26 August, 2020

বিদ্রোহ অথবা বিপ্লবী

 

বিদ্রোহ এক ফিনিক্স পাখি
যতবার শাসকের আগুন তাকে পুড়িয়ে মারে
ততবার নতুন করে
বিদ্রোহ জাগে।
 
বিপ্লবী এক প্রমিথিয়ুস
যে অন্ধকারের গর্ভ থেকে
ছিনিয়ে এনেছিল আগুন। 
 
বিদ্রোহ এক যীশু
শাসকের ক্রুশে বিদ্ধ শরীর তার
রক্ত ঝরে।
 
বিপ্লবী ওই মহাদেব
মানুষের প্রতি মানুষের অত্যাচারে
কণ্ঠ তার নীল
তাণ্ডব নৃত্যে বদলে দিতে চায় সময়।
 
শ্রীতোষ ২৬/০৮/২০২০

23 August, 2020

মৃত্যু

 

মানুষ প্রতি টি রাতে মরে - প্রতিটি দিনে বেঁচে উঠবে বলে, 
ঘুমই তো এক মৃত্যু, 
ঘুমের মধ্যে মানুষ চলে যায় এক অচেতন জগতে। 
মানুষ ভুলে যায় একদিন এই রকম এক ঘুম আসবে, যে ঘুম থেকে মানুষ আর জেগে উঠবে না। হয়তো তার আগে এক মারাত্মক যন্ত্রণা (যে যন্ত্রণার অনুভূতিও এক প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ অনুভব করে থাকে কোন না কোন এক সময়)। (প্রাক কথন)
 
তবুও মানুষ মৃত্যুকে ভয় করে
এক অন্ধকার থেকে এসে আর
এক অন্ধকারে মিশে যাওয়া -
এই তো জীবন
একদম নাটকের মত
এক উইংস দিয়ে ঢোকা
দর্শক জানেই না সে
উইংসের ভিতরে কি ছিল সে।
 
অভিনয় চলে
কখন ও স্পট লাইট আলোকিত করে তাকে
কখনও স্টেজের দুর্বল তম অংশে
কখন ও বা স্টেজের গুরুত্ব পূর্ণ কোন স্থানে
আবছা আলো ছায়ায়
অভিনয় চলে - চলতে থাকে।
তারপর কোন এক সময়
উইংসের ভিতরে হারিয়ে যায়
আর ফিরে আসবে না বলে।
হয়তো বা হাততালি পায়
কিংবা পায় না
এক উইংস থেকে এসে
আর এক উইংসে হারিয়ে যাওয়া
এটাই তো জীবন।
 
তবুও এক শিল্পী
মঞ্চের অন্ধকার কোনায়
দাঁড়িয়ে থাকতে চায়
চায় না হারিয়ে যেতে
তবু তাকে হারিয়ে যেতে হয়।
 
তাই তো প্রতিটি রাতের শেষে
জীবন জেগে উঠবে এই আশায়
ঘুমাতে যায়।
জানে একদিন সে জেগে উঠবে না।
শ্রীতোষ ১৭/০৮/২০২০
ঘুমাতে যাওয়ার আগে।

21 August, 2020

বাঁচা

 

মানুষ প্রতি টি রাতে মরে - প্রতিটি দিনে বেঁচে উঠবে বলে, ঘুমই তো এক মৃত্যু, 
ঘুমের মধ্যে মানুষ চলে যায় এক অচেতন জগতে। 
মানুষ ভুলে যায় একদিন এই রকম এক ঘুম আসবে, যে ঘুম থেকে মানুষ আর জেগে উঠবে না। 
হয়তো তার আগে এক মারাত্মক যন্ত্রণা (যে যন্ত্রণার অনুভূতিও এক প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ অনুভব করে থাকে কোন না কোন এক সময়)। (প্রাক কথন)
 
তবুও মানুষ মৃত্যুকে ভয় করে
এক অন্ধকার থেকে এসে আর
এক অন্ধকারে মিশে যাওয়া -
এই তো জীবন
একদম নাটকের মত
এক উইংস দিয়ে ঢোকা
দর্শক জানেই না সে
উইংসের ভিতরে কি ছিল সে।
 
অভিনয় চলে
কখন ও স্পট লাইট আলোকিত করে তাকে
কখনও স্টেজের দুর্বল তম অংশে
কখন ও বা স্টেজের গুরুত্ব পূর্ণ কোন স্থানে
আবছা আলো ছায়ায়
অভিনয় চলে - চলতে থাকে।
 
তারপর কোন এক সময়
উইংসের ভিতরে হারিয়ে যায়
আর ফিরে আসবে না বলে।
 
হয়তো বা হাততালি পায়
কিংবা পায় না
এক উইংস থেকে এসে
আর এক উইংসে হারিয়ে যাওয়া
এটাই তো জীবন।
 
তবুও এক শিল্পী
মঞ্চের অন্ধকার কোনায়
দাঁড়িয়ে থাকতে চায়
চায় না হারিয়ে যেতে
তবু তাকে হারিয়ে যেতে হয়।
 
তাই তো প্রতিটি রাতের শেষে
জীবন জেগে উঠবে এই আশায়
ঘুমাতে যায়।
জানে একদিন সে জেগে উঠবে না।
শ্রীতোষ ১৭/০৮/২০২০
ঘুমাতে যাওয়ার আগে।

22 July, 2020

বেচারা বেচু দা।

পাড়ার চায়ের দোকানের সামনে হঠাৎ ভিড় - উত্তেজিত গলার আওয়াজ। বাঙালীর স্বভাব জাত কৌতূহল বসে উঁকি মারলাম। দেখি একদিকে উত্তেজিত বেচু দা - এই মারব সেই মারব ভাব কয়েকজন বেচু দা কে শান্ত করার চেষ্টা করছে কিন্তু বেচুদার শান্ত হওয়ার নাম নেই। একসময় বেচু দা ভেউ ভেউ করে কাঁদতে আরম্ভ করে দিল। অন্যদিকে একটু দূরে বসে ভ্যাবলা মিচকে মিচকে হাসছে।

কি ব্যাপার প্রশ্ন করতে যা জানা গেল তা বলার আগে বেচু দা সম্পর্কে একটু জানতে হবে।

বেচু দা আদতে এই রাজ্যের বাসিন্দা নয় এমনকি বাঙালী ও নয়। কোন সুদূর অতীতে বেচু দার ঠাকুরদার চাচা নাকি পিসে হরিয়ানা না হিসার থেকে (টেনিদা থাকলে বলত "হনুমানপুর বা কচ্ছ হলেই বা ক্ষতি কি") এ রাজ্যে এসে প্রচুর সম্পত্তি করেছিলেন। তারপর যা হয়, বেচু দার ঠাকুরদার নাকি একটা কিসের দোকান ছিল, সেটা ভালো চলছিল না, তাই তাকেও নিয়ে আসেন কারণ নিজের কোন ছেলে - পুলে ছিল না। বেচু দার ঠাকুরদার খুব মজা, পরের পয়সায় ভালোই চলছিল। তা গজেন্দ্র সিং এর (মানে ঠাকুর দার) আরও সুবিধা হল, ওই চাচা না পিসে অগাধ সম্পত্তি রেখে একদিন গেল মরে। তা গজেন্দ্র জির কিছু বুদ্ধি ছিল, সেটাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে তো রাখলই কিছু বাড়াল। বেচু দার বাবা রমেন্দ্র সিং বাড়াতে পারে নি কিন্তু যা ছিল তা বজায় রেখেছিল। বেচু দার আসল নাম ওই নরেন্দ্র না সুরেন্দ্র কি যেন একটা। লেখা পড়া করেনি বলেই পাড়ার সকলে জানে কিন্তু বাইরের লোকের কাছে নিজেকে বিশাল বিদ্বান বলে পরিচয় দেয়। আবার তাকে বিদেশী বললে খুব ক্ষেপে যায়। ভুল ভাল বাংলায় ভুল ভাল কথা কোট করে প্রমাণ করতে চায় সে আমাদের থেকেও বেশী বাঙালী। বাঙাল (মানে পূর্ব বঙ্গের লোকেরাই হল আসল বিদেশী - ওরা সব হাড় বজ্জাত) দের উপরে বেচুদার ভীষণ রাগ।
যাই হোক, বেচু দা কে মোটামুটি চেনা গেল - এই রে আসল কথাই তো লিখতে ভুলে গেলাম, "বেচুদা"র নাম বেচু হল কেন?
একটু আগেই লিখেছিলাম বেচু দা লেখা পড়া বিশেষ করে নি। বাবা জোর করে বিয়ে দিয়েছিল, তা সে বউ এখন কোথায় আছে কেউ জানে না (বেচু দা তো স্বীকার করতেই চায় না তার বউ আছে)। তা বউ না থাকলেও খেয়ে - পরে তো বাঁচতে হবে। একবার বাড়ি থেকে পালিয়েছিল, সন্ন্যাসী হবে বলে। ভেবেছিল বোধ হয় সন্ন্যাসী হলে পরের ঘাড় ভেঙে খাওয়া - থাকা র কোন সমস্যা হবে না, তা সেটাও হল না, ফিরে এল বাড়িতে। বাপের এক ছেলে, তা বেচু দা দেখল বাপ যতদিন আছে ততদিন বাপের সম্পত্তি র রোজগার থেকে ভালো ভাবেই চলবে। খাটছে তো বাপ - বেচুদার তো কোন ঝামেলা নেই, বসে বসে রাজা - উজির মারত। বাবা ব্যবসা চালাতেই পারছে না, বেচুদা কে দায়িত্ব দিলেই বেচু দা এই ব্যবসা আরও বড় করে ফেলত - এই সব। পাড়ার লোকে বলত, হ্যাঁ বেচু (তখনও বেচু হয় নি - ওই সুরেন্দ্র / নরেন্দ্র) যা ছেলে বাবার ব্যবসা ও ঠিক রাখতে পারবে। আমরা বেশীর ভাগ যারা ওকে চিনতাম - হাসতাম। ও করবে ব্যবসা!! যাই হোক, বেচুদার বাবা একদিন বেচু দাকে ব্যবসার দায়িত্ব দিল। ব্যস্‌!! বেচুদাকে আর পায় কে? সকলকে ডেকে ডেকে বলতে লাগল, এইবার দেখ এই ভারত লক্ষ্মী ব্র্যান্ড কে আমি কত বড় করে তুলি। শুধু একবার নয় বেচুদার কাজই হল সারদিনে অন্তত শ খানেক বার এই কথা বলা। চায়ের দোকানে, সেলুনে, বাজারে সব জায়গায় বেচুদার এই এক কথা। লোকে শুনতে না চাইলেও ডেকে ডেকে বলা - বার বার বলা। এই করে তো বেশ কিছুদিন গেল। তারপর হঠাৎ করে একদিন দেখি বেচুদার ভারত লক্ষ্মী মুদির দোকানের নাম বদলে গেছে - হয়েছে আমার লক্ষ্মী। পুরানো কর্মী দের অনেকেই ছাঁটাই। আবার কিছু দিন গেল দেখি বাজারের বড় কাপড়ের দোকানের নাম বদলে হয়েছে মন লক্ষ্মী লিমিটেড - মালিকের নাম ও বদলে গিয়ে হয়েছে দানীরাম (না ওই জাতীয় কিছু)। এইভাবে দিন যায়, বেচুদাদের সব ব্যবসারই নাম বদলায় (ততদিনে পাড়ার অনেকেই বুঝে গেছে বেচুদার কারবার (এবং নাম বদলে বেচু রাখা হয়ে গেছে)। নিজেদের অত বড় ব্যবসা বেচেই বেচুদা খাচ্ছে।

এবার হয়েছে কি, চায়ের দোকানে বসে রাজা - উজির মারতে মারতে বেচু দা বলেছে ভাবছি "বাড়িটা বেচে দেব"। শুনেই ভ্যাবলা বলেছে

"শোন বেচু, এর আগে যা বেচেছিস, তার বাজারে দাম আছে। তোর ওই বাড়ির দাম কত রে? ওই তো বাড়ি, তার উপর বেচতে বেচতে যা হাল করেছিস তোর ওই বাড়ি বিনা পয়সায় বেচলেও কেউ কিনবে না। লোকে জিনিস কেনে কাজে লাগানোর জন্য, তোর ওই বাড়ি কার কোন কাজে লাগবে? আর বাড়ি কিনলে তোকেও তো কিনতে হবে নাকি বাড়ি বিক্রি করে পালাবি ভাবছিস - আর তো কিছু বেচার থাকবে না"। শুনেই বেচু দা ফায়ার! কখনও চেঁচায় - কখন ও কাঁদে।

বেচারা বেচু দা।

25 June, 2020

ভালো আছি

আমি বেশ ভালো আছি
ফেসবুকে মজে আছি,
ট্যুইটারে ট্রোলে আছি
ছবিতে - লেখায় আছি,
লাইভেতে জমে আছি।।

ট্রেনে – ট্রাকে চাপা পড়ে
কত লোকে গেল মরে,
ভুখা পেটে পথ হেঁটে
জামলোটা গেল চলে।
আরও কত গেছে মরে
খিদে সইতে না পেরে।
(গুণিনি যে ভালো করে!)

(তবু) আমি খুব ভালো আছি
ধরমের ব্যারামে আছি,
দ্বেষ প্রেম মদেতে আছি
খাঁটি জাতীয়তাবাদে আছি

(বুঝলেন নেতা - নেত্রী মন্ত্রী - সান্ত্রীরা)
আমি এক ভারতীয় নাগরিক
আমি বড় ভালো আছি!!!!!

শ্রীতোষ ২৪/০৬/২০২০

23 June, 2020

চিন"তা

কথা কোয়ো না
কেউ "চিন"তা কোরো না
দ্বেষ প্রেমিক গণ ক্ষিপ্ত হইবেন
"চিন"তা সইতে পারেন না
শ্রীতোষ ২৩/০৬/২০২০

14 June, 2020

মূলখাড়কা - যেখানে প্রকৃতি কথা বলে

আজ কলম ধরেছি














মূলখাড়কার কথা লিখব বলে। মূলখাড়কা হল পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিম সীমান্তে অবস্থিত একটি ছোট্ট গ্রাম। এই গ্রামের নামেই আছে একটি হ্রদ – নাম মূলখাড়কা হ্রদ। গ্রামের নাম মূলখাড়কা হওয়ার পিছনে একটি কাহিনী আছে। এখানে এক সময় কোন গ্রাম ছিল না। এটা ছিল জঙ্গলের মাঝে কিছুটা খালি জায়গা। এই জায়গায় দূর দূর গ্রামের মানুষরা তাঁদের গবাদি পশু ছেড়ে দিয়ে যেতেন (মূলত গরু) তারা এই জঙ্গলেই চরে বেড়াত যখন গরু গাভীন হত তখন তাঁরা এসে গরু গুলিকে নিয়ে যেতেন। সেই সময় দু – তিন দিন তাঁরা এই জায়গাটিতেই থাকতেন। স্থানীয় ভাষায় “মূল” অর্থে “আদি” (যথা আদিবাসী / মূল বাসী ইত্যাদি)। সময়ের দাবীতে একসময় তাঁরা এই স্থানে বসতি স্থাপন করলেন – নাম দিলেন মূলখাড়কা। দার্জিলিং জেলার কালিংম্পং মহকুমার লিংসে গ্রাম পঞ্চায়েতের এই গ্রামে আজও দশ – বারো ঘর মানুষের বসতি।

ইন্টারনেট ঘেঁটেই এ গ্রামের এবং লেকের খবর পেয়েছিলাম কিছুদিন আগে। লেকের জলে কাঞ্চনজঙ্ঘার ছায়া পড়েছে – এই ছবি দেখেই ঠিক করলাম যেতেই হবে এখানে। ১৭ই জানুয়ারি আমাদের বিবাহবার্ষিকী – এই বছর দিনটা ছিল শুক্রবার। পরের দুদিন শনি ও রবি। ফলে এক দিন ছুটি নিলে চমৎকার একটা উইক এন্ড ট্রিপ হয়ে যাবে। ইন্টারনেটেই মূলখাড়কা হোম স্টের পূর্ণিমা ছেত্রীর ফোন নাম্বার পেয়েছিলাম।
দিন টা ছিল ১১ই জানুয়ারি, প্রথম ফোন করলাম। ফোন লাগে না – লাগে না। দু তিন বার চেষ্টা করার পর মনে হল লিংসে থেকে মূল খাড়কা বেশী দূর নয়, লিংসে তে আছে ঝুসিং হো,ম স্টে, সেখানে যদি থাকা যায়। ফোন নাম্বার ছিল অতএব – ফোন ধরলেন বাদু ভাই (বাদাল ভাই)। জিজ্ঞাসা করলাম “১৭ই জানুয়ারি থেকে ১৮ই জানুয়ারি থাকতে পারি আপনার ঘরে? আমি মূলখাড়কা লেক দেখব।“ উনি বললেন “স্যার ১৭ থেকে ১৯ আমার ঘর তো বুক, আপনি পূর্ণিমা দিদি কে ফোন করছেন না কেন?”
আমি বললাম
স্যার জী অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পূর্ণিমা ম্যাডাম কে ফোনে ধরতে পারি নি
উনি বললেন “ঠিক আছে আমি কথা বলে নিচ্ছি”
তার পরেই আমি আবার ফোন করলাম
ফোন ব্যস্ত
আবার
এবার ফোন বাজছে
এক মহিলা কণ্ঠ
আমি নিশ্চিত উনিই পূর্ণিমা ছেত্রি
সেই মুহুর্তে আমার কাছে পূর্ণিমা ম্যাডাম
নিজের পরিচয় দিলাম
উনি বললেন হ্যাঁ বাদু ভাই ফোন করেছিলেন
আরও দু একটা কথা
তারপর থেকে উনি পূর্ণিমা দিদি
ঘর বুক হয়ে গেল অ্যাডভানস কোন টাকাও দিতে হবে না।

অন্যদিকে শুরু হয়েছিল আর এক কাহিনী
গ্যাংটক থেকে তো পায়ে হেঁটে মূল খাড়কা যাওয়া যায় না গাড়ি লাগে
ঐ ১১ জানুয়ারি থেকেই গাড়ির খোঁজ শুরু করেছিলাম
আমাদের অফিসের ড্রাইভার – আরিটারে বাড়ি তার
জানে না নাম মূল খাড়কার।
শরণ নিলাম প্রলয় বাবুর – তিনিও প্রথম শুনলেন
নির্মল প্রধান – উনিও জানেন না
সেই অভিজ্ঞতা থেকেই পূর্ণিমা দিদিকে বললাম
“একজন ড্রাইভারের সন্ধান দিতে পারেন যে গ্যাংটক থেকে আমাদের নিয়ে যাবে”
দিদি সরাসরি স্বীকার করলেন
“গ্যাংটক থেকে ওনার কাছে কোন গেস্ট আসে নি”
বাধ্য হয়ে সাঙ্গে শেরপার শরণ নিলাম। ও ম্যাথুর ফোন নাম্বার দিল। ম্যাথুও জানত না ফলে গুগুল ম্যাপ পাঠালাম হোয়াটস্‌ অ্যাপ করে।

১৭ই জানুয়ারি সকালে নির্দিষ্ট সময়ে গাড়ি এসে গেল – যাত্রা হল শুরু। প্রথম বাধা রংপোর একটু আগে। অনেক দিন পরে সুরিতা হ ঠা ৎ করেই অসুস্থ! বমি । সঙ্গে লেবু বা লজেন্সও নেই। যাই হোক, একটু সামলে উঠে ২য় বাধা। গাড়ি চেক হচ্ছে। আধ ঘণ্টা নষ্ট সেখানে। এরপর আরিটারের পথে গাড়ি চলছে আবার বাধা, রাস্তা বন্ধ কাজ চলছে। অন্য এক পাহাড়ি পথে গাড়ি চলে, চলে আর চলে। একসময় আরিটার। সুরিতার দিকে তাকানো যায় না, পিছনের সীটে শুয়ে। আমার মোবাইলে গুগুল ম্যাপ, ড্রাইভারের কানে ফোন। এক সময়, পিচ রাস্তা ছেড়ে ধরা হল অন্য রাস্তা – যে রাস্তায় স্পীডোমিটার ঘুমিয়ে পড়ে, মেঘ ঢাকা পথে পথ চলা।

সব পথের শেষ হয় – দেখার হয় না শেষ (ফেরার সময় সুরিতা বুঝেছিল সে কথা), তাই এক সময় পথ শেষ হয় – তখন বৃষ্টি নেমেছে। ফোনে ধরি পূর্ণিমা দিদি কে, তিনি তার ছোট ভাইকে পাঠিয়ে দিলেন। রাস্তা থেকে নিবাস নিচে – প্রায় ৬ তলা বাড়ির মত। সিঁড়ি ভেঙে নামতে হবে। একসময় দেখি, সিঁড়ি নেই, কিছু পাথর, চার পাশে ধরার মত কিছু নেই। ভারটিগো রুগী – অসহায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজি। একটু বাদেই পূর্ণিমা দিদিকে দেখতে পাই, অনেক সময় পরেও ঘরে ঢুকছি না দেখে দেখতে চাইছেন কি হল? আমাদের ইশারা বুঝে উঠে আসেন, দিদির হাত ধরে ঐ কয়েক টা পাথর পার হয়ে আসি।

ঘরে ঢোকার সাথে সাথে চলে এল গরম চা। তারপরেই এল দুপুরের খাওয়ার ডাক। গরম ভাত, ডাল, লংকার আচার আর ডিমের ঝোল দিয়ে সমাপ্ত হোল দুপুরের খাওয়া – তখন অঝোর ধারে বৃষ্টি। সুরিতা অনেকটা সুস্থ। ঘরে মন থাকে না, বার বার ক্যামেরা হাতে বাইরে। বিকেলে আকাশ অনেক পরিষ্কার, কিছু ছবি তুললাম।
সন্ধ্যা বেলা চলে এল চিকেন পকোড়া সাথে কফি। রাত ৯ টায় এল খাওয়ার ডাক। পরদিন লেক দেখতে যাব, সেই জন্য দেরী করলাম না। তখনও বৃষ্টি পড়ছে।
৪ টে অ্যালার্ম দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম, সূর্য ওঠার আগে পৌঁছাতে হবে লেকে। পৌনে ৫ টায় ঘরের বাইরে দুজনে, যে পথ দিয়ে কিভাবে নামব ভেবেছিলাম সে পথ পার হয়ে মূল রাস্তায়। একে অন্যকে দেখছি অবয়বে – রাস্তা মানে সামনে কিছু খোলা জায়গা। মোবাইলের আলোতে শুরু পথ চলা। দেড় কিমি পথ পাড়ি দিতে হবে।
পাড়ি দিলাম, এক সময় এসে পৌঁছালাম এক বাংলোর সামনে। তাকে ঘিরে গোল হয়ে গেছে পথ। একবার ঘুরপাক খেলাম – তারপর দেখলাম ঐ পথের পাশেই আছে এক বসার জায়গা, তার পাশ দিয়ে চলে গেছে এক পায়ে চলা পথ।
ইন্টারনেটে দেখেছিলাম এক ফুটপাথ আছে ঐ লেকের চারপাশ ঘিরে, তখন সে সময়ে সে ফুটপাথ আর খুঁজে বার করার সময় নেই, ঘড়ি বলছে ৫ টা ২৫।
সুরিতা আমার আগেই এগিয়ে গেছে হঠাৎ ওর চিৎকার শুনতে পেলাম
“মন্দিরের আগের ঐ ফ্ল্যাগ গুলো দেখতে পেয়েছি”
পাগলের মত ছুটলাম এসে গেলাম মন্দিরের সামনে
এবার যেতে হবে বিপরীতে না হলে তো দেখতে পাব না
ফুটপাথ ধরে যত জোরে পারি এগিয়ে গেলাম – পৌঁছে গেলাম হ্রদের অন্যপ্রান্তে।
ঝকঝক করছে আকাশ কিন্তু আকাশের সে সীমানায় মেঘ। ফলে মনের আসল ইচ্ছা থেকে গেল অপূর্ণ।
দেখা হল না সেই অপরূপ দৃশ্য। অদ্ভুত একটি বিষয় নজরে এল আর তা হল হ্রদের চার পাশে প্রচুর গাছ কিন্তু জলে একটি পাতাও পড়ে নেই। সিকিমের অন্য সব প্রাকৃতিক হ্রদের মতই এ হ্রদের জল অত্যন্ত পবিত্র, এতে পা দেওয়া যায় না। তবে হাত দিয়ে জল স্পর্শ করায় কোন বাধা নেই। এমনকি এই হ্রদের জল লোকে খাওয়ার জন্য ব্যবহার করে থাকেন। হ্রদের একটু উপরে যে ক্যাম্প সাইট আছে, সেখানে রান্নার জল হিসাবে এই হ্রদের জলই ব্যবহার করা হয়। যে সব জায়গা দিয়ে পারে পৌঁছানো যায়, সেই সব জায়গায় হ্রদের পারে একটির উপর আরেকটি পাথর দিয়ে প্রচুর স্তম্ভ তৈরি করা আছে। এই হ্রদের সামনে দাঁড়িয়ে মনের কোন ইচ্ছা জাগলে (মানত করলে) তা নাকি সফল হয়। মানুষ ঐ ভাবে পাথর সাজিয়েই মানত করেন। ছিলাম সেখানে তিন থেকে চার ঘণ্টা তারপর ফিরে এলাম! মাঝখানে একটু উপরে উঠে দেখে এলাম ক্যাম্প সাইট। আলাপ হল সোনমের সাথে।

সেদিন ভেবেছিলাম গ্রাম ঘুরব, শরীর দিল না। পরদিন সূর্যের (আসলে সুরয নাম তার) সাথে গ্রাম ঘুরলাম, মানুষ দেখলাম। সূর্য নিয়ে গেল সোনমের বাড়ি। সেখানে গরম গরম চা খেয়ে শরীর চাঙ্গা করে আবার গ্রাম ঘোরা। মূল খাড়কা কেমন করে ধ্বংস হবে দেখলাম তাও। রাস্তার ধারে একটু উপরে এক বিশাল এলাকা জুড়ে কেটে ফেলা হয়েছে অজস্র গাছ। শুধু তাই নয়, তারপর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে জঙ্গল। শুনলাম ওখানে একটি রিসরট হবে। সিকিমের কোন এক ব্যবসায়ী ঐ জমি কিনে নিয়েছেন। আসলে, আমরা মানুষ তো, সভ্য মানুষ তাই সব কিছু ধ্বংস করায় আমাদের বড় আনন্দ। যাই হোক, সূর্য বলল পরের দিন সকালে পরিষ্কার আকাশ পাওয়া যাবে।

সূর্যের কথা শুনে ইচ্ছা করল থেকে যাব আর এক দিন – পূর্ণিমা দিদি রাজী
ফলে পরের দিন সকালে মূল খাড়কা হোম স্টের লন থেকে দেখলাম কাঞ্চনজঙ্ঘা! সে দেখার বর্ণনা দেওয়ার সাধ্য এ কলমে নেই। ছবি গুলো প্রমাণ।

শুধু তাই নয় ফেরার পথে পথের প্রতি বাঁকে দেখলাম তাকে
আর দেখলাম রমিতো ভিউ পয়েন্ট থেকে

(প্রসঙ্গত পরে জেনেছিলাম ১৭ই জানুয়ারি নাকি ওখানে বুনো কুকুরের এক দল এসেছিল, ১৮ই জানুয়ারি আমরা যখন বার হই লেক দেখতে, আমাদের হাতে একটা লাঠিও ছিল না)
মূল খাড়কা যেতে হলে কলকাতা থেকে ট্রেনে / বাসে / ফ্লাইটে নিউজলপাইগুড়ি/ শিলিগুড়ি। সেখান থেকে গাড়িতে মূলখাড়কা।
থাকার জন্যঃ মূল খাড়কা হোম স্টে – পূর্ণিমা ছেত্রিঃ ৯৭৪৯০৬০৫৯৩