18 August, 2018

স্মরণে - সঞ্জয় মল্লিক

Sreetosh Bandyopadhyaya is feeling missing you with Suvra Chatterjee and Sanjoy Mallick.
1 hr ·
“যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে
আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে”
---------
“তখন আমায় নাই বা মনে রাখলে
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাই বা আমায় ডাকলে”

বাঙালীর প্রাণের কবির এই কটি শব্দ বোধ হয় সব মানুষের মনের কথা কারণ সে চলে যাওয়ার পরেও থাকতে চায়, মানুষের মনে। সকলে পারে না – পারে কেউ কেউ। তাঁদের সম্পর্কেই বলে ওঠা যায়ঃ

“তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি
সকল খেলায় করব খেলা এই আমি – আহা”

আজ যে মানুষটির সম্পর্কে লিখতে বসেছি তিনি সেই রকম এক জন মানুষ। তাঁর পার্থিব শরীর আজ আমাদের মধ্যে নেই কিন্ত যখনই আমি কিছু লিখতে বসি আমি যেন দেখতে পাই তিনি আমার পাশে বসে আছেন। সেই মানুষটির কাছে জীবনের যা রসদ পেয়েছি তা কোনদিন ভুলতে পারব না। বিভিন্ন ইংরেজী শব্দের সঠিক উচ্চারণ থেকে শুরু করে আরও অনেক কিছু। এখনও তাঁর শাসন কানে বাজেঃ আমি বলেছিলাম “রেডিও তে ইংরাজি কমেন্ট্রি শুনে কিছু বুঝতে পারি না, তাই বাইরের খেলা গুলোর কমেন্ট্রি শুনি না।“ এক ধমক দিয়ে বলেছিলেন “না শুনলে বুঝবি কি করে? খেলা টা কি হচ্ছে তা জানিস, তার নিয়ম কানুন জানিস, তাহলে বুঝতে অসুবিধা কিসের?” তারপর সস্নেহে বলেছিলেন “শোনা শুরু কর। প্রথম দিকে কিছু শব্দের অর্থ বুঝতে পারবি না। হয় কাউকে জিজ্ঞাসা কর অথবা ডিকশনারি দেখে নে। তারপর দেখবি আর অসুবিধা হচ্ছে না।“ সেই আমার ইংরাজি কমেন্ট্রি শোনা শুরু। সত্যি বলতে কি এখন আর বাংলা বা হিন্দি কমেন্ট্রি শুনতে ভালো লাগে না।

ভীষণ পড়তে ভালবাসতেন তিনি – শুধু পড়তে নয়, ভালবাসতেন পড়াতে। তাঁর কাছে বইয়ের কোন ভেদাভেদ ছিল না। কোন বই বড়দের নয় – সব বই সব্বার। মনে পড়ে ক্লাস সেভেনে যখন পড়ি, তখন আমি শরৎচন্দ্রের “শেষ প্রশ্ন” পড়েছিলাম। কিছুই বুঝি নি। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে ওই একই উপন্যাস বার বার পড়েছি। এখন ও কিন্ত “শেষ প্রশ্ন” নিয়ে আমার মনে অনেক প্রশ্ন থেকে গেছে। ভালবাসতেন গান শুনতে। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত থেকে ইংলিশ ক্ল্যাসিক্যাল হয়ে বাংলা ও হিন্দি গানের স্বর্ণ যুগ – সব কিছুই তাঁর প্রিয় ছিল। যেমন ভাবে ইংরাজি কমেন্ট্রি শোনা শিখেছি ঠিক সেই ভাবেই শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে ভালবাসতে শিখিয়েছিলেন। তবে একটা অক্ষমতা এখনও আমি ভোক্যাল ক্ল্যাসিকালের (ভারতীয় এবং বিদেশী) কিছুই বুঝি না। কি ভালবাসতেন না আজীবন অকৃতদার এই মানুষটি? সিনেমা – নাটক সব কিছুই। আমার সৌভাগ্য যে তাঁকে আমার নিজের অভিনয় দেখানোর সুযোগ পেয়েছি।

এই মানুষটির সাথে কিন্ত আমার রক্তের কোন সম্পর্ক ছিল না কিন্ত আত্মার বন্ধনে ভালোবাসার বন্ধনে তিনি ছিলেন আমার পরম আত্মীয়। তিনি সারা জীবন ধরে দিয়ে গেছেন, চাননি কিছুই, তাই আজও তিনি আছেন - থাকবেন আমাদের সবার মাঝে। কাল তাঁর স্মরণ সভা। শারীরিক ভাবে আজ আমি বেশ কয়েক শো কিলোমিটার দূরে, তাই নিজের লেখার মাধ্যমেই আমি আমার নিজের শ্রদ্ধা জানালাম

আমার প্রিয় বড়মামাকে – “নিরালা” বাড়ির সঞ্জয় মল্লিককে – যিনি আজও আমার কাছে একই রকম ভাবে আছেন যেমন ছিলেন আগে।

No comments:

Post a Comment