আজ বলি গ্যাংটক বা গ্যাংটকের জীবন যাত্রা সম্পর্কে এই অল্প
সময়ে যা জেনেছি তার কথা। এখানকার রাস্তায় পথচারীদের জন্য কোন ডান অথবা বাঁ দিক নেই।
আপনাকে পথ চলতে হবে রাস্তার এক দিক দিয়েই যে দিকে ফুটপাথ রেলিং দিয়ে সুরক্ষিত (এন এইচ
১০ এর উপর), যা কখনও বা আপনার ডান দিক, কখন ও উল্টো কারণ আপনার উল্টো দিকে পাহাড় এবং
সেই পাহাড়ী রাস্তার পাশে পাশে নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর রয়েছে ট্যাক্সি স্টপ (কলকাতার
বাস স্টপের মত)। এক্ষেত্রে অবশ্য ডান – বাঁ মেনে চলা হয়। ট্যাক্সি স্টপেও আবার লেখা
আছে একসাথে কটা ট্যাক্সি দাঁড়াতে পারবে এবং এ নিয়ম অবশ্য পালনীয়। এন এইচ টেন ছেড়ে যখন
আপনি বসতি এলাকায় ঢুকবেন যথা আমার সাময়িক নিবাস ডেভেলপমেন্ট এরিয়া সেখানে ও একই নিয়ম অর্থাৎ চলতে হবে রাস্তার একদিক দিয়েই কারণ অন্যদিকে পার্ক করা রয়েছে সারি সারি প্রাইভেট গাড়ি
(অবশ্য মাঝে মধ্যে ব্যতিক্রম হিসাবে দু একটা মোটর সাইকেল অথবা স্কুটি দেখা যায়)। রাস্তার পাশে পাহাড়ের গায়ে কিছু দূর অন্তর লেখা আছে প্রাইভেট / টেম্পোরারি পারকিং। আমার তো মনে হয় এ শহরে বোধ হয় মানুষের চেয়ে গাড়ির সংখ্যা বেশী ফলে সপ্তাহের কাজের দিনে (বিশেষত অফিস টাইমে) ট্র্যাফিক জ্যাম অবশ্যম্ভাবী। তবে এই ট্র্যাফিক জ্যামে কোন কষ্ট নেই কারণ এ জ্যাম সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য,
কোন ওভারটেক নেই,
কানের পর্দা বিদারী বিদঘুটে আওয়াজের হর্ন নেই। এখানকার মানুষ চুলে স্টাইল করে তবে চুলের সেই স্টাইল রাস্তায় দেখানোর জন্য হেলমেট না পড়ে বাইক বা স্কুটি চালায় না। পশ্চিম বঙ্গের মল প্রজন্ম অবশ্যই এদের থেকে শিক্ষা নিতে পারে
– পারে ড্রাইভার রাও। এখানে শহরের মধ্যে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম শেয়ার ট্যাক্সি, ভাড়া মোটা মুটি ১০
– ৩০ টাকা। চাইলে রিজার্ভ করা যেতেই পারে তবে রাত বাড়লে একই দূরত্বের জন্য ভাড়া বাড়ে না। শেয়ার ট্যাক্সি যে রুটের সেই রুটে একই ভাড়াতে চলে, বেশী রাত বা বৃষ্টির জন্য ভাড়ার ওপর নিচ নেই।
এখানকার লাল মার্কেট বা লাল বাজার হচ্ছে এমন একটি বাজার যেখানে সবজি থেকে শুরু করে সব কিছু পাওয়া যায় এবং গড়িয়া হাট বা হাতি বাগানের মত চুটিয়ে দর দাম করে জিনিস কেনা যায়। ২৫০ গ্রাম কে এরা ডাকে
“পাও”
(মানে পোয়া)
বলে বাকি সব একক আমাদের মতই। একটি সুন্দর বিষয় নজর করেছি যে, এখানে টাকা দেওয়া – নেওয়ার সময় এঁরা ডান হাত বাড়িয়ে দিয়ে বাঁ হাত রাখেন ঠিক ডান হাতের কনুইয়ের নিচে এবং মাথা অল্প নিচু করে এমন ভাবে রাখেন যাতে মনে হয় বিক্রেতা ক্রেতার প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন।
এবার বলি এমন একটা বিষয়ের কথা যা ইতিমধ্যে আমার নজরে এসেছে। সিকিমে প্ল্যাস্টিক নিষিদ্ধ কিন্ত তা সীমাবদ্ধ শুধু মাত্র প্ল্যাস্টিক ব্যাগের উপরে। প্ল্যাস্টিকে করে বিক্রি হওয়া জিনিস যথা জল
/ ঠাণ্ডা পানীয়ের বোতল,
বিভিন্ন বিস্কুটের প্যাকেট ইত্যাদি
(এমনকি ময়লা ফেলার জন্য কালো প্ল্যাস্টিক ব্যাগ)র উপর এই নিষেধ প্রযোজ্য নয় কারণ আমি এগুলোর অবাধ ব্যবহার নজর করেছি। এখানে বাইরে বার হওয়ার সময় ছাতা
অবশ্যই নিতে হবে কারণ হঠাৎ করে কখন যে বৃষ্টি শুরু হবে কেউ বলতে পারে না। সাধারণত
মহিলা – পুরুষ নির্বিশেষে একটু লম্বা ছাতা ব্যবহার করেন (দুটো উপকার – ১) মাথার
উপর বেশী ঢাকা থাকে বলে বৃষ্টি তে ভেজার সম্ভাবনা কম এবং ২) চড়াই – উতরাই পথে চলার জন্য কাজে লাগে।
আপাতত এখানেই থামছি।
অলমিতি