৹৹৹৹৹ মুক্তির স্বপ্নের দেশভেদ নেই ৹৹৹৹
আমার প্রোফাইলে রাইফেল হাতে যে তরুণীর ছবি আছে তার নাম তিতিকা। তিন মাস আগে ৯০ বছর বয়েসে তিনি মারা গেলেন। গ্রীসের ফ্যাসিবাদবিরোধী রেসিস্ট্যান্সে তিনি ১৭ বছর বয়েসে যোগ দেন। গোপন আণ্ডারগ্রাউণ্ডে বসে কবিতায় লেখেন –
‘time has come for women,
to plunge into battle,
to fight bravely,
to think of nothing else,
not mother or house,
not husband or children,
the cause is but one,
liberty or death’
মানুষের মুক্তির স্বপ্ন যারা দেখেন তাদের সবাইকেই বোধহয় নিজের সুখভোগ ছাড়তে হয়। বিবেকানন্দর লেখা পড়লে দেখা যায় উনি যতটা ধর্ম নিয়ে চিন্তিত, তার থেকে এক শো গুণ বেশী চিন্তিত পরাধীন দেশবাসীর কষ্ট নিয়ে, কিভাবে উৎপীড়িত নিম্নবর্গকে মুক্তির দিশা দেখানো যায়, এই চিন্তা তাঁর লেখার ছত্রে ছত্রে।
বিবেকানন্দের জন্ম ১২ই জানুয়ারী, ১৮৬৩ সালে। মৃত্যু ১৯০২ সালে। তাঁর মৃত্যুর ৩২ বছর পর ১৯৩৪এ এই দিনেই ফাঁসি হয় মাস্টারদা সূর্য সেনের, তিনিও মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখে আত্মসুখ বিসর্জন দিয়েছিলেন। বিবেকানন্দ ও মাস্টারদার কাহিনী অল্প বিস্তর সবারই জানা। কিন্তু বিবেকানন্দর মৃত্যুর বছরেই রাশিয়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে যেটা অনেকের জানা নেই। সেই ঘটনাটির কথা লিখলে বোঝা যাবে মানুষের মুক্তির স্বপ্ন কোন বিশেষ দেশে বিশেষ সময়ে বাঁধা থাকে না, এ স্বপ্ন সীমানা পেরিয়ে কালোত্তীর্ণ আন্তর্জাতিক, বিবেকানন্দ থেকে মাস্টারদা – তিতিকা – সূর্যসেন একই সূতোয় বাঁধা, সেখানেই বাঁধা ১৯০২এর রাশিয়ার ঘটনা।
আজকের সকালের পোস্টেই বলেছি আমার জীবনে বিবেকানন্দের অবদান সবকিছুকে পরীক্ষা করে নেয়া, অন্ধ বিশ্বাসে নেতার কথায় ‘লাল সেলাম’, ‘বন্দে মাতরম্’ অথবা ‘ভারতমাতা কী জয়’ কোনটাই না বলা। বিবেক নিজেও গুরুবাদে বিশ্বাসী ছিলেন না, রামকৃষ্ণকেও পরীক্ষা করে তারপর শিষ্যত্ব নিয়েছিলেন। বিবেককে হিন্দুধর্মের প্রবক্তা অথবা কম্যুনিস্ট করে দেওয়ার অনেক অপচেষ্টা হয়, তিনি কোনটাই ছিলেন না। তিনি ছিলেন মানবদরদী এক বৈদিক সাম্যবাদী। বেদের সেই পর্যায়ে বর্ণভেদ, জাতিভেদ ছিল না। মহিলাদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ছিল, স্বামী যাজ্ঞ্যবল্কের সাথে মৈত্রেয়ীর দীর্ঘ তর্কযুদ্ধই সেটা প্রমাণ করে। একবার মধ্যপ্রদেশের একদল গো-রক্ষক স্বামীজির কাছে আসেন তাঁকে নিমন্ত্রণ করতে। তিনি তাদের প্রশ্ন করেন মধ্য প্রদেশে যে দুর্ভিক্ষ হয়েছে সেটার ব্যাপারে ওরা কি করছেন। উত্তরে তারা বলেন ওরা শুধু গোমাতার রক্ষা নিয়ে কাজ করেন। স্বামীজি বলেন, ‘সে তো বুঝতেই পারছি, নয়ত এমন সন্তান কোথা থেকে হবে বলুন ?’
বিবেকানন্দ মার্ক্সের থেকে বয়েসে ৪৫ বছরের ছোট। তাঁর জন্মের আগেই প্যারী কম্যুউনের ঐতিহাসিক বিদ্রোহ হয়ে গিয়েছে, কম্যুনিস্ট ম্যানিফেস্টোও প্রকাশিত। তাঁর মত মননশীল ব্যক্তিত্ব এইসব ঘটনা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না এটা ভাবাই যায় না। কিন্তু তাঁর লেখায় তিনি মার্ক্সবাদে আকর্ষিত হয়েছিলেন এরকম কোন ইঙ্গিত নেই। মার্ক্স বলেছিলেন শিল্পোন্নত ইংলণ্ডে প্রথম বিপ্লব হবে, স্বামীজি বলেন রাশিয়াতে, এবং তাঁর কথাই সত্যি হয়। সুতরাং তিনি যে রাশিয়ার মানুষকে নিয়েও চিন্তা করতেন এটা বোঝা যায়। অর্থাৎ মার্ক্সীয় দর্শনের প্রভাবে না এসেও তিনি মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখেছেন, কোন বাধা হয় নি।
মাস্টারদা সূর্য সেনও সেই অর্থে মার্ক্সবাদী ছিলেন না, কিন্তু পরাধীন দেশবাসীর মুক্তির স্বপ্ন দেখেন। অমানুষিক অত্যাচারে তিনি অচৈতন্য হয়ে পড়বার পর তার সংজ্ঞাহীন দেহকেই ফাঁসিকাঠে ঝোলানো হয়, প্রাণহীন দেহ ছুঁড়ে ফেলা হয় সমুদ্রে।
বিবেকানন্দের মৃত্যুবর্ষে, ১৯০২ সালের ৭ই মার্চ রাশিয়ার ককেশাস অঞ্চলের বাটুম শহরে তিন শো শ্রমিক ধর্মঘট করবার অপরাধে গ্রেপ্তার হলে ৯ই মার্চ এক বিপ্লবীর নেতৃত্বে লাল পতাকা হাতে শ্রমিক মিছিল জেলখানার দিকে এগিয়ে যায় কমরেডদের মুক্তির জন্য। পুলিশের গুলীতে মৃত্যু হয় ১৫ জনের।
১২ই মার্চ ওই শহীদদের সমাধিস্থ করা হয় বৈপ্লবিক মর্যাদায় এবং ওই নেতার লেখা ইস্তাহারে লেখা ছিল –
যারা সত্যের জন্য প্রাণ দিয়েছো তাদের শ্রদ্ধা জানাই,
যে মায়ের স্তন্যে তোমরা পালিত, সেই মায়েদের প্রণাম জানাই।
শহিদের কাঁটার মুকুট যে পড়েছে,
যারা মরণের মুহূর্তেও জীবনের বাণী দিয়ে গিয়েছে,
তাদর স্মৃতি আছে আমাদের সঙ্গে।
তারা আমাদের কানে কানে বলছে –
‘আমাদের উপর অত্যাচারের প্রতিশোধ নাও’।
আকৈশোর মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখা সেই রাশিয়ান বিপ্লবী ১৭ বছর বয়সে ‘সোসেলো’ ছদ্মনামে ‘আইবেরিয়া’ পত্রিকায় একটি কবিতা লেখেন –
শ্রমভারে যার মেরুদণ্ড ভেঙে ভেঙে গেছে,
কাল অবধি যে আতঙ্ক ভরে হাঁটু গেড়েছিলো,
সে আবার উঠবে পর্বতের উঁচুতে,
আশার ডানা মেলে সে উঠবে সবার উপরে।
এই রাশিয়ান যুবকটি ১৯০৫ সালের ৫ই জানুয়ারী কঠিন ঠাণ্ডার মধ্যে সাইবেরিয়ার নির্বাসন থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। এর জন্ম ১৮৬৮ সালের ১৮ই ডিসেম্বর রাশিয়ার তিফলীস প্রদেশের গোরী শহরে এক দরিদ্র চর্মকারের ঘরে। পুরো নাম জোশেফ ভিসারিনোভিচ জুগাশভিলি, যিনি তাঁর ছদ্মনাম স্তালিন নামেই পরিচিত, রাশিয়ান ভাষায় স্তালিন মানে ইস্পাত।
রাশিয়ান বিপ্লবীর গল্পটি আমি শুনি আমার পিতামহের মুখে। তিনি তেভাগায় লড়েছেন, পরে আজীবন কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন। বাল্যকালে খুব ভোরে তিনি আমায় নিয়ে যেতেন তিস্তাপারে, পূবদিকে মুখ করে বলাতেন, - ‘আত্মনাম্ ঋদ্ধি, জগৎ হিতায় চ’, শুধু নিজের বৃদ্ধি ঘটালেই হবে না, জগতের অন্যদের কথাও ভাবতে হবে। যেদিন সঙ্গে মা থাকতেন, গাইতেন –
জলে স্থলে তব আছে আহ্বান, আহ্বান লোকালয়ে,
চিরদিন তুই গাহিবি যে গান, সুখে দুখে লাজে ভয়ে,
ফুল পল্লব নদী নির্ঝর, সুরে সুরে তোর মিলাইবে স্বর,
দিক দিকে তোর স্পন্দিত হবে আলোক অন্ধকার,
নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়, খুলে যাবে এই দ্বার….
তখন বুঝিনি, এখন শেষবেলায় বুঝি, মানুষের মুক্তির স্বপ্ন তিস্তাপারে রবীন্দ্রনাথের সুরে মিলিয়ে দিত তিতিকার গ্রীস, বিবেক আর মাস্টারদার ভারতবর্ষ এবং স্তালিনের রাশিয়াকে। মুক্তির স্বপ্নের কোন ভৌগোলিক সীমা হয় না, সময়ের বাঁধনে সে বাঁধা পড়ে না। ১২ই জানুয়ারীতে আমার এসব কথাই মনে পড়ে বন্ধুরা।
আমার প্রোফাইলে রাইফেল হাতে যে তরুণীর ছবি আছে তার নাম তিতিকা। তিন মাস আগে ৯০ বছর বয়েসে তিনি মারা গেলেন। গ্রীসের ফ্যাসিবাদবিরোধী রেসিস্ট্যান্সে তিনি ১৭ বছর বয়েসে যোগ দেন। গোপন আণ্ডারগ্রাউণ্ডে বসে কবিতায় লেখেন –
‘time has come for women,
to plunge into battle,
to fight bravely,
to think of nothing else,
not mother or house,
not husband or children,
the cause is but one,
liberty or death’
মানুষের মুক্তির স্বপ্ন যারা দেখেন তাদের সবাইকেই বোধহয় নিজের সুখভোগ ছাড়তে হয়। বিবেকানন্দর লেখা পড়লে দেখা যায় উনি যতটা ধর্ম নিয়ে চিন্তিত, তার থেকে এক শো গুণ বেশী চিন্তিত পরাধীন দেশবাসীর কষ্ট নিয়ে, কিভাবে উৎপীড়িত নিম্নবর্গকে মুক্তির দিশা দেখানো যায়, এই চিন্তা তাঁর লেখার ছত্রে ছত্রে।
বিবেকানন্দের জন্ম ১২ই জানুয়ারী, ১৮৬৩ সালে। মৃত্যু ১৯০২ সালে। তাঁর মৃত্যুর ৩২ বছর পর ১৯৩৪এ এই দিনেই ফাঁসি হয় মাস্টারদা সূর্য সেনের, তিনিও মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখে আত্মসুখ বিসর্জন দিয়েছিলেন। বিবেকানন্দ ও মাস্টারদার কাহিনী অল্প বিস্তর সবারই জানা। কিন্তু বিবেকানন্দর মৃত্যুর বছরেই রাশিয়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে যেটা অনেকের জানা নেই। সেই ঘটনাটির কথা লিখলে বোঝা যাবে মানুষের মুক্তির স্বপ্ন কোন বিশেষ দেশে বিশেষ সময়ে বাঁধা থাকে না, এ স্বপ্ন সীমানা পেরিয়ে কালোত্তীর্ণ আন্তর্জাতিক, বিবেকানন্দ থেকে মাস্টারদা – তিতিকা – সূর্যসেন একই সূতোয় বাঁধা, সেখানেই বাঁধা ১৯০২এর রাশিয়ার ঘটনা।
আজকের সকালের পোস্টেই বলেছি আমার জীবনে বিবেকানন্দের অবদান সবকিছুকে পরীক্ষা করে নেয়া, অন্ধ বিশ্বাসে নেতার কথায় ‘লাল সেলাম’, ‘বন্দে মাতরম্’ অথবা ‘ভারতমাতা কী জয়’ কোনটাই না বলা। বিবেক নিজেও গুরুবাদে বিশ্বাসী ছিলেন না, রামকৃষ্ণকেও পরীক্ষা করে তারপর শিষ্যত্ব নিয়েছিলেন। বিবেককে হিন্দুধর্মের প্রবক্তা অথবা কম্যুনিস্ট করে দেওয়ার অনেক অপচেষ্টা হয়, তিনি কোনটাই ছিলেন না। তিনি ছিলেন মানবদরদী এক বৈদিক সাম্যবাদী। বেদের সেই পর্যায়ে বর্ণভেদ, জাতিভেদ ছিল না। মহিলাদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ছিল, স্বামী যাজ্ঞ্যবল্কের সাথে মৈত্রেয়ীর দীর্ঘ তর্কযুদ্ধই সেটা প্রমাণ করে। একবার মধ্যপ্রদেশের একদল গো-রক্ষক স্বামীজির কাছে আসেন তাঁকে নিমন্ত্রণ করতে। তিনি তাদের প্রশ্ন করেন মধ্য প্রদেশে যে দুর্ভিক্ষ হয়েছে সেটার ব্যাপারে ওরা কি করছেন। উত্তরে তারা বলেন ওরা শুধু গোমাতার রক্ষা নিয়ে কাজ করেন। স্বামীজি বলেন, ‘সে তো বুঝতেই পারছি, নয়ত এমন সন্তান কোথা থেকে হবে বলুন ?’
বিবেকানন্দ মার্ক্সের থেকে বয়েসে ৪৫ বছরের ছোট। তাঁর জন্মের আগেই প্যারী কম্যুউনের ঐতিহাসিক বিদ্রোহ হয়ে গিয়েছে, কম্যুনিস্ট ম্যানিফেস্টোও প্রকাশিত। তাঁর মত মননশীল ব্যক্তিত্ব এইসব ঘটনা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না এটা ভাবাই যায় না। কিন্তু তাঁর লেখায় তিনি মার্ক্সবাদে আকর্ষিত হয়েছিলেন এরকম কোন ইঙ্গিত নেই। মার্ক্স বলেছিলেন শিল্পোন্নত ইংলণ্ডে প্রথম বিপ্লব হবে, স্বামীজি বলেন রাশিয়াতে, এবং তাঁর কথাই সত্যি হয়। সুতরাং তিনি যে রাশিয়ার মানুষকে নিয়েও চিন্তা করতেন এটা বোঝা যায়। অর্থাৎ মার্ক্সীয় দর্শনের প্রভাবে না এসেও তিনি মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখেছেন, কোন বাধা হয় নি।
মাস্টারদা সূর্য সেনও সেই অর্থে মার্ক্সবাদী ছিলেন না, কিন্তু পরাধীন দেশবাসীর মুক্তির স্বপ্ন দেখেন। অমানুষিক অত্যাচারে তিনি অচৈতন্য হয়ে পড়বার পর তার সংজ্ঞাহীন দেহকেই ফাঁসিকাঠে ঝোলানো হয়, প্রাণহীন দেহ ছুঁড়ে ফেলা হয় সমুদ্রে।
বিবেকানন্দের মৃত্যুবর্ষে, ১৯০২ সালের ৭ই মার্চ রাশিয়ার ককেশাস অঞ্চলের বাটুম শহরে তিন শো শ্রমিক ধর্মঘট করবার অপরাধে গ্রেপ্তার হলে ৯ই মার্চ এক বিপ্লবীর নেতৃত্বে লাল পতাকা হাতে শ্রমিক মিছিল জেলখানার দিকে এগিয়ে যায় কমরেডদের মুক্তির জন্য। পুলিশের গুলীতে মৃত্যু হয় ১৫ জনের।
১২ই মার্চ ওই শহীদদের সমাধিস্থ করা হয় বৈপ্লবিক মর্যাদায় এবং ওই নেতার লেখা ইস্তাহারে লেখা ছিল –
যারা সত্যের জন্য প্রাণ দিয়েছো তাদের শ্রদ্ধা জানাই,
যে মায়ের স্তন্যে তোমরা পালিত, সেই মায়েদের প্রণাম জানাই।
শহিদের কাঁটার মুকুট যে পড়েছে,
যারা মরণের মুহূর্তেও জীবনের বাণী দিয়ে গিয়েছে,
তাদর স্মৃতি আছে আমাদের সঙ্গে।
তারা আমাদের কানে কানে বলছে –
‘আমাদের উপর অত্যাচারের প্রতিশোধ নাও’।
আকৈশোর মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখা সেই রাশিয়ান বিপ্লবী ১৭ বছর বয়সে ‘সোসেলো’ ছদ্মনামে ‘আইবেরিয়া’ পত্রিকায় একটি কবিতা লেখেন –
শ্রমভারে যার মেরুদণ্ড ভেঙে ভেঙে গেছে,
কাল অবধি যে আতঙ্ক ভরে হাঁটু গেড়েছিলো,
সে আবার উঠবে পর্বতের উঁচুতে,
আশার ডানা মেলে সে উঠবে সবার উপরে।
এই রাশিয়ান যুবকটি ১৯০৫ সালের ৫ই জানুয়ারী কঠিন ঠাণ্ডার মধ্যে সাইবেরিয়ার নির্বাসন থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। এর জন্ম ১৮৬৮ সালের ১৮ই ডিসেম্বর রাশিয়ার তিফলীস প্রদেশের গোরী শহরে এক দরিদ্র চর্মকারের ঘরে। পুরো নাম জোশেফ ভিসারিনোভিচ জুগাশভিলি, যিনি তাঁর ছদ্মনাম স্তালিন নামেই পরিচিত, রাশিয়ান ভাষায় স্তালিন মানে ইস্পাত।
রাশিয়ান বিপ্লবীর গল্পটি আমি শুনি আমার পিতামহের মুখে। তিনি তেভাগায় লড়েছেন, পরে আজীবন কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন। বাল্যকালে খুব ভোরে তিনি আমায় নিয়ে যেতেন তিস্তাপারে, পূবদিকে মুখ করে বলাতেন, - ‘আত্মনাম্ ঋদ্ধি, জগৎ হিতায় চ’, শুধু নিজের বৃদ্ধি ঘটালেই হবে না, জগতের অন্যদের কথাও ভাবতে হবে। যেদিন সঙ্গে মা থাকতেন, গাইতেন –
জলে স্থলে তব আছে আহ্বান, আহ্বান লোকালয়ে,
চিরদিন তুই গাহিবি যে গান, সুখে দুখে লাজে ভয়ে,
ফুল পল্লব নদী নির্ঝর, সুরে সুরে তোর মিলাইবে স্বর,
দিক দিকে তোর স্পন্দিত হবে আলোক অন্ধকার,
নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়, খুলে যাবে এই দ্বার….
তখন বুঝিনি, এখন শেষবেলায় বুঝি, মানুষের মুক্তির স্বপ্ন তিস্তাপারে রবীন্দ্রনাথের সুরে মিলিয়ে দিত তিতিকার গ্রীস, বিবেক আর মাস্টারদার ভারতবর্ষ এবং স্তালিনের রাশিয়াকে। মুক্তির স্বপ্নের কোন ভৌগোলিক সীমা হয় না, সময়ের বাঁধনে সে বাঁধা পড়ে না। ১২ই জানুয়ারীতে আমার এসব কথাই মনে পড়ে বন্ধুরা।
No comments:
Post a Comment