05 June, 2020

শ্রমিক

তোমরা আমায় দেখতে পারছ
আমি তোমাদের সেই সন্তান
আমার মাটিতে জুটছিল না
তোমাদের মুখে তুলে দেওয়ার খাবার।
আমি তো তোমাদের সেই সন্তান।

প্রতিদিন আমি বাড়ি থেকে বার হতাম মা
তোমার নাড়ি ছেঁড়া ধন
যদি একটু কাজ পাই
বাবার বয়স হয়েছে
তার জন্য রাখি নি
কোন বৃদ্ধাশ্রম
আমি তোমাদের স্কুল পালানো সন্তান।
১০০ দিনের কাজে দিতে চেয়েছিলাম শ্রম

তোমাদের নাড়ি ছেঁড়া ধন
গিয়েছিল করতে অর্থ উপার্জন
রাজ্যের বাইরে
তাই তার নাম দিয়েছে সবাই
পরিযায়ী শ্রমিক
আমি বলি আমাদের নাম
“পরি  শ্র  মার্জন”


আমি আজ ভালো আছি বাবা
মা আমি বড় ভালো আছি
আমরা যারা পরিশ্রম করি
যাঁদের হাতে তৈরি হয়
পৃথিবীর বেঁচে থাকার সাধন
আমরাই হলাম
সমাজের দূরের স্বজন।
আমরাই রাস্তায় মরি
কুমির কান্না কাঁদে মন্ত্রী গণ।

মা আমার দেহ দেখে চোখের জল ফেল না
বাবা আমার মৃত দেহের সাথে তোমাকেই তো তুলে দিয়েছিল ট্র্যাকে
আমার ভাইয়ের শরীরে ছড়িয়েছিল কীট নাশক
আমার রাষ্ট্র জন।

আমি আজ গলিত শরীর নিয়ে
কীটনাশক মাখা মুখে
অজস্র মাইল পথ হাঁটা ছিন্ন পায়ে
দেখছি
আমিই ছোটবেলার আমি হয়ে
তোমার মৃত শরীরের কাপড় টেনে
তোমাকে জাগাতে চেষ্টা করছি
মা।

আমাকে চিনতে পারছ তোমরা
শাসক আমাকে দেখেছে পদানত
সেই পদানত শরীর কে মেরেছে সে
আমাকে মৃত ভেবে সে আমার দুঃখে
কুমীরের কান্না কেঁদেছে

শাসক ভুলে গেছে
জীবিত এক শরীর কে
বদ্ধ রাখা যায়
কিন্তু
যখন রক্তে ভেজা শুকনো রুটি পড়ে থাকে রেল লাইনে
যখন একটা ছোট্ট শরীর বাড়ি পৌঁছানোর শেষ চেষ্টায়
শেষ নিঃশ্বাস ফেলে
তখন ওই শরীর টা রুটি হাতে ইতিহাস হয়ে যায়

তখন স্বপ্ন জাগে
স্বপ্ন না দেখলে
বিপ্লব জাগে না
বিপ্লব না জাগলে
স্বপ্ন দেখা যায় না

তোমাদের ঘরে ফিরে এসেছে তোমাদের সন্তান
কফিন বন্দী হয়ে
ওই ছোট্ট শরীর হয়ে
তোমরা আমায় চিনতে পারছ
আমি তো সেই ছোট্ট শরীর হয়ে
দাঁড়িয়ে আছি তোমাদের সামনে

আমি তো তোমাদের সন্তান
শাসকের কাছে পরিযায়ী শ্রমিক যার নাম

জানি তোমরাই আছো আমার সাথে
আমরা যারা রাস্তায় মৃত – অগণিত।

আমাদের মৃত্যু সার্থক হোক তোমাদের
চোখের আগুনে
যে আগুন পুড়িয়ে ছাই করে দেবে
সেই শাসককে
যে শাসক আমাদের কফিন
আর অর্থ বয়ে নিয়ে এল
আমাদের উঠোনে

শাসকের ছাই উড়ে যাবে
তোমাদের ঝ্যাঁটার ঝড়ে
তারপর
তোমরা আমাদের জন্য আবার
ভাত রাঁধবে
১০০ অথবা ১০০০ পথ পাড়ি দিয়ে
তোমাদের খোকা বাড়ি ফিরেছে।
বাড়ি ফিরেছে খোকা।

No comments:

Post a Comment