12 January, 2019

একটি রাজনৈতিক লেখা

তিনি এবার "পুজো বন্ধ" এর সেন্টু দিয়ে বাজার গরম করতে চাইছেন এবং দাদার পালে হাওয়া দিতে চাইছেন।
"তুমি মোদী বাবু টাকা দাও? পুজো বন্ধ করে দেবে?" কে বললেন? বললেন মুখ্যমন্ত্রী। একটি দেশের এক অঙ্গ রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান সেই দেশের প্রশাসনিক প্রধানকে এই ভাবে সম্বোধন করতে পারেন কিনা সেই প্রশ্নে আমি যাচ্ছি না কারণ সর্ব কর্মে পারদর্শী একটি জীব এই পৃথিবীতে একটাই আছে, সুতরাং তার মুখের ভাষা যে তারই মত সুন্দর হবে তা নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
এই মন্তব্যটা তিনি কেন করলেন> তিনি কেন ক্রুদ্ধ হয়ে ঘেউ ঘেউ করলেন (নিজেই অন্যের কথা শুনলে বলেন "ঘেউ ঘেউ করবেন না" অর্থাৎ মানুষের কথাকে তার ঘেউ ঘেউ মনে হয় এবং তিনি কবিতায় লেখেন "মা কোথায় - ঘেউ ঘেউ")। তিনি ঘেউ ঘেউ করলেন কারণ আয়কর দপ্তর কলকাতার পুজো কমিটি গুলোর কাছ থেকে জানতে চেয়েছে যে তারা পুজোর জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে টাকা খরচা করে সেই সব ক্ষেত্রে "উৎস মূলে কর সংগ্রহ" (TAX DEDUCTED AT SOURCE) করে কিনা? আরও সোজা কথায় বলতে গেলে, কোন একজন শিল্পীর সাথে বা অন্য কোন কাজের ক্ষেত্রে যে টাকা দেওয়া হয় সেই টাকা দেওয়ার আগে তার থেকে করের টাকা কেটে রাখা হয় কিনা এবং তা নির্ধারিত চালানে জমা করা হয় কিনা? ‘‘যে পুজোগুলো বড় বাজেটের, যাঁরা থিম পুজো করে থাকেন, তাঁদের ক্ষেত্রে টিডিএস কেটে শিল্পীদের পারিশ্রমিক দিতে কোনও অসুবিধা তো হওয়ার কথা নয়।”
এই তথ্য দিতে পুজো কমিটি গুলোর আপত্তি কোথায় তা তো বোঝা গেল না? তাহলে কি তারা TDS না কেটে কর ফাঁকি দিতে সাহায্য করছে? তাহলে কি পুজোর মাধ্যমে "কালো টাকা" সাদা করা হচ্ছে? তা না হলে পুজো কমিটিগুলোর আপত্তি কোথায়? তা না এটা বলা হচ্ছে কেন এটা হল পুজো বন্ধ করার চক্রান্ত?
মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বলতে পারেন কি কটা বিগ বাজেটের পুজো মানুষের ঘরে গিয়ে চাঁদার রসিদ কেটে টাকা তোলে? যারা তোলে তাদের মোট খরচার মধ্যে ওই চাঁদা বাবদ আয় কত শতাংশ? আপনি বলছেন "জনগণের দেওয়া চাঁদায় পুজো হয়, কেউ লাভ করার জন্য পুজো করেন না, তা হলে কিসের আয়কর?" আপনি একটা রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান, সামান্যতম জ্ঞান তো মানুষ আপনার কাছ থেকে আশা করে, আর যদি নাই জেনে থাকেন তাহলে যারা জানে তাদের সাথে কথা বলে কমেন্ট করুন, তাহলে তো লোকে আর হাসে না। পুজো কমিটি গুলোকে আয়কর দেওয়ার কথা আয়কর দপ্তর বলছে না, বলছে তারা যাদের টাকা দেয় তাদের কাছ থেকে নির্ধারিত হারে আয়কর কেটে তা জমা করার কথা। যেমন আমাদের মানে সরকারী কর্মচারী দের ক্ষেত্রে কেন্দ্র / রাজ্য সরকার প্রতি মাসের মাইনের থেকে "উৎস মূলে কর" (TAX DEDUCTED AT SOURCE) কাটে এবং তা আয়কর দপ্তর কে জমা করে, আমরা নিজেরা কোন চালান জমা করে আয়কর দপ্তরকে দিই না। এই সামান্য সাধারণ জ্ঞান একটা রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের থাকবে না, তা ভাবতেই একজন শিক্ষিত মানুষ হিসাবে আমার লজ্জা হয়। আপনি অতি মানুষ তাই আপনার লজ্জা - ঘৃণা কিছুই অবশিষ্ট নেই।
এবার আসি "টাকা দেওয়া"র প্রসঙ্গে - রাজ্য সরকার ক্লাব গুলোকে যে টাকা বিলোয় তাকি আপনার নিজের টাকা? কোন জমিদারী থেকে সেই টাকা আসে? আপনি জানেন না হয়ত, তবে জেনে রাখুন, যারা আপনার অনুপ্রেরণা ছাড়া কোন কিছুই করে না তাদের মাইনেটা পর্যন্ত সাধারণ মানুষের দেওয়া করের টাকা থেকে হয়, আপনার পৈতৃক জমিদারীর টাকা থেকে নয়। গত ২০১১ সাল থেকে ক্লাব গুলোকে ডোল দিচ্ছেন, কটা জাতীয় চ্যাম্পিয়ন তৈরি হয়েছে সেই ক্লাব গুলো থেকে? জুনিয়র মিট গুলোতে বাংলার ঘরে যত পদক এসেছে তার মধ্যে এই ডোল পাওয়া ক্লাব গুলো থেকে কটা এসেছে? এই ডোলের টাকা কাদের টাকা? চুল্লু খেয়ে মরলে কোন টাকা থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়? আপনার জমিদারীর টাকা? আপনি জেনে রাখুন সরকারের প্রতিটি টাকা হল সাধারণ মানুষের টাকা। সেই সাধারণ মানুষ যারা দয়া করে আপনাকে ভোট দিয়েছে বলে আপনি এখন এত বড় বড় কথা বলার দুঃসাহস দেখান। মনে রাখবেন আপনারা PUBLIC SERVANT বাংলা ভাষায় যাকে বলে জনগণের চাকর।
আসলে আপনি ভয় পেয়েছেন। "সততার প্রতীক" ফ্লেক্স টা কেন আর পথে ঘাটে দেখা যায় না তার কারণ সকলেই জানে। কোন কিছু খরচার হিসাব চাইলেই যে আপনার মাথা গরম হয়ে যায় তাও বাংলার জনগণ এখন বুঝে গেছে। সেই ভয় থেকেই আপনি পুজো বন্ধের সেন্টু দিয়ে বাজার গরম করতে চাইছেন।
চালিয়ে যান যতদিন পারেন।

No comments:

Post a Comment