11 September, 2018

পরবাসী জীবনের কথকতা ৫ম পর্ব।




আজ বলি গ্যাংটক বা গ্যাংটকের জীবন যাত্রা সম্পর্কে এই অল্প সময়ে যা জেনেছি তার কথা। এখানকার রাস্তায় পথচারীদের জন্য কোন ডান অথবা বাঁ দিক নেই। আপনাকে পথ চলতে হবে রাস্তার এক দিক দিয়েই যে দিকে ফুটপাথ রেলিং দিয়ে সুরক্ষিত (এন এইচ ১০ এর উপর), যা কখনও বা আপনার ডান দিক, কখন ও উল্টো কারণ আপনার উল্টো দিকে পাহাড় এবং সেই পাহাড়ী রাস্তার পাশে পাশে নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর রয়েছে ট্যাক্সি স্টপ (কলকাতার বাস স্টপের মত)। এক্ষেত্রে অবশ্য ডান – বাঁ মেনে চলা হয়। ট্যাক্সি স্টপেও আবার লেখা আছে একসাথে কটা ট্যাক্সি দাঁড়াতে পারবে এবং এ নিয়ম অবশ্য পালনীয়। এন এইচ টেন ছেড়ে যখন আপনি বসতি এলাকায় ঢুকবেন যথা আমার সাময়িক নিবাস ডেভেলপমেন্ট এরিয়া সেখানে একই নিয়ম অর্থাৎ চলতে হবে রাস্তার একদিক দিয়েই কারণ অন্যদিকে পার্ক করা রয়েছে সারি সারি প্রাইভেট গাড়ি (অবশ্য মাঝে মধ্যে ব্যতিক্রম হিসাবে দু একটা মোটর সাইকেল অথবা স্কুটি দেখা যায়) রাস্তার পাশে পাহাড়ের গায়ে কিছু দূর অন্তর লেখা আছে প্রাইভেট / টেম্পোরারি পারকিং আমার তো মনে হয় শহরে বোধ হয় মানুষের চেয়ে গাড়ির সংখ্যা বেশী ফলে সপ্তাহের কাজের দিনে (বিশেষত অফিস টাইমে) ট্র্যাফিক জ্যাম অবশ্যম্ভাবী তবে এই ট্র্যাফিক জ্যামে কোন কষ্ট নেই কারণ জ্যাম সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য, কোন ওভারটেক নেই, কানের পর্দা বিদারী বিদঘুটে আওয়াজের হর্ন নেই এখানকার মানুষ চুলে স্টাইল করে তবে চুলের সেই স্টাইল রাস্তায় দেখানোর জন্য হেলমেট না পড়ে বাইক বা স্কুটি চালায় না পশ্চিম বঙ্গের মল প্রজন্ম অবশ্যই এদের থেকে শিক্ষা নিতে পারেপারে ড্রাইভার রাও এখানে শহরের মধ্যে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম শেয়ার ট্যাক্সি, ভাড়া মোটা মুটি ১০৩০ টাকা চাইলে রিজার্ভ করা যেতেই পারে তবে রাত বাড়লে একই দূরত্বের জন্য ভাড়া বাড়ে না শেয়ার ট্যাক্সি যে রুটের সেই রুটে একই ভাড়াতে চলে,  বেশী রাত বা বৃষ্টির জন্য ভাড়ার ওপর নিচ নেই

এখানকার লাল মার্কেট বা লাল বাজার হচ্ছে এমন একটি বাজার যেখানে সবজি থেকে শুরু করে সব কিছু পাওয়া যায় এবং গড়িয়া হাট বা হাতি বাগানের মত চুটিয়ে দর দাম করে জিনিস কেনা যায় ২৫০ গ্রাম কে এরা ডাকেপাও” (মানে পোয়া) বলে বাকি সব একক আমাদের মতই একটি সুন্দর বিষয় নজর করেছি যে, এখানে টাকা দেওয়ানেওয়ার সময় এঁরা ডান হাত বাড়িয়ে দিয়ে বাঁ হাত রাখেন ঠিক ডান হাতের কনুইয়ের নিচে এবং মাথা অল্প নিচু করে এমন ভাবে রাখেন যাতে মনে হয় বিক্রেতা ক্রেতার প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন

এবার বলি এমন একটা বিষয়ের কথা যা ইতিমধ্যে আমার নজরে এসেছে সিকিমে প্ল্যাস্টিক নিষিদ্ধ কিন্ত তা সীমাবদ্ধ শুধু মাত্র প্ল্যাস্টিক ব্যাগের উপরে প্ল্যাস্টিকে করে বিক্রি হওয়া জিনিস যথা জল / ঠাণ্ডা পানীয়ের বোতল, বিভিন্ন বিস্কুটের প্যাকেট ইত্যাদি (এমনকি ময়লা ফেলার জন্য কালো প্ল্যাস্টিক ব্যাগ) উপর এই নিষেধ প্রযোজ্য নয় কারণ আমি এগুলোর অবাধ ব্যবহার নজর করেছি। এখানে বাইরে বার হওয়ার সময় ছাতা অবশ্যই নিতে হবে কারণ হঠাৎ করে কখন যে বৃষ্টি শুরু হবে কেউ বলতে পারে না। সাধারণত মহিলা – পুরুষ নির্বিশেষে একটু লম্বা ছাতা ব্যবহার করেন (দুটো উপকার – ১) মাথার উপর বেশী ঢাকা থাকে বলে বৃষ্টি তে ভেজার সম্ভাবনা কম এবং ২)  চড়াই – উতরাই পথে চলার জন্য কাজে লাগে।
আপাতত এখানেই থামছি।

অলমিতি
যাই হোক, প্রলয় বাবুর নির্দেশ মেনে পৌঁছে গেলাম নির্দিষ্ট দোকানের সামনে কিন্ত একটা কথা মনে হচ্ছিল যে তার আগের দিন প্রলয় বাবুর গলার সাথে আজকের গলার বেশ অমিল দোকানে ঢুকলাম, প্রলয় বাবু পরিচয় করিয়ে দিলেন এবার জিনিস পছন্দ করার পালা একটা ১৭০ লিটারের ফ্রিজ (গোদরেজ), একটা ৩২ ইঞ্চি এল ডি (প্যানোরামা) একটি মিক্সি (ফিলিপস্‌) এবং একটি এমারজেন্সি লাইট (এভারেডি) নেওয়া হল আমি অবাক হলাম দাম শুনে ৩২ ইঞ্চি এল ডি টি ভির দাম মাত্র ১৩,০০০ টাকা সব মিলিয়ে ৩১ হাজারের একটু বেশী বিল হল, পেমেন্ট করলাম মাত্র ১৫,০০০ বাকিটা আমার সময় মত দিলেই চলবে একটি টেবিল দুটি চেয়ারের দরকার ছিল, ওনার সাথেই চললাম আর এক দোকানে সেখান থেকে নেওয়া হল টেবিল চেয়ার এবং বলা বাহুল্য যথেষ্ট কম দামে যাওয়ার পথে শুনলাম ওনার এক নিকট আত্মীয় মারা গেছেন ভাবুন, সেই অবস্থায় তিনি এমন একজন মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন যার নাম পর্যন্ত তিনি কিছুদিন আগে শোনেন নি এবং দেখা হয়েছে মাত্র একদিন আগে কি দিয়ে ব্যাখা করব এই দায়িত্ববোধ কে? জিজ্ঞাসা করুন সব্বাই বলবে যে তারা কেউ ভগবানকে দেখেনি আমি বলি, আমি দেখেছি জীবনের পথে চলতে চলতে এই রকম অনেক ভগবান কে আমি দেখেছিআমি দেখেছি তাঁকে বোলপুরের রাঙ্গামাটির পথে এক মুখ দাড়ি নিয়ে চলতে, আমি দেখেছি কাস্টমস্হাউসের বারান্দায়, দেখেছি, গভীর রাতে আমার বাড়িতে, ওয়েলকিনের ভিতরে এমনকি এই ভারচুয়াল দুনিয়াতেও আমি ভগবানকে দেখেছিআরও দেখছি, আরও দেখব হয়তো পাঠকের মনে হতে পারে আমার আবেগ কিন্ত বলুন তো মানুষ ভগবানের কাছে কি চায়? সে চায় তার বিপদের দিনে ভগবান যেন তার পাশে দাঁড়ান, তাকে সাহায্য করেন তাহলে আমার বিপদের দিনে যে মানুষরা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত, তাঁদের আমি ভগবান ছাড়া অন্য কিছু বলে তো ভাবতে পারি কি?

সব কিছু তো হলএবার দরকার ছিল একটা আলমারির কোন এক সুত্র মারফত জুটে গেল তাও

এরপর ৫ম পর্বে

অলমিতি