09 March, 2019

পড়শি

ভারত ও পাকিস্থান - পাশাপাশি দুটো দেশ। পড়শি দেশ। কথায় বলে পড়শি হল আরশি - এক পড়শির চোখের আয়নায় অন্য পড়শি নিজেকে দেখতে পায়! ভারত ও পাকিস্থান দুই পড়শি -অন্যের চোখে শুধু যুদ্ধই দেখতে পায়!

অথচ কি মজার কথা দুটো দেশেই কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হল দারিদ্র্য। দুটো দেশেই সম্পদের বেশীর ভাগ অংশ পুঞ্জীভূত ১ - ২% মানুষের হাতে (ভারতের ক্ষেত্রে ১% এর হাতে ৭৭% বাকি ২৭% ভাগ করে নিয়েছে ৯৯% মানুষ)! এই ৯৯% এর মধ্যেই আছে এমন মানুষ জন যারা রিকশা চালান, কুলি গিরি করেন, লোকের বাড়িতে বাড়িতে বাসন মেজে বেড়ান, ভিক্ষা করেন এবং এঁরাই সংখ্যা গরিষ্ঠ। 

এ ব্যাধি আজকের নয়, এ ব্যাধি স্বাধীনতার আগের এবং স্বাধীনতার পরে ৭২ বছর হয়ে গেছে পার, ব্যাধি একই থেকে গেছে। শাসকের পতাকার রঙ বদলেছে, শাসকের চরিত্র বদলায় নি। রাস্তার পাশে আজও না খেতে পাওয়া মানুষের ভিড়, ফুটপাতে গৃহহীন, পরিচয়হীন তেলচিটচিটে মানুষের নিঃসঙ্গ সহবাস। মাসে মাসে শত শত কৃষক আত্মহত্যার সংবাদ। আজও এ দেশে ৮ বছরের শিশু কন্যা ধর্ষিতা হয়। আজও এ দেশে খাপ পঞ্চায়েত বসে। উল্টো পারের দেশে ছবিটা আলাদা এমন মনে করার কোন কারণ নেই। তাদের অবস্থা বরং আরও খারাপ।

তা এই মানুষ গুলো যুদ্ধ চায় নাকি - সীমান্ত বস্তুটা খায় না মাথায় দেয় সেটা এঁদের সকলে জানেন? এঁরা তো প্রতিদিন যুদ্ধ করছেন - যুদ্ধ করছেন প্রতিদিনের খাবার জোগাড়ের জন্য, মাথার উপর একটু ছাউনির জন্য, নিজের অথবা নিজের মেয়ের আব্রু রক্ষার জন্য! এর উপরেও এঁরা যদি যুদ্ধ চান তাহলে কথাটা যেন বুলেটের মতই কানে লাগে!

আসলে যুদ্ধ টা দরকার রাজনীতিবিদদের জন্য, বানিয়াদের জন্য - যুদ্ধে একমাত্র লাভ তাদের! বিগত দুটো বিশ্ব যুদ্ধের ইতিহাস যদি দেখি, তাতে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে প্রায় ২৩,০০,০০০ সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং ২ য় বিশ্ব যুদ্ধে সেই সংখ্যা হল ৫,৮৫,০০,০০০। এঁদের বেশীর ভাগ অংশ প্রাণ হারিয়েছেন খাবারের অভাব ও রোগে। এর মধ্যে পরমাণু বোমায় আক্রান্ত যে সব মা য়েরা অসুস্থ শিশুর জন্ম দিয়েছেন এবং পরে তারা মারা গেছে - সেই সংখ্যা ধরা নেই। ২য় বিশ্ব যুদ্ধের সময় অবিভক্ত বাংলায় যে মন্বন্তর দেখা দিয়েছিল তার জন্য দায়ী কে? সে তো মানুষের তৈরি করা খাদ্যাভাব ব্রিটিশ আর দেশি বানিয়ারা দায়ী তার জন্য। লক্ষ লক্ষ টন খাদ্য মজুত করে রাখা হয়েছিল গুদামে, আর কুকুর বেড়ালের মত মরেছিল সাধারণ মানুষ। তাঁরা সবাই যুদ্ধ চেয়েছিলেন! আজ ইজরায়েল, সিরিয়া, ইরাকে যে বাচ্চা গুলো মরছে, যে সব মানুষ গুলো কে আই এস জঙ্গিরা ব্যবহার করছে মানব ঢাল হিসাবে - তারা যুদ্ধ চান নাকি? ওখানে তো হিন্দু - মুসলমান নেই ওখানে হয় এক মুসলমান অন্য মুসলমান কে মারছে অথবা ইহুদী মারছে মুসলমানকে! সবার হাতে অস্ত্র - সবাই সবাই কে মারছে।

মজার কথা, এই অস্ত্র কিন্ত আসছে নির্দিষ্ট কটি জায়গা থেকে। নির্দিষ্ট কিছু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। একজন বিক্রি করে রাফাল তো অন্য জন সুখোই অন্য কেউ আবার এফ ১৬! এই যুদ্ধ যতদিন থাকবে অস্ত্র ব্যবসা ততদিন চলবে। সরফরোস ছবির একটি ডায়লগ মনে পড়ে যায় "কিসিকো হাত মে চিলম থামা দো ইয়া বন্দুক, গোলি উসকো চাহিয়েই চাহিয়ে"।

তার মানে, দুটি দেশেই অপুষ্টি থাক, বেকারি থাক, কৃষকের আত্মহত্যা থাক, মেয়েদের উপর অত্যাচার বাড়ুক, সীমান্তে সন্ত্রাস বাদ চলবে এবং যুদ্ধ টাও চলবে কারণ এই সব কিছু থেকে নজর ঘোরানোর জন্য যুদ্ধ টা বড় দরকার।

No comments:

Post a Comment