21 April, 2018

ধর্ম বলতে যা বুঝি

আমার বাড়িতে কোন পূজা হয় না, দুগগা পুজায় ভিড় আর ব্যারিকেডের অত্যাচার থেকে বাঁচতে কলকাতার বাইরে এমন জায়গায় পালাই যেখানে পুজার ভড়ং নেই। কালী পুজায় কানে তুলো দিয়ে, জানলা বন্ধ করে বসে থাকি। হাতে কোন পাথর নেই, গলায় কোন মাদুলি নেই, আমার বিয়েতে রেজিস্ট্রি হয়েছে আবার সামাজিক নিয়মে হয়েছে কারণ সেই সময় আমার নিজের মতে চলার স্বাধীনতা ছিল না। পৈতে হয়েছিল কিন্ত এখন নেই (পৈতের সময় দীক্ষা গুরু বলার আগেই গায়ত্রী মন্ত্র বলে ফেলেছিলাম বলে তিনি আঁতকে উঠেছিলেন)। হ্যাঁ লুচি - পরোটা খেতে ভীষণ ভালবাসি বলে একাদশী মেনেছি, তবে ত্রি সন্ধ্যা করেছি বলে মনে পড়ে না। একটা না একটা সন্ধ্যা ভুল হয়েই যেত। যে কোন শ্লোক (মন্ত্র) বলতে বা লিখতে হলে মানে জেনে শুদ্ধ উচ্চারণ বা বর্ণ ব্যবহার করি। গরু - শুয়োর কোনটাতেই অরুচি নেই তবে কেরালার কোল্লামে চিলি পর্ক খাওয়ার কথা জীবনে ভুলব না। মুখে ছোঁয়ানোর পরে মনে হয়েছিল পুরো বঙ্গোপসাগরের জল মুখে ঢালতে হবে। তিনটে চিলড্‌ বিয়ার খেয়ে শান্তি হয়। হ্যাঁ রাস্তায় দাঁড়িয়েও গরু - শুয়োর খেয়েছি তবে ওই প্রতিবাদের জন্য নয়। আমি মনে করি মানুষের যা খাদ্য যোগ্য তার মধ্যে আমার যা পছন্দ আমি তাই খাব, তা পনির হতে পারে পাঁঠাও হতে পারে, কোন গো শাবক বা গাধা প্রেমিক সেটা ঠিক করে দেওয়ার অধিকারী নয়। সে যদি সেটা করে, তাহলে আমারও সকলের সামনে গরু - শুয়োর - পনির খেয়ে প্রতিবাদ করার দায়িত্ব আছে। আর দেবতা দের নিয়ে খিল্লি ! মহাভারতের যুগে ইন্টার নেট ছিল এটাই তো সবচেয়ে বড় খিল্লি কারণ মহাভারতের কৃষ্ণ তো ভগবান রূপেই পুজো পান। অন্য ধর্মের লোকেরা তাদের দেবতা সম্পর্কে এরকম খিল্লি করে কি? কোন খৃস্টান কে কোন দিন বলতে শোনা গেছে যে যীশুর যুগে বিমান বা ইন্টারনেট ছিল? আগে সেগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হোক - বাবা আর পীরদের অলৌকিক ক্ষমতা, জ্যোতিষীদের মিথ্যাচার করে টাকা লোটা - এই সবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হোক, সেটা আসল কাজ। মহাভারতের যুগে ইণ্টারনেট থাকলে ফেসবুক ছিল, WHATS APP ছিল আর এগুলো যারা বিশ্বাস করে সে রকম গো শাবক ও ছিল। ফলে যত দিন "সবকিছু ব্যাদে ছিল" চলবে ততদিন এই রকম খিল্লি চলবে। ওটা বন্ধ হলে এটা আপনি বন্ধ হবে। আর ধর্ম - মানুষ যা ধারন করে তাই হল ধর্ম। হিন্দু কোন ধর্ম নয়, হিন্দু হল এক মহান দর্শন - পৃথিবীর সর্ব শ্রেষ্ঠ দর্শন। যে দর্শনে বিবিধের মাঝে মিলন কে স্বীকৃতি দেওয়া আছে। কত মত - কত ভাষ্য সে দর্শনে! একজন সারা জীবন ধরে পড়ে গেলেও তার তৃষ্ণা মিটবে না। (আমার মেটে নি) একের সঙ্গে অন্যের আপাত কোন মিল নেই, তবু এক অদৃশ্য সূত্রে বাঁধা। এই মহান দর্শনকে যারা ধর্মের নিগড়ে বাঁধতে চায়, তাদের প্রতি আমার করুণা হয় কারণ তারা জানেই না যে এই দর্শনের কত বড় অপমান তারা করছে, কত অপমান করছে বেদ - উপনিষদের সুক্ত গুলির, কত অপমান করছে রামানুজ, শঙ্করাচার্য, চার্বাক এর মত মহান পণ্ডিতদের। সব শেষে বলি, যে কোন ধর্মের নামে চলা বদামো, ভন্ডামো, আচার - বিচার, যা মানুষের চেতনাকে বিকৃত করে, মানুষে মানুষে বিবাদ বাধায় তাকে এবং তাদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে সমর্থন করা যে কোন জীবকে (দুঃখিত মানুষ বলতে পারব না) আমি ঘৃণা করি।

No comments:

Post a Comment