21 January, 2021

সুজন্মা অথবা প্রকৃত দেশপ্রেমিক

আজ ভোট এসেছে অথবা আসছে। তাই বিবেকানন্দ, নেতাজী আর রবীন্দ্র নাথ কে নিয়ে কত কাড়াকাড়ি / মারামারি! নজরুল অথবা সুকান্ত এর নাম কেউ আনছে না আজ পর্যন্ত কারণ "জাতের নামে বজ্জাতি আজ জাত জালিয়াত খেলছে জুয়া ছুঁলেই তোর জাত যাবে জাত ছেলের হাতের নয়কো মোয়া" নজরুল লিখেছিলেন নরেন্দ্র নাথ দত্ত ছোট বেলায় নিজের বাড়ির বৈঠক খানায় দেখেছিলেন অনেক হুঁকো রাখা আছে জিজ্ঞাসা করে জেনেছিলেন এক হুঁকো বামুনের এক হুঁকো কায়স্থের একে যদি অন্যের হুঁকোয় টান দেয় তাহলে জাত যায়> নরেন দত্ত (বিলে) সব হুঁকো তে টান দিয়ে দেখতে চেয়েছিলেন কিভাবে হুঁকোতে টান দিলে জাত যায়? আপনারা ভদ্রলোকের সন্তান আমি আপনাদের মা - বোনদের ধর্ষণ করতে চাই না আমি একটা প্রশ্ন করি আপনারা যদি নরেন দত্ত (বিলে) যার পরবর্তী নাম স্বামী বিবেকানন্দ তার আদর্শ মেনে বাঁচেন (ভোটের খাতিরেও) তাহলে যে মানুষ গরু খায় শুয়োর খায় তার উদ্দেশ্যে কি করে বলেন তোকে আমি অথবা আমরা ধর্ষণ করব রাস্তায় উলঙ্গ করে নাচাব। আশা করি আপনারা সমাজের সেই সুন্দর সন্তান সব নিজের পরিবারে মহিলারা যখন আপনাদের মতের সাথে একমত হন না তখন তাদের ও গণ ধর্ষণ করাতে চান রাস্তায় উলঙ্গ করে নাচাতে চান আপনারা তো স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শ মেনে চলেন! তাই না? আপনারা রবীন্দ্রনাথ কে নিয়ে নাচন কোঁদন করছেন কবিগুরু কি লিখেছিলেন একবারও কি পড়েছিলেন মনে রেখেছিলেন - বুঝতে চেয়েছিলেন "জন গণ মন অধিনায়ক জয় হে ভারত ভাগ্য বিধাতা" শব্দ গুলির অর্থ কি? "পরাক্রম দিবস" কিংবা অথবা "দেশ প্রেমিক দিবস" নিয়ে ঝগড়া চলে রবীন্দ্র নাথ, বিবেকানন্দ, নেতাজী সুভাষ কোন উন্নয়নের স্বপ্ন দেখান নি কোন "অচ্ছে দিন" এর স্বপ্ন দেখান নি এঁরা কেউ নিজেকে "ফকির" অথবা "সততার প্রতীক" ও বলেন নি তাঁদের অনুসারী কেউ ছিলেন অহিংস আন্দোলনের পথে চলা কেউ বা ছিলেন অস্ত্র নিয়ে তাঁরা সকলেই ছিলেন মানুষের পাশে। তাঁরা কেউ এবং তাঁদের সাথে যাঁরা পথ চলেছেন তাঁরাও অন্য মতে চলা ভারতীয় মানুষ এর মা - বোন দের ধর্ষণ করার হুমকি দেন নি। আজকে ভারতের কিছু অনন্য সুন্দর সন্তান যেমন দিচ্ছে। আবার বলি ভারতের সেই অনন্য সুন্দর সন্তান রা হয়তো বা নিজের বৃদ্ধা মা নিজের ৫ বছরের সন্তান যদি তাদের মত না মানে তাদের ধর্ষণ করাতে চায় নিজের স্ত্রী যদি নিজের মত না মানে তাহলে তাকে রাস্তায় উলঙ্গ করে নাচাতে চায় অথবা প্রকাশ্য রাস্তায় তার মুণ্ডু কেটে নিতে চায় তাহলেই তো সঠিক দেশ প্রেমিক হওয়া যায় সনাতন ধর্মের পৃষ্ঠ পোষক হওয়া যায়। আপনারা "সুজন্মা" আপনারা প্রকৃত দেশ প্রেমিক। শ্রীতোষ ২১ / ০১/ ২০২১

12 January, 2021

উত্তর

 

বন্ধুরা একবার একটু উত্তর দিন না
পৃথিবীর ১০০% অন্ধ মানুষের জন্য
মাত্র ১ টি মানুষ লিখেছিলেন বর্ণমালা
মাত্র ১৫ বছর বয়সে
সংখ্যার হিসাবে তিনি
পৃথিবীর কত শতাংশ?
 
বন্ধুরা আবার একটা প্রশ্ন করুন না
যে মানুষটার জীবন কাটল
হুইল চেয়ারে বসে
তিনিই তো করলেন
মহাকাশের তত্ব রচনা।
সংখ্যার হিসাবে তিনি পৃথিবীর মানুষের
ঠিক কত শতাংশ?
 
আরও একটা প্রশ্ন জাগিয়ে দিন
যে মানুষ টা বলেছিল
পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে
সেই মানুষ টা সেই দিন
পৃথিবীর মানুষের মধ্যে ঠিক
কত শতাংশের অধিকারী ছিল?
 
আর আজ পৃথিবীর
ঠিক কত শতাংশ মানুষ
তাঁর মত মেনে চলে?
শতাংশ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে কি
শতাংশের হিসাব চাওয়া যায় না?
বিদেশ ছেড়ে দেশে আসি?
 
একজন মানুষ বলেছিলেন
""আমিই সে" - "সোহং"
তিনি ভারতের মানুষের মধ্যে
ঠিক কত শতাংশ ছিলেন?
আজ ঠিক কত শতাংশ মানুষ
তাঁর মত মেনে চলে?
 
"মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ।
যৎ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমবধীঃ কামমোহিতম্।।"
এই শব্দ গুলি যিনি উচ্চারণ করেছিলেন
তিনি ভারতের ঠিক কত শতাংশ মানুষ ছিলেন?
আজ রাম নিয়ে কত শতাংশ মানুষ আবেগে বিহ্বল?
 
অনেক শতাংশ প্রশ্ন দেখি?
শতাংশ তুলে উত্তর দিতে দেখি না।
তাই কিছু শতাংশের প্রশ্ন তুললাম
আর শতাংশের উত্তর ও দিতে চাইলাম।
 
আসলে সত্য এর শতাংশ যদি বর্তমান সময়ে
১০০ কোটি ভাগের এক ভাগও হয়
তবু ও ইতিহাস প্রমাণ করেছে
সত্যের শতাংশ আগামী পৃথিবীর
১০০ শতাংশ হয়।
শ্রীতোষ ১২/০১/২০২১

04 September, 2020

ভাড়ট

 

ভারত বড় চিন্তায় আছে
অর্থাৎ কিনা এক জন ভারতীয়
বড় চিন্তায়
সুশান্ত রাজপুতের মৃত্যু
হল কেমন করে
নায়ক - নায়িকারা মাদক নেয়
কি করে
এই সব নিয়ে
ভারত বড় চিন্তায় আছে
 
 
সেই ভারত বড় চিন্তায় আছে
জড় ভারত যারা
যারা মিডিয়ার কথায় নাচে
আসলে আজকে সেই ভারত কে
আমরা ভারত হিসাবে দেখছি
যারা ক্রিকেটে বিশ্বকাপ জিতলে ভারত
গলা ফাটায়
আতসবাজি ফোটায়
অথবা খুশী হয়।
 
সেই ভারতের আনন্দে চাপা পড়ে যায়
সেই মুহূর্তে
কোন কৃষকের
অথবা শ্রমিকের
অথবা শিক্ষার্থীর
অথবা এক শরীরের
আর্তনাদ
যে হয়েছে ধর্ষিত অথবা ধর্ষিতা
যে শরীর হয়তো বা শেষ হয়ে যায়!।।
 
(বাকি ভারতের কথা
আমি অবশ্যই বলছি না)
শিক্ষিত ভারত তখন আনন্দে নাচে
আনন্দে নাচে
মেট্রোপলিসের উজ্জ্বল আলোয় থাকা ভারত!
 
সেই ভারত আজ বড় খুশী আছে
আজও সে ভারত ভাবছে সব কিছু
ঠিক পথে চলছে।
আজও সে ভারত ভাবছে
এ ভারত বড় ঠিক কথা বলছে।
 
সে ভারত আজ নির্মম ভাবে
তার সহ নাগরিক কে বলছে,
"তুমি যদি আমার কথা না বল
তাহলে তুমি ভারতীয় নও -
এ ভারতে কোন স্থান নেই তোমার!
হতে পারে তোমার আছে ভোটার কার্ড
হতে পারে তোমার আছে আধার কার্ড
হতে পারে তোমার পরিবারের কেউ
জীবন দিয়েছে সীমান্তে
তার জন্মভূমি বাঁচাতে।
তবুও তুমি যদি আমার কথা না বল
যা আমি বলি
তোমার পয়সা খরচা করে
তাতে সম্মতি না জানাও
 
তাহলে তুমি ভারতীয় নও"
 
তাই
অধিকার আছে আমার
কারণ আমি মনে করি
আর যেহেতু আমি মনে করি
তুমি ভারতীয় নও
 
তোমার মা - বোন কে উদ্দেশ্য করে
সামাজিক মাধ্যমে অশ্লীল মন্তব্য করার
তাদের ধর্ষণ করার ডাক দেওয়ার
অধিকার আছে আমার
 
কারণ আমি জানি
আমার মতের বিরুদ্ধে
যুক্তি সঙ্গত আলোচনা না করার
সমস্ত অধিকার আমার আছে
অধিকার আছে খিস্তিতে
যুক্তি ঢেকে দেওয়ার।।
 
তাই আমি সুশান্ত রাজপুত
রিয়া চক্রবর্তী
বলিউডের মাদক যোগ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
ইত্যাদি এবং ইত্যাদি নিয়ে
বড় চিন্তায় থাকি।
 
অন্য সব কথা শুনতে গেলেই
অন্য কোন প্রশ্নের উত্তর ভাবতে  গেলেই
ফিরে আসে সে প্রশ্ন
আমার কাছে
যার নেই কোন উত্তর
আমার নিজের বিবেকের কাছে।
 
সেই জন্যই
আসলে সেই জন্যই
সবচেয়ে বড় কথা
যদি তুমি প্রশ্ন কর
একটাও প্রশ্ন কর
তাহলে তুমি
দেশদ্রোহী!
 
কারণ
 
ভগবান দেশ বাঁচাচ্ছেন
প্রশ্ন সইতে পারেন না
সেই জন্যই আমি আছি বসে
ট্যুরিজম ব্যবসা নিয়ে
তোমাকে পাকিস্থানে অথবা চিনে পাঠাবে বলে
কত কমিশন পাই আমি
জিজ্ঞাসা কোর নাকো।।
 
করলেই 
 
আমি
 
তোমার পরিবারের মহিলাদের
শরীরের মাপ কল্পনা করে
সামাজিক মাধ্যমে ছড়াব
আসলে আমি তো
সে কাজেই অভ্যস্ত
যাকে বলে
"অজাচার"
 
আমীঈ তো বর্তমানের প্রকৃত ভারত।
নির্ভরশীল ভারত
শ্রীতোষ ০৪/০৯/২০২০

26 August, 2020

বিদ্রোহ অথবা বিপ্লবী

 

বিদ্রোহ এক ফিনিক্স পাখি
যতবার শাসকের আগুন তাকে পুড়িয়ে মারে
ততবার নতুন করে
বিদ্রোহ জাগে।
 
বিপ্লবী এক প্রমিথিয়ুস
যে অন্ধকারের গর্ভ থেকে
ছিনিয়ে এনেছিল আগুন। 
 
বিদ্রোহ এক যীশু
শাসকের ক্রুশে বিদ্ধ শরীর তার
রক্ত ঝরে।
 
বিপ্লবী ওই মহাদেব
মানুষের প্রতি মানুষের অত্যাচারে
কণ্ঠ তার নীল
তাণ্ডব নৃত্যে বদলে দিতে চায় সময়।
 
শ্রীতোষ ২৬/০৮/২০২০

23 August, 2020

মৃত্যু

 

মানুষ প্রতি টি রাতে মরে - প্রতিটি দিনে বেঁচে উঠবে বলে, 
ঘুমই তো এক মৃত্যু, 
ঘুমের মধ্যে মানুষ চলে যায় এক অচেতন জগতে। 
মানুষ ভুলে যায় একদিন এই রকম এক ঘুম আসবে, যে ঘুম থেকে মানুষ আর জেগে উঠবে না। হয়তো তার আগে এক মারাত্মক যন্ত্রণা (যে যন্ত্রণার অনুভূতিও এক প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ অনুভব করে থাকে কোন না কোন এক সময়)। (প্রাক কথন)
 
তবুও মানুষ মৃত্যুকে ভয় করে
এক অন্ধকার থেকে এসে আর
এক অন্ধকারে মিশে যাওয়া -
এই তো জীবন
একদম নাটকের মত
এক উইংস দিয়ে ঢোকা
দর্শক জানেই না সে
উইংসের ভিতরে কি ছিল সে।
 
অভিনয় চলে
কখন ও স্পট লাইট আলোকিত করে তাকে
কখনও স্টেজের দুর্বল তম অংশে
কখন ও বা স্টেজের গুরুত্ব পূর্ণ কোন স্থানে
আবছা আলো ছায়ায়
অভিনয় চলে - চলতে থাকে।
তারপর কোন এক সময়
উইংসের ভিতরে হারিয়ে যায়
আর ফিরে আসবে না বলে।
হয়তো বা হাততালি পায়
কিংবা পায় না
এক উইংস থেকে এসে
আর এক উইংসে হারিয়ে যাওয়া
এটাই তো জীবন।
 
তবুও এক শিল্পী
মঞ্চের অন্ধকার কোনায়
দাঁড়িয়ে থাকতে চায়
চায় না হারিয়ে যেতে
তবু তাকে হারিয়ে যেতে হয়।
 
তাই তো প্রতিটি রাতের শেষে
জীবন জেগে উঠবে এই আশায়
ঘুমাতে যায়।
জানে একদিন সে জেগে উঠবে না।
শ্রীতোষ ১৭/০৮/২০২০
ঘুমাতে যাওয়ার আগে।

21 August, 2020

বাঁচা

 

মানুষ প্রতি টি রাতে মরে - প্রতিটি দিনে বেঁচে উঠবে বলে, ঘুমই তো এক মৃত্যু, 
ঘুমের মধ্যে মানুষ চলে যায় এক অচেতন জগতে। 
মানুষ ভুলে যায় একদিন এই রকম এক ঘুম আসবে, যে ঘুম থেকে মানুষ আর জেগে উঠবে না। 
হয়তো তার আগে এক মারাত্মক যন্ত্রণা (যে যন্ত্রণার অনুভূতিও এক প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ অনুভব করে থাকে কোন না কোন এক সময়)। (প্রাক কথন)
 
তবুও মানুষ মৃত্যুকে ভয় করে
এক অন্ধকার থেকে এসে আর
এক অন্ধকারে মিশে যাওয়া -
এই তো জীবন
একদম নাটকের মত
এক উইংস দিয়ে ঢোকা
দর্শক জানেই না সে
উইংসের ভিতরে কি ছিল সে।
 
অভিনয় চলে
কখন ও স্পট লাইট আলোকিত করে তাকে
কখনও স্টেজের দুর্বল তম অংশে
কখন ও বা স্টেজের গুরুত্ব পূর্ণ কোন স্থানে
আবছা আলো ছায়ায়
অভিনয় চলে - চলতে থাকে।
 
তারপর কোন এক সময়
উইংসের ভিতরে হারিয়ে যায়
আর ফিরে আসবে না বলে।
 
হয়তো বা হাততালি পায়
কিংবা পায় না
এক উইংস থেকে এসে
আর এক উইংসে হারিয়ে যাওয়া
এটাই তো জীবন।
 
তবুও এক শিল্পী
মঞ্চের অন্ধকার কোনায়
দাঁড়িয়ে থাকতে চায়
চায় না হারিয়ে যেতে
তবু তাকে হারিয়ে যেতে হয়।
 
তাই তো প্রতিটি রাতের শেষে
জীবন জেগে উঠবে এই আশায়
ঘুমাতে যায়।
জানে একদিন সে জেগে উঠবে না।
শ্রীতোষ ১৭/০৮/২০২০
ঘুমাতে যাওয়ার আগে।

22 July, 2020

বেচারা বেচু দা।

পাড়ার চায়ের দোকানের সামনে হঠাৎ ভিড় - উত্তেজিত গলার আওয়াজ। বাঙালীর স্বভাব জাত কৌতূহল বসে উঁকি মারলাম। দেখি একদিকে উত্তেজিত বেচু দা - এই মারব সেই মারব ভাব কয়েকজন বেচু দা কে শান্ত করার চেষ্টা করছে কিন্তু বেচুদার শান্ত হওয়ার নাম নেই। একসময় বেচু দা ভেউ ভেউ করে কাঁদতে আরম্ভ করে দিল। অন্যদিকে একটু দূরে বসে ভ্যাবলা মিচকে মিচকে হাসছে।

কি ব্যাপার প্রশ্ন করতে যা জানা গেল তা বলার আগে বেচু দা সম্পর্কে একটু জানতে হবে।

বেচু দা আদতে এই রাজ্যের বাসিন্দা নয় এমনকি বাঙালী ও নয়। কোন সুদূর অতীতে বেচু দার ঠাকুরদার চাচা নাকি পিসে হরিয়ানা না হিসার থেকে (টেনিদা থাকলে বলত "হনুমানপুর বা কচ্ছ হলেই বা ক্ষতি কি") এ রাজ্যে এসে প্রচুর সম্পত্তি করেছিলেন। তারপর যা হয়, বেচু দার ঠাকুরদার নাকি একটা কিসের দোকান ছিল, সেটা ভালো চলছিল না, তাই তাকেও নিয়ে আসেন কারণ নিজের কোন ছেলে - পুলে ছিল না। বেচু দার ঠাকুরদার খুব মজা, পরের পয়সায় ভালোই চলছিল। তা গজেন্দ্র সিং এর (মানে ঠাকুর দার) আরও সুবিধা হল, ওই চাচা না পিসে অগাধ সম্পত্তি রেখে একদিন গেল মরে। তা গজেন্দ্র জির কিছু বুদ্ধি ছিল, সেটাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে তো রাখলই কিছু বাড়াল। বেচু দার বাবা রমেন্দ্র সিং বাড়াতে পারে নি কিন্তু যা ছিল তা বজায় রেখেছিল। বেচু দার আসল নাম ওই নরেন্দ্র না সুরেন্দ্র কি যেন একটা। লেখা পড়া করেনি বলেই পাড়ার সকলে জানে কিন্তু বাইরের লোকের কাছে নিজেকে বিশাল বিদ্বান বলে পরিচয় দেয়। আবার তাকে বিদেশী বললে খুব ক্ষেপে যায়। ভুল ভাল বাংলায় ভুল ভাল কথা কোট করে প্রমাণ করতে চায় সে আমাদের থেকেও বেশী বাঙালী। বাঙাল (মানে পূর্ব বঙ্গের লোকেরাই হল আসল বিদেশী - ওরা সব হাড় বজ্জাত) দের উপরে বেচুদার ভীষণ রাগ।
যাই হোক, বেচু দা কে মোটামুটি চেনা গেল - এই রে আসল কথাই তো লিখতে ভুলে গেলাম, "বেচুদা"র নাম বেচু হল কেন?
একটু আগেই লিখেছিলাম বেচু দা লেখা পড়া বিশেষ করে নি। বাবা জোর করে বিয়ে দিয়েছিল, তা সে বউ এখন কোথায় আছে কেউ জানে না (বেচু দা তো স্বীকার করতেই চায় না তার বউ আছে)। তা বউ না থাকলেও খেয়ে - পরে তো বাঁচতে হবে। একবার বাড়ি থেকে পালিয়েছিল, সন্ন্যাসী হবে বলে। ভেবেছিল বোধ হয় সন্ন্যাসী হলে পরের ঘাড় ভেঙে খাওয়া - থাকা র কোন সমস্যা হবে না, তা সেটাও হল না, ফিরে এল বাড়িতে। বাপের এক ছেলে, তা বেচু দা দেখল বাপ যতদিন আছে ততদিন বাপের সম্পত্তি র রোজগার থেকে ভালো ভাবেই চলবে। খাটছে তো বাপ - বেচুদার তো কোন ঝামেলা নেই, বসে বসে রাজা - উজির মারত। বাবা ব্যবসা চালাতেই পারছে না, বেচুদা কে দায়িত্ব দিলেই বেচু দা এই ব্যবসা আরও বড় করে ফেলত - এই সব। পাড়ার লোকে বলত, হ্যাঁ বেচু (তখনও বেচু হয় নি - ওই সুরেন্দ্র / নরেন্দ্র) যা ছেলে বাবার ব্যবসা ও ঠিক রাখতে পারবে। আমরা বেশীর ভাগ যারা ওকে চিনতাম - হাসতাম। ও করবে ব্যবসা!! যাই হোক, বেচুদার বাবা একদিন বেচু দাকে ব্যবসার দায়িত্ব দিল। ব্যস্‌!! বেচুদাকে আর পায় কে? সকলকে ডেকে ডেকে বলতে লাগল, এইবার দেখ এই ভারত লক্ষ্মী ব্র্যান্ড কে আমি কত বড় করে তুলি। শুধু একবার নয় বেচুদার কাজই হল সারদিনে অন্তত শ খানেক বার এই কথা বলা। চায়ের দোকানে, সেলুনে, বাজারে সব জায়গায় বেচুদার এই এক কথা। লোকে শুনতে না চাইলেও ডেকে ডেকে বলা - বার বার বলা। এই করে তো বেশ কিছুদিন গেল। তারপর হঠাৎ করে একদিন দেখি বেচুদার ভারত লক্ষ্মী মুদির দোকানের নাম বদলে গেছে - হয়েছে আমার লক্ষ্মী। পুরানো কর্মী দের অনেকেই ছাঁটাই। আবার কিছু দিন গেল দেখি বাজারের বড় কাপড়ের দোকানের নাম বদলে হয়েছে মন লক্ষ্মী লিমিটেড - মালিকের নাম ও বদলে গিয়ে হয়েছে দানীরাম (না ওই জাতীয় কিছু)। এইভাবে দিন যায়, বেচুদাদের সব ব্যবসারই নাম বদলায় (ততদিনে পাড়ার অনেকেই বুঝে গেছে বেচুদার কারবার (এবং নাম বদলে বেচু রাখা হয়ে গেছে)। নিজেদের অত বড় ব্যবসা বেচেই বেচুদা খাচ্ছে।

এবার হয়েছে কি, চায়ের দোকানে বসে রাজা - উজির মারতে মারতে বেচু দা বলেছে ভাবছি "বাড়িটা বেচে দেব"। শুনেই ভ্যাবলা বলেছে

"শোন বেচু, এর আগে যা বেচেছিস, তার বাজারে দাম আছে। তোর ওই বাড়ির দাম কত রে? ওই তো বাড়ি, তার উপর বেচতে বেচতে যা হাল করেছিস তোর ওই বাড়ি বিনা পয়সায় বেচলেও কেউ কিনবে না। লোকে জিনিস কেনে কাজে লাগানোর জন্য, তোর ওই বাড়ি কার কোন কাজে লাগবে? আর বাড়ি কিনলে তোকেও তো কিনতে হবে নাকি বাড়ি বিক্রি করে পালাবি ভাবছিস - আর তো কিছু বেচার থাকবে না"। শুনেই বেচু দা ফায়ার! কখনও চেঁচায় - কখন ও কাঁদে।

বেচারা বেচু দা।