18 October, 2016

তোর সিপাহী বাবা।

হোয়াটস এ্যপে পাওয়া
অসাধারন লাগল
এক সৈনিকের চিঠি
সারারাত সীমান্ত পাহারার শেষে ক্যাম্পে ফিরেই তোর চিঠিটা হাতে পেলাম। কথা দিয়েছিলাম, পূজোর সময় বাড়ী যাব। বুঝতেই পারছিস যে তা হবার নয়।আমরা এখন যুদ্ধের মুখোমুখি। সারা রাত সীমান্ত জুড়ে গুলিগোলা চলেছে। জানি না, আমার ছোঁড়া গুলিতে ও পাড়ের কোনো সৈনিকের মেয়ে পিতৃহারা হয়েছে কিনা ? সেও তো আমার মতই দাবার বোড়ে ।
তুই লিখেছিস যে, তোর বাবা সীমান্ত প্রহরার জওয়ান শুনে সবাই তোকে প্রশ্ন করে ‘ যুদ্ধ কবে শুরু হবে’। তুই বাড়িতে এসে কাঁদিস । তুই লিখেছিস যে ফেসবুক আর হোয়াটস্যাপ জুড়ে অনেক মানুষ যুদ্ধের জন্য উদগ্রীব । আসলে ওদের কারো বাড়ীর লোকই সৈনিক নয়। ওদের কারো বাড়ীতেই সেনা কনভয় নিয়ে প্রিয়জনের মৃতদেহ আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। ওদের কাছে যুদ্ধ মানে টিভি আর সংবাদপত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে শ্ত্রু সেনার মৃত্যু নিয়ে উল্লাস। প্রতিদিনের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা আর আমোদ প্রমোদকে সঙ্গী করেই একঘেয়ে জীবনে কিছু উত্তেজনা। পাহাড়ী পাইনের পাতা ছুঁয়ে যাওয়া গুলি কখন যে কাকে অমরত্ত্ব দান করবে তা আমরা নিজেরাও জানি না। না, যারা যুদ্ধের জন্য উদগ্রীব, সেই নেতা-মন্ত্রী বা অন্ধ দেশভক্ত মানুষ কাউকেই সারা রাত ধরে অসহ্য ঠান্ডায় মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। ওপরওয়ালার অশ্রাব্য কুকথা আর ওপাড়ের গুলির মাঝে এপারের মাইনে করা সৈনিকরা কেবল ‘জয়হিন্দ’ আর ‘ভারতমাতা কি জয়’ বলে যুদ্ধ করে যাবে, এটাই হোলো দেশপ্রেম ।
জানিস, বেশ কিছুদিন আগে উড়ি ক্যাম্পে যেতে হয়েছিল । পাঁচ পাঁচবার সিক্যুরিটি চেকিং এর পর ঢুকতে পেরেছিলাম। সেখানে কি করে যে এই ঘটনা ঘটল কে জানে । আমার সহকর্মীরা সবাই বিস্মিত । হয়ত কোনো একদিন জানা যাবে আমার আমার সৈনিক ভাইদের মৃত্যু রহস্য।
শুনলাম, তোর মা আর ঠাকুমা, ঠাকুরের কাছে মানত করেছে যাতে যুদ্ধ না হয়। তুইও লিখেছিস যে তুই তোর বাবাকে কফিন বন্দী এক অমর সেনার লাশ হিসেবে দেখতে চাসনা। আমার এক সহযোদ্ধা বলে যে শত্রু গুলিতে মারা গেলে তবেই নাকি অমর হওয়া যায় । প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ত্রাণ বা উদ্ধার কাজে গিয়ে মৃত্যু হলে অমরত্ত্ব লাভ হয়না। আমরা হাসিনি। এতাই সত্য। তবুও বলি, আমরা কেউই অমরত্ত্বের প্রত্যাশী নয়। আমাদেরও খুব ইচ্ছে হয় বেঁচে থাকতে।যতদিন আমার এই দেশে ভোট যুদ্ধ থাকবে, ততদিন এভাবেই নকল যুদ্ধের বলি হব আমরা । আমাদের মৃতদেহ নিয়ে চলবে দেশপ্রেমের মহড়া।
কবে কিভাবে বাড়ী যাব জানি না। যাই হোক না কেন বড় হয়েছিস। মা আর ঠাকুমার দায়িত্ব তোর উপর। আদর নিস।

তোর সিপাহী বাবা।
(সংগৃহীত)

No comments:

Post a Comment