27 May, 2019

এক সাধারণ মানুষের গল্প।

আজ একটা গল্প বলতে ইচ্ছে করছে। আসলে সব সময় চুটকি বা সিরিয়াস লেখা লিখতে ইচ্ছে করে না, বেড়ানোর গল্প ও করতে ইচ্ছা করে না। তাই মনে হল, আজকে একটি গল্প বলি। এক সাধারণ মানুষের গল্প।

একজন সাধারণ মানুষ, বয়সের হিসাবে তাকে যুবক বলাই ভালো। ২৬ – ২৭ বছর বয়স, প্রায় বছর তিনেক আগে বিয়ে হয়েছে, বাচ্চা – কাচ্চা হয় নি। একটি সরকারী অফিসের নিম্ন পদস্থ কেরাণী। চাকরিটা বদলির চাকরী। এতদিন পোস্টিং ছিল সদর দপ্তরে, এবার বদলী হতে হল রাঢ় বাংলার এক অঞ্চলে, এক মহকুমা শহর। স্বামী – স্ত্রী মিলে চলে এল সেই শহরে। নাগরিক সমাজের সব সুযোগ – সুবিধা সেখানে পাওয়া গেলেও, জায়গাটা বড় শান্ত। সেই ছোট্ট শহরের ষ্টেশনের কাছা কাছি একটি বাড়ি ভাড়া নিল তারা। সেই প্রথম তারা দুজনে নিজেদের মত করে, নিজেদের সংসার গড়ে তুলতে লাগল। দুজনে প্রায় সমবয়সী, প্রথম প্রথম অনেক কিছু ভুল হত। সেই ভুল গুলোর মধ্যে দিয়েই শিখতে লাগল ওরা, গড়ে তুলতে লাগল ভালোবাসায় ভরা নিজেদের ভালো বাসা। ছেলেটির অফিস টা ওই শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়ানো ছিটানো ছিল, নতুন অফিস বাড়ি এবং তার সাথে কোয়ার্টারস তৈরি হচ্ছিল। সে ওখানে পোস্টিং হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই অফিস চলে গেল সেই নতুন জায়গায়। মূল শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে এক বিরান জায়গায় মাঠের মধ্যে গড়ে উঠেছে সেই নতুন অফিস বাড়ি এবং তার সাথে কোয়ার্টারস। কর্মচারীদের মাইনে এবং পদের হিসাবে কোয়ার্টার গুলোর শ্রেণী বিভাগ। ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর মিলিয়ে মোট ৭৯ টি ফ্ল্যাট এবং একটির কোন শ্রেণী ছিল না, সেটি ছিল অন্য গুলির থেকে আলাদা – সব মিলিয়ে সংখ্যায় ৮০। অফিসের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী হল জেল খানা এবং অন্যদিকে হল সদর হাসপাতাল, অফিস থেকে দেখা যেত প্রায় ১ কিমি দূরের সেই হাসপাতালটি কারণ মাঝখানের পুরো অংশটি ফাঁকা মাঠ। শহরে যে সব কর্মচারী থাকেন, তাঁদের অফিসে যাতায়াতের সুবিধার জন্য অফিস থেকে একটি বাসের ব্যবস্থাও ছিল।

ছেলেটির একগুঁয়ে স্বভাবের জন্য একদিকে তার সহ কর্মচারীরা যেমন বিরক্ত হত, অন্যদিকে সেই একগুঁয়ে মনোভাবের জন্যই যে কোন দায়িত্ব তাকে দেওয়া হলে সে সেটা যত তাড়াতাড়ি সেটা করে ফেলত। আসলে সে ছিল ফাঁকিবাজ। দু ঘণ্টার কাজ যদি দেড় ঘণ্টায় করে ফেলা যায়, তাহলে তো আধ ঘণ্টা সময় পাওয়া যাবে, সেই সময়ে না হয় পড়া যাবে কোন বই অথবা একটু না হয় গল্প করা যাবে। চলতে লাগল দিন, ছোট অফিস, সকলেই সকলকে চেনে তাই কারো কোন সমস্যা হলে তার সহকর্মীরা এগিয়ে আসত পাশে দাঁড়ানোর জন্য, তার মধ্যে ওই ছেলেটিও থাকত। একটি বছর পার হয়ে গেল, ছেলেটির ওখানে ১ বছরের জন্যই পোস্টিং হয়েছিল কিন্তু ওই ছোট্ট শহরটি তাদের যেন কেমন এক মায়ার বাঁধনে বেঁধে ফেলেছে। তারা থেকে গেল।

ওই ক্যাম্পাসে বছরে দুটি পুজো হত, কালী পুজো আর সরস্বতী পুজো। দুটো পুজো তেই খিচুড়ি খাওয়ানো হত। প্রথমটিতে পুজোর পরের দিন এবং দ্বিতীয় টিতে পুজোর দিন। দ্বিতীয় বছর কালী পুজোর পরের দিনে ছেলেটির এক সিনিয়র সহকর্মী, ওই ক্যাম্পাসের বাসিন্দা, নাম ধরে নেওয়া যাক অচিন্ত্য, সেই অচিন্ত্য বাবু ওদের স্বামী – স্ত্রীকে নিমন্ত্রণ করলেন খিচুড়ি খাওয়ার জন্য। মেয়েটির একটু দ্বিধা থাকলেও, যেহেতু তার বন্ধু (স্বামী) র কাছ থেকে এঁদের সম্পর্কে বহু প্রশংসা শুনেছে, যেতে রাজি হল। দেখা তো যাবে, তার বর যেখানে চাকরী করে, সেই অফিস টা – কোয়ার্টার গুলো এবং সেখানকার মানুষগুলো কেমন? অচিন্ত্য বাবুর কোয়ার্টার টি দোতলায়। ওরা এসে পৌঁছাতেই (এবার থেকে বরং এই বাবু শব্দ গুলো বাদ দিয়ে দাদা শব্দটি ব্যবহার করি কারণ ওই অফিসে এই সম্বোধনেই ঘনিস্ট বড়দের ডাকা হত) অচিন্ত্যদা এবং বৌদি সাদরে অভ্যর্থনা করলেন। ওনার ফ্ল্যাটে তখন আরও দু এক জন সহকর্মী এবং তাঁদের স্ত্রীরা ছিলেন। একটু দূরে একটি হল ঘরে খাওয়ার আয়োজন। মাটিতে বসে একসাথে পঙক্তি ভোজন। তখন প্রায় বেলা ১ টা, অচিন্ত্য দা এবং বৌদি বললেন, চল এবার খেয়ে নেওয়া যাক তারপর না হয় আবার গল্প করা যাবে। সবাই উঠতে যাবে সেই সময় এক সহকর্মীর বাচ্চা মেয়ে বলে উঠল, এখন না, এখন টাইপ ওয়ানের লোকজন যাচ্ছে। সকলে আবার বসে পড়ল। প্রসঙ্গত টাইপ ওয়ানে থাকতেন গ্রুপ ডি এবং ড্রাইভার পদের লোকজন, টাইপ টু মূলত কেরানিদের জন্য, টাইপ থ্রি এক্সিকিউটিভ গ্রুপ সি এবং টাইপ ফোর এক্সিকিউটিভ গ্রুপ বি দের জন্য বরাদ্দ। ছেলেটির বড় খারাপ লাগল, অফিসে কাজের সুবিধার জন্য ক্লাস ভাগ করা রয়েছে কিন্তু অফিসের বাইরে এই ভেদ কেন, তাও আবার উৎসবের দিনে।

অফিসে তখন প্রায় দেড় বছর হয়ে গেছে, শহরে যে বাড়িতে ওরা দুজন ওদের স্বপ্নের ভালো বাসা গড়ে তুলেছিল, সেই বাড়ির মালিক জানালেন অবিলম্বে বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে। ছেলেটি পড়ল বিপদে। আর তিন – চার মাস বাদে ক্যাম্পাসে একটি টাইপ টু কোয়ার্টার ফাঁকা হবে, অফিসের নিয়ম মেনে তার জন্য বরাদ্দ হবে কিন্তু এই মুহূর্তে। অফিসে এসে সে এই সমস্যার কথা বলতেই অচিন্ত্যদা সহ অন্যরা তার সাহায্যে এগিয়ে এলেন। এগিয়ে এলেন তার সংগঠনের জোনাল সম্পাদক সহ আরও সহকর্মীরা, দেখা গেল একটি টাইপ থ্রি ফ্ল্যাট ফাঁকা আছে কিন্তু সেখানে থাকতে গেলে ৩ গুণ ভাড়া দিতে হবে যেহেতু নিয়ম অনুযায়ী সেই ফ্ল্যাট ওদের প্রাপ্য নয়। ওরা তাতেই রাজি। বছরের শেষ দিনে ওরা শহরের বাড়ি ছেড়ে এসে উঠল, তাদের সাময়িক আস্তানায়। মাস তিনেক পরে নির্দিষ্ট কোয়ার্টার টি খালি হতে তারা এসে উঠল নিজের আসল নিবাসে। এর মধ্যে সরস্বতী পুজো চলে গেছে, ওরা অবাক হয়ে দেখেছে যে ক্যাম্পাসের একটা কোণে কিছু সহকর্মী মিলে ছোট করে একটি পুজো করছেন, তাদের পরিবারের মানুষ জন ছাড়া আর কেউ সেখানে নেই। সেই বছরের কালী পুজোতেও সেই একই অবস্থা, পুজো প্যান্ডেলের সামনে দু – চার জন ছাড়া কেউ নেই, কোথাও ঘরের মধ্যে বসেছে তাসের আড্ডা, কোথাও বা অন্য কিছু। ছেলেটির এসব ভালো লাগছিল না, সে কোন পুজো আর্চায় বিশ্বাস রাখে না, সে বিশ্বাস রাখে উৎসবে। তার মনে হয়, এই সব পুজো – পার্বণে মানুষ একে অন্যের সাথে খোলা মনে মিশতে পারে, সেখানে ধনী – দরিদ্রর বিচার থাকে না। প্যান্ডেলে দাঁড়িয়ে প্রতিমাকে প্রণাম করার সময়, কেউ একবারের জন্যও চিন্তা করে না, পাশের মানুষটির কি জাত বা তার মাসিক রোজগার কত? এখানে তাহলে এই রকম ভেদাভেদ কেন? এই তো কটা কোয়ার্টার, তার মধ্যে আবার মেস আছে গোটা দু – তিনেক, এখানে এই রকম হচ্ছে কেন? এটাকে দূর করা যায় কি করে? হঠাৎ করে তার মনে হয় বাচ্চাদের দিয়ে একটা নাটক করালে কেমন হয়? এমন একটা নাটক যার সংলাপ বাচ্চাদের মজা দেবে এবং সংলাপ ভুল হলেও দর্শক কিছু মনে করবে না। ভাবতেই ভাবতেই তার মাথায় আসে সুকুমার রায়ের “লক্ষণের শক্তিশেল” নাটক টির কথা। ক্যাম্পাসে বেশী বাচ্চা আছে টাইপ ওয়ান, আর তারপরেই হল টাইপ টু, টাইপ থ্রি তে ও আছে কজন। কথায় আছে বাঘিনী কে বশ করতে হলে, তার বাচ্চাদের বশ কর। বাচ্চা গুলো যদি নাটকে নামে, তাহলে বড়রা ও যুক্ত হবে অনুষ্ঠানের সঙ্গে, মিটবে ভেদাভেদ। ওখানে একটি কোয়ার্টারস কমিটি ছিল, ছেলেটি তখন সেই কমিটি সদস্য। সেই একই কমিটির সদস্য অচিন্ত্যদাও। ছেলেটি তার কাছে গিয়ে প্রস্তাব দেয়, পিছনের আসল উদ্দেশ্য কিন্তু সে বলে নি। অচিন্ত্যদা সঙ্গে সঙ্গে রাজি। দুজনে মিলে যাওয়া হল কমিটি সম্পাদক গৌতমদার কাছে। গৌতম দা জিজ্ঞাসা করলেন পারবেন? ছেলেটি বলল, চেষ্টা করে তো দেখি।

শুরু হল চেষ্টা। এক গাদা শিশুর মধ্যে থেকে বেছে নিতে হবে প্রধান কটি চরিত্র বাকিগুলো বানরসেনা। সেই পর্ব শেষ হয়ে শুরু হয়ে গেল রিহার্সাল। এবার ঠিক হল বড়রাও নাটক করবে। ঠিক হল সত্যি ভূতের গল্প। গৌতম দা প্রস্তাব দিলেন নিজেরাই তৈরি করব প্রতিমার প্যান্ডেল – প্রতিমা থাকবেন গ্রামের আটচালা ঘরে। এক ঘুমন্ত দৈত্য যেন জেগে উঠেছে। কোন ভেদাভেদ নেই। যে যেমন ভাবে পারছে, জড়িয়ে পড়ছে পুজোর সাথে। আবাসিকদের অনেকের মধ্যে এত প্রতিভা আছে, সেটাই কেউ জানত না। বউদিদের মধ্যে শ্রেণী বিভেদ মিটে গেছে, কোন মিটিং করে না – এমনিতেই। ছেলেটা ভাবে তাহলে সে পারছে। অন্য আর কিছু বলছি না, পুজোর দিন সকালে মাঠে যারা ছিল তারা অবাক হয়ে দেখল যে ভদ্রলোক জীবনে রান্না ঘরে ঢোকেন নি, তিনি মাঠে বসে টম্যাটো কাটছেন। সেদিন রাত্রে তার কোয়ার্টারে ফিরে ছেলেটা আর মেয়েটা কেঁদেছিল – সাফল্যের কান্না। ৬ মাস আগের কালী পুজোর পরের দিন ও খিচুড়ি খাওয়ার সময় সে যা দেখেছিল, আর সে দিন দুপুরে খিচুড়ি খাওয়ার সময় যা দেখল তার মধ্যে আকাশ – পাতাল ফারাক বললেও কম বলা হবে। এই মানুষ গুলি এত বদলে গেল?

না, একটা ঘটনায় সব কিছু শেষ হয় না। ভেবে চলে সে। সামনের কালী পুজোয় তাকে পুজোর সন্ধ্যাবেলায় সকলকে নিয়ে আসতে হবে পুজো প্যান্ডেলের সামনে। স্বামী – স্ত্রী ভেবে ঠিক করল, মেয়েদের আর বৌদিদের মধ্যে শাঁখ বাজানো আর প্রদীপ জ্বালানো প্রতিযোগিতা করলে কেমন হয়? বলা হল গৌতম দা কে। তিনি রাজি। ছেলেটা কিন্তু সন্তুষ্ট নয়। তার মাথায় ঘুরছে বাচ্চা গুলোর কথা। ওদের দিয়ে কি কিছু করানো যায় না। ভাবতে ভাবতে মাথায় এল, ক্যুইজ করালে কেমন হয়? এবার ছোটা অচিন্ত্যদার কাছে, তার আগে ধর দা মানে প্রদীপ ধরের সাথে আলোচনা করে নেওয়া। ভীষণ পজিটিভ মানসিকতার এই ভদ্রলোক যে কোন ভালো কিছুতেই রাজি। অত্যন্ত মাথা ঠাণ্ডা এক মানুষ। তিনি বললেন, খুব ভালো কথা, চেষ্টা করতে দোষ কি? অচিন্ত্যদাও রাজি। অচিন্ত্য দা, ধরদা এইরকম কয়েকজন নিলেন প্রশ্ন বাছাইয়ের ভার। সাথে থাকল ছেলেটির স্ত্রী। অফিসের এক সহকর্মী সেই প্রশ্নোত্তর গুলিকে বাংলায় টাইপ করে দিলেন। একদিন ছেলেটি ক্যাম্পাসের রাস্তায় হাঁটছে, ছেলেটির বন্ধু স্থানীয় একজন সহকর্মী নানা কথার মাঝে বললেন, জানো তো, আমরাও একবার ক্যুইজ করানোর চেষ্টা করেছিলাম, মাত্র তিনটে নাম পড়েছিল। ছেলেটি হেসে বলল, ঠিক আছে আমার ক্ষেত্রে না হয় শূন্য টি নাম পড়বে, শূন্যের থেকে নিচে তো হবে না। দেখিই না। কালী পুজোর সন্ধ্যা – ক্যাম্পাসের প্রায় সমস্ত লোক মাঠে। আলাদা একটা সামিয়ানা খাটানো হয়েছে। ৬ জন করে এক একটি গ্রুপ। প্রতি গ্রুপে সব ধরনের ক্লাসের ছেলে মেয়েকে সমান ভাবে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে যাতে প্রতিটি গ্রুপের শক্তি সমান থাকে। ৫ টি গ্রুপ, তিনজন বিচারক, ছেলেটি নিয়েছে ক্যুইজ মাস্টারের দায়িত্ব। একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যদি সবকটি গ্রুপ কোন একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারে, তাহলে সেই প্রশ্ন চলে যাবে দর্শক দের মধ্যে। যে আগে সঠিক উত্তর দিতে পারবে সে পাবে একটি চকলেট লজেন্স। ক্যুইজ তখনো অর্ধেক হয় নি, দর্শক দের মধ্য থেকে দাবী উঠে গেল, শুধু বাচ্চাদের নিয়ে হবে কেন, বড়রা কি দোষ করল? সঙ্গে সঙ্গে বিচারক মণ্ডলী জানিয়ে দিলেন, সবাই ইচ্ছা করলে সামনের বছর থেকে বড়দের ক্যুইজ ও হবে। রাত যখন ১১ টা বাজে তখনও পুজো মণ্ডপের সামনে এবং আশেপাশে ক্যাম্পাসের অনেকে। রাত বাড়ে, একমাত্র পুজোর সাথে যুক্ত যারা, তারা বাদে সকলে বাড়ি চলে গেছে। ছেলেটা আছে, পুরোহিত মশায়ের কিছু দরকার হলে বা ভাঁড়ার ঘর থেকে কিছু আনার দরকার হলে, এনে দেবে সেই ছেলেটা। চাবি তার কাছে, সে স্বেচ্ছায় এই দায়িত্ব নিয়েছে। বৌদিদের বলেছে, আপনারা পুজোর কাজ করুন, বার বার ওঠার দরকার নেই। রাত শেষ হয়, উনুনে আগুন পরে, ভাঁড়ার থেকে রান্নার সব আনাজ পাতি এনে দিয়ে, সকালের দায়িত্বে যে আছে তার হাতে চাবি দিয়ে সে যায় নিজের ঘরে। মন তার তৃপ্ত। বছরে অন্তত দুটো দিন, ক্যাম্পাসের সব মানুষগুলোকে একসাথে মিলিয়ে দেওয়ার জন্য যে একটি দেশলাই কাঠি সে জ্বালিয়েছিল, সেই একটি দেশলাই কাঠি প্রতিটি ঘরে স্নিগ্ধ প্রদীপ হয়ে জ্বলছে। একবার একটা দেশলাই কাঠি জ্বললে পাশে অনেক হাত আসে আরও অজস্র দেশলাই কাঠি হাতে নিয়ে, যা থেকে জ্বলে সহস্র প্রদীপ, প্রদীপের স্নিগ্ধ আলো প্রয়োজনে মশাল হয়ে জ্বলে।

গল্প টা শেষ হয় নি এখনও। বছর দু – তিনেক পরে কিছু মনোমালিন্যের জন্য (দোষ তার নিজেরও ছিল কিছু) তারা কালী পুজোর একদিন আগেই ঘুরতে চলে গেছিল। ফিরে এসেছিল, পুজোর পরের দিন সন্ধ্যায়। ফিরে এসে শুনেছিল,পুজোর দিন সন্ধ্যায় ক্যুইজ হয়েছে, হয়েছে শাঁখ বাজানো ও প্রদীপ জ্বালানো প্রতিযোগিতা। এক দারুণ খুশী তে – ভালোবাসায় মন ভরে উঠেছিল তার, সেই দেশলাই কাঠি জ্বালানো সত্যিকারের পূর্ণতা পেল সেই দিন। মশাল টা নেভেনি তাহলে। তারপর কেটে গেছে বহুদিন – আজও যখন সেই দিন গুলোর কথা মনে পড়ে, এক অদ্ভুত ভালোবাসায় ভরে ওঠে তার বুক। ছেলেটি আর মেয়েটি আজও সেদিন গুলোর গল্প করে, বিশেষত যখন তাদের খুব মন খারাপ হয় তখন। অ্যালবাম খুলে ওরা দেখে সেই দিন গুলোর ছবি।

কেমন লাগল গল্প টা?
না এটা গল্প নয়। আসলে এটা সেই ছেলেটার নিজের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়ের এক সামান্য অংশ। গল্পের সময় কাল ১৯৯৬, জুন – ২০০২ ফেব্রুয়ারি। গল্পের পটভূমি বোলপুর আরও সঠিক ভাবে বললে সিয়ান সেন্ট্রাল এক্সাইজ অফিস ক্যাম্পাস। যে তিন জনের নাম লিখেছি, তাঁরা প্রত্যেকে বাস্তবে আছেন। আরও অজস্র মানুষের নাম বাকি থেকে গেছে যারা এই ঘটনা গুলির সাথে সক্রিয় ভাবে জড়িত, তাঁদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। অন্য একটি লেখায় আমি এঁদের সকলের নামই দিয়েছি।

এবার একটা কথা বলি, একটা ছোট্ট জায়গায় কিছু মানুষকে একসাথে মেলানোর চেষ্টা করেছিলাম, যখন সেই চেষ্টা শুরু করি, আমি ছিলাম একদম একা। ধীরে ধীরে বেশ কিছু মানুষকে পাশে পেয়ে গেছিলাম, সেই চেষ্টা সফল হয়েছিল। আপনার পাশে তো ৭% মানুষ আজও আছে বন্ধু
সামনে ৭২৭ দিন। পারা যায় না কি মানুষের আস্থা আবার জয় করতে? চলুন না, সব্বাই মিলে একবার চেষ্টা করে দেখি।
শ্রীতোষ

অঞ্জন দত্তের "বেলা বোস" অবলম্বনে

হিন্দু রাষ্ট্র পেয়ে গেছি বেলা শুনছ
দেশে আর কোন সমস্যা থাকবে না
সারদা – নারদার চোর গুলো যাবে জেলে
সন্ত্রাসীরা আর রাইফেল ধরবে না।
এতদিন পরে এইবার জেনো সত্যি
খুলে যাবে দেশে সব প্রগতির দ্বার।
এটা কি ১২৩৪৫৬৭৮৯০
দিন না ডেকে বেলাকে একটি বার
নেটওয়ার্ক যায় কেটে সব মোবাইল ফোনে
জরুরী খুব জরুরী দরকার।


রাম মন্দির হবেই বেলা সত্যি
কৃষকেরা আর স্যুইসাইড করবে না,
সার্টিফিকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে পড় লাইনে
দেশে কোন বেকার থাকবে না জেনো আর।
এত দিন ধরে কত অপেক্ষা
গ্রামে গঞ্জে শহরে নগরে
ভুখা মানুষের শরীর দেখেছ কত
সেগুলো যাবে সরে মানুষের এত প্রতীক্ষা
কালকে সত্যি হবেই তুমি জেনো,
শেষ হল বেলা যত সমস্যার!
হ্যালো এটা কি ১২৩৪৫৬৭৮৯০
দিন না ডেকে বেলাকে একটি বার
নেটওয়ার্ক যায় কেটে সব মোবাইল ফোনে
জরুরী খুব জরুরী দরকার।

চুপ করে কেন একি বেলা তুমি কাঁদছ
এন আর সি এসে গুঁড়িয়ে দেবে ঘর
তবু এসেছে এদেশে দেখ
হিন্দু রাষ্ট্র – হিন্দুর সরকার।
হ্যালো এটা কি ১২৩৪৫৬৭৮৯০
দিন না ডেকে বেলাকে একটি বার
নেটওয়ার্ক যায় কেটে সব মোবাইল ফোনে
জরুরী খুব জরুরী দরকার।
অঞ্জন দত্তের "বেলা বোস" অবলম্বনে
শ্রীতোষ ২৭/০৬/২০১৯

09 May, 2019

মনসা - বাচা - কর্মা

এই পোষ্টের শুরুতেই কয়েকটি শব্দ লেখার প্রয়োজনীয়তা আছে। আমার নিজের কোন সন্তান নেই এবং আমি কোন ভাবেই শিক্ষা সংক্রান্ত কোন বিষয়ের সাথে জড়িত নই অর্থাৎ বর্তমান সিলেবাস, শিক্ষাদান পদ্ধতি, পরীক্ষার প্রশ্ন কি ধরনের হবে এবং তাতে মূল্যমান অর্থাৎ নাম্বার দেওয়ার পদ্ধতি কি ধরনের হবে তাই নিয়ে আমার কোন ধারণা নেই। একথা মাথায় রেখেই আমার এ পোষ্ট করা।

আমরা জানি মনসা - বাচা - কর্মা। দর্শন এই কথা বলে অর্থাৎ মনে যা ভাববে - মুখে তাই বলবে - কাজে তাই করবে।

সংবাদ মাধ্যমে জানলাম
আইএসসি (দ্বাদশ শ্রেণি)-র ফল প্রকাশিত হল। তাতে ১০০ শতাংশ নম্বর পেয়ে দেশের সেরা হলেন কলকাতার দেবাঙ্গকুমার অগ্রবাল। লা মার্টিনিয়ার ফর বয়েজ স্কুলের ছাত্র তিনি। দেবাঙ্গের সঙ্গে যুগ্ম ভাবে প্রথম হয়েছেন বেঙ্গালুরুর বিভা স্বামীনাথন।
শুধু তাই নয়
মঙ্গলবার আইসিএসই (দশম শ্রেণি)-র ফলও প্রকাশিত হয়েছে। তাতে যুগ্ম ভাবে শীর্ষস্থান দখল করেছে মুম্বইয়ের জুহি রুপেশ কাজারিয়া এবং পঞ্জাবের মুক্তসারের মনোহর বনসল। জুহি জুহুর যমুনাবাঈ নার্সী স্কুলের ছাত্রী। মনোহর মুক্তসরের লিটল ফ্লাওয়ার কনভেন্ট স্কুলের পড়ুয়া। তারা ৯৯.৬০ শতাশ করে নম্বর পেয়েছে।
এর অর্থ দুটো ক্ষেত্রেই প্রায় ১০০% নম্বর পাওয়া। তার মানে প্রতিটি বিষয়েই দেবাঙ্গকুমার অগ্রবাল এবং বিভা স্বামীনাথন ১০০% নাম্বার পেয়েছেন এবং জুহি রুপেশ কাজারিয়া এবং মুক্তসারের মনোহর বনসল মাত্র দশমিক চার শতাংশ কম নাম্বার পেয়েছেন।
আমার বয়স ৫০ ছুঁতে চলেছে, আমাদের সময়ের কথা বলা হাস্যকর। যে কথা বলতে চাই, তা হল হয়তো আজকের সময়ে টেক্সট বুক প্রথম থেকে শেষ পড়তে হয় এবং পড়ে মুখস্থ রাখতে হয় কারণ কোথা থেকে প্রশ্ন আসবে তা কেউ জানে না। আজকের প্রশ্ন পত্র মূলত অবজেক্টিভ টাইপ অথবা পুরোটাই অবজেক্টিভ টাইপ মানে হ্যাঁ আর না বেছে নিতে হয় ফলে এই ধরনের নাম্বার যারা পেয়েছেন তাঁদের শ্রেষ্ঠতা নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলা উচিত নয় এবং আমি তা তুলছিও না।
বন্ধুরা,
লেখার শুরুতে নিজের কৈফিয়ত লেখার পরে, মূল লেখার শুরুতে আমি কিছু কথা লিখেছিলাম, সেই কথা গুলি আবার আনছি
মনসা - বাচা - কর্মা। দর্শন এই কথা বলে অর্থাৎ মনে যা ভাববে - মুখে তাই বলবে - কাজে তাই করবে।
এই মানুসগুলোই ভবিষ্যতের আমলা কিংবা ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার
একটু ভেবে দেখবেন কি ভারতের মানুষেরা বিশেষত যারা শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে জড়িয়ে আছেন তাঁরা
আমরা ভাবী যুগের মানুষদের মনে রাখার শিক্ষা দিলাম কিন্তু তাঁদের মনের সম্পূর্ণ ভাব প্রকাশের শিক্ষা দিলাম কি? কাজে কি করবেন সে তো অনেক দূরের বিষয়।
আশা করি বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ এক মানুষের এই ধৃষ্ঠতা আমার শিক্ষক বন্ধুরা ক্ষমা করবেন।