত কিছু পোষ্ট ফেসবুকে ঘুরছে যার বেশীর ভাগ কাফিল খানকে অন্যায় ভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। এর বিরোধী একটি পোষ্ট আমি নিজে শেয়ার করেছি। তাই এ লেখাঃ
আমি বলছি কাফিল খানকে অন্যায় ভাবে হেনস্থা করা হয়েছে এটা একটা
ফালতু পোষ্ট। এয়ারপোর্টে সিকিউরিটি স্ক্যানিং এর জায়গায় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ থাকে না, থাকে CISF এয়ারপোর্টে আমাকেও জুতো - বেল্ট খুলতে হয়েছে, মোবাইল, ল্যাপটপ (ব্যাগ থেকে বের করে) স্ক্যানিং এ দিতে হয়েছে। পকেট থেকে পেন, খুচরো কয়েন সব বার করতে হয়েছে। তারপর বডি স্ক্যান হয়েছে। পোর্ট ব্লেয়ার থেকে কলকাতা, মুম্বই, বাগডোগরা, গ্যাংটক (সবই ডোমেস্টিক)। আরও বলি, Official Duty তে Great Eastern Hotel এ ঢোকার সময় ও ব্যাগ থেকে ল্যাপটপ, পকেট থেকে কয়েন এবং পেন বার করতে হয়েছে। গেট সিকিউরিটি জানতেন আমরা যাব তবুও করতে হয়েছে এবং যে ৫/৬ দিন গেছি প্রতিদিন করতে হয়েছে। নিয়ম সকলের জন্য এক। শ্রীতোষ বা কাফিল খানের জন্য আলাদা নয়। জানুন তারপর পোষ্ট / কমেন্ট করুন। যারা করেছেন (কিছু মনে করবেন না) তারা বোধহয় গত কয়েক বছরে বিমান যাত্রা করেন নি।

 10 July at 19:24

অপরাধী কারা?

ইশরত জাহান কি অপরাধী? এক অংশের মানুষ বলবেন “না”। সেই অংশের মানুষই আবার আখলাক কে পিটিয়ে মারায় অংশ নেন, সরবে / নীরবে তাকে সমর্থন করেন অর্থাৎ আখলাক কে অপরাধী বলে মনে করেন, যেমন ওরা ইশরতকে অপরাধী বলে মনে করেছে। আপনারা সমাজের দুই অংশের মানুষ কিন্তু আপনাদের মূল চরিত্র একই। আপনারাই হলেন আসল অপরাধী। যে কোন সুস্থ, স্বাভাবিক, সচেতন, শিক্ষিত, যুক্তিবাদী মানুষের কাছে আপনারা হলেন সবচেয়ে বড় সমাজ শত্রু। তাই আপনাদের কাছে আমরা কমন এনিমি কারণ আমাদের মত যুক্তিবাদী মানুষ গুলো ইশরত এবং আখলাক এর উপর আক্রমণের বিরোধিতা একই ভাষায় করে থাকে। 

আপনারা হলেন সমাজের সেই অংশ যারা মাথা পিছনে ঘুরিয়ে সামনে হাঁটার চেষ্টা করেন। আপনারা হলেন সমাজের সেই অংশ যারা বিশ্বাস করেন একজন স্বাধীন মানুষ কি খাবে, কি পড়বে, কি ভাষায় একে অন্যকে সম্বোধন করবে – তা ঠিক করার দায়িত্ব শুধু মাত্র আপনাদের এবং যদি কেউ তার বিরোধিতা করেন, তাকে শাস্তি দেওয়ার দায়িত্ব ও আপনাদের। যদিও আপনারা বলতে পারেন না কোন মহাপ্রভু মহাশক্তিমান আপনাদের উপর এই কাজের গুরু দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছেন।

এটা জেনে রাখবেন, ইতিহাস যুক্তিবাদী চিন্তাধারার মানুষকে মনে রাখে, যেমন মনে রেখেছে আব্রাহাম কভুর, অভিজিৎ, ওয়াসিকুর, মালালা, গৌরী লঙ্কেশের মত মানুষদের – তাঁদের উপর আক্রমণকারীদের নাম কেউ মনে রাখে না।

সফদার হাসমি আজও বেঁচে আছেন মানুষের চেতনায় – মানুষের নাটকে কিন্তু তাঁকে যারা আক্রমণ করেছিল তাদের নাম কেউ বলতে পারবেন কি?

তাই সমাজের ঠিকাদারদের বলি, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের সংযত করুন না হলে আপনাদের এত নাচন – কোঁদনের ফল হবে একটি বিশাল “০”। সমাজ সামনের দিকে মুখ করেই এগোবে – এগোবে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে, আপনাদের মত পিছনের দিকে মুণ্ডু ঘুরিয়ে সামনে হাঁটার ভুল সমাজ কোনদিন করে নি, কোনদিন করবেও না।

25 June, 2019

একটি কাল্পনিক সংলাপ।

একটি কাল্পনিক সংলাপ। ডঃ নন্দন ভট্টাচার্য লিখিত “অনার্যায়ন” নাটকে (যে নাটক রচিত হয় রামায়ণের পটভূমিকায়) হনুমান চরিত্রের সংলাপ কে, বর্তমান সময়ের পটভূমিতে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে নতুন করে লেখার প্রচেষ্টা করেছি। যদিও বর্তমান সময়ের কোন ঘটনা / চরিত্রের সাথে এই সংলাপের কোন মিল একান্তই কাকতালীয়।

প্রয়োজনীয় অনুমতি সংগ্রহ করে নিয়েছি নাট্যকার, পরিচালক এবং সেই দৃশ্যে যাকে উদ্দেশ্য করে সংলাপ বলা হচ্ছে ‘মহারাজ সুগ্রীব’ চরিত্র রূপায়ণ কারী ডঃ নন্দন ভট্টাচার্যের কাছ থেকে।

পরিবর্তনের সমস্ত দায়ভার বর্তমান লেখকের, নাট্যকার তথা পরিচালক এর জন্য বিন্দুমাত্র দায়ী নন।
পর্দা ওঠে। মঞ্চে তিনটি চরিত্র। মহারাণী, যুবরাজ এবং পদ্মপাণি (মুখ্য সভাসদ)। সামনে ডান ও বাম দিকে যুবরাজ ও পদ্মপাণি, মধ্যখানে একদম পিছনে বসে আছেন মহারাণী।

পদ্মপাণিঃ আপনাকে কিন্তু বারণ করা হয়েছিল মহারাণী। হ্যাঁ, প্রথম থেকেই, যখন আপনি রাজত্ব ভার গ্রহণ করলেন তখন থেকেই আপনাকে বারণ করা হয়েছিল বৈদ্য রাজের প্রতি অসহিষ্ণু হতে। আপনাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, আপনার অনুগত প্রজাদের সংযত করতে। আপনি সে অনুরোধে কর্ণপাত করেন নি, বরং তাদের অসংযত আচরণকে প্রশ্রয় দিয়েছেন বারে বার। তাদের নিষেধ করা অনেক দুরস্থান আপনি পরোক্ষে তাদের উৎসাহিত করেছেন অন্য নাগরিকদের উপর অত্যাচার করতে। (যুবরাজ চমকে উঠেছে)

রাণীঃ (বিস্মিত এবং বিভ্রান্ত হয়ে) কি – কি বলছ তুমি পদ্মপাণি?

পদ্মপাণিঃ সহজ কথা, এতদিন ধরে আপনাকে যারা সু পরামর্শ দিয়ে এসেছে, তাঁদের বার বার অপমান করেছেন আপনি, নিজেকে প্রমাণ করতে চেয়েছেন সর্বেসর্বা। আপনার কথায় চলতে হবে সব্বাই কে, যে কোন পথের মোড়ে থাকবে আপনারই চিত্র! যারা এ কথা মেনে নেবে, দেখাবে অচলা ভক্তি, প্রতি বাক্যে দু বার আপনার নাম উচ্চারণ করবে, তারা পাবে ক্ষমতার প্রসাদ। আপনার রাজ্যে থাকবে না কোন বিরোধী শক্তি। আপনি একা – আপনি অনন্ত।

রানীঃ (আরও বিস্মিত – গলা কাঁপছে) অর্থাৎ!

পদ্মপাণিঃ (বিদ্রূপাত্মক হাসি) অর্থাৎ যারা এতদিন আপনাকে সুপরামর্শ দিত তারা গেছে দূরে সরে, যারা পেয়েছিল ক্ষমতার প্রসাদ, সেই প্রসাদ নিয়ে তাদের মধ্যে লেগেছে মারামারি। ফলে তাদেরই একাংশ আজ বিদ্রোহী। শ্রীপর্ণ রাজ তাদের হাতে গৈরিক সরসিজ তুলে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, বিনিময়ে তারা আপনার সমস্ত গুপ্ত কথা প্রকাশ করে দিচ্ছে আমার কাছে। শ্রীপর্ণ রাজ রজধুলি লাভে ধন্য আমি সেই সমস্ত সংবাদ তুলে দিচ্ছি শ্রীপর্ণ রাজের কাছে অথবা প্রকাশ করছি জন সম্মুখে। পুরো চিত্রনাট্য আমারই রচনা, মনোগ্রাহী নয় কি মহারানী?

রাণীঃ (এবার আতঙ্কিত) পদ্মপাণি, এই পরিণতি হল তোমার আনুগত্যের? তুমিও (কথা শেষ করতে পারে না)

পদ্মপাণিঃ (চূড়ান্ত বিদ্রূপে) আনুগত্য! আনুগত্য কোন দিন চিরস্থায়ী হয় না মহারাণী, এ শিক্ষা আপনিই দিয়েছেন। একচ্ছত্র ক্ষমতার লোভে বার বার বদলেছেন আনুগত্য – মনে পড়ে কি মহারাণী?

মহারাণীঃ (অসহায় কণ্ঠে) তাহলে ওই শ্রীপর্ণ রাজের সাথে তোমার কি সম্পর্ক পদ্মপাণি?

পদ্মপাণিঃ সেও আনুগত্যের মহারাণী। আমাকে আপনি আর কি ই বা দিতে পারেন মহারাণী, প্রধান অমাত্য পদ! তা তো রাজ পরিবারের জন্য সংরক্ষিত! শ্রীপর্ণ রাজ আমাকে দিতে পারেন শাসকের চেয়েও বড় শাসক হওয়ার ক্ষমতা, এ প্রান্তের শাসককে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা। তার জন্য যদি আনুগত্য বদল করতে হয়, ক্ষতি কি তাতে মহারাণী?

যুবরাজঃ (চূড়ান্ত ক্রোধে) আমি এই মুহূর্তে জন সমক্ষে প্রচার করব তুমি গদ্দার।

পদ্মপাণিঃ (যুবরাজের দিকে তাকিয়ে – মুখে বিদ্রূপাত্মক হাসি) ক্ষতি নেই তাতে, সমস্ত ঘটনা আরও বেশী করে মানুষের কাছে তুলে ধরব আমি। তাছাড়া “গদ্দার” সম্বোধনটি অতি ব্যবহারে অচল। (মহারাণীর দিকে ফেরে) আপনার কথার সাথে একমত না হলেই সে “গদ্দার”, তাই না মহারাণী! এছাড়া, মহারাণী আপনি, যুবরাজ এবং আপনাদের একান্ত অনুগত প্রসাদ ভিক্ষুদের প্রতি রাজ্যের একাংশের মানুষের যা ধারণা, তাতে তারা আপনার গুপ্ত কথা সহজেই বিশ্বাস করবে। একবারে না করলে বারে বারে প্রচার হবে। এ শিক্ষাও মহারাণীর অনুগত এ প্রান্তের সুশীল প্রচার সচিবদের কাছ থেকেই পাওয়া!

(উইংসের দিকে ফেরে) আসুন, আসুন আপনারা (প্রচার মাধ্যমের প্রতিনিধিরা ঢুকতে থাকে, মহারাণী তার আসনে বসে অসহায়, যুবরাজ ক্রুদ্ধ কিন্তু নিরুপায়, পদ্মপাণি হাত জোড় করে হাসি মুখে এগোতে থাকে প্রচার মাধ্যমের দিকে, মাঝে একটু দাঁড়িয়ে ঘুরে তাকায় মহারাণী ও যুবরাজের দিকে, মুখে শয়তানের হাসি, আবার ফেরে প্রচার মাধ্যমের দিকে, মুখে অমায়িক হাসি – পর্দা পড়ে)

27 May, 2019

এক সাধারণ মানুষের গল্প।

আজ একটা গল্প বলতে ইচ্ছে করছে। আসলে সব সময় চুটকি বা সিরিয়াস লেখা লিখতে ইচ্ছে করে না, বেড়ানোর গল্প ও করতে ইচ্ছা করে না। তাই মনে হল, আজকে একটি গল্প বলি। এক সাধারণ মানুষের গল্প।

একজন সাধারণ মানুষ, বয়সের হিসাবে তাকে যুবক বলাই ভালো। ২৬ – ২৭ বছর বয়স, প্রায় বছর তিনেক আগে বিয়ে হয়েছে, বাচ্চা – কাচ্চা হয় নি। একটি সরকারী অফিসের নিম্ন পদস্থ কেরাণী। চাকরিটা বদলির চাকরী। এতদিন পোস্টিং ছিল সদর দপ্তরে, এবার বদলী হতে হল রাঢ় বাংলার এক অঞ্চলে, এক মহকুমা শহর। স্বামী – স্ত্রী মিলে চলে এল সেই শহরে। নাগরিক সমাজের সব সুযোগ – সুবিধা সেখানে পাওয়া গেলেও, জায়গাটা বড় শান্ত। সেই ছোট্ট শহরের ষ্টেশনের কাছা কাছি একটি বাড়ি ভাড়া নিল তারা। সেই প্রথম তারা দুজনে নিজেদের মত করে, নিজেদের সংসার গড়ে তুলতে লাগল। দুজনে প্রায় সমবয়সী, প্রথম প্রথম অনেক কিছু ভুল হত। সেই ভুল গুলোর মধ্যে দিয়েই শিখতে লাগল ওরা, গড়ে তুলতে লাগল ভালোবাসায় ভরা নিজেদের ভালো বাসা। ছেলেটির অফিস টা ওই শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়ানো ছিটানো ছিল, নতুন অফিস বাড়ি এবং তার সাথে কোয়ার্টারস তৈরি হচ্ছিল। সে ওখানে পোস্টিং হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই অফিস চলে গেল সেই নতুন জায়গায়। মূল শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে এক বিরান জায়গায় মাঠের মধ্যে গড়ে উঠেছে সেই নতুন অফিস বাড়ি এবং তার সাথে কোয়ার্টারস। কর্মচারীদের মাইনে এবং পদের হিসাবে কোয়ার্টার গুলোর শ্রেণী বিভাগ। ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর মিলিয়ে মোট ৭৯ টি ফ্ল্যাট এবং একটির কোন শ্রেণী ছিল না, সেটি ছিল অন্য গুলির থেকে আলাদা – সব মিলিয়ে সংখ্যায় ৮০। অফিসের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী হল জেল খানা এবং অন্যদিকে হল সদর হাসপাতাল, অফিস থেকে দেখা যেত প্রায় ১ কিমি দূরের সেই হাসপাতালটি কারণ মাঝখানের পুরো অংশটি ফাঁকা মাঠ। শহরে যে সব কর্মচারী থাকেন, তাঁদের অফিসে যাতায়াতের সুবিধার জন্য অফিস থেকে একটি বাসের ব্যবস্থাও ছিল।

ছেলেটির একগুঁয়ে স্বভাবের জন্য একদিকে তার সহ কর্মচারীরা যেমন বিরক্ত হত, অন্যদিকে সেই একগুঁয়ে মনোভাবের জন্যই যে কোন দায়িত্ব তাকে দেওয়া হলে সে সেটা যত তাড়াতাড়ি সেটা করে ফেলত। আসলে সে ছিল ফাঁকিবাজ। দু ঘণ্টার কাজ যদি দেড় ঘণ্টায় করে ফেলা যায়, তাহলে তো আধ ঘণ্টা সময় পাওয়া যাবে, সেই সময়ে না হয় পড়া যাবে কোন বই অথবা একটু না হয় গল্প করা যাবে। চলতে লাগল দিন, ছোট অফিস, সকলেই সকলকে চেনে তাই কারো কোন সমস্যা হলে তার সহকর্মীরা এগিয়ে আসত পাশে দাঁড়ানোর জন্য, তার মধ্যে ওই ছেলেটিও থাকত। একটি বছর পার হয়ে গেল, ছেলেটির ওখানে ১ বছরের জন্যই পোস্টিং হয়েছিল কিন্তু ওই ছোট্ট শহরটি তাদের যেন কেমন এক মায়ার বাঁধনে বেঁধে ফেলেছে। তারা থেকে গেল।

ওই ক্যাম্পাসে বছরে দুটি পুজো হত, কালী পুজো আর সরস্বতী পুজো। দুটো পুজো তেই খিচুড়ি খাওয়ানো হত। প্রথমটিতে পুজোর পরের দিন এবং দ্বিতীয় টিতে পুজোর দিন। দ্বিতীয় বছর কালী পুজোর পরের দিনে ছেলেটির এক সিনিয়র সহকর্মী, ওই ক্যাম্পাসের বাসিন্দা, নাম ধরে নেওয়া যাক অচিন্ত্য, সেই অচিন্ত্য বাবু ওদের স্বামী – স্ত্রীকে নিমন্ত্রণ করলেন খিচুড়ি খাওয়ার জন্য। মেয়েটির একটু দ্বিধা থাকলেও, যেহেতু তার বন্ধু (স্বামী) র কাছ থেকে এঁদের সম্পর্কে বহু প্রশংসা শুনেছে, যেতে রাজি হল। দেখা তো যাবে, তার বর যেখানে চাকরী করে, সেই অফিস টা – কোয়ার্টার গুলো এবং সেখানকার মানুষগুলো কেমন? অচিন্ত্য বাবুর কোয়ার্টার টি দোতলায়। ওরা এসে পৌঁছাতেই (এবার থেকে বরং এই বাবু শব্দ গুলো বাদ দিয়ে দাদা শব্দটি ব্যবহার করি কারণ ওই অফিসে এই সম্বোধনেই ঘনিস্ট বড়দের ডাকা হত) অচিন্ত্যদা এবং বৌদি সাদরে অভ্যর্থনা করলেন। ওনার ফ্ল্যাটে তখন আরও দু এক জন সহকর্মী এবং তাঁদের স্ত্রীরা ছিলেন। একটু দূরে একটি হল ঘরে খাওয়ার আয়োজন। মাটিতে বসে একসাথে পঙক্তি ভোজন। তখন প্রায় বেলা ১ টা, অচিন্ত্য দা এবং বৌদি বললেন, চল এবার খেয়ে নেওয়া যাক তারপর না হয় আবার গল্প করা যাবে। সবাই উঠতে যাবে সেই সময় এক সহকর্মীর বাচ্চা মেয়ে বলে উঠল, এখন না, এখন টাইপ ওয়ানের লোকজন যাচ্ছে। সকলে আবার বসে পড়ল। প্রসঙ্গত টাইপ ওয়ানে থাকতেন গ্রুপ ডি এবং ড্রাইভার পদের লোকজন, টাইপ টু মূলত কেরানিদের জন্য, টাইপ থ্রি এক্সিকিউটিভ গ্রুপ সি এবং টাইপ ফোর এক্সিকিউটিভ গ্রুপ বি দের জন্য বরাদ্দ। ছেলেটির বড় খারাপ লাগল, অফিসে কাজের সুবিধার জন্য ক্লাস ভাগ করা রয়েছে কিন্তু অফিসের বাইরে এই ভেদ কেন, তাও আবার উৎসবের দিনে।

অফিসে তখন প্রায় দেড় বছর হয়ে গেছে, শহরে যে বাড়িতে ওরা দুজন ওদের স্বপ্নের ভালো বাসা গড়ে তুলেছিল, সেই বাড়ির মালিক জানালেন অবিলম্বে বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে। ছেলেটি পড়ল বিপদে। আর তিন – চার মাস বাদে ক্যাম্পাসে একটি টাইপ টু কোয়ার্টার ফাঁকা হবে, অফিসের নিয়ম মেনে তার জন্য বরাদ্দ হবে কিন্তু এই মুহূর্তে। অফিসে এসে সে এই সমস্যার কথা বলতেই অচিন্ত্যদা সহ অন্যরা তার সাহায্যে এগিয়ে এলেন। এগিয়ে এলেন তার সংগঠনের জোনাল সম্পাদক সহ আরও সহকর্মীরা, দেখা গেল একটি টাইপ থ্রি ফ্ল্যাট ফাঁকা আছে কিন্তু সেখানে থাকতে গেলে ৩ গুণ ভাড়া দিতে হবে যেহেতু নিয়ম অনুযায়ী সেই ফ্ল্যাট ওদের প্রাপ্য নয়। ওরা তাতেই রাজি। বছরের শেষ দিনে ওরা শহরের বাড়ি ছেড়ে এসে উঠল, তাদের সাময়িক আস্তানায়। মাস তিনেক পরে নির্দিষ্ট কোয়ার্টার টি খালি হতে তারা এসে উঠল নিজের আসল নিবাসে। এর মধ্যে সরস্বতী পুজো চলে গেছে, ওরা অবাক হয়ে দেখেছে যে ক্যাম্পাসের একটা কোণে কিছু সহকর্মী মিলে ছোট করে একটি পুজো করছেন, তাদের পরিবারের মানুষ জন ছাড়া আর কেউ সেখানে নেই। সেই বছরের কালী পুজোতেও সেই একই অবস্থা, পুজো প্যান্ডেলের সামনে দু – চার জন ছাড়া কেউ নেই, কোথাও ঘরের মধ্যে বসেছে তাসের আড্ডা, কোথাও বা অন্য কিছু। ছেলেটির এসব ভালো লাগছিল না, সে কোন পুজো আর্চায় বিশ্বাস রাখে না, সে বিশ্বাস রাখে উৎসবে। তার মনে হয়, এই সব পুজো – পার্বণে মানুষ একে অন্যের সাথে খোলা মনে মিশতে পারে, সেখানে ধনী – দরিদ্রর বিচার থাকে না। প্যান্ডেলে দাঁড়িয়ে প্রতিমাকে প্রণাম করার সময়, কেউ একবারের জন্যও চিন্তা করে না, পাশের মানুষটির কি জাত বা তার মাসিক রোজগার কত? এখানে তাহলে এই রকম ভেদাভেদ কেন? এই তো কটা কোয়ার্টার, তার মধ্যে আবার মেস আছে গোটা দু – তিনেক, এখানে এই রকম হচ্ছে কেন? এটাকে দূর করা যায় কি করে? হঠাৎ করে তার মনে হয় বাচ্চাদের দিয়ে একটা নাটক করালে কেমন হয়? এমন একটা নাটক যার সংলাপ বাচ্চাদের মজা দেবে এবং সংলাপ ভুল হলেও দর্শক কিছু মনে করবে না। ভাবতেই ভাবতেই তার মাথায় আসে সুকুমার রায়ের “লক্ষণের শক্তিশেল” নাটক টির কথা। ক্যাম্পাসে বেশী বাচ্চা আছে টাইপ ওয়ান, আর তারপরেই হল টাইপ টু, টাইপ থ্রি তে ও আছে কজন। কথায় আছে বাঘিনী কে বশ করতে হলে, তার বাচ্চাদের বশ কর। বাচ্চা গুলো যদি নাটকে নামে, তাহলে বড়রা ও যুক্ত হবে অনুষ্ঠানের সঙ্গে, মিটবে ভেদাভেদ। ওখানে একটি কোয়ার্টারস কমিটি ছিল, ছেলেটি তখন সেই কমিটি সদস্য। সেই একই কমিটির সদস্য অচিন্ত্যদাও। ছেলেটি তার কাছে গিয়ে প্রস্তাব দেয়, পিছনের আসল উদ্দেশ্য কিন্তু সে বলে নি। অচিন্ত্যদা সঙ্গে সঙ্গে রাজি। দুজনে মিলে যাওয়া হল কমিটি সম্পাদক গৌতমদার কাছে। গৌতম দা জিজ্ঞাসা করলেন পারবেন? ছেলেটি বলল, চেষ্টা করে তো দেখি।

শুরু হল চেষ্টা। এক গাদা শিশুর মধ্যে থেকে বেছে নিতে হবে প্রধান কটি চরিত্র বাকিগুলো বানরসেনা। সেই পর্ব শেষ হয়ে শুরু হয়ে গেল রিহার্সাল। এবার ঠিক হল বড়রাও নাটক করবে। ঠিক হল সত্যি ভূতের গল্প। গৌতম দা প্রস্তাব দিলেন নিজেরাই তৈরি করব প্রতিমার প্যান্ডেল – প্রতিমা থাকবেন গ্রামের আটচালা ঘরে। এক ঘুমন্ত দৈত্য যেন জেগে উঠেছে। কোন ভেদাভেদ নেই। যে যেমন ভাবে পারছে, জড়িয়ে পড়ছে পুজোর সাথে। আবাসিকদের অনেকের মধ্যে এত প্রতিভা আছে, সেটাই কেউ জানত না। বউদিদের মধ্যে শ্রেণী বিভেদ মিটে গেছে, কোন মিটিং করে না – এমনিতেই। ছেলেটা ভাবে তাহলে সে পারছে। অন্য আর কিছু বলছি না, পুজোর দিন সকালে মাঠে যারা ছিল তারা অবাক হয়ে দেখল যে ভদ্রলোক জীবনে রান্না ঘরে ঢোকেন নি, তিনি মাঠে বসে টম্যাটো কাটছেন। সেদিন রাত্রে তার কোয়ার্টারে ফিরে ছেলেটা আর মেয়েটা কেঁদেছিল – সাফল্যের কান্না। ৬ মাস আগের কালী পুজোর পরের দিন ও খিচুড়ি খাওয়ার সময় সে যা দেখেছিল, আর সে দিন দুপুরে খিচুড়ি খাওয়ার সময় যা দেখল তার মধ্যে আকাশ – পাতাল ফারাক বললেও কম বলা হবে। এই মানুষ গুলি এত বদলে গেল?

না, একটা ঘটনায় সব কিছু শেষ হয় না। ভেবে চলে সে। সামনের কালী পুজোয় তাকে পুজোর সন্ধ্যাবেলায় সকলকে নিয়ে আসতে হবে পুজো প্যান্ডেলের সামনে। স্বামী – স্ত্রী ভেবে ঠিক করল, মেয়েদের আর বৌদিদের মধ্যে শাঁখ বাজানো আর প্রদীপ জ্বালানো প্রতিযোগিতা করলে কেমন হয়? বলা হল গৌতম দা কে। তিনি রাজি। ছেলেটা কিন্তু সন্তুষ্ট নয়। তার মাথায় ঘুরছে বাচ্চা গুলোর কথা। ওদের দিয়ে কি কিছু করানো যায় না। ভাবতে ভাবতে মাথায় এল, ক্যুইজ করালে কেমন হয়? এবার ছোটা অচিন্ত্যদার কাছে, তার আগে ধর দা মানে প্রদীপ ধরের সাথে আলোচনা করে নেওয়া। ভীষণ পজিটিভ মানসিকতার এই ভদ্রলোক যে কোন ভালো কিছুতেই রাজি। অত্যন্ত মাথা ঠাণ্ডা এক মানুষ। তিনি বললেন, খুব ভালো কথা, চেষ্টা করতে দোষ কি? অচিন্ত্যদাও রাজি। অচিন্ত্য দা, ধরদা এইরকম কয়েকজন নিলেন প্রশ্ন বাছাইয়ের ভার। সাথে থাকল ছেলেটির স্ত্রী। অফিসের এক সহকর্মী সেই প্রশ্নোত্তর গুলিকে বাংলায় টাইপ করে দিলেন। একদিন ছেলেটি ক্যাম্পাসের রাস্তায় হাঁটছে, ছেলেটির বন্ধু স্থানীয় একজন সহকর্মী নানা কথার মাঝে বললেন, জানো তো, আমরাও একবার ক্যুইজ করানোর চেষ্টা করেছিলাম, মাত্র তিনটে নাম পড়েছিল। ছেলেটি হেসে বলল, ঠিক আছে আমার ক্ষেত্রে না হয় শূন্য টি নাম পড়বে, শূন্যের থেকে নিচে তো হবে না। দেখিই না। কালী পুজোর সন্ধ্যা – ক্যাম্পাসের প্রায় সমস্ত লোক মাঠে। আলাদা একটা সামিয়ানা খাটানো হয়েছে। ৬ জন করে এক একটি গ্রুপ। প্রতি গ্রুপে সব ধরনের ক্লাসের ছেলে মেয়েকে সমান ভাবে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে যাতে প্রতিটি গ্রুপের শক্তি সমান থাকে। ৫ টি গ্রুপ, তিনজন বিচারক, ছেলেটি নিয়েছে ক্যুইজ মাস্টারের দায়িত্ব। একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যদি সবকটি গ্রুপ কোন একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারে, তাহলে সেই প্রশ্ন চলে যাবে দর্শক দের মধ্যে। যে আগে সঠিক উত্তর দিতে পারবে সে পাবে একটি চকলেট লজেন্স। ক্যুইজ তখনো অর্ধেক হয় নি, দর্শক দের মধ্য থেকে দাবী উঠে গেল, শুধু বাচ্চাদের নিয়ে হবে কেন, বড়রা কি দোষ করল? সঙ্গে সঙ্গে বিচারক মণ্ডলী জানিয়ে দিলেন, সবাই ইচ্ছা করলে সামনের বছর থেকে বড়দের ক্যুইজ ও হবে। রাত যখন ১১ টা বাজে তখনও পুজো মণ্ডপের সামনে এবং আশেপাশে ক্যাম্পাসের অনেকে। রাত বাড়ে, একমাত্র পুজোর সাথে যুক্ত যারা, তারা বাদে সকলে বাড়ি চলে গেছে। ছেলেটা আছে, পুরোহিত মশায়ের কিছু দরকার হলে বা ভাঁড়ার ঘর থেকে কিছু আনার দরকার হলে, এনে দেবে সেই ছেলেটা। চাবি তার কাছে, সে স্বেচ্ছায় এই দায়িত্ব নিয়েছে। বৌদিদের বলেছে, আপনারা পুজোর কাজ করুন, বার বার ওঠার দরকার নেই। রাত শেষ হয়, উনুনে আগুন পরে, ভাঁড়ার থেকে রান্নার সব আনাজ পাতি এনে দিয়ে, সকালের দায়িত্বে যে আছে তার হাতে চাবি দিয়ে সে যায় নিজের ঘরে। মন তার তৃপ্ত। বছরে অন্তত দুটো দিন, ক্যাম্পাসের সব মানুষগুলোকে একসাথে মিলিয়ে দেওয়ার জন্য যে একটি দেশলাই কাঠি সে জ্বালিয়েছিল, সেই একটি দেশলাই কাঠি প্রতিটি ঘরে স্নিগ্ধ প্রদীপ হয়ে জ্বলছে। একবার একটা দেশলাই কাঠি জ্বললে পাশে অনেক হাত আসে আরও অজস্র দেশলাই কাঠি হাতে নিয়ে, যা থেকে জ্বলে সহস্র প্রদীপ, প্রদীপের স্নিগ্ধ আলো প্রয়োজনে মশাল হয়ে জ্বলে।

গল্প টা শেষ হয় নি এখনও। বছর দু – তিনেক পরে কিছু মনোমালিন্যের জন্য (দোষ তার নিজেরও ছিল কিছু) তারা কালী পুজোর একদিন আগেই ঘুরতে চলে গেছিল। ফিরে এসেছিল, পুজোর পরের দিন সন্ধ্যায়। ফিরে এসে শুনেছিল,পুজোর দিন সন্ধ্যায় ক্যুইজ হয়েছে, হয়েছে শাঁখ বাজানো ও প্রদীপ জ্বালানো প্রতিযোগিতা। এক দারুণ খুশী তে – ভালোবাসায় মন ভরে উঠেছিল তার, সেই দেশলাই কাঠি জ্বালানো সত্যিকারের পূর্ণতা পেল সেই দিন। মশাল টা নেভেনি তাহলে। তারপর কেটে গেছে বহুদিন – আজও যখন সেই দিন গুলোর কথা মনে পড়ে, এক অদ্ভুত ভালোবাসায় ভরে ওঠে তার বুক। ছেলেটি আর মেয়েটি আজও সেদিন গুলোর গল্প করে, বিশেষত যখন তাদের খুব মন খারাপ হয় তখন। অ্যালবাম খুলে ওরা দেখে সেই দিন গুলোর ছবি।

কেমন লাগল গল্প টা?
না এটা গল্প নয়। আসলে এটা সেই ছেলেটার নিজের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়ের এক সামান্য অংশ। গল্পের সময় কাল ১৯৯৬, জুন – ২০০২ ফেব্রুয়ারি। গল্পের পটভূমি বোলপুর আরও সঠিক ভাবে বললে সিয়ান সেন্ট্রাল এক্সাইজ অফিস ক্যাম্পাস। যে তিন জনের নাম লিখেছি, তাঁরা প্রত্যেকে বাস্তবে আছেন। আরও অজস্র মানুষের নাম বাকি থেকে গেছে যারা এই ঘটনা গুলির সাথে সক্রিয় ভাবে জড়িত, তাঁদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। অন্য একটি লেখায় আমি এঁদের সকলের নামই দিয়েছি।

এবার একটা কথা বলি, একটা ছোট্ট জায়গায় কিছু মানুষকে একসাথে মেলানোর চেষ্টা করেছিলাম, যখন সেই চেষ্টা শুরু করি, আমি ছিলাম একদম একা। ধীরে ধীরে বেশ কিছু মানুষকে পাশে পেয়ে গেছিলাম, সেই চেষ্টা সফল হয়েছিল। আপনার পাশে তো ৭% মানুষ আজও আছে বন্ধু
সামনে ৭২৭ দিন। পারা যায় না কি মানুষের আস্থা আবার জয় করতে? চলুন না, সব্বাই মিলে একবার চেষ্টা করে দেখি।
শ্রীতোষ

অঞ্জন দত্তের "বেলা বোস" অবলম্বনে

হিন্দু রাষ্ট্র পেয়ে গেছি বেলা শুনছ
দেশে আর কোন সমস্যা থাকবে না
সারদা – নারদার চোর গুলো যাবে জেলে
সন্ত্রাসীরা আর রাইফেল ধরবে না।
এতদিন পরে এইবার জেনো সত্যি
খুলে যাবে দেশে সব প্রগতির দ্বার।
এটা কি ১২৩৪৫৬৭৮৯০
দিন না ডেকে বেলাকে একটি বার
নেটওয়ার্ক যায় কেটে সব মোবাইল ফোনে
জরুরী খুব জরুরী দরকার।


রাম মন্দির হবেই বেলা সত্যি
কৃষকেরা আর স্যুইসাইড করবে না,
সার্টিফিকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে পড় লাইনে
দেশে কোন বেকার থাকবে না জেনো আর।
এত দিন ধরে কত অপেক্ষা
গ্রামে গঞ্জে শহরে নগরে
ভুখা মানুষের শরীর দেখেছ কত
সেগুলো যাবে সরে মানুষের এত প্রতীক্ষা
কালকে সত্যি হবেই তুমি জেনো,
শেষ হল বেলা যত সমস্যার!
হ্যালো এটা কি ১২৩৪৫৬৭৮৯০
দিন না ডেকে বেলাকে একটি বার
নেটওয়ার্ক যায় কেটে সব মোবাইল ফোনে
জরুরী খুব জরুরী দরকার।

চুপ করে কেন একি বেলা তুমি কাঁদছ
এন আর সি এসে গুঁড়িয়ে দেবে ঘর
তবু এসেছে এদেশে দেখ
হিন্দু রাষ্ট্র – হিন্দুর সরকার।
হ্যালো এটা কি ১২৩৪৫৬৭৮৯০
দিন না ডেকে বেলাকে একটি বার
নেটওয়ার্ক যায় কেটে সব মোবাইল ফোনে
জরুরী খুব জরুরী দরকার।
অঞ্জন দত্তের "বেলা বোস" অবলম্বনে
শ্রীতোষ ২৭/০৬/২০১৯

09 May, 2019

মনসা - বাচা - কর্মা

এই পোষ্টের শুরুতেই কয়েকটি শব্দ লেখার প্রয়োজনীয়তা আছে। আমার নিজের কোন সন্তান নেই এবং আমি কোন ভাবেই শিক্ষা সংক্রান্ত কোন বিষয়ের সাথে জড়িত নই অর্থাৎ বর্তমান সিলেবাস, শিক্ষাদান পদ্ধতি, পরীক্ষার প্রশ্ন কি ধরনের হবে এবং তাতে মূল্যমান অর্থাৎ নাম্বার দেওয়ার পদ্ধতি কি ধরনের হবে তাই নিয়ে আমার কোন ধারণা নেই। একথা মাথায় রেখেই আমার এ পোষ্ট করা।

আমরা জানি মনসা - বাচা - কর্মা। দর্শন এই কথা বলে অর্থাৎ মনে যা ভাববে - মুখে তাই বলবে - কাজে তাই করবে।

সংবাদ মাধ্যমে জানলাম
আইএসসি (দ্বাদশ শ্রেণি)-র ফল প্রকাশিত হল। তাতে ১০০ শতাংশ নম্বর পেয়ে দেশের সেরা হলেন কলকাতার দেবাঙ্গকুমার অগ্রবাল। লা মার্টিনিয়ার ফর বয়েজ স্কুলের ছাত্র তিনি। দেবাঙ্গের সঙ্গে যুগ্ম ভাবে প্রথম হয়েছেন বেঙ্গালুরুর বিভা স্বামীনাথন।
শুধু তাই নয়
মঙ্গলবার আইসিএসই (দশম শ্রেণি)-র ফলও প্রকাশিত হয়েছে। তাতে যুগ্ম ভাবে শীর্ষস্থান দখল করেছে মুম্বইয়ের জুহি রুপেশ কাজারিয়া এবং পঞ্জাবের মুক্তসারের মনোহর বনসল। জুহি জুহুর যমুনাবাঈ নার্সী স্কুলের ছাত্রী। মনোহর মুক্তসরের লিটল ফ্লাওয়ার কনভেন্ট স্কুলের পড়ুয়া। তারা ৯৯.৬০ শতাশ করে নম্বর পেয়েছে।
এর অর্থ দুটো ক্ষেত্রেই প্রায় ১০০% নম্বর পাওয়া। তার মানে প্রতিটি বিষয়েই দেবাঙ্গকুমার অগ্রবাল এবং বিভা স্বামীনাথন ১০০% নাম্বার পেয়েছেন এবং জুহি রুপেশ কাজারিয়া এবং মুক্তসারের মনোহর বনসল মাত্র দশমিক চার শতাংশ কম নাম্বার পেয়েছেন।
আমার বয়স ৫০ ছুঁতে চলেছে, আমাদের সময়ের কথা বলা হাস্যকর। যে কথা বলতে চাই, তা হল হয়তো আজকের সময়ে টেক্সট বুক প্রথম থেকে শেষ পড়তে হয় এবং পড়ে মুখস্থ রাখতে হয় কারণ কোথা থেকে প্রশ্ন আসবে তা কেউ জানে না। আজকের প্রশ্ন পত্র মূলত অবজেক্টিভ টাইপ অথবা পুরোটাই অবজেক্টিভ টাইপ মানে হ্যাঁ আর না বেছে নিতে হয় ফলে এই ধরনের নাম্বার যারা পেয়েছেন তাঁদের শ্রেষ্ঠতা নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলা উচিত নয় এবং আমি তা তুলছিও না।
বন্ধুরা,
লেখার শুরুতে নিজের কৈফিয়ত লেখার পরে, মূল লেখার শুরুতে আমি কিছু কথা লিখেছিলাম, সেই কথা গুলি আবার আনছি
মনসা - বাচা - কর্মা। দর্শন এই কথা বলে অর্থাৎ মনে যা ভাববে - মুখে তাই বলবে - কাজে তাই করবে।
এই মানুসগুলোই ভবিষ্যতের আমলা কিংবা ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার
একটু ভেবে দেখবেন কি ভারতের মানুষেরা বিশেষত যারা শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে জড়িয়ে আছেন তাঁরা
আমরা ভাবী যুগের মানুষদের মনে রাখার শিক্ষা দিলাম কিন্তু তাঁদের মনের সম্পূর্ণ ভাব প্রকাশের শিক্ষা দিলাম কি? কাজে কি করবেন সে তো অনেক দূরের বিষয়।
আশা করি বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ এক মানুষের এই ধৃষ্ঠতা আমার শিক্ষক বন্ধুরা ক্ষমা করবেন।

07 April, 2019

ভোটরঙ্গ (নামকরণ Tanmay Dey )


এতো মহা জ্বালা! ২৫ জন বা তারও বেশী লোকের জন্য একটি মাত্র ল্যাট্রিন ও বাথরুম (তাতে জলের ব্যবস্থা থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে), কাছাকাছি খাওয়া - দাওয়ার ভদ্রস্থ ব্যবস্থা থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে, গ্রামের দিকে বুথে পর্যাপ্ত আলো (ইলেকট্রিক তো অনেক ক্ষেত্রেই কাগজে কলমে) থাকতেও পারে না থাকতে পারে, মাথার উপরে পাখা (যদি থাকে) তাহলে হয়তো এমন স্পীডে ঘুরছে যে ব্লেড গুলো আলাদা করে দেখা যাচ্ছে, রাতের শোয়া হয় মাটিতে অথবা বেঞ্চের উপরে কিংবা নীল আকাশের নিচে (গ্রামের দিকে হলে) - এই হল বুথের অবস্থা। বুথের বাইরে অনেক ক্ষেত্রেই লাঠি ধারী একজন বা দুজন খাঁকি উর্দি ধারী, লাঠি না হলে আগ্নেয়াস্ত্র হলেও বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই মান্ধাতার আমলের ৩০৩ বোরের (গুলি ফুটবে কিনা সেই পুলিশ ও জানেন না)। পোলিং, প্রিসাইডিং, মাইক্রো অবজারভার হিসাবে তিনটেরই ভুক্তভোগী। অ্যাসিস্ট্যান্ট এক্সপেন্ডীচার অবজারভার হিসাবে সাক্ষী।
এবার আসা যাক ভোটের দিনের কথায়। গত পঞ্চায়েত নির্বাচন তো তুলনাহীন - পৃথিবীর কোন জায়গায় এর আগে এত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয় নি! এক ফোঁটা রক্ত পড়ে নি, কোন প্রার্থী কে দিয়ে জোর করে মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হয় নি (সকলেই ভুল বুঝে উন্নয়নের স্বার্থে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন), সমস্ত ভোটার শান্তিপূর্ণ ভাবে উন্নয়ন বাহিনীর নির্দেশ মেনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন (হয়তো বা যে ভোটার বেঁচে নেই তিনিও), একেবারে আদর্শ ভোট যাকে বলে। প্রশ্ন হচ্ছে এর আগেও এর কাছাকাছি ধরনের আদর্শ ভোট হয়েছে সংবাদ মাধ্যমে পড়েছি (কিছু ক্ষেত্রে শুনেছি) প্রিসাইডিং / পোলিং অফিসাররা শান্তিপূর্ণ ভাবে খবরের কাগজ পড়েছেন বা মাছ ধরেছেন এবং যাতে খবরের কাগজ পড়তে বা মাছ ধরতে কোন অসুবিধা না হয় সেই জন্য কিছু মানুষ ইঞ্জেক্সনের সিরিঞ্জ, নকুল দানা, গুড় জল ইত্যাদি এবং ইত্যাদি নিয়ে সতর্ক ভাবে তাঁদের পাহারা দিয়েছেন। রাজকুমার রায় এবং মনিরুল ইসলাম তার এক আদর্শ উদাহরণ। আসলে, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন সব সময়েই শান্তিপূর্ণ এবং রক্তপাত শূন্য!!

ভোট গ্রহণ পর্ব মিটল এবার শুরু হবে আর এক পরীক্ষা। ডি সি আর সি তে আসার পর মনে হয় প্রতিটি পোলিং টীম সব কিছু ভুল করে বসে রয়েছে, স্কুলের হেড মাস্টার বা হেড মিস্ট্রেস হাতে বেত নিয়ে খাড়া সেই সব ভুল শুধরাবার জন্য। আপনি সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে এলেন, আবার আপনাকে সব খুলে দেখাতে হবে, আলপিন থেকে এলিফ্যান্ট সব কিছু মিলিয়ে দেখাতে হবে। এমনকি বয়স্ক লোকেদের প্রতি এদের মধ্যে অনেকেই যে সুন্দর ব্যবহার করেন তাতে নিজেকে মানুষ বলে ভাবতে দারুণ লাগে (এরা নিশ্চয় এদের বাবা - মার সাথেও এত সুন্দর ব্যবহারই করেন)!!! যখন সেই পর্ব মিটল তখন যা করা তাকে একটি লাইনে বলা যেতে পারেঃ

"বাপি বাড়ি যা"।

রাত তখন কটা, মানুষগুলো কিভাবে বাড়ি ফিরবে সেদিকে কারো কোন খেয়াল নেই। কোন প্রশ্ন করলে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে উত্তর "ওই তো ওদিকে বাস আছে, দেখে নিন" জাতীয় উত্তর (এও শুনেছি "কোলে করে পৌঁছে দিতে হবে নাকি")! এতক্ষণ সামান্য একটু ভদ্রতা থাকলেও, এই সময় সব উধাও।
দুর্গম অঞ্চল যথা সুন্দরবন, মাও বাদী অধ্যুষিত অঞ্চলের ভোট কর্মীদের অবস্থা তো আরও করুণ। আজকে এটা করুণতম এবং বাস্তব সত্য যে প্রতিটি ভোট কর্মী যখন বাড়ি থেকে বার হন, তখন তাঁদের প্রিয়জনের একটিই কামনা থাকে যে, মানুষটা যেন সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফেরে।

এই হল পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ গণতন্ত্রের ভোট গ্রহণের পর্যাপ্ত এবং স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থা!

অবাক লাগে, এর পরেও প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা আশা করেন মানুষ স্বেচ্ছায় ভোটের ডিউটি (বিশেষ করে পোলিং টীমের) মাথায় তুলে নেবেন। আরও অবাক লাগে মিডিয়া ভোট কর্মীদের যে সব অসুবিধার মধ্যে কাজ করতে হয়, তার কথা কোন সময় তুলে ধরে না।

(আশা করি এই বাস্তব অবস্থা তুলে ধরার জন্য আমাকে কোন রকম প্রশাসনিক জবাবদিহির মধ্যে পড়তে হবে না কারণ আমার একটাই বক্তব্য সরকারী কর্মচারীরা নির্বাচনের কাজ করতে কোন আপত্তি কোন সময় করেন নি এবং করবেন না যদি তাঁদের একটু খানি মানবিক দৃষ্টিতে দেখা হয়, তাঁদের নিরাপত্তা, ফেরার ব্যবস্থা ইত্যাদির প্রতি একটু মানবিক নজর দেওয়া হয়। দুঃখের বিষয় প্রশাসনের এক অংশের মধ্যে এর বড়ই অভাব।)

09 March, 2019

শ্রদ্ধাঞ্জলি

আমি এক কমি - মাকু - সেকু - ভাম - হার্মাদ - বরবাদ
আমার স্ত্রীকে ধর্ষণ করার হুমকি দিতে পারেন ভারতের দেশপ্রেমিক রতন বাহিনী
(আপনাদের হাতে বিশাল ক্ষমতা দেশের সংবিধান মেনে চলার)
শিরোনাম
শ্রদ্ধাঞ্জলি
প্রয়াত প্রাণ তোষ বন্দ্যোপাধ্যায় কে
এক দেশদ্রোহী কবিতা
দেশপ্রেম!
কাকে বলে দেশ প্রেম
আমি আজ এক ট্যাক্সি তে উঠেছিলাম
বাড়ি ফেরার পথে,
হঠাৎ করে কোন কারণে
বিষম খেলাম
ব্যাগে যে জলের বোতল থাকে
দেখলাম ফাঁকা -
প্রচণ্ড কাশছি
দম বন্ধ হয়ে আসছে
কোন রকমে ড্রাইভারকে বললাম
থোড়া পানি দিজিয়ে,
পানি তো নেহি হ্যায় স্যার।

আমি তখন দম ফেলতে পারছি না
মনে হচ্ছে এই বুঝি জীবনের শেষ
কয়েক মুহূর্ত!
গাড়ি দাঁড়িয়ে গেল
আমি হয়ত তখন জীবনের
শেষ কিছু শ্বাস গুনছি
আমার মুখে ধরা হল
জলের বোতল,
আধ বোতল জল
খেয়ে নিলাম এক নিঃশ্বাসে
আমি বাঁচলাম
এবং তাই লিখছি এ মুহূর্তে!

এটাই হল দেশপ্রেম
কারণ সে আমার পরিচয়
জিজ্ঞাসা করে নি
এ কোন নাটক নয়
এ আমার বাস্তব জীবন!
আমি ওই ট্যাক্সি ড্রাইভারের নাম জিজ্ঞাসা করি নি
কারণ
তার মধ্যে খুঁজে পেয়েছি আমার বাবাকে
আমার “বাবু”কে
প্রয়াত প্রাণতোষ বন্দ্যোপাধ্যায় কে
যার সম্পর্কে আজ ও
শুনতে পাই এক কথা
প্রাণতোষ দা যদি সারা দিনে
কারো উপকার করতে না পারতেন
দাঁড়িয়ে থাকতেন,
কাস্টমস্‌ হাউসের বাইরে
যদি কোন শবদেহ যায়
স্ট্র্যান্ড রোড ধরে,
(৬০ – ৭০ দশকের স্ট্র্যান্ড রোড)
যাবেন তার সাথে!!!

আমি সম্পূর্ণ ভাবে আমার বাবার
উত্তরাধিকারী হতে পারিনি,
তবুও চেষ্টা করে চলি,
আজকের ট্যাক্সি ড্রাইভার
আমাকে প্রাণতোষ বন্দ্যোপাধ্যায় কে
দেখিয়ে দিল -
দেখিয়ে দিল আমার বাবাকে
তার নিজের মধ্যে,
আমার সন্তানের বয়সী এক
মানুষের মধ্যে আমি দেখতে পেলাম
দেশপ্রেম,
যা হল দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা।

আসলে আমার বাবা এবং আমি
কোনদিন দিন জুজ্জ জুজ্জ খেলি নি
আমার উর্দি পরা বাবা -
আমাকে শিখিয়েছেন,
দেশের মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা
সো কলড্‌ ড্যাশ প্রেমিক দের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ লড়তে -
আমার বাবা এবং এই ট্যাক্সি ড্রাইভার
দেশ প্রেমিক কিনা আমি জানি না,
তবে তাঁরা ভারতের মাটিতে পথ চলা
মানুষ কে ভালোবাসে্ন -
হয়তো বা জুজ্জ জুউজ্জ খেলা
মানুষের কাছে তাঁরা
এবং তাঁদের মত সকলেই,
আসল দেশদ্রোহী -
(যেমন কমি আখ্যা পাওয়া আমি)
যারা জীবন কে ভালোবাসেন
দেশের মানুষ কে ভালোবাসেন।
প্রাণতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সন্তান শ্রীতোষ
যে জুজ্জ জুজ্জ খেলাকে ঘৃণা করে
০৮/০৩/২০১৯

নারী দিবস

নারী দিবস
(নারীকে অসম্মান করে যাওয়া পুরুষের কলমে)

আজ নারী দিবস !
এক পুরুষ হয়ে কি করে জানাবো
নারী দিবসের শুভেচ্ছা,
আমার সামনে পড়ে আছে
৮ বছরের তিসার লাশ!

আমার মত কোন এক
অথবা একাধিক পুরুষ ,
মুখে প্যান্ট ঢুকিয়ে
ভোগ করেছে তাকে
ক্ষণিকের জন্য পেয়েছে জীবনের আনন্দ!

ভুলে যাই ওর কথা,
আমার ঘরেও রয়েছে এক নারী
যাকে আমি বলি,
প্রিয়তমাসু -
আমি কি তাঁর প্রতি
সঠিক বিচার করতে পারি,
দিতে পারি তাঁকে তাঁর
সঠিক সম্মান।
এক পুরুষ হয়ে
স্বীকার করতে পারি
এক স্ত্রী র জীবন
তার স্বামীর কাছে
TAKEN FOR GRANTED।

আর কয়েক ঘণ্টা
তারপর
বিশ্ব নারী দিবস অপেক্ষা করবে
আর এক নারী দিবসের!
৩৬৫ দিনের মাঝে আরও অনেক
নারী বিক্রি হবে,
আরও অনেক নারী পণের
দাবীতে
জ্বালাবে শরীরে আগুন,
অথবা
ঝুলবে গলায় দড়ি দিয়ে।
আরও অনেক নারীর
শরীরে পড়বে
অ্যাসিডের হোলি।
পথে ঘাটে আরও অনেক
নারীর বুকে লাগবে
আমারই মত কত পুরুষের
কনুইয়ের খোঁচা!
বড় আরাম পাবে তৃপ্ত পুরুষ
আজকাল যেমন ড্যাশ প্রেমিক
উড়ছে আকাশে বাতাসে
তেমন পুরুষ!

আরও অনেক নারী
নির্ভয়া হবে
অথবা হবে কামদুনির অপরাজিতা!
আরও কত নারী
চম্পলা সর্দার অথবা
তাপসী মালিক ।
কিংবা নন্দী গ্রামের অজস্র
স্তন কাটা – ধর্ষিতা এবং
হলদি নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া
(ভোটের তালিকা থেকে নাম
বাদ যায় নি কারো)
মহিলাদের মত
কিংবা মরিচঝাঁপি র হাজার হাজার
ধর্ষিতা মহিলা দের মত
(যাঁদের শরীর খেয়ে সুন্দর বনের
বাঘ মানুষ খেকো হয়েছিল)
তাঁদের পুরানো লাশ বিক্রি হবে
নির্বাচনের প্রয়োজনে!
এক থেকে অন্য এক নারী দিবসের মাঝখানে।

আমি কি করে জানাবো নারী দিবসের শুভেচ্ছা?

আমার সামনে আছে
খাপ পঞ্চায়েত!
আমার সামনে আছে সে ভারত,
যে ভারতে এক দলিত রমণী
বিবাহের পরে,
তার কুমারীত্ব বিসর্জন দিতে বাধ্য হয় -
না তার প্রেমিকের হাতে নয়!
তার ভরণ পোষণের দায়িত্ব নিয়েছে যে
সেই মানুষের হাতে নয়!
{যদিও সেক্ষেত্রেও সে পণের দাবীতে পণ্য)
সে বাধ্য সমাজ রত্নের হাতে তার
কুমারীত্ব বিসর্জন দিতে!

এই হল আম ভারতের নারী দিবস!
এখানেই আছে ভারতের সংস্কৃতি
আছে ভারতের দেশ প্রেম!
জুজ্জ জুজ্জ দেশপ্রেম!

ওহে ভারত বাসী তুমি
জঙ্গিদের হাত থেকে ভারত বাঁচাতে চাইছ
৮ বছরের মেয়েকে যারা ধর্ষণ করতে পারে
তাঁদের হাত থেকে কাকে বাঁচাবে তুমি
অথবা তুমিই তো সেই দেশপ্রেমী
যদি কেউ তোমার মতের সাথে
একমত না হয়
পুরুষ হলে তার মা - বোনকে আর
মহিলা হলে তীব্র পৌরুসানন্দে
দাও তাঁকে ধর্ষণ করার হুমকি
তীব্র বিক্রিত মানে সুন্দর বিকৃত আনন্দে
(যে শব্দ টা লিখতে চাই নি কোন দিন
আজ নারী দিবস লিখিয়ে নিল আমার হাত দিয়ে)
তাঁকে বল "কমরেন্ডী"

হে কমরেন্ডী বলা পুরুষ
তোমার পৌরুষ কে সেলাম।
যারা নারীকে বেশ্যা বলে সেই পুরুষ কে
এক দেশদ্রোহীর সেলাম,
কারণ আম্রপালী কে নগর নটী
আধুনিক ভাষায় "বেশ্যা" বানিয়েছিল
পুরুষ
একটা প্রচলিত কথা আছে
সব সফল পুরুষের পিছনে আছে
এক নারী"
সত্যি কিনা জানি না
তবে এটা জানি
প্রতিটি বেশ্যার পিছনে আছে এক পুরুষ।
নারী দিবসে শ্রীতোষ
০৮/০৩/২০১৯

পড়শি

ভারত ও পাকিস্থান - পাশাপাশি দুটো দেশ। পড়শি দেশ। কথায় বলে পড়শি হল আরশি - এক পড়শির চোখের আয়নায় অন্য পড়শি নিজেকে দেখতে পায়! ভারত ও পাকিস্থান দুই পড়শি -অন্যের চোখে শুধু যুদ্ধই দেখতে পায়!

অথচ কি মজার কথা দুটো দেশেই কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হল দারিদ্র্য। দুটো দেশেই সম্পদের বেশীর ভাগ অংশ পুঞ্জীভূত ১ - ২% মানুষের হাতে (ভারতের ক্ষেত্রে ১% এর হাতে ৭৭% বাকি ২৭% ভাগ করে নিয়েছে ৯৯% মানুষ)! এই ৯৯% এর মধ্যেই আছে এমন মানুষ জন যারা রিকশা চালান, কুলি গিরি করেন, লোকের বাড়িতে বাড়িতে বাসন মেজে বেড়ান, ভিক্ষা করেন এবং এঁরাই সংখ্যা গরিষ্ঠ। 

এ ব্যাধি আজকের নয়, এ ব্যাধি স্বাধীনতার আগের এবং স্বাধীনতার পরে ৭২ বছর হয়ে গেছে পার, ব্যাধি একই থেকে গেছে। শাসকের পতাকার রঙ বদলেছে, শাসকের চরিত্র বদলায় নি। রাস্তার পাশে আজও না খেতে পাওয়া মানুষের ভিড়, ফুটপাতে গৃহহীন, পরিচয়হীন তেলচিটচিটে মানুষের নিঃসঙ্গ সহবাস। মাসে মাসে শত শত কৃষক আত্মহত্যার সংবাদ। আজও এ দেশে ৮ বছরের শিশু কন্যা ধর্ষিতা হয়। আজও এ দেশে খাপ পঞ্চায়েত বসে। উল্টো পারের দেশে ছবিটা আলাদা এমন মনে করার কোন কারণ নেই। তাদের অবস্থা বরং আরও খারাপ।

তা এই মানুষ গুলো যুদ্ধ চায় নাকি - সীমান্ত বস্তুটা খায় না মাথায় দেয় সেটা এঁদের সকলে জানেন? এঁরা তো প্রতিদিন যুদ্ধ করছেন - যুদ্ধ করছেন প্রতিদিনের খাবার জোগাড়ের জন্য, মাথার উপর একটু ছাউনির জন্য, নিজের অথবা নিজের মেয়ের আব্রু রক্ষার জন্য! এর উপরেও এঁরা যদি যুদ্ধ চান তাহলে কথাটা যেন বুলেটের মতই কানে লাগে!

আসলে যুদ্ধ টা দরকার রাজনীতিবিদদের জন্য, বানিয়াদের জন্য - যুদ্ধে একমাত্র লাভ তাদের! বিগত দুটো বিশ্ব যুদ্ধের ইতিহাস যদি দেখি, তাতে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে প্রায় ২৩,০০,০০০ সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং ২ য় বিশ্ব যুদ্ধে সেই সংখ্যা হল ৫,৮৫,০০,০০০। এঁদের বেশীর ভাগ অংশ প্রাণ হারিয়েছেন খাবারের অভাব ও রোগে। এর মধ্যে পরমাণু বোমায় আক্রান্ত যে সব মা য়েরা অসুস্থ শিশুর জন্ম দিয়েছেন এবং পরে তারা মারা গেছে - সেই সংখ্যা ধরা নেই। ২য় বিশ্ব যুদ্ধের সময় অবিভক্ত বাংলায় যে মন্বন্তর দেখা দিয়েছিল তার জন্য দায়ী কে? সে তো মানুষের তৈরি করা খাদ্যাভাব ব্রিটিশ আর দেশি বানিয়ারা দায়ী তার জন্য। লক্ষ লক্ষ টন খাদ্য মজুত করে রাখা হয়েছিল গুদামে, আর কুকুর বেড়ালের মত মরেছিল সাধারণ মানুষ। তাঁরা সবাই যুদ্ধ চেয়েছিলেন! আজ ইজরায়েল, সিরিয়া, ইরাকে যে বাচ্চা গুলো মরছে, যে সব মানুষ গুলো কে আই এস জঙ্গিরা ব্যবহার করছে মানব ঢাল হিসাবে - তারা যুদ্ধ চান নাকি? ওখানে তো হিন্দু - মুসলমান নেই ওখানে হয় এক মুসলমান অন্য মুসলমান কে মারছে অথবা ইহুদী মারছে মুসলমানকে! সবার হাতে অস্ত্র - সবাই সবাই কে মারছে।

মজার কথা, এই অস্ত্র কিন্ত আসছে নির্দিষ্ট কটি জায়গা থেকে। নির্দিষ্ট কিছু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। একজন বিক্রি করে রাফাল তো অন্য জন সুখোই অন্য কেউ আবার এফ ১৬! এই যুদ্ধ যতদিন থাকবে অস্ত্র ব্যবসা ততদিন চলবে। সরফরোস ছবির একটি ডায়লগ মনে পড়ে যায় "কিসিকো হাত মে চিলম থামা দো ইয়া বন্দুক, গোলি উসকো চাহিয়েই চাহিয়ে"।

তার মানে, দুটি দেশেই অপুষ্টি থাক, বেকারি থাক, কৃষকের আত্মহত্যা থাক, মেয়েদের উপর অত্যাচার বাড়ুক, সীমান্তে সন্ত্রাস বাদ চলবে এবং যুদ্ধ টাও চলবে কারণ এই সব কিছু থেকে নজর ঘোরানোর জন্য যুদ্ধ টা বড় দরকার।

08 March, 2019

অ্যাবারডীন! এক ভুলে যাওয়া ইতিহাস


অ্যাবারডীন! ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বহু শত মাইল দূরে থাকা এক বিস্মৃত ইতিহাসের নাম অ্যাবারডীন!
অ্যাবারডীনের লড়াই! ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে আলাদা উল্লেখের দাবি রাখে কিন্ত এ লড়াই তার প্রাপ্য মর্যাদা পায় নি যদিও ইতিহাসের নিরিখে এ লড়াই সাঁওতাল বিদ্রোহের থেকে কিছু মাত্র কম যোগ্য নয়। ফেসবুকের নব্য দেশপ্রেমী (শখের দেশপ্রেমী)রা এ লড়াই সম্পর্কে কতটুকু জানে আমি সেটা জানি না (বুঝি জানে না, তা না হলে তাদের দেশপ্রেমিক পোষ্টে এ লড়াইয়ের উল্লেখ থাকত)।  

এ কি বীরত্বের ইতিহাস নাকি বিশ্বাসঘাতকতার – প্রশ্ন জাগে তা নিয়েও।

চলুন পাঠক আমরা ফিরে যাই ১৮৫৯ সালের আন্দামানে। ১৮৫৭ সালের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম, সিপাহী বিদ্রোহ বলে যার পরিচয় ইতিহাসের পাতায়, তার রক্ত স্নান সবে হয়েছে শেষ। প্রচুর দেশী সিপাহী বন্দী ব্রিটিশ হেফাজতে। দেশের মূল ভূখণ্ডে এঁদের আটকে রাখা বিপদ জনক তাই পাঠিয়ে দাও সাগর পাড়ের ওই দ্বীপে। যাওয়ার পথে মরবে কিছু, কিছু মরবে ওখানকার রোগে আর বন্য জন্তু যথা সাপ ইত্যাদির আক্রমণে, কিছু মরবে আদিবাসী দের হাতে, আমাদের লাভ এদের দিয়েই জঙ্গল হাসিল করে বানিয়ে নেওয়া যাবে থাকার আর আমোদ ফুর্তির জায়গা। মাইনে দেওয়ার কোন ঝামেলা, শুধু খাওয়া আর পোশাকের খরচা। তা এই সব নেটিভ গুলোর জন্য ও সবের পিছনে বেশী খরচা করতে হবে না। চারিদিকে সমুদ্র – পালানোর ও জায়গা নেই। অতএব ঝাঁকে ঝাঁকে বন্দী জাহাজের খোলে ভর্তি হয়ে খালাস হল পোর্ট ব্লেয়ারে। উল্টো দিকে রস আইল্যান্ড – ব্রিটিশ অফিসার, সৈন্য এবং কিছু নেটিভ বন্দী থাকে সেখানে। পোর্ট ব্লেয়ার এবং রসের নেটিভ বন্দীদের কাজ জঙ্গল কাটা, বাড়ি ঘরদোর বানানো, সাহেব প্রভুদের খিদমত খাটা। বেশীর ভাগের পায়ে লোহার শিকল। জঙ্গল কাটা বা সেখান থেকে কাঠ আনতে গেলে মাঝে ওখানকার আদিবাসীদের হাতে আক্রান্ত হতে হয় কিন্ত সব সময় নয়।
ওখানে যে আদিবাসীদের বাস তারা ১০ টি গোষ্ঠীতে বিভক্ত ছিল। প্রতি গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা ও নিজস্ব রীতি নীতি ছিল তবে প্রতিটিই ছিল একে অন্যের সাথে সম্পর্ক যুক্ত। এঁরা হলেন “কারি”, “কোরা”, “বো”, “জেরু”, “কেদে”, “কোল”, “জুওই”, “পুচিকোয়ার”, “বালে” এবং “বিএ” – এঁদের একসঙ্গে বলা হয় ‘গ্রেট আন্দামানীজ’ (প্রসঙ্গত শেষ ৬ টি গোষ্ঠী ১৯২১ থেকে ১৯৩১ এর মধ্যে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে – কৃতিত্ব সভ্য মানুষের)। এই গ্রেট আন্দামানিজ দের সাথে মেইনল্যান্ডার বা ব্রিটিশ এবং নেটিভ বন্দীদের প্রতি বিরোধের একমাত্র কারণ ওদের আগ্রাসনের সামনে পড়ে তাঁদের নিজেদের জঙ্গল হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিল – ধ্বংস হচ্ছিল জঙ্গল। তবে ওঁরা কিন্তু যাঁদের পায়ে শিকল বা বেড়ি থাকত তাঁদের কক্ষনো আক্রমণ করতেন না। এই ছিল পটভূমি।

যাঁদের রক্তে জ্বলেছিল বিদ্রোহের আগুন, তাঁরা চুপ করে থাকার পাত্র নন। মানুষ মাত্রেই স্বাধীনতা চায়। অতএব পালাতে হবে। প্রায় ১৩০ জন (৯০ জন রস এবং বাকি ৪০ জন চ্যাথাম আইল্যান্ড ও ফিনিক্স বে) বন্দী একদিন পালালেন ব্রিটিশ অত্যাচারীদের খপ্পর থেকে, যাঁদের মধ্যে ছিলেন কয়েদী নাম্বার ২৭৬ – দুধনাথ তেওয়ারী। পলাতক রা ভেবেছিলেন জঙ্গল পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যাবেন বার্মা মুল্লুকে। তাঁরা জানতেন না, বার্মার সাথে কোন সড়ক যোগাযোগ নেই। পালাতে তাঁরা ব্যর্থ হলেন এবং গ্রেট আন্দমানিজ দের হাতে নিহত হলেন সব্বাই একমাত্র ওই কয়েদী নাম্বার ২৭৬ – দুধনাথ তেওয়ারী বাদে। দুধ নাথের শরীরে তিন খানি বিষাক্ত তীর বিঁধেছিল এবং তিনি মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে আদিবাসীরা তাকে সেবা যত্ন করে বাঁচিয়ে তোলে। ধীরে ধীরে দুধনাথ ওদের একজন হয়ে উঠতে থাকেন। প্রথমে আদিবাসীরা তাকে বিশ্বাস করতেন না কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দুধনাথ ওঁদের আস্থা ভাজন হয়ে ওঠেন। এক সময় তিনি দুটি (মতান্তরে ১ টি) আদিবাসী মেয়েকে বিয়ে করেন এবং তাঁদের সন্তানও হয়। তিনি সাকুল্যে ১ বছর ২৪ দিন আদিবাসীদের সঙ্গে ছিলেন।

ব্রিটিশ আগ্রাসনে ক্রমশ শঙ্কিত হয়ে ওঠা আদিবাসীরা এক সময় বেছে নিল প্রতি আক্রমণের পথ। ১৮৫৯ সালের ৬ ই এপ্রিল প্রায় ২০০ আদিবাসী আক্রমণ করল ২৪৮ জন বন্দীকে যারা হ্যাডো এলাকায় জঙ্গল কাটার কাজ করছিলেন। পরের আক্রমণ হল এপ্রিলের ১৪ তারিখে। এবার প্রায় ১৫০০ আদিবাসী অংশ নিল আক্রমণে। এল মে মাসের ১৭ তারিখ। আদিবাসীরা ঠিক করলেন রাতের অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে আক্রমণ চালানো হবে এবং আন্দামান থেকে ওই সাদা চামড়ার লোক গুলোকে নিকেশ করা হবে। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি চলল। প্রতি যোদ্ধার মুখ শপথে কঠিন, আমাদের জঙ্গল আমাদের নিজেদের। আমাদের মাতৃভূমি আমাদের নিজেদের, বিদেশী সাদা চামড়া গুলো এমনিতে যাবে না, এদের মেরে তাড়াতে হবে। ওঁরা জানতেন না, ওঁরা দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পুষেছেন, যে কাল সাপের নাম দুধনাথ তেওয়ারী – কয়েদী নাম্বার ২৭৬।

আক্রমণ কারি দের সাথেই এলেন দুধনাথ। তাঁরা যখন সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছেন সেই ফাঁকে দুধনাথ লুকিয়ে চলে গেলেন ব্রিটিশ প্রভু দের কাছে। যাঁদের কাছে মুক্তির স্বাদ পেয়েছিলেন, সুন্দর জীবন কাটাচ্ছিলেন তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে একটুও চিন্তা করলেন না, চলে এলেন তাদের কাছে যাঁদের কাছে পেয়েছিলেন অমর্যাদা আর অত্যাচার। আসলে যুগে যুগে বিভীষণরা এই রকমই হয়। দুধনাথের কাছে খবর পেয়ে সতর্ক হয়ে গেল ব্রিটিশ বাহিনী। ফলে ঘটল এক নির্মম ঘটনা। কালাপানির জল লাল হয়ে উঠল মাটির মানুষের রক্তে। একদিকে তীর, বল্লম, ছুরি, কুড়ুল নিয়ে মুক্তি পাগল আদিম মানুষ আর তার বিপরীতে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত বাহিনী। বন্দুক – রাইফেল আর কামানের কাছে তীর আর বর্শা কি করবে? যাকে ইংরাজিতে বলা হয় Annihilation, সেদিন ঘটল তাই। একটা গোটা জাতিই প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল পৃথিবীর বুক থেকে।বেশীর ভাগ গ্রেট আন্দামানি পুরুষ, যাঁদের মধ্যে এক বড় অংশ ছিল তরুণ ও যুবক হারিয়ে গেল কালাপানির জলে, তাঁদের সঠিক সংখ্যা আজ ও কেউ জানে না তবে কোন ভাবেই তা ৫ – ৭ হাজারের কম নয়। কমতে কমতে ১৯৯৪ সালে তাঁদের সংখ্যা মাত্র ৫৭! আর দুধনাথ – তার কি হল? তিনি ক্ষমা পেয়েছিলেন, ফিরে গেছিলেন মূল ভূখণ্ডে তাঁর গ্রামে। তার পর তার কথা আর কেউ জানে না।

কালাপানি হয়তো এখনও কাঁদে – এখনও হয় তো সে খুঁজে ফেরে তার নিজের মানুষদের, যারা তার বুকে বেয়ে যেত নৌকা, তার সৈকতে মেতে উঠত আনন্দে।   সময় বড় বলবান, যা নিয়ে যায় তা দেয় না ফিরিয়ে। আজ যখন দেশপ্রেমে মাতোয়ারা আ সমুদ্র হিমাচল তখন এই ভুলে যাওয়া শহীদদের স্মরণ করে দেশমাতৃকা কে জানাই আমার প্রণাম। সামান্য মানুষ আমি, এর চেয়ে বেশী আর কি ই বা করতে পারি।

শেষ কিছু শব্দ লিখে যাই
দেশপ্রেমের আড়ালে দ্বেষ প্রেমিক রা আজও অস্ত্র নিয়ে বাঁচে
দেশপ্রেমিকদের শেষ করবে বলে
দুধনাথের মত মানুষ গুলোই
আজকের তথাকথিত দেশপ্রেমিক।