11 September, 2018

পরবাসী জীবনের কথকতা ৩য় পর্ব।


পরবাসী জীবনের কথকতা ৩য় পর্ব

যারা আগের পর্ব দুটি পড়েছেন তারা জানেন আমি এবং সুরিতা গ্যাংটকে এসে থাকার জন্য বাড়ির খোঁজ করছিলাম এই সময়ে একটি বিউটি পার্লার থেকেম্যাডাম সিলাল  নামক একজনের ফোন নাম্বার পাই এবং তাঁদের বাড়িতে গিয়ে দেখা করি আমাদের আলাপ হয় একজন সাধারণ চেহারার মধ্য বয়স্ক মানুষের সাথে সেই মানুষটি প্রথম আধ ঘণ্টা ধরে আমাদের সম্পর্কে খোঁজ নিলেন এবং বিনয়ের সাথে জানালেন যে তিনি সেই মুহূর্তে ঘর দেখাতে পারবেন না কারণ আগের ভাড়াটে ঘরে তালা লাগিয়ে চলে গেছে এবং বিকেল চারটের আগে সে আসবে না কথা বলতে বলতেই আমার চোখ চলে যাচ্ছিল ভদ্রলোকের পিছনে বুক র‍্যাকে রাখা কিছু ফাইলের দিকে সে নিয়ে প্রশ্ন করতেই উনি নিজের পরিচয় দিলেন, উনি শ্রী সন্তোষ কুমার সিলাল, আই এ এস, ফুড সেক্রেটারি অফ সিকিম গভর্নমেন্ট আমরা আর নেই তবুও ভদ্রতার খাতিরে কথা চালাতেই হল, ঘরের ভাড়া কত জানতে চাইলে উনি বললেন, আগে যিনি ছিলেন তিনি ১০ হাজার দিতেন, আমাকে ১১ হাজার দিলেই হবে সিকিউরিটি মানি নিয়েও কিছু বলার নেই আমি সঙ্গে সঙ্গে রাজি উনি বললেন না, বিকেলে ঘর দেখে তবে টাকা দিলেই চলবে প্রায় ৫ টা নাগাদ ফোন আমরা দুজনে টাকা নিয়ে চলে গেলাম দুটো বড় বেডরুম, একটা ডাইনিং কাম ড্রয়িং রুম, কিচেন, অ্যাটাচড বাথ সহ একটি ব্যালকনি সঙ্গে ফ্রি একটি ডবল বেড খাট (গদি সহ) একটি কাঠের টেবিল  এবং তিন টি চেয়ার বাথরুমে গিজার আছে এছাড়াও উনি বললেন, আমাদের গ্যাসের কানেকশন নিয়ে কোন সমস্যা হবে না এর সাথে ওনার অনুযোগ আমরা ওনার বাড়িতে খাচ্ছি না কেন? কথা দিলাম পরের দিন ওনার বাড়িতে খাব ১১ হাজার টাকা সহ সামান্য কিছু টাকা সিকিউরিটি মানি হিসাবে জমা দিলাম পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে গ্যাস সংক্রান্ত কাগজ গুলো বার করতে গিয়ে মাথায় হাত সব কিছু পাচ্ছি, ওগুলো নেই সিলাল স্যারকে ফোন করে জানালাম, উনি বললেন আমি দেখে নিচ্ছি তারপর আবার বললেন যে ওনার দিক থেকেও একটু ভুল হয়েছে আসলে ওনার কাছে ১৫ হাজার টাকার অফার এসেছিল কিন্ত উনি নিজের মুখেই ১১ হাজার বলেছেন, বাড়িতে তা নিয়ে কিছু আলোচনা হয়েছে উনি এও বললেন যে যদি আমি ১১ হাজারের উপরে না উঠতে চাই, তাহলেও ওনার কিছু বলার নেই কারণ ১১ হাজার টাকার কথা উনিই বলেছেন যাই হোক, এত সিনিয়র একজন আই এ এস বলছেন, তাই আমি ওনাকে বললাম যে আমি আর ১ হাজার টাকা বেশী দিতে পারব কিন্ত তার বেশী নয় তাতে উনিও বললেন, যে উনি ঘরে একটা আয়না লাগিয়ে দেবেন এরপর ফোন করলাম বিমান কে কিন্ত সেদিন শনিবার, ও বেরিয়ে পড়েছে তবে ও আশা দিল, সোমবার অবশ্যই যাবে  তারপর সুরিতার কথায় গড়িয়া সাউথ এন্ড গ্যাসের অফিসে ফোন করলাম আমার সমস্যা শুনে ওরা আমার ই মেল আই ডি চাইল এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে ডুপ্লিকেট ট্র্যান্সফার ভাউচার পাঠিয়ে দিল সত্যিই এরা এখন এত কাস্টমার ফ্রেন্ডলি তা ভাবাই যায় না অবশ্য আমার গ্যাসের কানেকশন ১৯৯৭ সালের, যখন বোলপুরে প্রথম ইনডেন এল (যার জন্য আমি চির ঋণী বাবু দা অর্থাৎ পতিত পাবন দের কাছে) সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত কোনদিন ইনডেন নিয়ে আমার কোন সমস্যা হয় নি এমনকি আজ আমার ঘরে একটি উনুন সহ দুটি সিলিন্ডার এসে গেছে, গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে রান্না চলছে কোন রকম অসুবিধে ছাড়াই যাই হোক, দুটি ধাপ লাফিয়ে পার হয়ে এসেছি প্রথমটি রবিবার বিকালের সেদিন সকাল থেকেই কিছু কেনাকাটার জন্য দু – একবার বার হতে হয়েছিল এবং বিকালেও বার হয়েছিলাম যখন হোটেলে ঢুকছি, ভীষণ ক্লান্ত, মনে হচ্ছে একটু বিশ্রাম নেই একটু ফ্রেস হচ্ছি ফোন বাজল দেখি ওনার ফোন ফোন ধরতেই বললেন”ফোন কিউ নেহি উঠাতে? দেখিয়ে কিতনা বার মিস কল হুয়া?” তারপরেই বললেন “আপ কেয়া ইনভিটেশন ভুল গয়ে? জলদি আইয়ে ম্যায় আপকে লিয়ে ওয়েট কর রহা হুঁ“ সঙ্গে সঙ্গে আবার বার হয়ে পড়া তার আগে হোটেলে বলে দেওয়া রাতে কিছু খাব না সুরিতা আমাকে বার বার বলল ড্রিংক অফার করলে যেন না নিই চেষ্টা করেছিলাম কিন্ত দেড় পেগ হুইস্কি নিতেই হল আর সুরিতার জন্য ছিল বাড়িতে বানানো ওয়াইন ম্যাডামও ওয়াইন নিয়েছিলেন সাথে যা দেওয়া হল তাকে বলে “ছুরপি”, একদম ছানা জাতীয় জিনিস এবং তার সাথে শসা সত্যি কথা বলতে কি, আমি হুইস্কির চেয়ে ছুরপি তে বেশী মগ্ন ছিলাম যাই হোক নানা রকম গল্পের মাধ্যমে ডিনার শেষ হল রাত সাড়ে এগারটায় নিশুতি রাতে মেঘের মধ্যে দিয়ে হেঁটে ফেরা সত্যিই এক অন্য অনুভূতি পরদিন রবিবার আরও কিছু জিনিসপত্র কিনে নেওয়া হল এবং পরের দিন হোটেল বাসের পর্ব শেষ করে নতুন ঘরের দিকে এই হোটেলের বিল হল ৩৪,০০০ টাকা তবে এর বিনিময়ে ওরা আমাদের দুটো বালিশ, একটা কম্বল, একটা বিছানার চাদর এবং একটি টাওয়েল (সাময়িক ভাবে ব্যবহারের জন্য দিয়েছে) সেদিন দুপুরের খাওয়া দুজনেই হোটেলে খেলাম এবং রাতের খাবার নিয়ে এসেছিলাম মঙ্গলবার গ্যাস কানেকশন পেলাম এবং সেই দিনই গিয়ে দেখা করলাম প্রলয় সিনহার সাথে (যার সাথে পরিচয় হয় প্রণব গুহ ঠাকুরতার মাধ্যমে) খুব অমায়িক এবং পরোপকারী এক মানুষ আমার অসুবিধা গুলি জানার পর উনি বললেন যে যথা সম্ভব সাহায্য তিনি করবেন সেই অনুযায়ী ঠিক হল, পরদিন দুপুর ১২ টায় এম জি মার্কেটের একটি দোকানের সামনে দেখা করার বুধবার আমাদের বার হতে বেশ দেরী হয়ে গেছিল তবুও আমরা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে গেছিলাম কেমন করে ? তা তোলা থাক চতুর্থ পর্বের জন্য

অলমিতি

No comments:

Post a Comment