পরবাসী জীবনের কথকতা ৪র্থ পর্ব।
আগের লেখা শেষ করেছিলাম এই বলে যে দেরী করে বার হওয়া সত্ত্বেও আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এম জি মার্গে পৌঁছাতে পেরেছিলাম। এ ও জীবনের এক অত্যাশ্চর্য অভিজ্ঞতা। জীবনে এর আগে এমন অভিজ্ঞতা আর হয় নি। বাড়ি থেকে বার হয়ে রাস্তায় উঠে আমরা শেয়ার ট্যাক্সির জন্য না দাঁড়িয়ে হাঁটা শুরু করেছিলাম যাতে যতটা সম্ভব বেশী পথ এগিয়ে থাকা যায়। একটু চলার পরেই পিছনে একটা গাড়ির শব্দ। ঘাড় ঘুরিয়ে দুজনেই হতাশ,
একটি প্রাইভেট গাড়ি। আবার চলা শুরু কিন্ত তা মাত্রই কয়েক মুহূর্তের জন্য। আমাদের অবাক করে দিয়ে গাড়িটা আমাদের পাশেই থামল এবং ভিতরের সৌম্য দর্শন বয়স্ক মানুষ টি জিজ্ঞাসা করলেন “আমরা কোথায় যাচ্ছি” , এম জি মার্গের কথা শুনেই নিজে দরজা খুলে বললেন “উঠে আসুন”। অবাক হয়েছিলাম ঠিকই কিন্ত তখন পৌঁছানোর তাড়া থাকায় উঠে বসতেও দ্বিধা বোধ করি নি। গাড়ি চলতে থাকল – চলতে থাকল জীবনের কথকতা। কথায় কথায় জানতে পারলাম ওনার নাম এম কে প্রধান,
শিক্ষক ছিলেন এবং কোন একটি দপ্তরের ডিরেক্টর পদ থেকে অবসর নিয়ে এখন এক্সটেনশনে আছেন। আমার জিজ্ঞাসু চোখের দৃষ্টি দেখে নিজেই বললেন, নাতি – নাতনিদের দেখার, ওদের সাথে খেলা করার এক্সটেনশন। বলেই খোলা কণ্ঠের হাসি। আমার পরিচয় এবং বর্তমান নিবাস স্থল শুনে বললেন উনি আমার প্রতিবেশী এবং মিস্টার সিলালের সাথে মাঝে মাঝে তাস খেলতে আসেন। এখন চলেছেন নাতিকে স্কুল থেকে আনতে। আমাদের নামিয়ে দিয়ে উনি চলে গেলেন ওনার পথে। সত্যিই ভাবি জীবনে হয়ত কিছু পাই নি কিন্ত তার চেয়ে পেয়েছি অনেক
– অনেক বেশী। তথা কথিত কিছু আত্মীয়ের নোংরা মনের চেয়ে এই সব মানুষের ভালোবাসা জীবনকে আরও ভালোভাবে গড়ে তুলতে শেখায় এবং এ শিক্ষা পাওয়ার জন্য আমি কৃতজ্ঞ এই বদলীর চাকরীর সাথে।
No comments:
Post a Comment