18 August, 2018

স্মরণে - সঞ্জয় মল্লিক

Sreetosh Bandyopadhyaya is feeling missing you with Suvra Chatterjee and Sanjoy Mallick.
1 hr ·
“যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে
আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে”
---------
“তখন আমায় নাই বা মনে রাখলে
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাই বা আমায় ডাকলে”

বাঙালীর প্রাণের কবির এই কটি শব্দ বোধ হয় সব মানুষের মনের কথা কারণ সে চলে যাওয়ার পরেও থাকতে চায়, মানুষের মনে। সকলে পারে না – পারে কেউ কেউ। তাঁদের সম্পর্কেই বলে ওঠা যায়ঃ

“তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি
সকল খেলায় করব খেলা এই আমি – আহা”

আজ যে মানুষটির সম্পর্কে লিখতে বসেছি তিনি সেই রকম এক জন মানুষ। তাঁর পার্থিব শরীর আজ আমাদের মধ্যে নেই কিন্ত যখনই আমি কিছু লিখতে বসি আমি যেন দেখতে পাই তিনি আমার পাশে বসে আছেন। সেই মানুষটির কাছে জীবনের যা রসদ পেয়েছি তা কোনদিন ভুলতে পারব না। বিভিন্ন ইংরেজী শব্দের সঠিক উচ্চারণ থেকে শুরু করে আরও অনেক কিছু। এখনও তাঁর শাসন কানে বাজেঃ আমি বলেছিলাম “রেডিও তে ইংরাজি কমেন্ট্রি শুনে কিছু বুঝতে পারি না, তাই বাইরের খেলা গুলোর কমেন্ট্রি শুনি না।“ এক ধমক দিয়ে বলেছিলেন “না শুনলে বুঝবি কি করে? খেলা টা কি হচ্ছে তা জানিস, তার নিয়ম কানুন জানিস, তাহলে বুঝতে অসুবিধা কিসের?” তারপর সস্নেহে বলেছিলেন “শোনা শুরু কর। প্রথম দিকে কিছু শব্দের অর্থ বুঝতে পারবি না। হয় কাউকে জিজ্ঞাসা কর অথবা ডিকশনারি দেখে নে। তারপর দেখবি আর অসুবিধা হচ্ছে না।“ সেই আমার ইংরাজি কমেন্ট্রি শোনা শুরু। সত্যি বলতে কি এখন আর বাংলা বা হিন্দি কমেন্ট্রি শুনতে ভালো লাগে না।

ভীষণ পড়তে ভালবাসতেন তিনি – শুধু পড়তে নয়, ভালবাসতেন পড়াতে। তাঁর কাছে বইয়ের কোন ভেদাভেদ ছিল না। কোন বই বড়দের নয় – সব বই সব্বার। মনে পড়ে ক্লাস সেভেনে যখন পড়ি, তখন আমি শরৎচন্দ্রের “শেষ প্রশ্ন” পড়েছিলাম। কিছুই বুঝি নি। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে ওই একই উপন্যাস বার বার পড়েছি। এখন ও কিন্ত “শেষ প্রশ্ন” নিয়ে আমার মনে অনেক প্রশ্ন থেকে গেছে। ভালবাসতেন গান শুনতে। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত থেকে ইংলিশ ক্ল্যাসিক্যাল হয়ে বাংলা ও হিন্দি গানের স্বর্ণ যুগ – সব কিছুই তাঁর প্রিয় ছিল। যেমন ভাবে ইংরাজি কমেন্ট্রি শোনা শিখেছি ঠিক সেই ভাবেই শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে ভালবাসতে শিখিয়েছিলেন। তবে একটা অক্ষমতা এখনও আমি ভোক্যাল ক্ল্যাসিকালের (ভারতীয় এবং বিদেশী) কিছুই বুঝি না। কি ভালবাসতেন না আজীবন অকৃতদার এই মানুষটি? সিনেমা – নাটক সব কিছুই। আমার সৌভাগ্য যে তাঁকে আমার নিজের অভিনয় দেখানোর সুযোগ পেয়েছি।

এই মানুষটির সাথে কিন্ত আমার রক্তের কোন সম্পর্ক ছিল না কিন্ত আত্মার বন্ধনে ভালোবাসার বন্ধনে তিনি ছিলেন আমার পরম আত্মীয়। তিনি সারা জীবন ধরে দিয়ে গেছেন, চাননি কিছুই, তাই আজও তিনি আছেন - থাকবেন আমাদের সবার মাঝে। কাল তাঁর স্মরণ সভা। শারীরিক ভাবে আজ আমি বেশ কয়েক শো কিলোমিটার দূরে, তাই নিজের লেখার মাধ্যমেই আমি আমার নিজের শ্রদ্ধা জানালাম

আমার প্রিয় বড়মামাকে – “নিরালা” বাড়ির সঞ্জয় মল্লিককে – যিনি আজও আমার কাছে একই রকম ভাবে আছেন যেমন ছিলেন আগে।

সঞ্জয় মল্লিক - আমার বড় মামা

Sanjoy Mallick কাল আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। এ চলে যাওয়া আমার এক ব্যক্তিগত ক্ষতি। তাঁর সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক ছিল না ঠিকই কিন্ত যে সম্পর্ক ছিল তা তার চেয়ে অনেক গভীর। আমি তাঁকে "বড়মামা" বলেই চিরকাল ডেকে এসেছি এবং চিরকাল সেই সম্মান দিয়ে এসেছি।
কাল সকালে ৯ টা নাগাদ তাঁর কমেন্ট দেখি
"প্যারাসিটামল খাচ্ছি জ্বরটা কম খূব দূর্বল"।
এটাই তাঁর জীবনের শেষ লেখা হয়ে থাকল।
তারপর কেন জানি না সারাদিন ধরে বারবার মনে হচ্ছিল, একবার ফোন করে খবর নিই। সে খবর আর নেওয়া হল না বরং বিকাল সাড়ে চারটেয় খবর এল বড়মামা আমাদের ছেড়ে, তাঁর প্রিয় "নিরালা" ছেড়ে চিরকালের মত চলে গেছেন।
বড়মামার কাছ থেকে জীবনে অনেক কিছু পেয়েছি। ব্রাহ্ম সমাজভুক্ত উদারচেতা, অকৃতদার, রবীন্দ্র প্রেমী এই মানুষটি আজীবন বামপন্থী ছিলেন। রাজ্য সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মচারী থাকা এই মানুষটি সরাসরি রাজনীতি হয়তো করেন নি কিন্ত বাম আদর্শের প্রতি তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস তাঁর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পরেই বোঝা যেত। তাঁর কাছ থেকে আমি জেনেছিলাম ছোটদের বই - বড়দের বই বলে আলাদা কিছু হয় না, সব বইই পড়ার বই। সেই সময় এমন অনেক বই পড়েছি যার ভিতরে সেই সময় ঢুকতে পারি নি কিন্ত বড়মামা সব সময় বলত - "পড় বাবুরাম পড়"। নিজের পাঠ্য বিষয়ের বাইরে গিয়ে অন্য বিষয় সম্পর্কে পড়ার - জানার ইচ্ছা আমি তাঁর কাছ থেকেই পেয়েছি।
উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ ছিল, আগ্রহ ছিল অন্য গানের উপরেও। আমার গান শোনার কান - ভালো সিনেমা দেখার আগ্রহ সব কিছুর পিছনেই বড়মামার অবদান আছে। মানুষটি খেলাধূলাও বড় ভালবাসত। যদিও বড়মামা মোহনবাগান আর আমি ইস্টবেঙ্গল সমর্থক তাতে কোনদিন কোন দূরত্ব তৈরি হয় নি। ভারতের প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয় বড়মামার পাশে বসেই দেখেছিলাম। বড়মামার পাশে বসেই প্রথম দেখা উইম্বলডন কাপ। খেলোয়াড় নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে যে সব ত্রুটি - বিচ্যুতি হত বড়মামা সেই সবও ঠিক করে দিত। বামপন্থার প্রতি আমার আকর্ষণ যে সব বই পড়ে তৈরি হয়েছিল তাও পেয়েছিলাম বড়মামার কাছ থেকেই। সেই অর্থে আমার বামপন্থী মানসিকতা তৈরি হওয়ার পিছনে বড়মামার অবদান অনস্বীকার্য। ও বাড়ির সকলের কাছ থেকেই আমি এবং আমার ভাই অকৃত্রিম স্নেহ ও ভালোবাসা পেয়েছি কিন্ত বড়মামা এবং বড়মাসীর আমার প্রতি একটা আলাদা টান ছিল যা আজও বর্তমান।

আসলে সেই সময় "নিরালা" আর আমার বাবার বাড়ি পাশাপাশি ছিল তবুও দুটো বাড়ির মানুষ জনের মধ্যে কোন ফারাক ছিল না। আমরা একে অন্যের দুঃখ - আনন্দ সমান ভাবে ভাগ করে নিতাম। তারপর কালক্রমে আমি বাবার বাড়ি ছেড়ে নিজের ফ্ল্যাটে যখন চলে এলাম বড়মামা এবং বড়মাসী দুজনেই আমার ফ্ল্যাটে আসা উপলক্ষে যে মিলন উৎসবের আয়োজন করেছিলাম সেখানে অংশ নিয়েছিল, তবে একটা ভুল আজ স্বীকার করে নিই যে মুন্নি মাসী ও মিঠু মাসী কে ডাকতে ভুলে গিয়েছিলাম। তোমরা যদি পার আমায় ক্ষমা করে দিও।
যে ফতুয়া পড়ে বড়মামা দাঁড়িয়ে আছে - শেষ যাত্রায় তার পরনে ছিল ওই ফতুয়াটাই। কাল রাতে চিরাচরিত নিয়ম মেনে যখন "আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে" গানের মাধ্যমে তাঁকে শেষ বিদায় দেওয়া হচ্ছে তখন সেখানে উপস্থিত কারোর চোখ শুকনো ছিল না, এমনকি এ লেখা লিখতে লিখতে আমার চোখও শুকনো নেই। অনেক ব্যক্তিগত কথা মনে পড়ে যাচ্ছে - স্মৃতির পর্দায় প্রতি মুহূর্তে ফুটে উঠছে ভুলতে না পারা অনেক মুহূর্ত।
ঈশ্বর বা আত্মায় আমার কোন বিশ্বাস নেই - আমার বড়মামা চিরকাল বেঁচে থাকবে আমার চেতনায় - তাঁর ভালবাসায়।

19 May, 2018

মাইকেল তোমাকে

অঁরিয়েৎ তুমি পারছ কি শুনতে
মাটির সে আর্তনাদ
শাবলের প্রতি আঘাতে কাঁদছে
আমার কবরের মাটি।

দেড়শত বছর হয়ে গেছে পার
তবু ওরা আমাকে ভয় পায়
আমি বিদ্রোহী।
গোটা উত্তর ভারতকে বুঁদ করে রেখেছিল ওরা
রামের নামে,
এক মেঘনাদ বধ চুরমার করে দিয়েছে সে অন্ধকার
আমি বাসব বিজয়ী রাঘব বিজয়ী
শ্রী মধুসূদন।

আজও কিছু মানুষ আমার লেখা পড়ে
আমার কথা বলে
কবরের ঘন অন্ধকার থেকে আমি দেখতে পাই
তাই ওরা যখন ওদের হিংস্র নখ নিয়ে
বাংলার বুককে ক্ষত বিক্ষত করতে এসেছে
ওদের আক্রমণের প্রথম লক্ষ্য আমি।

ওরা বলেছিল খৃস্টান মাতাল মাইকেল
রাম কে তো ছোট করবেই
ওরা নাকি দেশপ্রেমিক!
নীল দর্পণের বাংলা অনুবাদ করে
ভারতের স্বাধীনতার সংগ্রামে হয়ত
একটু অবদান রেখেছিলাম
ওরা জানে না সে ইতিহাস।

রাম ভক্ত কিছু মানুষের আক্রমণে
হয়ত ক্ষত বিক্ষত হবে কবরের মাটি
তবু জেনে রেখ অঁরিয়েৎ
মেঘনাদ বধ ওদের চেতনায় করবে আঘাত
ওরা চিরকাল মাথা নত করে বাঁচবে।
বরাক উপত্যকার ভাষা দিবসে
মধু কবির প্রতি শ্রদ্ধায় শ্রীতোষ ১৯/০৫/২০১৮

23 April, 2018

নির্ভয়া - তোমাকে

বড় ভাগ্য করে জন্মেছিলি মা নির্ভয়া
কারণ তোর উপর অত্যাচারের সময়ও
এ দেশের মানুষ গুলো একটু মানুষ ছিল।
বড় ভাগ্য করে জন্মেছিলি মা নির্ভয়া
কারণ তোর উপর অত্যাচারের পরেও
কেউ প্রশ্ন করে নি
তোর জাত কি ছিল?

বড় ভাগ্য ছিল রে মা তোর
তোর অত্যাচারীর জাত কি
জিজ্ঞাসা করে নি এ দেশের মানুষ
বরং প্রতিবাদের আগুন জ্বালিয়েছিল
আজ যারা ধর্ষিতা তাদের সে ভাগ্য নয়
আজ প্রথমে দেখে ধর্ষিতার জাত
তারপর ধর্ষকের
তারপর বলে
"পহেলে তো ইতনা চিল্লায়া নেহি
ফির আজ কিঁউ
কিঁউ কি উও উস জাত কি হ্যায়"
জানিস মা নির্ভয়া ওরা আবার ধর্ষিতা হয়
বার বার ধর্ষিতা হয়
যতবার সে শোনে
"পহেলে তো ইতনা চিল্লায়া নেহি
ফির আজ কিঁউ"
জানিস মা নির্ভয়া
ওদের আত্মা বলে ওঠে
"চাই না আমার বিচার
একটু চুপ কর
থাকতে দাও শান্তিতে
আমার শরীরকে দলে - পিষে - নিংড়ে - চুষে
শান্তি হয় নি তোমাদের
আমার আত্মাকে শেষ করছ তোমরা।"
তাই মাও আজ ধর্ষিতা গুজরাতে
আপন ছেলের হাতে!
শোন মা নির্ভয়া
আমি এক অসহায় লেখক
কি ক্ষমতা আমার?
আমি লিখতে লিখতে কাঁদি
আর কাঁদতে কাঁদতে লিখি
আমার চোখের জলে মেশে প্রতিবাদ।
শ্রীতোষ ২২/০৪/২০১৮

22 April, 2018

আমিই সেই মেয়ে ২য় পর্ব

এই কবিতাটি লিখেছিলাম কামদুনি ঘটনার পরে আজ একটু বদলে দিলাম গড়িয়ার ঘটনার প্রেক্ষিতে

আমি সেই মেয়ে
সোনা তুই আমাকে দেখতে পারছিস
ও মা দেখতে পারছ আমাকে
জানিস বাবা সেদিন ঝড় জলের রাতে
আমার মাথা ঘুরছিল
সোজা হয়ে চলতে পারছিলাম না
১১ বছরের ছোট্ট সোনা তুই
কি করে সামলাবি আমাকে
বললাম "যা ঠাকুমাকে ডেকে নিয়ে আয়"
তুই যেতে চাইছিলি না আমাকে ছেড়ে
তবু গেলি।

তারপর - তারপর কেটে গেল কিছু সময়
জীবনের ভয়ংকর কিছু সময়
তারপর ভেবেছিলাম শান্তি পাব

কিছু হায়না খুবলে খেয়েছে শরীর
কিন্ত মন তো অটুট আছে
ভুল ভেবেছিলাম
এখন দেখছি
ওদের থেকে বড় হায়নারা
ঘুরে বেড়ায় দিনের আলোয়
ওদের কষের দাঁত থেকে ঝরে পড়ে রক্ত
ওরা লাশের শরীর চিরে দেখতে চায়
ওটা হিন্দু না মুসলিম নাকি দলিত

অনেক হয়েছে শান্তি
আরও অনেক লাশ জমছে আমার মত
জমবে আরও
এবার আমাদের চোখে জ্বলবে আগুন
আমাদের মত লাশ গুলো
ওদের ঘরে লাশ হয়ে ঢুকবে
দেখব ওরা কেমন প্রশ্ন করে
আমার ঘরে যে লাশ টা পরে
সেটা হিন্দু না মুসলিম নাকি দলিত

আমরা সেদিন আগুন হয়ে হাসব
প্রতিশোধের শান্ত আনন্দে।
শ্রীতোষ ২২/০৪/২০১৮

21 April, 2018

ধর্ম বলতে যা বুঝি

আমার বাড়িতে কোন পূজা হয় না, দুগগা পুজায় ভিড় আর ব্যারিকেডের অত্যাচার থেকে বাঁচতে কলকাতার বাইরে এমন জায়গায় পালাই যেখানে পুজার ভড়ং নেই। কালী পুজায় কানে তুলো দিয়ে, জানলা বন্ধ করে বসে থাকি। হাতে কোন পাথর নেই, গলায় কোন মাদুলি নেই, আমার বিয়েতে রেজিস্ট্রি হয়েছে আবার সামাজিক নিয়মে হয়েছে কারণ সেই সময় আমার নিজের মতে চলার স্বাধীনতা ছিল না। পৈতে হয়েছিল কিন্ত এখন নেই (পৈতের সময় দীক্ষা গুরু বলার আগেই গায়ত্রী মন্ত্র বলে ফেলেছিলাম বলে তিনি আঁতকে উঠেছিলেন)। হ্যাঁ লুচি - পরোটা খেতে ভীষণ ভালবাসি বলে একাদশী মেনেছি, তবে ত্রি সন্ধ্যা করেছি বলে মনে পড়ে না। একটা না একটা সন্ধ্যা ভুল হয়েই যেত। যে কোন শ্লোক (মন্ত্র) বলতে বা লিখতে হলে মানে জেনে শুদ্ধ উচ্চারণ বা বর্ণ ব্যবহার করি। গরু - শুয়োর কোনটাতেই অরুচি নেই তবে কেরালার কোল্লামে চিলি পর্ক খাওয়ার কথা জীবনে ভুলব না। মুখে ছোঁয়ানোর পরে মনে হয়েছিল পুরো বঙ্গোপসাগরের জল মুখে ঢালতে হবে। তিনটে চিলড্‌ বিয়ার খেয়ে শান্তি হয়। হ্যাঁ রাস্তায় দাঁড়িয়েও গরু - শুয়োর খেয়েছি তবে ওই প্রতিবাদের জন্য নয়। আমি মনে করি মানুষের যা খাদ্য যোগ্য তার মধ্যে আমার যা পছন্দ আমি তাই খাব, তা পনির হতে পারে পাঁঠাও হতে পারে, কোন গো শাবক বা গাধা প্রেমিক সেটা ঠিক করে দেওয়ার অধিকারী নয়। সে যদি সেটা করে, তাহলে আমারও সকলের সামনে গরু - শুয়োর - পনির খেয়ে প্রতিবাদ করার দায়িত্ব আছে। আর দেবতা দের নিয়ে খিল্লি ! মহাভারতের যুগে ইন্টার নেট ছিল এটাই তো সবচেয়ে বড় খিল্লি কারণ মহাভারতের কৃষ্ণ তো ভগবান রূপেই পুজো পান। অন্য ধর্মের লোকেরা তাদের দেবতা সম্পর্কে এরকম খিল্লি করে কি? কোন খৃস্টান কে কোন দিন বলতে শোনা গেছে যে যীশুর যুগে বিমান বা ইন্টারনেট ছিল? আগে সেগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হোক - বাবা আর পীরদের অলৌকিক ক্ষমতা, জ্যোতিষীদের মিথ্যাচার করে টাকা লোটা - এই সবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হোক, সেটা আসল কাজ। মহাভারতের যুগে ইণ্টারনেট থাকলে ফেসবুক ছিল, WHATS APP ছিল আর এগুলো যারা বিশ্বাস করে সে রকম গো শাবক ও ছিল। ফলে যত দিন "সবকিছু ব্যাদে ছিল" চলবে ততদিন এই রকম খিল্লি চলবে। ওটা বন্ধ হলে এটা আপনি বন্ধ হবে। আর ধর্ম - মানুষ যা ধারন করে তাই হল ধর্ম। হিন্দু কোন ধর্ম নয়, হিন্দু হল এক মহান দর্শন - পৃথিবীর সর্ব শ্রেষ্ঠ দর্শন। যে দর্শনে বিবিধের মাঝে মিলন কে স্বীকৃতি দেওয়া আছে। কত মত - কত ভাষ্য সে দর্শনে! একজন সারা জীবন ধরে পড়ে গেলেও তার তৃষ্ণা মিটবে না। (আমার মেটে নি) একের সঙ্গে অন্যের আপাত কোন মিল নেই, তবু এক অদৃশ্য সূত্রে বাঁধা। এই মহান দর্শনকে যারা ধর্মের নিগড়ে বাঁধতে চায়, তাদের প্রতি আমার করুণা হয় কারণ তারা জানেই না যে এই দর্শনের কত বড় অপমান তারা করছে, কত অপমান করছে বেদ - উপনিষদের সুক্ত গুলির, কত অপমান করছে রামানুজ, শঙ্করাচার্য, চার্বাক এর মত মহান পণ্ডিতদের। সব শেষে বলি, যে কোন ধর্মের নামে চলা বদামো, ভন্ডামো, আচার - বিচার, যা মানুষের চেতনাকে বিকৃত করে, মানুষে মানুষে বিবাদ বাধায় তাকে এবং তাদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে সমর্থন করা যে কোন জীবকে (দুঃখিত মানুষ বলতে পারব না) আমি ঘৃণা করি।

13 April, 2018

মিছিল

আজকে নাকি একটা মিছিল ছিল নগরের পথে। নাগরিক জীবনের অসুবিধা করে সে মিছিলের মানুষগুলো নাকি আনন্দ পেয়েছিল! মানুষের মিছিল দেখলে এই তো বলে বুদ্ধিGB GীB গুলো। না আজ কোন মিছিল ছিল না।
আজ নগর কলকাতার নাগরিক পথ মুখরিত হয়েছিল একটি মানুষের চলার শব্দে, যে মানুষের অন্তরে ছিল মানুষের প্রতি ভালবাসা, কণ্ঠে ছিল –“গাহি সাম্যের গান” যে মানুষ বলছিল “হেথায় আর্য, হেথা অনার্য, হেথায় দ্রাবিড় চীন—শক-হুন-দল পাঠান-মোগল এক দেহে হল লীন”। যে মানুষ জাতের নামে বর্ণের নামে হাতে অস্ত্র তুলে নেয় না, অন্যের হাতে অস্ত্র ধরায় না। যারা এ কাজ করে তাদের মত বিষাক্ত জীবগুলোর বিরুদ্ধে হেঁটেছিল একটি মাত্র মানুষ।
আমি সেই মানুষ হয়ে, অজস্র মানুষের ভিড়ে, অজস্র মানুষের কণ্ঠে নিজের কণ্ঠ মিলিয়ে, প্রতিজ্ঞায় উত্তোলিত অজস্র হাতের সাথে হাত ধরে পথ হেঁটেছি। ডাক্তারের বারণ একটানা বেশী রোদে থাকা, নিজে থাকতেও পারিনা, তবুও সব বাধা সরিয়ে আজ পথে নেমেছিলাম কারণ এই পথ হাঁটা বড় দরকার ছিল।
আমি দেখলাম কখনও নীরবে কখনও কবিতা, গান আর নাটক নিয়ে মানুষটা কেমন পথ হাঁটল। অবাক লাগছে তাই না, কখনও বলছি মানুষ আবার কখনো মানুষগুলো। আসলে যারা এই মিছিলটায় ছিলেন তাঁরা বুঝবেন যে আমি সত্যি বলছি। আসলে এই মিছিলে অনেক শরীর ছিল কিন্ত তাঁদের চেতনা ছিল এক, তাঁদের কণ্ঠে ছিল রবীন্দ্রনাথের কবিতা – নজরুলের গান। তাঁদের অন্তরে ছিল একটি মাত্র প্রতিজ্ঞা
রবীন্দ্রনাথ – নজরুলের বাংলাকে আমরা সাম্প্রদায়িক বজ্জাতদের হাতে তুলে দেব না।
শেষ পর্যন্ত থাকতে পারলে হয়তো অনেকের সাথেই দেখা হত কিন্ত পার্ক ষ্ট্রীটের ক্রসিং পার হয়েই দাঁড়িয়ে পড়তে হল। ঘাড়ে – মাথায় জল দিয়েও সুস্থ হতে পারলাম না। প্রায় ২০ মিনিট অপেক্ষার পরে বাড়ির পথ ধরতে হল। আমি ছিলাম মিছিলের সামনের দিকে গড়িয়া সুচর্চার সাথে, ২০ মিনিট পরেও দেখলাম মিছিল চলছে, একটি মানুষের মিছিল – শুধু আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম।