09 January, 2023

ইস্পাত নাকি লোহা অথবা আকর

 

ইস্পাত হওয়া বড় কঠিন
তার আগে তো লোহা হতে হবে
লোহা হওয়ার আগে হতে হবে
আকর
আকরের মধ্যে মিশে থাকে ময়লা
সেই ময়লা কে দূর করে
লোহা হয়
আঘাতে আঘাতে লোহা ইস্পাত হয়।
এবং
শোধনে শোধনে আকর হয় লোহা।
আমি নিজে কি আকর
আমি নিজে কি শুদ্ধ হয়েছি
আমি নিজে কি ইস্পাত হওয়ার যোগ্যতা পেয়েছি?
না এবং না।
এটাই বাস্তব।
তাহলে অন্যকে কেন প্রশ্ন করি?
আমি কেন প্রশ্ন করি?
নিজের প্রশ্ন নিজের কাছে
উত্তর খুঁজে যায়।
শ্রীতোষ ০৩/০১/২০২৩

নিঃশব্দ আমি এবং সফদার

 

সফদার
আমি কোন এক বর্ষ বরণের সন্ধ্যায় চুপ ছিলাম।
তারপর
আমি - আমিই প্রতি বছর তোমাকে স্মরণ করি
বর্ষ বরণের সন্ধ্যায়
নিজের অসহায় চরিত্র কে বিপ্লবী দেখাতে।
যদিও সেদিন ওরা যখন তোমাকে মারছিল
তোমার চারপাশে নাটক দেখতে
১০ টা লোক হয়তো ছিল
সেই ১০ টা লোকের মধ্যে
একজন আমি ও ছিলাম।
মনে রেখো সফদার
আমি চুপ ছিলাম।
আমি সেদিন নাটক দেখছিলাম
তবুও আমি প্রতিবাদে রুখে দাঁড়াইনি
কারণ আমি তো পথচলতি দর্শক।
স্বাধীন ভারতের কোন এক রাস্তায়
শুধুমাত্র
নাটক করার জন্য
"হল্লা বোল" বলার জন্য
রক্ত ঝরেছিল এক মানুষের
এক নাট্য কর্মীর
আমি নিঃশব্দ ছিলাম।
জানো সফদার
আমি না সেইদিন একদম মনে রাখতে পারি নি
মার্টিন নিম্যোলার এর সেই কবিতার একটাও শব্দ
"যখন ওরা প্রথমে কমিউনিস্টদের জন্য এসেছিল,
আমি কোনো কথা বলিনি,
কারণ আমি কমিউনিস্ট নই।"
ইত্যাদি এবং ইত্যাদি
আজ তোমাকে নিয়ে অনেক কথা
অনেক আলোচনা
স্মরণ সভা
আরও অনেক কিছু
কারণ সফদার
সেদিন বুঝতে পারি নি
যেদিন বুঝলাম
ওরা যে আজ আমার ঘরের দরজার বাইরে।
সেই দিন সফদার
তোমাকে বড় মনে পড়ল
তাই এবং
তাই সফদার
স্লোগান দিলাম
সফদার মানে জেগে থাকা জাগানো
ক্ষমা চাইছি সফদার
সেদিন বর্ষ বরণের সন্ধ্যায়
পথ চলতি দর্শকের মাঝে আমিও হয়তো ছিলাম
যেমন থাকি আজ ও কোন অঘটনের শরিক হয়ে
অন্যায়ের দর্শক হয়ে
প্রতিবাদ করতে পারি কি সেই মুহূর্তে?
যাঁরা পারেন
আমি বলি
তাঁরাই মন থেকে বলতে পারেন
"সফদার মানে জেগে থাকা জাগানো"
আমি তো শুধু উচ্চারণ করি
"সফদার মানে জেগে থাকা জাগানো"
শুধুই উচ্চারণ।
শ্রীতোষ ০৪/০১/২০২৩

না বলা কথা

 

আজকে আমি নিশ্চুপ ছিলাম
কারণ হয়তো বা
যে কথা গুলো বলার ছিল
সে কথা গুলো সেই মুহুর্তে বলা যায় না ৷
আজকে আমি নিশ্চুপ ছিলাম
কারণ হয়তো বা
দু এক জন মানুষের ভালোবাসা
সেই কথা গুলোকে চাপা দিয়ে রাখল ৷
শুধু বলে যাই
তোমরা কাফেতে মোড়েতে বসে আছো
আমি তোমাদের ছেড়ে চললাম
তোমরা এ রকমই থাকো
আমি তোমাদের দেখে হাসলাম ৷
শ্রীতোষ ০৫/০১/২০২৩

আর কত বার

 

দেশ টাই যদি না থাকে
তাহলে বিদেশী আগ্রাসন রুখব কি করে
লাভা - লোলেগাঁও এর গাছ কেটে
বানানো হচ্ছে চার লেনের বড় রাস্তা।
একটা গাছ কাটলে নাকি বেশ কিছু গাছ লাগাতে হয়
পরিবেশ বিদ বলে।
একটা বড় গাছ যত টুকু জমি ধরে রাখে
১০০ টা চারা গাছ
তত টুকু জমি ধরে রাখতে পারে কি?
উন্নয়ন অথবা অচ্ছে দিন কি বলে?
যোশী মঠ বিপর্যয়ের দায় কার
কোন সরকারের?
কংগ্রেসের - বিজেপির
নাকি
টুকরে টুকরে গ্যাং এর
উত্তর দেবে না কেউ
একে অন্যকে দেখাবে।
শিলিগুড়ি থেকে রং পো পর্যন্ত রেল চলবে
উন্নয়ন - পর্যটন - সেনা বাহিনীর প্রয়োজনে
প্রয়োজন
অতএব পাহাড় ফাটাই
তৈরি করি সুরঙ্গ
ভুলে যাই ২০১১ র কথা
সিকিম পাহাড়ে।
উন্নয়ন বড় দরকার
প্রকৃতিকে ধবংস করে
যেমন উন্নয়ন হচ্ছে
"রামসা" জলাভুমি কে ধবংস করে
যেমন উন্নয়ন হচ্ছে
মেট্রোর পথ বদল করে।
প্রকৃতি ধবংস হলে ক্ষতি কি তাতে
দেশ বাঁচাতে হলে
(ভ বি স্যতে দেশ থাকবে না চিন্তা নেই তাতে
ভ বি স্য তে তো আমিও থাকব না)
চিন - পাকিস্থান - বাংলাদেশ কে রুখতে হলে বর্তমানে
প্রকৃতি ধবংস করে উন্নয়ন বড় দরকার।
একটা প্রশ্ন শুধু থাকল আমার
আর কত বার
মানুষ নিজের প্রয়োজনে
পৃথিবী ধবংস করে
আগামি প্রজন্ম কে
মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবে বারং বার।
দেশ ভক্ত দের কাছে এ প্রশ্ন রইল আমার।
বি দ্রঃ আশা করি যোশী মঠেও এই মুহূর্তে মাত্র ১ পিস দেশ ভক্তো আছে যে আমার লেখাকে কাউন্টার করবে
জুকু বাবু আমার এই লেখাকে "লল্ক" (ব্লকের সু উচ্চ স্তর ভার্সন) কট্টেই
পাড়ে পড়োয়া কড়ী ণা টাটে

রুটি

 

কখনো কারো হাতে বানানো রুটি
৫ তারা হোটেলের শেফের বানানো খাবার থেকে
বড় ভালো লাগে
বড় ভালো লাগে
ভালোবাসা দিয়ে পাতে তুলে দেওয়া
একটু ফুলকপির তরকারী ৷
আজকে তেমনই এক দিন
বড় ভালো লাগা
বড় ভালোবাসায় বাঁচা
এক সুন্দর দিন ৷
শ্রীতোষ ০৫/০১/২০২২

09 November, 2022

জন্ম দিন (১৮)

 

জন্মের পর কতটা মুহূর্ত পার হলে
১৮ বছর বয়স ছোঁয়া যায়
আমরা গুণতে পারি নি
তবে যেদিন থেকে পড়েছি সেই শব্দগুলো
সেদিন থেকে স্বপ্ন দেখেছি
একদিন সবাই আঠারো হবে।
 
আজ তুমি আঠারো
আমাদের ইচ্ছা
আজ থেকে
যতদিন পৃথিবীর পথে চলবে
তুমি আঠারো বছর বয়স হতে পার।
 
স্পর্ধায় নাও মাথা তুলবার ঝুঁকি
তোমার জীবনের সব স্বপ্ন
বাস্তবের রুক্ষ মাটির আঘাতে
কাঁদতে ভুলে যাক।
তোমার জীবনে আগামী প্রতিদিন
প্রতি মুহূর্তে
আঠারো আসুক নেমে।
 
সুন্দর আছো – সুন্দর থেকো
পৃথিবীকে স্বপ্ন দেখিয়ে রেখো
তোমার মনের সকল চাওয়া
জাগুক পৃথিবীর হৃদয় জুড়ে
তোমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আঠারো জাগুক বিদ্রোহ ভরে।
 
যতদিন বাঁচবে আঠারোকে মনে রাখবে
অন্যায়ের বিরুদ্ধে স্পর্ধায় মাথা তুলবে।
 
আঠারো বছর বয়স না হলে যে
বাঁধন ভাঙ্গা যায় না
বাঁধন না ভাঙ্গতে পারলে
প্রভাত সূর্য আর অস্তগামী সূর্য কে চেনা যায় না
তাই আঠারো বছর বয়স
বাঁধন ভাঙ্গা এক উল্লাস
আঠারো বছর বয়স
এক দায়িত্ব
আঠারো বছর বয়স
একাকী নিভৃতে কাঁদে
আঠারো বছর বয়স স্বপ্ন দেখে।
 
স্বপ্ন না দেখতে পারলে তো
আঠারোয় পা দেওয়া যায় না
স্বপ্ন না দেখতে পারলে
হীরক রাজার দেশে
সিনেমা হয়েই েথেকে যায়।
তুমি আজ আঠারো
তুমি

“উদয়ন পণ্ডিত” হয়ে ওঠ।।
 
শ্রীতোষ
 
এই শব্দ গুলো কোন এক দিনে লেখা হয় নি, ফলে তারিখ দিতে পারলাম না।
 
৭ই নভেম্বর ২০২২ ছিল আমাদের সোনা মা বা Kosturi Sarker এর ১৮ তম জন্মদিবস। দার্জিলিং থাকাকালীনই Surita Banerjee র দাবী তোমাকে কিছু একটা লিখতে হবে। আমি বলি "খেপেছ! সুকান্ত ভট্টাচার্যের পরে ১৮ বছর বয়স নিয়ে বাংলায় কোন লেখা আমি অন্তত পড়ি নি"। এর পরে নেট সার্চ করেও দেখিয়ে দিলাম কিন্তু তিনি অনড়। ফলে গঙ্গা জলে গঙ্গা পুজো করতে নেমে পড়লাম (পাঠক দেখবেন রুদ্র মহম্মদ শহীদুল্লাহ এর শরণ ও নিতে হয়েছে)। তার ফল উপরের শব্দ গুলো। আশা করি, প্ল্যাগারিজম এর দায়ে পড়ব না।

09 September, 2022

এক বণিকের কাহিনী

এই লেখাটি লিখতে বাধ্য হয়েছিলাম আমার বন্ধু তথা শরণম্‌ নাটকের নাট্যকার ও পরিচালক Nandan Bhattacharya র আদেশে। সেই সময় ও আমাকে দিয়ে “ব্রহ্মদত্ত” চরিত্র টি করাবে ভেবেছিল । নন্দনের বক্তব্য ছিল প্রত্যেক শিল্পীকে নিজ চরিত্রের বিশ্লেষণ করতে হবে অর্থাৎ তাকে বোঝাতে হবে কেন ওই চরিত্র নাটকে ওই সংলাপ বলছে বা ওই কাজ করছে। তারই ফসল এই লেখা – দীর্ঘদিন ধরে রাখা ছিল ডায়রির পাতায় – আজ তুলে আনছি আপনাদের সামনে।
 
এক বণিকের কাহিনী
আজকে আমি হাসছি আর কাঁদছি।
বৃজি জ্বলছে আমার চোখের সামনে।
ব্রহ্মদত্ত নাম আমার।
আপনারা কেউ আমাকে চিনবেন না
আমার জন্ম হয়েছিল রাজকুমার সিদ্ধার্থ যখন গৌতম বুদ্ধ হয়ে উঠছেন সেই সময়
বৃজি তে।
অনেক হাজার বছর পরে কেন জানি আমার মনে হল
কেন আমি হাসছি আর কাঁদছি
কিভাবে বৃজি ধবংস হল সেই আনন্দের আর দুঃখের কথা বলি।
একবার নিজের কথা বলি।
বৃজির সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী তথা রাজনৈতিক ক্ষমতার অন্যতম প্রধান পুরুষের
অভিনন্দন
গ্রহণ করুন আপনারা, যারা সময়ের পারে আমার জীবন কাহিনী পাঠ করছেন। হ্যাঁ, আমিই সেই ব্রহ্মদত্ত যে বৃজিকে নাচায় নিজের ইশারায়। আমিই সে যার গোপন অনুগ্রহ প্রত্যাশী বৃজির সামন্তরাজা ও অন্যান্য রাজপুরুষ ! আমার সামনে হ্যাঁ হ্যাঁ হুঁ হুঁ করে অন্য ব্যবসায়ীরা, তারা জানে ব্রহ্মদত্তের চোখ দেখে তার মনের খবর বোঝা শুধু দুষ্কর নয় তা অসম্ভব। আর সাধারণ মানুষ ? তারা ভয় পায় আমাকে – শ্রদ্ধা মিশ্রিত ভয়! এই তো চেয়েছি আমি – রাজা হতে চাইনি, চেয়েছি ক্ষমতা – রাজশক্তিকে পরিচালিত করার, রাজশক্তির উপর, একটা গোটা জনপদের উপর প্রভুত্ব করার অসীম ক্ষমতা! তিলে তিলে প্রস্তত করেছি নিজেকে – করে তুলেছি শৃগালের মত চতুর, হায়নার মত হুঁশিয়ার, চিতাবাঘের মত ক্ষিপ্র আর – আর কালসর্পের মত বিষধর। অথচ জানেন, সাপ না ভীষণ ভীরু, মাটিতে বা জলে আশ্রয় তার, সামান্য পদশব্দে আতঙ্কিত হয় – পদদলিত হওয়ার আতঙ্ক আর তাই আত্মরক্ষার্থে সঞ্চয় করে রাখে তীব্র বিষ! সামান্য বিপদের সম্ভাবনায় সেই বিষ সে ছড়িয়ে দেয় – ফল নিশ্চিত মৃত্যু। জানতে ইচ্ছে করছে কিভাবে তৈরি হল এই ব্রহ্মদত্ত ? চলুন ফিরে যাই ---
আমার বাবা শঙ্খ দত্ত ছিলেন লিচ্ছবির এক ব্যবসায়ী
ব্যবসায়ীদের শহরে শহরে বান্ধবী থাকে আমার বাবা তা মানতেন না
তিনি এক অপরূপার প্রেমে পাগল হলেন। মাগধী তাঁর পরিচয় নাম ব্রাহ্মণী।
আমরা দুই ভাই এক বোন। দাদার নাম ছিল রুদ্রদত্ত আর বোনের নাম লক্ষ্মী দীপিকা।
সেই সময় ১৬ শ মহাজনপদের সময়, যার মধ্যে ১৪ মহাজনপদে রাজার শাসন ছিল এবং লিচ্ছবি (বৃজি) এবং মল্ল (মালব) ছিল সকলের চেয়ে অন্যরকম।
কেন বলুন তো ? সেখানে অনেক মানুষ কে নিয়ে গড়ে ওঠা এক গণ পরিষদ ছিল। অবশ্যই সে গণ পরিষদে স্থান পেতেন অর্থবান মানুষ। গণ পরিষদ যা বলত সেই অনুযায়ী বৃজি এবং মল্ল (মালব) পরিচালিত হত। সে সময় সিদ্ধার্থের সময়।
এবার বলি, বাবা খুব একটা বড় ব্যবসায়ী না হলেও, বুদ্ধিমান ছিলেন এবং নিজের দেশের অনুগত ছিলেন সেই জন্যই অন্য রাজ্যের সাথে ব্যবসা বাড়াতে গণমুখ্য চেতক এবং গণ পরিষদের সদস্যদের কিছু অংশ বাবার উপর নির্ভরশীল ছিলেন এবং বাবা তাঁদের বিশ্বাসের মর্যাদা পালন করে চলেছিলেন। আসলে আমার ঠাকুরদা – দাদামশাই সকলেই ব্যবসায়ী ছিলেন তাই তাঁদের শিক্ষায় (বিশেষত তাঁদের ব্যর্থতায়) শিক্ষিত হয়েছিলেন আমার বাবা।বাবার কাছেই শুনেছি ঠাকুরদা – দাদা মশাই ব্যবসায়ী হলেও তাঁদের ব্যবসা রাজ্যের সীমানা পার করতে পারে নি। বাবা সেই সীমানা পার করে মগধ এবং মল্ল (মালব) রাজ্যে নিজের ব্যবসা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই বাবার বিরোধী যারা ছিলেন তারা খুব সহজে বাবার সাফল্য কে মেনে নিতে পারেন নি।
ক্রমশঃ
বিঃ দ্রঃ ইতিহাস অনুসরণ করা এক কাল্পনিক কাহিনী, চরিত্র গল্পকার (শ্রীতোষ) নিজে সৃষ্টি করেছে (যদিও দু একটি চরিত্রের নামের সাথে ঐতিহাসিক নাম মিলে যাবে) গল্পের প্রয়োজন মেনে। বৃজি - মগধের যুদ্ধ এক ঐতিহাসিক বিষয়। বৃজির পরাজয়ের পিছনে যে কাহিনীর আশ্রয় নেওয়া হয়েছে তাও বিভিন্ন রেফারেন্স থেকে পাওয়া (সঠিক সময়ে তার উল্লেখ থাকবে)