28 January, 2016

আমি সেই মেয়ে



মা তুমি আমার কথা শুনতে পারছ,
আমি, তোমার দুষ্টু-মিষ্টি  মেয়েটা
বাবা-দেখতে পারছ আমাকে?
তোমার মিষ্টুনি-কে
ভাই-আমার চুলটা দে না খুলে
যেমন করে পিছন থেকে এসে হঠাৎ করে
দিতিস খুলে-এই তো আমি তোর সামনে।
আমি ভালো নেই বাবা
মা আমি ভালো নেই
ভালো নেই রে ভাই।
না-আজ আমার শরীরে কষ্ট নেই কোনো
কষ্ট আমার মনে।
ওরা আমার দুটো পা চিরে দিতে পেরেছিল
ওদের ক্ষমতা ওখানেই শেষ ।
ওরা আমার চেতনাকে পারে নি চিনতে
পারবে আমার প্রতিবাদকে।
আমি আজ আমার দুই চেরা পা নিয়ে
রক্তাক্ত শরীর নিয়ে
আগুনঝরা চোখে দাঁড়িয়ে
ওদের সামনে এক জ্বলন্ত প্রতিবাদ হয়ে।
আমি দাঁড়িয়ে তোমাদের সাথে-
তোমাদের মাঝে
আর কাউকে দেব না আমার মত হতে
আর কোনো মেয়ের দাম ঠিক করতে দেব না।
আমি জানি-প্রতিবাদে তোমরাই আছ সাথে
আমার মা-বাবা-ভাই-বোনেরা।
আমি কামদুনির সেই মেয়ে
আমি কামদুনির সেই মেয়ে।

26 January, 2016

অসামাজিক - সংগৃহীত

সময় এসেছে

একটি কথা আজকে পরিষ্কার করে বলে দেওয়ার সময় এসেছে বলে মনে হয়, তা হল - আমরা এবং আমাদের মত অনেকেই পৃথিবীর কোনায় কোনায় যারা যুক্তি বাদের অনুশীলন করার চেষ্টা করি তারাঃ
ইজরায়েলের সমর সন্ত্রাসকে যেমন ঘৃণা করি হামাসকেও তাই।
আমরা যেমন ISIS এর বিরুদ্ধে তেমনি রোহিঙ্গাদের যারা হত্যা করে তাদের বিরুদ্ধে
আমরা যেমন জামাতের গোঁড়ামোর প্রতিবাদ করি - প্রতিবাদ করি বজরং দলের কাজের
আমরা যারা যুক্তিবাদের অনুশীলন করার চেষ্টা করি তারা আওয়াজ তুলি সব মৌলবাদের বিরুদ্ধে আর তাই
সব ধরনের মৌলবাদীদের আক্রমণের লক্ষ্য আমরা। আমাদের চেতনায় আব্রাহাম কোভুর, অভিজিৎ, ওয়াশিকুর, মালালা, বিজয় কালবুরগী -
কলম অস্ত্র আমাদের, যা কাঁপিয়ে দেয় ওদের বুক - তাই আমাদের দিকে উড়ে আসে গুলি, ঘাড়ে পড়ে চাপাতির কোপ - রক্তে ভাসে পথ।
সেই রক্ত কলমে ভরে নিয়ে ভাবী মানুষ গেয়ে চলবে প্রতিবাদের গান - যুক্তিবাদের সংগ্রাম চলছে - আমাদের সংগ্রাম চলছে - আমাদের সংগ্রাম চলবে।

"রোহিত ভেমুলা" র মৃত্যু

"রোহিত ভেমুলা" র মৃত্যু কি জন্ম দিল এক নতুন "অনার্যায়ন" এর ? এক পুরানো চেতনা কি নতুন দিশা পাচ্ছে খুঁজে ?
যে চেতনার বশবর্তী হয়ে মাইকেল মধুসূদন লেখেন তাঁর অমর কাব্য অমিত্রাক্ষর ছন্দে - "মেঘনাদ বধ"।
যে চেতনায় রাম পররাজ্য আক্রমণকারী এক সাম্রাজ্যবাদী যিনি এদেশের আদিম দাক্ষিণাত্য বাসিদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিলেন তাদের অরণ্যের অধিকার - ভুমির অধিকার - তাদের আদিম সংস্কৃতির অধিকার। চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তাঁর তথাকথিত আধুনিক সভ্য সংস্কৃতি কারণ ওরা অসভ্য।
এর একটু পরিশীলিত রূপ পরবর্তী কালে আমরা দেখতে পাই বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মধ্যে। রামের মত তাদেরও বক্তব্য ছিল এক - ভারতের মানুষ অসভ্য তাদের সভ্য করার জন্যই আমরা কষ্ট করে এখানে এসেছি।
বিনিময়ে কি চাই রামের - কি চাই ইংরেজের ? অনন্ত দাসত্ব - চিরকালীন বশ্যতা। তোমাকে মেনে নিতে হবে তুমি নীচ - উচ্চ বর্ণকে পুজো করতে হবে> তোমার ছোঁয়া যদিও বর্জনীয় তবু তোমার হাতের পরিশ্রমে ফলানো ফসলে - বোনা পোশাকে এবং তোমার ঘরের সুন্দরী রমণী শরীরে উচ্চ বর্ণের প্রথম অধিকার। তোমাদের আমরা বানর, রাক্ষস বলব - প্রতিবাদ করবে না কখনও - করলে প্রথমে কুৎসা রটাব, লোভ দেখাব আর তাতেও যদি কাজ না হয় ? মনে রেখ - আধুনিক অস্ত্রবলে আমরা তোমাদের থেকে অনেক অনেক বেশী বলীয়ান। মাটিতে মিশিয়ে দেব তোমাদের জনপদ আমাদের রণোন্মত্ত সেনার পদভারে। আর এটা জেনে রেখ শত দেশপ্রেমিকের দেশপ্রেম দেশকে রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট নয় যদি থাকে মাত্র একটি বিশ্বাসঘাতক।
কিস্কিন্ধ্যায় ছিল সুগ্রীব (এক নারী লোলুপ ক্লীব) এবং লঙ্কায় বিভীষণ। আমরা এদের মহান করেছি আর যারা সত্যিকারের বীর তাদের করেছি নীচ।
তাই দক্ষিণ ভারতে চিরকাল রাম পেয়েছে সাম্রাজ্যবাদীর তকমা আর রাবণ - মেঘনাদ কে দেওয়া হয়েছে দেশ প্রেমিকের সম্মান। পরবর্তী কালে প্রয়াত ডঃ দীপক চন্দ সহ আরও অনেক গবেষক - বিশ্লেষক এই মতের সমর্থন করে গেছেন এবং আমাদের মধ্যে যারা রামকে দেবতা বলে ভাবি তারাও কিন্ত বিভীষণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলি "ঘরশত্রু বিভীষণ"।
আজ রোহিত ভেমুলা কি এই আর্য আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর - সমাজ সংস্কারের এক নতুন দিশা দেখাতে চলেছে ? ভেঙ্গে দিতে চাইছে সেই অচলায়তন
যেখানে আজও তথাকথিত দেবতার মন্দিরে সবার প্রবেশ নিষেধ ?
যেখানে আজও গ্রামের কুয়ো ব্যবহার করতে বাধা দেওয়া হয় সব মানুষকে ?
যেখানে আজও নিম্নবর্ণের মহিলা রান্না করেছেন বলে উচ্চবর্ণের বাচ্চাদের মিড - ডে মিল খেতে বারণ করা হয় ?
যেখানে আজও জাতের বাইরে (মনে রাখবেন ধর্মের বাইরে বলি নি) বিয়ে করতে গেলে মৃত্যু দণ্ড পেতে হয় পরিবারের / সমাজের হাতে ?
যেখানে আজও বহাল তবিয়তে রাজত্ব করে চলে "খাপ পঞ্চায়েত" এর মত একটি মধ্য যুগীয় প্রতিষ্ঠান ?
জানি না - উত্তর দেবে সময়। তবে এটা জানি আজ আমাদের মত যুক্তিবাদের অনুশীলন করা মানুষদের কাছে সুযোগ এসেছে উপরের লেখা সব প্রথা যা মানুষের মনুষ্যত্ব কে অপমান করে সেগুলিকে সমাজ থেকে দূর করে এক সংস্কার মুক্ত সুন্দর সমাজ গড়ে তোলার এবং একই সঙ্গে এই দাবী আদায় করা
সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ধর্ম - জাতি - বর্ণ নয় একমাত্র আর্থিক অবস্থা হোক সংরক্ষণের মাপকাঠি
তবেই রোহিত ভেমুলার মৃত্যু সার্থক হবে - তাঁর আত্ম বলিদান সফল হবে।

19 January, 2016

তোরা ধ্বংস হ

বাংলাদেশের ঘটনার প্রতিবাদে শুধু নয় পৃথিবীর সমস্ত প্রান্তে যে ভাবে শিল্পী - সাহিত্যিক - যুক্তিবাদী মানুষের, মানবিকতার কণ্ঠ রুদ্ধ করা দেওয়া হচ্ছে তার প্রতিবাদ।

সামনে ২১ শে ফেব্রুয়ারি !
আমিও গান টা গাই
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো ২১ শে ফেব্রুয়ারি / আমি কি ভুলিতে পারি
আরও একটা কবিতা যা অজিত পান্ডে তার কণ্ঠে অসাধারণ সুরে তুলে ধরেছিলেন
"কুমড়ো ফুলে ফুলে নুয়ে পড়েছে লতাটা
সজনে ডাঁটায় ভরে গেছে ডাল টা
আর আমি ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি
খোকা তুই কবে আসবি
কবে হবে ছুটি
চিঠিটা তার পকেটে ছিল
ছেঁড়া আর রক্তে ভেজা"
আমার মত বাঙ্গালীর চোখে জল আনে - যারা বাংলা ভালবাসে তাঁদের চোখে জল আনে


কিন্ত ইবলিশের বাচ্চারা - জানোয়ার রা
তোদের আর তোদের সমর্থকদের আচরণ
মানুষের চোখে - যারা মাতৃভাষা কে ভালবাসে তাদের চোখে ঘৃণা আনবে
কারণ তোরা হত্যাকারী
সভ্যতার হত্যাকারী।


তোদের দেখেছি আলেকজান্দ্রিয়ার পাঠাগার জ্বালাতে
আলেকজান্ডার রূপে
তোদের দেখেছি নালন্দা জ্বালাতে বক্তিয়ার রূপে
তোরা আইনস্টাইন কে জার্মানি থেকে তাড়িয়েছিলি
হিটলার রূপে
তোদের দেখি খেঁকি কুত্তার মত বামিয়ান বুদ্ধ করতে ধ্বংস
আর সুমেরীয় সভ্যতার নিদর্শন ভেঙ্গে
চোর বাজারে বিক্রি করে
অস্ত্র আর ভোগের জন্য মেয়ে মানুষ কিনতে
ISIS রূপে।


তোরা মুসলিম - হিন্দু - খৃষ্টান
কোন ধর্মের কেউ না
কোন দর্শনের কেউ না
তোরা মানবিকতার শত্রু
যত সব বেজন্মার দল।


জানি মৃত্যু জীবনের অভ্রান্ত পরিণতি
তবু যতদিন বাঁচব বলে যাব
আর লড়াই করে যাব
এই কথা বলার জন্য
ধর্মের নামে মানবিকতা আর
শিল্পের ধর্ষণ কারী বেজন্মা
পথ কুক্কুর তোরা
ধ্বংস হ -
তোরা ধ্বংস হ -
তোরা ধ্বংস হ -
তোরা ধ্বংস হ - শ্রীতোষ ১৮/০১/২০১৬

17 January, 2016

বিপ্লব আনতে গেলে

ছোট ছোট কথা মিলে কবিতা হয়
কবিতায় সুর দিলে হয়ে যায় গান।
ছোট ছোট হাসি মিলে আনন্দ হয়
অনেক আনন্দ মিলে হয় ভালোবাসা।

ছোট ছোট ব্যাথা মিলে দুঃখ হয়
অনেক দুঃখ জল হয়ে ঝরে।

ছোট ছোট ক্ষোভ হয় প্রতিবাদ
অনেক প্রতিবাদ হয়ে একসাথে বিদ্রোহ জাগায়
অনেক বিদ্রোহ আনে বিপ্লব।

তাই কথা বল বন্ধু
হয় মুখে নাহয় কলমে,
কথা না বললে যে
হাসি আসবে না
আসবে না চোখে জল।

বিপ্লব আনতে গেলে যে
কথা বলা বড় দরকার। - শ্রীতোষ ১৬/০১/২০১৬

16 January, 2016

শূন্য

শূন্য থেকে শুরু করে আর এক শূন্যে মিলিয়ে যাওয়া
এক উইংস থেকে মঞ্চে এসে
অন্য এক উইংস দিয়ে অথবা
সেই একই উইংসে ঢুকে পড়া
মাঝখানে অভিনয় -
মঞ্চের বিভিন্ন প্রান্তে অথবা এক বাঁধা গণ্ডিতে
কখন ও আলোয় অথবা আলো - আঁধার কিংবা অন্ধকারে
আর শেষে চলে যাওয়া মঞ্চ ছেড়ে

মঞ্চে পা দেওয়ার আগে আমি তো সেই চরিত্র ছিলাম না
মঞ্চ থেকে বার হয়ে যাওয়ার পরে আমি তো সেই চরিত্র নই
এক অন্ধকার থেকে এসে অন্য এক অন্ধকারে মিলিয়ে যাওয়া
শূন্য থেকে শুরু করে আর এক শূন্যে মিশে যাওয়া

আমরা নিজেরাই জানি
আমরা অভিনেতা
তবু একটা মজার কথা
বলতে পারি
আমরা ওই উইংসে চলে যেতে
বড় ভয় পাই
আর সেটাই বাস্তব জীবনে এক শিল্পীর স্বপ্ন
সেই চায় - সে বাঁচে এই স্বপ্ন নিয়ে বুকে
একজন রাজনৈতিক শিল্পী
একজন অঙ্কন শিল্পী
একজন লেখক অথবা এক
এক নৃত্য শিল্পী কিংবা এক
স্বপ্ন দেখা মানুষ
ওই উইংসে চলে যাওয়ার আগে
সে বড় ভয় পায়
কিন্ত তার ভয় যায় হারিয়ে
যখন সে দেখে
উত্তরাধিকার। শ্রীতোষ ১৬/০১/২০১৬