এই লেখাটি লিখতে বাধ্য হয়েছিলাম আমার বন্ধু তথা শরণম্ নাটকের নাট্যকার ও পরিচালক Nandan Bhattacharya র আদেশে। সেই সময় ও আমাকে দিয়ে “ব্রহ্মদত্ত” চরিত্র টি করাবে ভেবেছিল । নন্দনের বক্তব্য ছিল প্রত্যেক শিল্পীকে নিজ চরিত্রের বিশ্লেষণ করতে হবে অর্থাৎ তাকে বোঝাতে হবে কেন ওই চরিত্র নাটকে ওই সংলাপ বলছে বা ওই কাজ করছে। তারই ফসল এই লেখা – দীর্ঘদিন ধরে রাখা ছিল ডায়রির পাতায় – আজ তুলে আনছি আপনাদের সামনে।
এক বণিকের কাহিনী
আজকে আমি হাসছি আর কাঁদছি।
ব্রহ্মদত্ত নাম আমার।
আপনারা কেউ আমাকে চিনবেন না
আমার জন্ম হয়েছিল রাজকুমার সিদ্ধার্থ যখন গৌতম বুদ্ধ হয়ে উঠছেন সেই সময়
বৃজি তে।
অনেক হাজার বছর পরে কেন জানি আমার মনে হল
কেন আমি হাসছি আর কাঁদছি
কিভাবে বৃজি ধবংস হল সেই আনন্দের আর দুঃখের কথা বলি।
একবার নিজের কথা বলি।
বৃজির সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী তথা রাজনৈতিক ক্ষমতার অন্যতম প্রধান পুরুষের
অভিনন্দন
গ্রহণ করুন আপনারা, যারা সময়ের পারে আমার জীবন কাহিনী পাঠ করছেন। হ্যাঁ, আমিই সেই ব্রহ্মদত্ত যে বৃজিকে নাচায় নিজের ইশারায়। আমিই সে যার গোপন অনুগ্রহ প্রত্যাশী বৃজির সামন্তরাজা ও অন্যান্য রাজপুরুষ ! আমার সামনে হ্যাঁ হ্যাঁ হুঁ হুঁ করে অন্য ব্যবসায়ীরা, তারা জানে ব্রহ্মদত্তের চোখ দেখে তার মনের খবর বোঝা শুধু দুষ্কর নয় তা অসম্ভব। আর সাধারণ মানুষ ? তারা ভয় পায় আমাকে – শ্রদ্ধা মিশ্রিত ভয়! এই তো চেয়েছি আমি – রাজা হতে চাইনি, চেয়েছি ক্ষমতা – রাজশক্তিকে পরিচালিত করার, রাজশক্তির উপর, একটা গোটা জনপদের উপর প্রভুত্ব করার অসীম ক্ষমতা! তিলে তিলে প্রস্তত করেছি নিজেকে – করে তুলেছি শৃগালের মত চতুর, হায়নার মত হুঁশিয়ার, চিতাবাঘের মত ক্ষিপ্র আর – আর কালসর্পের মত বিষধর। অথচ জানেন, সাপ না ভীষণ ভীরু, মাটিতে বা জলে আশ্রয় তার, সামান্য পদশব্দে আতঙ্কিত হয় – পদদলিত হওয়ার আতঙ্ক আর তাই আত্মরক্ষার্থে সঞ্চয় করে রাখে তীব্র বিষ! সামান্য বিপদের সম্ভাবনায় সেই বিষ সে ছড়িয়ে দেয় – ফল নিশ্চিত মৃত্যু। জানতে ইচ্ছে করছে কিভাবে তৈরি হল এই ব্রহ্মদত্ত ? চলুন ফিরে যাই ---আমার বাবা শঙ্খ দত্ত ছিলেন লিচ্ছবির এক ব্যবসায়ী
ব্যবসায়ীদের শহরে শহরে বান্ধবী থাকে আমার বাবা তা মানতেন না
তিনি এক অপরূপার প্রেমে পাগল হলেন। মাগধী তাঁর পরিচয় নাম ব্রাহ্মণী।
আমরা দুই ভাই এক বোন। দাদার নাম ছিল রুদ্রদত্ত আর বোনের নাম লক্ষ্মী দীপিকা।
সেই সময় ১৬ শ মহাজনপদের সময়, যার মধ্যে ১৪ মহাজনপদে রাজার শাসন ছিল এবং লিচ্ছবি (বৃজি) এবং মল্ল (মালব) ছিল সকলের চেয়ে অন্যরকম।
কেন বলুন তো ? সেখানে অনেক মানুষ কে নিয়ে গড়ে ওঠা এক গণ পরিষদ ছিল। অবশ্যই সে গণ পরিষদে স্থান পেতেন অর্থবান মানুষ। গণ পরিষদ যা বলত সেই অনুযায়ী বৃজি এবং মল্ল (মালব) পরিচালিত হত। সে সময় সিদ্ধার্থের সময়।
এবার বলি, বাবা খুব একটা বড় ব্যবসায়ী না হলেও, বুদ্ধিমান ছিলেন এবং নিজের দেশের অনুগত ছিলেন সেই জন্যই অন্য রাজ্যের সাথে ব্যবসা বাড়াতে গণমুখ্য চেতক এবং গণ পরিষদের সদস্যদের কিছু অংশ বাবার উপর নির্ভরশীল ছিলেন এবং বাবা তাঁদের বিশ্বাসের মর্যাদা পালন করে চলেছিলেন। আসলে আমার ঠাকুরদা – দাদামশাই সকলেই ব্যবসায়ী ছিলেন তাই তাঁদের শিক্ষায় (বিশেষত তাঁদের ব্যর্থতায়) শিক্ষিত হয়েছিলেন আমার বাবা।বাবার কাছেই শুনেছি ঠাকুরদা – দাদা মশাই ব্যবসায়ী হলেও তাঁদের ব্যবসা রাজ্যের সীমানা পার করতে পারে নি। বাবা সেই সীমানা পার করে মগধ এবং মল্ল (মালব) রাজ্যে নিজের ব্যবসা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই বাবার বিরোধী যারা ছিলেন তারা খুব সহজে বাবার সাফল্য কে মেনে নিতে পারেন নি।
ক্রমশঃ
বিঃ দ্রঃ ইতিহাস অনুসরণ করা এক কাল্পনিক কাহিনী, চরিত্র গল্পকার (শ্রীতোষ) নিজে সৃষ্টি করেছে (যদিও দু একটি চরিত্রের নামের সাথে ঐতিহাসিক নাম মিলে যাবে) গল্পের প্রয়োজন মেনে। বৃজি - মগধের যুদ্ধ এক ঐতিহাসিক বিষয়। বৃজির পরাজয়ের পিছনে যে কাহিনীর আশ্রয় নেওয়া হয়েছে তাও বিভিন্ন রেফারেন্স থেকে পাওয়া (সঠিক সময়ে তার উল্লেখ থাকবে)
No comments:
Post a Comment